১৮ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ৩১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিত্ত নিগমের উদ্যোগে হাজী মুহাম্মদ মহসিন ফান্ডের স্কলারশিপ প্রদান অনুষ্ঠান

হাজী মুহাম্মদ মহসিনই অবিভক্ত বাংলায় প্রথম শিক্ষা আন্দোলন শুরু করেন: ইমরান

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার
  • / 475

পুবের কলম প্রতিবেদক: অখন্ড বাংলার কৃতী সন্তান হুগলির হাজী মুহাম্মদ মহসিন তাঁর জীবদ্দশায় অকাতরে দানধ্যান ও মানবসেবা করে গেছেন। আর মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর সমস্ত সম্পত্তি দান করে গেছিলেন শিক্ষা বিস্তার ও ধর্মীয় দাতব্য কাজে। সেই ‘হাজী মুহাম্মদ মহসিন এনডাওমেন্ট ফান্ড’ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের মাধ্যমে প্রতিবছর ১০০জন মেধাবি মাধ্যমিক, হাই-মাদ্রাসা ও সিনিয়র মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষায় ভালো ফলাফলকারীদের বিশেষ স্কলারশিপ দেওয়া হয়।

এই বছরও তাঁর জন্মদিন ১ আগস্ট, শুক্রবার নজরুলতীর্থ অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১০২ জনকে স্কলারশিপ দেওয়া হল। এই বিশেষ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, মন্ত্রী তজমূল হোসেন, সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, সদস্য শেহনাজ কাদরী, সতনাম সিং আহলুওয়ালিয়া, মাদ্রাসা বোর্ডের সভাপতি ড. আবু তাহের কমরুদ্দীন, এমএএমই দফতরের সচিব ড. পিবি সালিম, ভোকেশনাল বোর্ডের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাকিল আহমেদ প্রমুখ। এ ছাড়াও রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর এবং বিত্ত নিগমের আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন। আর এসেছিল বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে কৃতী এবং মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা, যাদেরকে হাজী মুহাম্মদ মহসিন স্কলারশিপ প্রদান করা হয়।

আরও পড়ুন: হাজী মুহাম্মদ মহসিনের অবদানকে কেন মুছে ফেলা হচ্ছে?

শুরুতেই বিত্ত নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাকিল আহমেদ অতিথিদের স্বাগত জানান। তিনি উল্লেখ করেন, এই বছর ১০২ জনকে ‘হাজী মুহাম্মদ মহসিন এনডাওমেন্ট ফান্ড’ থেকে স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে। স্কলারশিপ প্রদান অনুষ্ঠানের আগে পড়ুয়াদের জন্য কেরিয়ার কাউন্সিলিং কর্মসূচি সুসম্পন্ন হয়েছে বলেও তিনি জানান। অন্যদিকে সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসা দফতরের সচিব জি.এইচ. ওবাইদুর রহমান উল্লেখ করেন, আগে হাজী মুহাম্মদ মহসিনের রেখে যাওয়া এই টাকার ব্যবহার বন্ধ ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তা চালু হয়েছে। এর বাইরে ঐক্যশ্রী, স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং-সহ বিত্ত নিগমের নানান কর্মকাণ্ড আছে, সেগুলি সংক্ষেপে তুলে ধরেন তিনি।

রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের সচিব ড. পিবি সালিম বলেন, হাজী মুহাম্মদ মহসিন তাঁর সম্পত্তি দান করে গিয়েছিলেন। দেশে অনেক ধনী মানুষ আছেন কিন্তু সবাই এমন মহান হৃদয়ের হতেপারেননি। মহসিনের মানবিকতা, সমাজসেবা ও পরহিতব্রত আমাদের কাছে শিক্ষণীয়। তিনি আরও বলেন, ২০০ বছরেরও বেশি আগে হাজী মুহাম্মদ মহসিন ইন্তেকাল করেছেন, কিন্তু মানুষ তাঁকে মনে রেখেছে। আমরা যেন অন্তত ২০ বছর মানুষের মনে থাকতে পারি, তার জন্য আমাদের সক্রিয় হতে হবে। মহসিন-সহ ১৪জনের উপর বিশেষ পুস্তিকা আছে, ডকুমেন্টারি ফিল্ম নির্মিত হয়েছে, সেগুলি দেখা ও মহান মানুষের সম্পর্কে জানার জন্য সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান ও বিত্ত নিগমের অন্যতম সদস্য আহমদ হাসান ইমরান হাজী মুহাম্মদ মহসিনের জীবনের নানান দিক নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, হাজী মুহাম্মদ মহসিন স্কলারশিপের অর্থমূল্য কত সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু তোমরা যারা এই স্কলারশিপ পাচ্ছ, তোমরা গর্ব করে বলতে পারবে, আমরা হাজী মুহাম্মদ মহসিনের স্কলারশিপ পেয়েছিলাম। তাঁর জন্ম ১৭৩২ সালে। আর নবাব সিরাজের পতন হয় ১৭৫৭ সালে। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ-র পতনের পর সেই কঠিন সময়ে হাজী মুহাম্মদ মহসিন বুঝেছিলেন আসন্ন সময়কালে শিক্ষায় আমাদের অগ্রগতি করতে হবে।

হাজী মুহাম্মদ মহসিনই অবিভক্ত বাংলায় প্রথম শিক্ষা আন্দোলন শুরু করেন: ইমরান

অখন্ড বাংলায় তিনি যে শিক্ষা আন্দোলনের শুরু করেছিলেন, তার পরিণতিতে হুগলি মাদ্রাসা, হুগলি মহসিন কলেজ ছাড়াও রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ঢাকা প্রভৃতি অনেক জায়গায় নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা গড়ে উঠেছিল। তার অনেক পরে জন্মগ্রহণ করেন বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগরকে শিক্ষা বিস্তারের আইকন মনে করা হয়। কিন্তু হাজী মুহাম্মদ মহসিনকে এই সম্মান দেওয়া হয়নি। ইমরান আরও বলেন, আমাদের আইকন ও শিকড়ের কথা মনে রা’তে হবে। যে জাতির ইতিহাস নেই, তারা মৃত জাতি।

হুগলি মহসিন কলেজে পড়াশোনা করেছেন ঋষি বঙ্গিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সৈয়দ আমির আলি প্রমুখ। দ্বীন ও দুনিয়ার শিক্ষার জন্য তিনি মহান অবদান রেখেছেন। অতীতের ইতিহাস, হাজী মুহাম্মদ মহসিন, বেগম রোকেয়া, মাওলানা আকরম খাঁ’দের মতো মানুষকে মনে রাখতে হবে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধর্মনিরপেক্ষ বলে উল্লেখ করে ইমরান বলেন, তাঁর মতো ধর্মনিরপেক্ষ ও সবার জন্য কাজ করার মানসিকতা রাখার মানুষ শতাধীতে হয়তো একজন জন্মগ্রহণ করেন।

অন্যদিকে আল-আমীন মিশনের সম্পাদক নুরুল ইসলাম পড়ুয়াদের বলেন, তোমরা ভাগ্যবান যে হাজী মুহাম্মদ মহসিনের অর্থ থেকে স্কলারশিপ পাচ্ছ। তোমাদেরও অনেক বড় হতে হবে। আল-আমীন মিশন তৈরির ইতিহাস যেমন রামকৃষ্ণ মিশন থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন, সেই ইতিহাস তুলে ধরেন আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম। পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, শুধু ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হলে হবে না, আইএএস, বিধায়ক, সাংসদ বা ডব্লিউবিসিএস হতে হবে, তাহলে সমাজ বদলাবে।

