২২ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিজেপির পতন নিয়ে কটাক্ষ দিলীপ ঘোষের, গেরুয়া শিবিরে ফের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ইঙ্গিত

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ২১ জুলাই ২০২৫, সোমবার
  • / 47

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: খোদ নিজের গড় খড়গপুরে দাঁড়িয়ে বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বকে একহাত নিলেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। উত্তরবঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর কর্মসূচির দিনেই পালটা শহিদ দিবসের সভা করে দলের ‘আদি’ নেতাদের নিয়ে শক্তি প্রদর্শন করলেন তিনি। আর সেই মঞ্চ থেকেই কার্যত বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বকে কটাক্ষ করলেন, তুলে ধরলেন ২০১৯ সালের সাফল্য ও বর্তমানের ব্যর্থতা।

 

দিলীপ ঘোষ বলেন, “২০১৯ সালে আমরা ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলাম, ১৮ জন সাংসদ দিয়েছিলাম। তৃণমূলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে রাজ্যে দলকে প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আজ ভোট কমছে, আসন কমছে।” তিনি স্পষ্ট জানান, পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে কোনও ‘স্পেশাল টেকনিক’ নয়, দলের কর্মীদের নিজস্ব শক্তিই সবচেয়ে বড় ভরসা।

আরও পড়ুন: ২১ জুলাই একুশের শহিদ মঞ্চ থেকে বিজেপি সরকারকে নিশানা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

 

আরও পড়ুন: ‘বঙ্গ বিজেপি তাকে চায় না’ , সাফ জানালেন দিলীপ ঘোষ

সোমবার ভৌগোলিকভাবে দুই প্রান্তে ভাগ হয়ে রাজ্যে বিজেপির দুই প্রধান নেতা পৃথক কর্মসূচি করলেন। একদিকে উত্তরকন্যা অভিযান নিয়ে উত্তরে শুভেন্দু অধিকারী, অন্যদিকে দক্ষিণে খড়গপুরে নিজের ঘাঁটিতে শহিদ দিবস পালন করলেন দিলীপ ঘোষ। এই দুই কর্মসূচি আদতে গেরুয়া শিবিরের অভ্যন্তরীণ বিভাজনেরই প্রতিচ্ছবি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।

আরও পড়ুন: আজ বঙ্গ সফরে প্রধানমন্ত্রী

 

 

সূত্রের খবর, এই সভার জন্য কেন্দ্র বা রাজ্য নেতৃত্বের কোনও অনুমতি নেননি দিলীপ। তাঁর ভাষণে স্পষ্টতই ফুটে ওঠে ক্ষোভ ও আক্ষেপ। বিজেপি নেতৃত্বের প্রতি দিলীপ ঘোষের অভিমান নতুন কিছু নয়, বিশেষ করে তাঁকে নিজের এলাকা খড়গপুর থেকে সরিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুরে প্রার্থী করবার সিদ্ধান্তের পর থেকেই এই বিরক্তি সর্বজনবিদিত। তার উপর, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়ার ঘটনা দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক আরও তিক্ত করেছে।

 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দুর্গাপুর সফরের দিনেও উপস্থিত ছিলেন না দিলীপ। দিল্লি গিয়েছিলেন। ফিরে এসেই ঘোষণা করেন নিজের সভার। এই সভার বক্তব্যেই প্রকাশ পেল বিজেপির বর্তমান অবস্থা নিয়ে তাঁর অসন্তোষ। তবে সরাসরি কারও নাম না করলেও, তাঁর কটাক্ষ যে শুভেন্দু অধিকারী ও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দিকেই তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এক বাক্যে মেনে নিচ্ছেন।

 

দিলীপ ঘোষ বলেন, “আমি কাউকে দায়ী করছি না। কিন্তু আজ যে পরিস্থিতি, তার একটা বড় কারণ মিডিয়ার একাংশ এবং ইউটিউবারদের প্রচার। ভুল বার্তা ছড়াচ্ছে, ভুল নেতৃত্বকে তুলে ধরা হচ্ছে।” যদিও তাঁর ইঙ্গিত, কার দিকে তা বিজেপির অন্দরেই স্পষ্ট।

 

সবশেষে দিলীপ ঘোষ বলেন, “তৃণমূলকে সরাতেই হবে। আমরা লড়াইয়ের জন্য তৈরি। কিন্তু সেটা আমাদেরই করতে হবে। কেন্দ্র বা বাইরে থেকে ভরসা না রেখে নিজেদের ঘরের শক্তির উপর নির্ভর করতে হবে।” কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, “তোমরা তৈরি তো? পারবে তো লড়তে?”

 

বিজেপির ভিতরে ফাটল নতুন নয়, তবে দিলীপ ঘোষের এই প্রকাশ্য ক্ষোভ এবং পৃথক কর্মসূচি গেরুয়া শিবিরের অভ্যন্তরীণ সংঘাতকে ফের সামনে এনে দিল। ২০২৬-র বিধানসভা নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, রাজ্য বিজেপির ভাঙন আর অন্দরের কোন্দল যেন আরও প্রকট হয়ে উঠছে।

 

এখন দেখার, এই ‘আদি বনাম নব্য’ সংঘাত সামাল দিয়ে আদৌ কি রাজ্যে শক্তি সঞ্চয় করতে পারবে বিজেপি?

