০২ মে ২০২৫, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘চলো দিল্লি’, ধরনা মঞ্চ থেকে কেন্দ্রকে নিশানা করে হুংকার মমতার

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার
  • / 6

পুবের কলম প্রতিবেদক: কেন্দ্রের বঞ্চনা ও কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির অতিসক্রিয়তার বিরুদ্ধে ধরনায় বসেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  বুধবার থেকে রেড রোডে আম্বেদকর মূর্তির পাদদেশে দু’দিনের ধরনায় বসেন তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেষ হয় সেই কর্মসূচি। কিন্তু ধরনা শেষ হওয়ার পরও কেন্দ্রের কোনও প্রতিনিধি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ না করায় সরাসরি দিল্লি অভিযানের ডাক দেন মুখ্যমন্ত্রী।

কেন্দ্রকে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘আজ পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। ভেবেছিলাম ভদ্রতা দেখিয়ে কেন্দ্র আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলবে—১০০ দিনের টাকা না দিয়ে ভুল করেছি। তোমাদের প্রাপ্য মিটিয়ে দেব। বাংলার বাড়ি প্রকল্পের বকেয়া দিয়ে দেব। জিএসটির টাকা, গ্রামীণ রাস্তার প্রাপ্য দিয়ে দেব। কিন্তু কিছুই হল না। প্রয়োজনে দিল্লি যাব। ট্রেন দেবে না? ট্রেন ভাড়া করে যাব। দরকার হলে ভিক্ষা করে ট্রেন ভাড়া করব।’’ কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ ‘পিএমশ্রী’, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির মতো ইস্যুগুলি তুলে ধরে মমতা বলেন, ‘ভেবেছিলাম  এখানে উনুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করব। আগুন লাগার ভয়ে তা করতে পারিনি। প্রয়োজন হলে দিল্লি গিয়ে উনুন জ্বালাব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ছবি নিয়ে দিল্লি যাব।’

উল্লেখ্য, এদিন ধরনা মঞ্চে শুরু থেকেই ১০০দিনের কাজ থেকে শুরু করে জিএসটি, আবাস যোজনা নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনায় সরব হতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। পাশাপাশি, বিরোধী জোটের ইঙ্গিতও দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি জোট বাঁধলে সবাইকে নিয়ে বাঁধব।’

বৃহস্পতিবার ধরনার দ্বিতীয় দিনে শুরুতে অবশ্য  কিছুটা ভিন্ন মেজাজে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। সকাল ৯টায় খুলে যায় ধরনা মঞ্চের পর্দা। রাতে ধর্নামঞ্চেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন সকালে মঞ্চের কাজ শুরু হতেই উপস্থিত ছাত্র-যুবরা গিটার বাজিয়ে গান শুরু করে। তাদের সঙ্গে সুর মেলান মুখ্যমন্ত্রীও। ‘এবার তোর মরা গাঙে বাণ এসেছে’ থেকে ‘বাংলার মাটি’, ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’র মতো একের পর এক গানে গলা মেলান মুখ্যমন্ত্রী। গানের পাশাপাশি নিজের ছাত্রজীবনের রাজনীতির অভিজ্ঞতার কথাও ছাত্র-যুবদের সামনে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন ধরনা মঞ্চে দেখা যায় শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ফিরহাদ হাকিম, বীরবাহা হাঁসদা, দোলা সেন, বাবুল সুপ্রিয়, অরূপ বিশ্বাস, দেবাশিস কুমার, জয়প্রকাশ মজুমদার, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল সেন, সায়নী ঘোষ প্রমুখ নেতা-মন্ত্রীদের। সেই মঞ্চ থেকে এদিন বিজেপি তথা কেন্দ্রের মোদি সরকারের সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলা ১০০ দিনের কাজে ৫বার প্রথম হওয়া সত্ত্বেও টাকা বন্ধ। মানুষকে কাজ করিয়ে নিয়ে তাদের ৭ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্র দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। অথচ, নির্বাচনের সময় এসে বড় বড় কথা বলছে দিল্লির বিজেপি নেতারা। গ্রামীণ সড়ক যোজনায় বাংলা ৪বার প্রথম হওয়ার পরও টাকা বন্ধ। বাংলা আবাস যোজনায় অর্থ-অনুমোদন হয়ে যাওয়ার পরেও কেন্দ্র টাকা দেয়নি। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলি ছাড়া অন্যান্য রাজ্যে অনেক স্কিম বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সবথেকে বেশি স্কিম বন্ধ হয়েছে বাংলায়। পশ্চিমবঙ্গে ৬৩টি স্কিম বন্ধ হয়ে গেছে। বিজেপি বলছে শুরু তারাই, সাধু আর সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত। সবাই দেশবিরোধী শুধু বিজেপি দেশপ্রেমিক।’’