হাজী মুহাম্মদ মহসিনই অবিভক্ত বাংলায় প্রথম শিক্ষা আন্দোলন শুরু করেন: ইমরান

মন্ত্রী তজমূল হোসেন বলেন, আমরা আগে হাজী মুহাম্মদ মহসিন সম্পর্কে জানতেই পারতাম না। তিনি এত অর্থ-সম্পত্তি মানুষের জন্য দান করে গিয়েছিলেন সেটা চাপা পড়ে ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় আজ স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে। হাজী মুহাম্মদ মহসিন পৃথিবী ভ্রমণ করেছেন, হজ করেছেন, জীবনে মানুষের কষ্ট সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। বাংলায় দুর্ভিক্ষের সময় লঙ্গরখানা চালিয়েছেন। তাঁর মতো মানুষ হতে পড়ুয়াদের আহ্বান জানান মন্ত্রী।
মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি বলেন, গোটা দুনিয়ায় সাড়ে সাত হাজারের বেশি ভাষা আছে, আমাদের দেশে স্বীকৃত ২২টি ভাষা ছাড়াও অসংখ্য ভাষাভাষীর মানুষ বসবাস করেন। বাংলা অন্যতম ভাষা। রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিমদের শিক্ষা, উন্নয়ন ও সামগ্রিক বিকাশে ব্যাপক কাজ করেছে রাজ্য সরকার।

সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকার স্কলারশিপ প্রায় সাড়ে চার কোটি পড়ুয়া পেয়েছে। সংখ্যলঘু পড়ুয়ারা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে, আগামীতে আরও এগিয়ে যাবে। আর এর জন্য হাতিয়ার করতে হবে শিক্ষাকে। এর জন্য কুরআনের প্রথম আয়াত (বাক্য)-এর কথাও তুলে ধরেন সিদ্দিকুল্লাহ্। অন্যদিকে সংখ্যালঘু ভোকেশনাল বোর্ডের রফিকুল ইসলাম দেশভাগ ও পরবর্তী সময়ে বাঙালি মুসলিমদের অবস্থা ও বর্তমানে উন্নতির নানান দিক তুলে ধরেন। এ দিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত এনাউর রহমান-সহ অন্যান্য বিশিষ্টরা।

হাজী মুহাম্মদ মহসিনই অবিভক্ত বাংলায় প্রথম শিক্ষা আন্দোলন শুরু করেন: ইমরান

ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আসা বেশকিছু অভিভাবক ও শিক্ষক উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁরা বলেন, আজকের অনুষ্ঠানটি সাধারণ কোনও আয়োজন নয়। বরং এর মাধ্যমে হাজী মুহাম্মদ মহসিনের বার্তা বাংলায় বিভিন্ন কোনে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বিত্ত নিগমের উদ্যোগে হাজী মুহাম্মদ মহসিন ফান্ডের স্কলারশিপ প্রদান অনুষ্ঠান

হাজী মুহাম্মদ মহসিনই অবিভক্ত বাংলায় প্রথম শিক্ষা আন্দোলন শুরু করেন: ইমরান

আপডেট : ২ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম প্রতিবেদক: অখন্ড বাংলার কৃতী সন্তান হুগলির হাজী মুহাম্মদ মহসিন তাঁর জীবদ্দশায় অকাতরে দানধ্যান ও মানবসেবা করে গেছেন। আর মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর সমস্ত সম্পত্তি দান করে গেছিলেন শিক্ষা বিস্তার ও ধর্মীয় দাতব্য কাজে। সেই ‘হাজী মুহাম্মদ মহসিন এনডাওমেন্ট ফান্ড’ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের মাধ্যমে প্রতিবছর ১০০জন মেধাবি মাধ্যমিক, হাই-মাদ্রাসা ও সিনিয়র মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষায় ভালো ফলাফলকারীদের বিশেষ স্কলারশিপ দেওয়া হয়।

এই বছরও তাঁর জন্মদিন ১ আগস্ট, শুক্রবার নজরুলতীর্থ অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১০২ জনকে স্কলারশিপ দেওয়া হল। এই বিশেষ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, মন্ত্রী তজমূল হোসেন, সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, সদস্য শেহনাজ কাদরী, সতনাম সিং আহলুওয়ালিয়া, মাদ্রাসা বোর্ডের সভাপতি ড. আবু তাহের কমরুদ্দীন, এমএএমই দফতরের সচিব ড. পিবি সালিম, ভোকেশনাল বোর্ডের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাকিল আহমেদ প্রমুখ। এ ছাড়াও রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর এবং বিত্ত নিগমের আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন। আর এসেছিল বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে কৃতী এবং মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা, যাদেরকে হাজী মুহাম্মদ মহসিন স্কলারশিপ প্রদান করা হয়।

আরও পড়ুন: হাজী মুহাম্মদ মহসিনের অবদানকে কেন মুছে ফেলা হচ্ছে?

