০১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্প মিথ্যে বলছেন, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস হয়নি: আইএইএ

চামেলি দাস
  • আপডেট : ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 51

 

রাষ্ট্রসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। বরং ইরান চাইলে কয়েক মাসের মধ্যেই আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। গ্রোসির এই বক্তব্য সরাসরি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়েছে।

আরও পড়ুন: ৪৭ বছর ধরে আমেরিকায় থাকা ইরানি নারীকে গ্রেফতার

ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেছিলেন যে, আমেরিকার নেতৃত্বে চালানো হামলায় ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা তদশকের পর দশক পিছিয়ে গেছেদ এবং কর্মসূচিটি কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক ও সামরিক গোয়েন্দা সূত্র এবং এখন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধানই বলছেন, বাস্তবে তা হয়নি। সিএনএনের একটি প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে, ইরানের কেন্দ্রীয় পারমাণবিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ধ্বংস হয়নি। ফলস্বরূপ, ইরানের কর্মসূচি হয়তো কয়েক মাসের জন্য থেমে গেছে, কিন্তু তা স্থায়ী কোনো ধ্বংস নয়।

আরও পড়ুন: আমেরিকার সঙ্গে আর আলোচনার জায়গা নেই : ইরান সুর নরম করে ছাড় ‘অফার’ ট্রাম্প প্রশাসনের 

গ্রোসি বলেন, তইরানের সক্ষমতা এখনো অটুট। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তারা আবার কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। তাই খোলাখুলি বললে, বলা যাবে না যে সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।দ তিনি আরও জানান, তএটা স্পষ্ট যে গুরুতর ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু তা পূর্ণ ধ্বংস নয়। ইরানের শিল্প, প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ কাঠামো এখনো রয়েছে। তাই তারা চাইলে দ্রুত পুনর্গঠন করতে পারবে।দ

আরও পড়ুন: ইরান থেকে তেল কিনতেই পারে চিন, তবে আমাদের কাছ থেকেও কিনুক: ট্রাম্প

এদিকে, রাষ্ট্রসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির-সাঈদ ইরাভানি বলেছেন, শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি ইরানের অধিকার, এবং এই কর্মসূচি কোনোভাবেই বন্ধ হবে না। তিনি বলেন, তইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চলবেই, কারণ এটি আমাদের সার্বভৌম অধিকার।দ

প্রসঙ্গত, ইসরাইলের জুনের গোড়ার দিকে চালানো নজিরবিহীন হামলার পর পশ্চিম এশিয়ায় ১২ দিনব্যাপী উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ইসরাইলের দাবি ছিল, তারা ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখতেই হামলা চালিয়েছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের তিনটি মূল পরমাণু স্থাপনা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

তবে বাস্তবে তেমন কোনো চূড়ান্ত ধ্বংস হয়নি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। ওয়াশিংটন পোস্ট একটি গোপন গোয়েন্দা বার্তার উল্লেখ করে জানিয়েছে, ইরানের ভেতরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিজেরাই বলছেন;এমন ধরণের হামলার জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন এবং ক্ষতি তাদের আশঙ্কার চেয়েও কম হয়েছে।

সব মিলিয়ে, দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তেলআবিবের আগ্রাসনের জবাব ইরান কৌশলগতভাবে দিচ্ছে, এবং পশ্চিমা প্রচারযন্ত্রের বিপরীতে বাস্তবতা আলাদা ছবি আঁকছে। ট্রাম্পের কথার চেয়ে বাস্তব তথ্য ও আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন আজ আরও শক্তিশালীভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে, ইরান এখনো পরমাণু সক্ষমতায় দৃঢ়ভাবে টিকে আছে;এবং শান্তিপূর্ণ প্রযুক্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ট্রাম্প মিথ্যে বলছেন, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস হয়নি: আইএইএ

আপডেট : ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার

 

রাষ্ট্রসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। বরং ইরান চাইলে কয়েক মাসের মধ্যেই আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। গ্রোসির এই বক্তব্য সরাসরি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়েছে।

আরও পড়ুন: ৪৭ বছর ধরে আমেরিকায় থাকা ইরানি নারীকে গ্রেফতার

ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেছিলেন যে, আমেরিকার নেতৃত্বে চালানো হামলায় ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা তদশকের পর দশক পিছিয়ে গেছেদ এবং কর্মসূচিটি কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক ও সামরিক গোয়েন্দা সূত্র এবং এখন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধানই বলছেন, বাস্তবে তা হয়নি। সিএনএনের একটি প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে, ইরানের কেন্দ্রীয় পারমাণবিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ধ্বংস হয়নি। ফলস্বরূপ, ইরানের কর্মসূচি হয়তো কয়েক মাসের জন্য থেমে গেছে, কিন্তু তা স্থায়ী কোনো ধ্বংস নয়।

আরও পড়ুন: আমেরিকার সঙ্গে আর আলোচনার জায়গা নেই : ইরান সুর নরম করে ছাড় ‘অফার’ ট্রাম্প প্রশাসনের 

গ্রোসি বলেন, তইরানের সক্ষমতা এখনো অটুট। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তারা আবার কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। তাই খোলাখুলি বললে, বলা যাবে না যে সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।দ তিনি আরও জানান, তএটা স্পষ্ট যে গুরুতর ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু তা পূর্ণ ধ্বংস নয়। ইরানের শিল্প, প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ কাঠামো এখনো রয়েছে। তাই তারা চাইলে দ্রুত পুনর্গঠন করতে পারবে।দ

আরও পড়ুন: ইরান থেকে তেল কিনতেই পারে চিন, তবে আমাদের কাছ থেকেও কিনুক: ট্রাম্প

এদিকে, রাষ্ট্রসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির-সাঈদ ইরাভানি বলেছেন, শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি ইরানের অধিকার, এবং এই কর্মসূচি কোনোভাবেই বন্ধ হবে না। তিনি বলেন, তইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চলবেই, কারণ এটি আমাদের সার্বভৌম অধিকার।দ

প্রসঙ্গত, ইসরাইলের জুনের গোড়ার দিকে চালানো নজিরবিহীন হামলার পর পশ্চিম এশিয়ায় ১২ দিনব্যাপী উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ইসরাইলের দাবি ছিল, তারা ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখতেই হামলা চালিয়েছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের তিনটি মূল পরমাণু স্থাপনা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

তবে বাস্তবে তেমন কোনো চূড়ান্ত ধ্বংস হয়নি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। ওয়াশিংটন পোস্ট একটি গোপন গোয়েন্দা বার্তার উল্লেখ করে জানিয়েছে, ইরানের ভেতরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিজেরাই বলছেন;এমন ধরণের হামলার জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন এবং ক্ষতি তাদের আশঙ্কার চেয়েও কম হয়েছে।

সব মিলিয়ে, দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তেলআবিবের আগ্রাসনের জবাব ইরান কৌশলগতভাবে দিচ্ছে, এবং পশ্চিমা প্রচারযন্ত্রের বিপরীতে বাস্তবতা আলাদা ছবি আঁকছে। ট্রাম্পের কথার চেয়ে বাস্তব তথ্য ও আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন আজ আরও শক্তিশালীভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে, ইরান এখনো পরমাণু সক্ষমতায় দৃঢ়ভাবে টিকে আছে;এবং শান্তিপূর্ণ প্রযুক্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।