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বিজেপির পতন নিয়ে কটাক্ষ দিলীপ ঘোষের, গেরুয়া শিবিরে ফের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ইঙ্গিত

আপডেট : ২১ জুলাই ২০২৫, সোমবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: খোদ নিজের গড় খড়গপুরে দাঁড়িয়ে বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বকে একহাত নিলেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। উত্তরবঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর কর্মসূচির দিনেই পালটা শহিদ দিবসের সভা করে দলের ‘আদি’ নেতাদের নিয়ে শক্তি প্রদর্শন করলেন তিনি। আর সেই মঞ্চ থেকেই কার্যত বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বকে কটাক্ষ করলেন, তুলে ধরলেন ২০১৯ সালের সাফল্য ও বর্তমানের ব্যর্থতা।

 

দিলীপ ঘোষ বলেন, “২০১৯ সালে আমরা ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলাম, ১৮ জন সাংসদ দিয়েছিলাম। তৃণমূলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে রাজ্যে দলকে প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আজ ভোট কমছে, আসন কমছে।” তিনি স্পষ্ট জানান, পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে কোনও ‘স্পেশাল টেকনিক’ নয়, দলের কর্মীদের নিজস্ব শক্তিই সবচেয়ে বড় ভরসা।

আরও পড়ুন: ২১ জুলাই একুশের শহিদ মঞ্চ থেকে বিজেপি সরকারকে নিশানা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

 

আরও পড়ুন: ‘বঙ্গ বিজেপি তাকে চায় না’ , সাফ জানালেন দিলীপ ঘোষ

সোমবার ভৌগোলিকভাবে দুই প্রান্তে ভাগ হয়ে রাজ্যে বিজেপির দুই প্রধান নেতা পৃথক কর্মসূচি করলেন। একদিকে উত্তরকন্যা অভিযান নিয়ে উত্তরে শুভেন্দু অধিকারী, অন্যদিকে দক্ষিণে খড়গপুরে নিজের ঘাঁটিতে শহিদ দিবস পালন করলেন দিলীপ ঘোষ। এই দুই কর্মসূচি আদতে গেরুয়া শিবিরের অভ্যন্তরীণ বিভাজনেরই প্রতিচ্ছবি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।

আরও পড়ুন: আজ বঙ্গ সফরে প্রধানমন্ত্রী

 

 

সূত্রের খবর, এই সভার জন্য কেন্দ্র বা রাজ্য নেতৃত্বের কোনও অনুমতি নেননি দিলীপ। তাঁর ভাষণে স্পষ্টতই ফুটে ওঠে ক্ষোভ ও আক্ষেপ। বিজেপি নেতৃত্বের প্রতি দিলীপ ঘোষের অভিমান নতুন কিছু নয়, বিশেষ করে তাঁকে নিজের এলাকা খড়গপুর থেকে সরিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুরে প্রার্থী করবার সিদ্ধান্তের পর থেকেই এই বিরক্তি সর্বজনবিদিত। তার উপর, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়ার ঘটনা দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক আরও তিক্ত করেছে।

 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দুর্গাপুর সফরের দিনেও উপস্থিত ছিলেন না দিলীপ। দিল্লি গিয়েছিলেন। ফিরে এসেই ঘোষণা করেন নিজের সভার। এই সভার বক্তব্যেই প্রকাশ পেল বিজেপির বর্তমান অবস্থা নিয়ে তাঁর অসন্তোষ। তবে সরাসরি কারও নাম না করলেও, তাঁর কটাক্ষ যে শুভেন্দু অধিকারী ও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দিকেই তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এক বাক্যে মেনে নিচ্ছেন।

 

দিলীপ ঘোষ বলেন, “আমি কাউকে দায়ী করছি না। কিন্তু আজ যে পরিস্থিতি, তার একটা বড় কারণ মিডিয়ার একাংশ এবং ইউটিউবারদের প্রচার। ভুল বার্তা ছড়াচ্ছে, ভুল নেতৃত্বকে তুলে ধরা হচ্ছে।” যদিও তাঁর ইঙ্গিত, কার দিকে তা বিজেপির অন্দরেই স্পষ্ট।

 

সবশেষে দিলীপ ঘোষ বলেন, “তৃণমূলকে সরাতেই হবে। আমরা লড়াইয়ের জন্য তৈরি। কিন্তু সেটা আমাদেরই করতে হবে। কেন্দ্র বা বাইরে থেকে ভরসা না রেখে নিজেদের ঘরের শক্তির উপর নির্ভর করতে হবে।” কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, “তোমরা তৈরি তো? পারবে তো লড়তে?”

 

বিজেপির ভিতরে ফাটল নতুন নয়, তবে দিলীপ ঘোষের এই প্রকাশ্য ক্ষোভ এবং পৃথক কর্মসূচি গেরুয়া শিবিরের অভ্যন্তরীণ সংঘাতকে ফের সামনে এনে দিল। ২০২৬-র বিধানসভা নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, রাজ্য বিজেপির ভাঙন আর অন্দরের কোন্দল যেন আরও প্রকট হয়ে উঠছে।

 

এখন দেখার, এই ‘আদি বনাম নব্য’ সংঘাত সামাল দিয়ে আদৌ কি রাজ্যে শক্তি সঞ্চয় করতে পারবে বিজেপি?