শুরুতেই বিত্ত নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাকিল আহমেদ অতিথিদের স্বাগত জানান। তিনি উল্লেখ করেন, এই বছর ১০২ জনকে ‘হাজী মুহাম্মদ মহসিন এনডাওমেন্ট ফান্ড’ থেকে স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে। স্কলারশিপ প্রদান অনুষ্ঠানের আগে পড়ুয়াদের জন্য কেরিয়ার কাউন্সিলিং কর্মসূচি সুসম্পন্ন হয়েছে বলেও তিনি জানান। অন্যদিকে সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসা দফতরের সচিব জি.এইচ. ওবাইদুর রহমান উল্লেখ করেন, আগে হাজী মুহাম্মদ মহসিনের রেখে যাওয়া এই টাকার ব্যবহার বন্ধ ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তা চালু হয়েছে। এর বাইরে ঐক্যশ্রী, স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং-সহ বিত্ত নিগমের নানান কর্মকাণ্ড আছে, সেগুলি সংক্ষেপে তুলে ধরেন তিনি।

রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের সচিব ড. পিবি সালিম বলেন, হাজী মুহাম্মদ মহসিন তাঁর সম্পত্তি দান করে গিয়েছিলেন। দেশে অনেক ধনী মানুষ আছেন কিন্তু সবাই এমন মহান হৃদয়ের হতেপারেননি। মহসিনের মানবিকতা, সমাজসেবা ও পরহিতব্রত আমাদের কাছে শিক্ষণীয়। তিনি আরও বলেন, ২০০ বছরেরও বেশি আগে হাজী মুহাম্মদ মহসিন ইন্তেকাল করেছেন, কিন্তু মানুষ তাঁকে মনে রেখেছে। আমরা যেন অন্তত ২০ বছর মানুষের মনে থাকতে পারি, তার জন্য আমাদের সক্রিয় হতে হবে। মহসিন-সহ ১৪জনের উপর বিশেষ পুস্তিকা আছে, ডকুমেন্টারি ফিল্ম নির্মিত হয়েছে, সেগুলি দেখা ও মহান মানুষের সম্পর্কে জানার জন্য সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান ও বিত্ত নিগমের অন্যতম সদস্য আহমদ হাসান ইমরান হাজী মুহাম্মদ মহসিনের জীবনের নানান দিক নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, হাজী মুহাম্মদ মহসিন স্কলারশিপের অর্থমূল্য কত সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু তোমরা যারা এই স্কলারশিপ পাচ্ছ, তোমরা গর্ব করে বলতে পারবে, আমরা হাজী মুহাম্মদ মহসিনের স্কলারশিপ পেয়েছিলাম। তাঁর জন্ম ১৭৩২ সালে। আর নবাব সিরাজের পতন হয় ১৭৫৭ সালে। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ-র পতনের পর সেই কঠিন সময়ে হাজী মুহাম্মদ মহসিন বুঝেছিলেন আসন্ন সময়কালে শিক্ষায় আমাদের অগ্রগতি করতে হবে।

হাজী মুহাম্মদ মহসিনই অবিভক্ত বাংলায় প্রথম শিক্ষা আন্দোলন শুরু করেন: ইমরান

অখন্ড বাংলায় তিনি যে শিক্ষা আন্দোলনের শুরু করেছিলেন, তার পরিণতিতে হুগলি মাদ্রাসা, হুগলি মহসিন কলেজ ছাড়াও রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ঢাকা প্রভৃতি অনেক জায়গায় নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা গড়ে উঠেছিল। তার অনেক পরে জন্মগ্রহণ করেন বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগরকে শিক্ষা বিস্তারের আইকন মনে করা হয়। কিন্তু হাজী মুহাম্মদ মহসিনকে এই সম্মান দেওয়া হয়নি। ইমরান আরও বলেন, আমাদের আইকন ও শিকড়ের কথা মনে রা’তে হবে। যে জাতির ইতিহাস নেই, তারা মৃত জাতি।