দিজেন্দ্রলাল রায়ের কবিতা থেকে ন¨লালকে তুলে আনলেও আসলে প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেই তিনি বলেছেন, ওহে নন্দলাল, ১০০ দিনের কাজের টাকা দেবেন না? কি নন্দলাল, আদানির জন্য এলআইসিকে বিক্রি করে দিলেন! মূল্য চোকাবে কে? বলুন নন্দলাল, স্টেট ব্যাঙ্কও বিক্রি করে দিলেন? মূল্য চোকাবে কে?’’  এজেন্সি-সক্রিয়তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিজেপির বিরুদ্ধে বললেই জেলে পাঠাচ্ছে। সিবিআইকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। বিজেপি জমিদারদের মতো আচরণ করছে। সাংসদ থেকে বের করে দিচ্ছে। দে’ড় বছরে ১৬০টি কেন্দ্রীয় দল এসেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিজেপি শুধু জানে কীভাবে দাঙ্গা করতে হয়। আজকেও রাম নবমীতে হাওড়ায় দাঙ্গা করেছে।’

জিএসটি ইস্যুতে কেন্দ্রকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের প্রাপ্য টাকা জিএসটি-র মাধ্যমে কেন্দ্র নিয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের প্রাপ্য দিচ্ছে না। আমি নিজে তিনবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আবেদন জানিয়ে এসেছি। আমাদের সাংসদরা গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছেন। মন্ত্রীদের পাঠিয়েছি, চিঠি দিয়েছি। বাংলার বরাদ্দ বন্ধ। এভাবে ২ বছর কেটে গিয়েছে। বিজেপিশাসিত রাজ্য ছাড়া অন্যত্র অনেক প্রকল্প বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সব থেকে বেশি প্রকল্প বন্ধ হয়েছে এই রাজ্যে।’

 

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

‘চলো দিল্লি’, ধরনা মঞ্চ থেকে কেন্দ্রকে নিশানা করে হুংকার মমতার

আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম প্রতিবেদক: কেন্দ্রের বঞ্চনা ও কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির অতিসক্রিয়তার বিরুদ্ধে ধরনায় বসেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  বুধবার থেকে রেড রোডে আম্বেদকর মূর্তির পাদদেশে দু’দিনের ধরনায় বসেন তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেষ হয় সেই কর্মসূচি। কিন্তু ধরনা শেষ হওয়ার পরও কেন্দ্রের কোনও প্রতিনিধি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ না করায় সরাসরি দিল্লি অভিযানের ডাক দেন মুখ্যমন্ত্রী।

কেন্দ্রকে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘আজ পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। ভেবেছিলাম ভদ্রতা দেখিয়ে কেন্দ্র আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলবে—১০০ দিনের টাকা না দিয়ে ভুল করেছি। তোমাদের প্রাপ্য মিটিয়ে দেব। বাংলার বাড়ি প্রকল্পের বকেয়া দিয়ে দেব। জিএসটির টাকা, গ্রামীণ রাস্তার প্রাপ্য দিয়ে দেব। কিন্তু কিছুই হল না। প্রয়োজনে দিল্লি যাব। ট্রেন দেবে না? ট্রেন ভাড়া করে যাব। দরকার হলে ভিক্ষা করে ট্রেন ভাড়া করব।’’ কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ ‘পিএমশ্রী’, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির মতো ইস্যুগুলি তুলে ধরে মমতা বলেন, ‘ভেবেছিলাম  এখানে উনুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করব। আগুন লাগার ভয়ে তা করতে পারিনি। প্রয়োজন হলে দিল্লি গিয়ে উনুন জ্বালাব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ছবি নিয়ে দিল্লি যাব।’

উল্লেখ্য, এদিন ধরনা মঞ্চে শুরু থেকেই ১০০দিনের কাজ থেকে শুরু করে জিএসটি, আবাস যোজনা নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনায় সরব হতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। পাশাপাশি, বিরোধী জোটের ইঙ্গিতও দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি জোট বাঁধলে সবাইকে নিয়ে বাঁধব।’

