২৫ জুন ২০২৫, বুধবার, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টে বললেন সিব্বাল

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবার
  • / 19

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ আরও একবার বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে হাতাশা ব্যক্ত করলেন প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বাল। এর আগে গুজরাত দাঙ্গায় পীড়িত জাকিয়া জাফরির মামলায় শীর্ষকোর্টের রায় ও মন্তব্যগুলি সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের উপর তাঁর আর কোনও আশা নেই। আর এ দিন বললেন, প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আস্থা ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অজয় রাস্তোগি ও বিচারপতি বি ভি নাগারত্নর বেঞ্চের সামনে এই মন্তব্য করেন সিব্বাল। আসলে এ দিন উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টি নেতা আজম খানের ছেলে আবদুল্লাহ আজম খানের একটি মামলার শুনানি ছিল। ২০১৭ সালে তাঁকে নির্বাচনে লড়া থেকে বিরত রাখা হয়েছিল এই দাবিতে যে, তিনি নাবালক। সেই মামলার শুনানিতে তাঁর মুখে শোনা গেল বিচারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে সমালোচনার সুর।

বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে সিব্বাল বলেন, ‘যে চেয়ারটিতে আপনারা বসে রয়েছেন সেই চেয়ারটির প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। এটা একটা বিবাহ আইনজীবী ও বিচারপতি (বার ও বেঞ্চ)-দের মধ্যে যা কখনও ভাঙা যাবে না।এখানে কোনও বিচ্ছেদ নেই এবং একবার যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এখানে (বার) মাঝেমধ্যে কি হচ্ছে, আবার অন্য প্রান্তে (বেঞ্চ) মাঝেমধ্যে কী হচ্ছে, এটা আমার মতো একজন ব্যক্তিকে বিব্রত করে যিনি তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই এই আদালতকে দিয়েছেন।’ জবাবে বিচারপতি রাস্তোগি আবার সিব্বালকে বলেন, ‘আমরা সব সময় বলে থাকি বার এবং বেঞ্চ একটি রথের দু’টি চাকা।

আরও পড়ুন: ভারতের সংবিধানই এই অস্পৃশ্যকে সর্বোচ্চ পদে বসিয়েছে : গাভাই

 

আরও পড়ুন: ৩ আগস্ট নিট পিজি পরীক্ষা নিতে নির্দেশ শীর্ষ কোর্টের

কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে… এই দুই চাকা ঈশ্বরই জানেন এক চাকা কোথায় যাবে, অন্য চাকা কোথায় যাবে যখন রথ অন্য কোথাও থাকবে। কিন্তু মিস্টার সিব্বাল দিনের শেষে আমাদের দেখতে হবে আমরা সবাই এই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ভাবি, এই প্রতিষ্ঠান আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে। তাই আইনজীবীদের প্রতি এবং আমাদের নিজেদের প্রতিও আমাদের অনুরোধ, আমাদের আত্মসমীক্ষা করতে হবে কীভাবে আমরা টিকে থাকতে পারব, কীভাবে একটি জাতিকে টিকিয়ে রাখতে হবে যেখানে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস যাতে নষ্ট না হয়, বরং সেই বিশ্বাসকে পুনরোদ্ধার করতে হবে।’

আরও পড়ুন: বিচারপতি ভার্মাকে সরানোর প্রস্তুতি, সংসদে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনছে কেন্দ্র

পালটা আইনজীবী সিব্বাল বলেন, ‘এই বিশ্বাসের পুনরোদ্ধার তখনই সম্ভব যদি বার এবং বেঞ্চ উভয়পক্ষই খেলার নিয়ম যথাযথভাবে অনুসরণ করে। যদি একজন পিটিশনকারী মনে করেন তাঁর মামলার শুনানি হয়েছে এবং আইনটি যঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে ওই পিটিশনকারী যদি মামলায় হেরেও যান তাহলেও প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আস্থা বজায় থাকবে।

 

সিব্বালের কথায়, ‘‘এমনটা একটি উপায়ে সম্ভব। এ প্রান্তে আমাদের ‘রুল অব দ্য গেম’ অনুসরণ করতে হবে। অন্যদিক থেকেও যেন তেমনটা হয়। এটাই একমাত্র উপায় মানুষের আস্থা ফেরানোর। আর বিকল্প কোনও রাস্তা নেই। আমি যদি আদালতে আসি এবং আমি আত্মবিশ্বাসী যে, যাই হোক না কেন, মামলা আমার পক্ষে বা বিপক্ষে যাক না কেন সেটা কোনও বিষয় নয় যদি বেঞ্চের পক্ষ থেকে ভয় ও পক্ষপাত ছাড়া আইন প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এই বিষয়গুলি মানতে পারলেই মানুষের আস্থার পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে। আমরা হারি বা জিতি সেটা বড় কোনও ব্যাপার নয়, বড় ব্যাপার হল প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আমাদের আত্মবিশ্বাস। সেটাই ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।’’ এর উত্তরে আবার বিচারপতি নাগারত্ন বলেন, জয়ী পক্ষ কী ভাবছে তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ পরাজিত পক্ষ কী ভাবছে। পরাজিত পক্ষ যাতে সন্তুষ্টি নিয়ে ফিরে যেতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টে বললেন সিব্বাল

আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবার

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ আরও একবার বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে হাতাশা ব্যক্ত করলেন প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বাল। এর আগে গুজরাত দাঙ্গায় পীড়িত জাকিয়া জাফরির মামলায় শীর্ষকোর্টের রায় ও মন্তব্যগুলি সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের উপর তাঁর আর কোনও আশা নেই। আর এ দিন বললেন, প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আস্থা ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অজয় রাস্তোগি ও বিচারপতি বি ভি নাগারত্নর বেঞ্চের সামনে এই মন্তব্য করেন সিব্বাল। আসলে এ দিন উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টি নেতা আজম খানের ছেলে আবদুল্লাহ আজম খানের একটি মামলার শুনানি ছিল। ২০১৭ সালে তাঁকে নির্বাচনে লড়া থেকে বিরত রাখা হয়েছিল এই দাবিতে যে, তিনি নাবালক। সেই মামলার শুনানিতে তাঁর মুখে শোনা গেল বিচারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে সমালোচনার সুর।

বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে সিব্বাল বলেন, ‘যে চেয়ারটিতে আপনারা বসে রয়েছেন সেই চেয়ারটির প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। এটা একটা বিবাহ আইনজীবী ও বিচারপতি (বার ও বেঞ্চ)-দের মধ্যে যা কখনও ভাঙা যাবে না।এখানে কোনও বিচ্ছেদ নেই এবং একবার যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এখানে (বার) মাঝেমধ্যে কি হচ্ছে, আবার অন্য প্রান্তে (বেঞ্চ) মাঝেমধ্যে কী হচ্ছে, এটা আমার মতো একজন ব্যক্তিকে বিব্রত করে যিনি তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই এই আদালতকে দিয়েছেন।’ জবাবে বিচারপতি রাস্তোগি আবার সিব্বালকে বলেন, ‘আমরা সব সময় বলে থাকি বার এবং বেঞ্চ একটি রথের দু’টি চাকা।

আরও পড়ুন: ভারতের সংবিধানই এই অস্পৃশ্যকে সর্বোচ্চ পদে বসিয়েছে : গাভাই

 

আরও পড়ুন: ৩ আগস্ট নিট পিজি পরীক্ষা নিতে নির্দেশ শীর্ষ কোর্টের

কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে… এই দুই চাকা ঈশ্বরই জানেন এক চাকা কোথায় যাবে, অন্য চাকা কোথায় যাবে যখন রথ অন্য কোথাও থাকবে। কিন্তু মিস্টার সিব্বাল দিনের শেষে আমাদের দেখতে হবে আমরা সবাই এই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ভাবি, এই প্রতিষ্ঠান আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে। তাই আইনজীবীদের প্রতি এবং আমাদের নিজেদের প্রতিও আমাদের অনুরোধ, আমাদের আত্মসমীক্ষা করতে হবে কীভাবে আমরা টিকে থাকতে পারব, কীভাবে একটি জাতিকে টিকিয়ে রাখতে হবে যেখানে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস যাতে নষ্ট না হয়, বরং সেই বিশ্বাসকে পুনরোদ্ধার করতে হবে।’

আরও পড়ুন: বিচারপতি ভার্মাকে সরানোর প্রস্তুতি, সংসদে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনছে কেন্দ্র

পালটা আইনজীবী সিব্বাল বলেন, ‘এই বিশ্বাসের পুনরোদ্ধার তখনই সম্ভব যদি বার এবং বেঞ্চ উভয়পক্ষই খেলার নিয়ম যথাযথভাবে অনুসরণ করে। যদি একজন পিটিশনকারী মনে করেন তাঁর মামলার শুনানি হয়েছে এবং আইনটি যঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে ওই পিটিশনকারী যদি মামলায় হেরেও যান তাহলেও প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আস্থা বজায় থাকবে।

 

সিব্বালের কথায়, ‘‘এমনটা একটি উপায়ে সম্ভব। এ প্রান্তে আমাদের ‘রুল অব দ্য গেম’ অনুসরণ করতে হবে। অন্যদিক থেকেও যেন তেমনটা হয়। এটাই একমাত্র উপায় মানুষের আস্থা ফেরানোর। আর বিকল্প কোনও রাস্তা নেই। আমি যদি আদালতে আসি এবং আমি আত্মবিশ্বাসী যে, যাই হোক না কেন, মামলা আমার পক্ষে বা বিপক্ষে যাক না কেন সেটা কোনও বিষয় নয় যদি বেঞ্চের পক্ষ থেকে ভয় ও পক্ষপাত ছাড়া আইন প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এই বিষয়গুলি মানতে পারলেই মানুষের আস্থার পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে। আমরা হারি বা জিতি সেটা বড় কোনও ব্যাপার নয়, বড় ব্যাপার হল প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আমাদের আত্মবিশ্বাস। সেটাই ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।’’ এর উত্তরে আবার বিচারপতি নাগারত্ন বলেন, জয়ী পক্ষ কী ভাবছে তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ পরাজিত পক্ষ কী ভাবছে। পরাজিত পক্ষ যাতে সন্তুষ্টি নিয়ে ফিরে যেতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’