হুগলি মহসিন কলেজে পড়াশোনা করেছেন ঋষি বঙ্গিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সৈয়দ আমির আলি প্রমুখ। দ্বীন ও দুনিয়ার শিক্ষার জন্য তিনি মহান অবদান রেখেছেন। অতীতের ইতিহাস, হাজী মুহাম্মদ মহসিন, বেগম রোকেয়া, মাওলানা আকরম খাঁ’দের মতো মানুষকে মনে রাখতে হবে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধর্মনিরপেক্ষ বলে উল্লেখ করে ইমরান বলেন, তাঁর মতো ধর্মনিরপেক্ষ ও সবার জন্য কাজ করার মানসিকতা রাখার মানুষ শতাধীতে হয়তো একজন জন্মগ্রহণ করেন।

অন্যদিকে আল-আমীন মিশনের সম্পাদক নুরুল ইসলাম পড়ুয়াদের বলেন, তোমরা ভাগ্যবান যে হাজী মুহাম্মদ মহসিনের অর্থ থেকে স্কলারশিপ পাচ্ছ। তোমাদেরও অনেক বড় হতে হবে। আল-আমীন মিশন তৈরির ইতিহাস যেমন রামকৃষ্ণ মিশন থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন, সেই ইতিহাস তুলে ধরেন আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম। পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, শুধু ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হলে হবে না, আইএএস, বিধায়ক, সাংসদ বা ডব্লিউবিসিএস হতে হবে, তাহলে সমাজ বদলাবে।

হাজী মুহাম্মদ মহসিনই অবিভক্ত বাংলায় প্রথম শিক্ষা আন্দোলন শুরু করেন: ইমরান

মন্ত্রী তজমূল হোসেন বলেন, আমরা আগে হাজী মুহাম্মদ মহসিন সম্পর্কে জানতেই পারতাম না। তিনি এত অর্থ-সম্পত্তি মানুষের জন্য দান করে গিয়েছিলেন সেটা চাপা পড়ে ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় আজ স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে। হাজী মুহাম্মদ মহসিন পৃথিবী ভ্রমণ করেছেন, হজ করেছেন, জীবনে মানুষের কষ্ট সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। বাংলায় দুর্ভিক্ষের সময় লঙ্গরখানা চালিয়েছেন। তাঁর মতো মানুষ হতে পড়ুয়াদের আহ্বান জানান মন্ত্রী।
মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি বলেন, গোটা দুনিয়ায় সাড়ে সাত হাজারের বেশি ভাষা আছে, আমাদের দেশে স্বীকৃত ২২টি ভাষা ছাড়াও অসংখ্য ভাষাভাষীর মানুষ বসবাস করেন। বাংলা অন্যতম ভাষা। রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিমদের শিক্ষা, উন্নয়ন ও সামগ্রিক বিকাশে ব্যাপক কাজ করেছে রাজ্য সরকার।

সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকার স্কলারশিপ প্রায় সাড়ে চার কোটি পড়ুয়া পেয়েছে। সংখ্যলঘু পড়ুয়ারা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে, আগামীতে আরও এগিয়ে যাবে। আর এর জন্য হাতিয়ার করতে হবে শিক্ষাকে। এর জন্য কুরআনের প্রথম আয়াত (বাক্য)-এর কথাও তুলে ধরেন সিদ্দিকুল্লাহ্। অন্যদিকে সংখ্যালঘু ভোকেশনাল বোর্ডের রফিকুল ইসলাম দেশভাগ ও পরবর্তী সময়ে বাঙালি মুসলিমদের অবস্থা ও বর্তমানে উন্নতির নানান দিক তুলে ধরেন। এ দিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত এনাউর রহমান-সহ অন্যান্য বিশিষ্টরা।

হাজী মুহাম্মদ মহসিনই অবিভক্ত বাংলায় প্রথম শিক্ষা আন্দোলন শুরু করেন: ইমরান

ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আসা বেশকিছু অভিভাবক ও শিক্ষক উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁরা বলেন, আজকের অনুষ্ঠানটি সাধারণ কোনও আয়োজন নয়। বরং এর মাধ্যমে হাজী মুহাম্মদ মহসিনের বার্তা বাংলায় বিভিন্ন কোনে ছড়িয়ে যাচ্ছে।