চিন সফরে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান

- আপডেট : ২২ অগাস্ট ২০২৫, শুক্রবার
- / 250
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : বাংলাদেশ (Bangladesh) সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান (Waker Uz Zaman) চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বেজিং (Beijing) পৌঁছেছেন। সেনাসদরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সফরে তিনি চিনের (China) উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং দ্বিপাক্ষিক সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করবেন। আপাতদৃষ্টিতে এটি কেবল একটি রুটিন ভ্রমণ মনে হলেও, আঞ্চলিক কূটনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এর গভীর তাৎপর্য রয়েছে।
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে চিনের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম আমদানি করে আসছে। বর্তমানে ঢাকার প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ বেজিং। ফলে সেনাপ্রধানের এই সফরকে অনেকেই দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও গভীর করার পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। একই সঙ্গে এটি চিনের বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ, দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরে নিজের উপস্থিতি শক্তিশালী করা। বন্দরনগরী, অবকাঠামো এবং সামরিক সহযোগিতা, এই তিন স্তম্ভেই চিন বাংলাদেশকে নিজের প্রভাববলয়ের মধ্যে টানতে চাইছে।
অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ক নানা কারণে পরীক্ষার মুখে। সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা, তিস্তা চুক্তি ঝুলে থাকা, এসব কারণে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গে জুড়েছে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর ঘিরে প্রথমে আগ্রহ তৈরি হলেও পরবর্তী সময়ে তাঁর হঠাৎ সফর এড়িয়ে যাওয়া এবং পরবর্তীতে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেই টানাপোড়েনের আবহেই চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি, দিল্লিকে অস্বস্তিতে ফেলছে।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের এই সফর তাই শুধু প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির নতুন সমীকরণ, যেখানে চিন নিজের প্রভাব বাড়াচ্ছে আর বাংলাদেশকে এক জটিল কূটনৈতিক ভারসাম্যের খেলায় ঠেলে দিচ্ছে।
চিন ইতিমধ্যেই পদ্মা সেতু, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অবকাঠামো খাতে গভীরভাবে জড়িত। এখন সামরিক সহযোগিতা আরও বাড়লে বাংলাদেশের নিরাপত্তা নীতি অনেকটাই বেজিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে।
স্বল্পমেয়াদে এটি উন্নয়ন ও প্রযুক্তি সহায়তা এনে দেবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ঢাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা সীমিত হয়ে যেতে পারে। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের এই সফর তাই প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বাইরেও দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির বড় চিত্রে নতুন রেখা।