বৃহস্পতিবার ধরনার দ্বিতীয় দিনে শুরুতে অবশ্য  কিছুটা ভিন্ন মেজাজে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। সকাল ৯টায় খুলে যায় ধরনা মঞ্চের পর্দা। রাতে ধর্নামঞ্চেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন সকালে মঞ্চের কাজ শুরু হতেই উপস্থিত ছাত্র-যুবরা গিটার বাজিয়ে গান শুরু করে। তাদের সঙ্গে সুর মেলান মুখ্যমন্ত্রীও। ‘এবার তোর মরা গাঙে বাণ এসেছে’ থেকে ‘বাংলার মাটি’, ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’র মতো একের পর এক গানে গলা মেলান মুখ্যমন্ত্রী। গানের পাশাপাশি নিজের ছাত্রজীবনের রাজনীতির অভিজ্ঞতার কথাও ছাত্র-যুবদের সামনে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন ধরনা মঞ্চে দেখা যায় শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ফিরহাদ হাকিম, বীরবাহা হাঁসদা, দোলা সেন, বাবুল সুপ্রিয়, অরূপ বিশ্বাস, দেবাশিস কুমার, জয়প্রকাশ মজুমদার, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল সেন, সায়নী ঘোষ প্রমুখ নেতা-মন্ত্রীদের। সেই মঞ্চ থেকে এদিন বিজেপি তথা কেন্দ্রের মোদি সরকারের সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলা ১০০ দিনের কাজে ৫বার প্রথম হওয়া সত্ত্বেও টাকা বন্ধ। মানুষকে কাজ করিয়ে নিয়ে তাদের ৭ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্র দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। অথচ, নির্বাচনের সময় এসে বড় বড় কথা বলছে দিল্লির বিজেপি নেতারা। গ্রামীণ সড়ক যোজনায় বাংলা ৪বার প্রথম হওয়ার পরও টাকা বন্ধ। বাংলা আবাস যোজনায় অর্থ-অনুমোদন হয়ে যাওয়ার পরেও কেন্দ্র টাকা দেয়নি। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলি ছাড়া অন্যান্য রাজ্যে অনেক স্কিম বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সবথেকে বেশি স্কিম বন্ধ হয়েছে বাংলায়। পশ্চিমবঙ্গে ৬৩টি স্কিম বন্ধ হয়ে গেছে। বিজেপি বলছে শুরু তারাই, সাধু আর সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত। সবাই দেশবিরোধী শুধু বিজেপি দেশপ্রেমিক।’’

দিজেন্দ্রলাল রায়ের কবিতা থেকে ন¨লালকে তুলে আনলেও আসলে প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেই তিনি বলেছেন, ওহে নন্দলাল, ১০০ দিনের কাজের টাকা দেবেন না? কি নন্দলাল, আদানির জন্য এলআইসিকে বিক্রি করে দিলেন! মূল্য চোকাবে কে? বলুন নন্দলাল, স্টেট ব্যাঙ্কও বিক্রি করে দিলেন? মূল্য চোকাবে কে?’’  এজেন্সি-সক্রিয়তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিজেপির বিরুদ্ধে বললেই জেলে পাঠাচ্ছে। সিবিআইকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। বিজেপি জমিদারদের মতো আচরণ করছে। সাংসদ থেকে বের করে দিচ্ছে। দে’ড় বছরে ১৬০টি কেন্দ্রীয় দল এসেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিজেপি শুধু জানে কীভাবে দাঙ্গা করতে হয়। আজকেও রাম নবমীতে হাওড়ায় দাঙ্গা করেছে।’

জিএসটি ইস্যুতে কেন্দ্রকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের প্রাপ্য টাকা জিএসটি-র মাধ্যমে কেন্দ্র নিয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের প্রাপ্য দিচ্ছে না। আমি নিজে তিনবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আবেদন জানিয়ে এসেছি। আমাদের সাংসদরা গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছেন। মন্ত্রীদের পাঠিয়েছি, চিঠি দিয়েছি। বাংলার বরাদ্দ বন্ধ। এভাবে ২ বছর কেটে গিয়েছে। বিজেপিশাসিত রাজ্য ছাড়া অন্যত্র অনেক প্রকল্প বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সব থেকে বেশি প্রকল্প বন্ধ হয়েছে এই রাজ্যে।’