১৪ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভাঙনের মুখে ইইউ? ইউরোপীয় একতায় ফাটল ধরাচ্ছে রুশ গ্যাস-রাজনীতি

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৬ মে ২০২২, শুক্রবার
  • / 88

পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে গোটা ইউরোপ। তবে রাশিয়া থেকে সস্তায় গ্যাস কেনা নিয়ে ইউরোপীয়রা বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। এখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার জ্বালানির আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চাইলে হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার মতো দেশ তাতে আপত্তি জানাচ্ছে। তাদের মতে, রাশিয়াকে বাদ দিলে গ্যাস পাওয়া যাবে না, যে সংকট তৈরি হবে তা অকল্পনীয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপীয় ঐক্যে ফাটল ধরাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের এখন সবচেয়ে বড় হাতিয়ার গ্যাস-রাজনীতি। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাস ধরে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে রাশিয়া। এবার ইউরোপকে পালটা আক্রমণ মস্কোর। নাৎসি-বিরোধী এই রুশ নেতার এবারের লক্ষ্য শক্তিশালী গ্যাস-অস্ত্র ব্যবহার করে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল তথা ভাগ করো, শাসন করো।’ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পুতিনের গ্যাস-অস্ত্র মোকাবিলা ইউরোপীয় ঐক্যের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা। রাশিয়ার গ্যাস আমদানিকে কেন্দ্র করেই পরীক্ষার মুখোমুখি বৃহত্তর ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ পরীক্ষায় হেরে গেলেই ভেঙে যাবে ইইউ।

রাশিয়ার গ্যাস রফতানির বড় বাজার ইউরোপের অধিকাংশ দেশ। রাশিয়ার গ্যাসের ওপরই নির্ভর করছে এদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। ইউরোপকে কাবু করতে এই শক্তিশালী রফতানি অস্ত্রই ব্যবহার করতে শুরু করেছেন পুতিন। সম্প্রতি দুই ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে তারই নমুনা দেখিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার কুফল থেকে বাঁচতে ইইউ দেশগুলোকে রাশিয়ান মুদ্রা রুবলে গ্যাস কিনতে বাধ্য করছে মস্কো, নয়তো গ্যাস বন্ধ। এ সিদ্ধান্তকে ইইউ ‘ব্ল্যাকমেইল’ হিসেবে উল্লেখ করলেও এর ফলেই মহাদেশটির দুর্বলতা ও বিভাজন প্রকাশ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্রাসেলসের এক থিঙ্কট্যাঙ্কের সিনিয়র ফেলো সিমোন ট্যাগলিয়াপিত্রা বলেন, এটি একটি শাসনের কৌশল। এই সিদ্ধান্ত অভূতপূর্ব এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। রুবলে অর্থ প্রদানের রাশিয়ান সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য ইউরোপীয় দেশগুলোকে বিভক্ত করা।

আরও পড়ুন: রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প, ইউক্রেনকে ‘প্যাট্রিয়ট’ ক্ষেপণাস্ত্র দিলেও চাইছেন পুরো দাম

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলি রাশিয়ার শর্ত মেনে নিলে তা নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন হবে কি না, তা নিয়ে বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। কারণ রাশিয়ার নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ক্রেতাদের গ্যাসের মূল্য ইউরো বা ডলারে জমা দেওয়ার জন্য রাশিয়ান গাজপ্রমব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে, যেখান থেকে তা রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করার জন্য উপযোগী হবে। এই লেনদেন রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ককে নিয়ে চলতে বাধ্য করবে যা ইইউ নিষেধাজ্ঞার অধীন। এখন রাশিয়ার জ্বালানি খাতের ওপর বিভিন্ন রাষ্ট্রের আরোপিত অবরোধ নিয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে খোদ ইইউ-র মধ্যেই। ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছে হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া। বলছে, রাশিয়ার জ্বালানির বিকল্প তাদের হাতে নেই।

আরও পড়ুন: পূর্ব ইউক্রেনে ভয়াবহ পরিস্থিতি’

আরও পড়ুন: দক্ষিণ ইউক্রেনে বিলি হচ্ছে রুশ পাসপোর্ট!

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ভাঙনের মুখে ইইউ? ইউরোপীয় একতায় ফাটল ধরাচ্ছে রুশ গ্যাস-রাজনীতি

আপডেট : ৬ মে ২০২২, শুক্রবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে গোটা ইউরোপ। তবে রাশিয়া থেকে সস্তায় গ্যাস কেনা নিয়ে ইউরোপীয়রা বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। এখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার জ্বালানির আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চাইলে হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার মতো দেশ তাতে আপত্তি জানাচ্ছে। তাদের মতে, রাশিয়াকে বাদ দিলে গ্যাস পাওয়া যাবে না, যে সংকট তৈরি হবে তা অকল্পনীয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপীয় ঐক্যে ফাটল ধরাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের এখন সবচেয়ে বড় হাতিয়ার গ্যাস-রাজনীতি। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাস ধরে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে রাশিয়া। এবার ইউরোপকে পালটা আক্রমণ মস্কোর। নাৎসি-বিরোধী এই রুশ নেতার এবারের লক্ষ্য শক্তিশালী গ্যাস-অস্ত্র ব্যবহার করে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল তথা ভাগ করো, শাসন করো।’ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পুতিনের গ্যাস-অস্ত্র মোকাবিলা ইউরোপীয় ঐক্যের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা। রাশিয়ার গ্যাস আমদানিকে কেন্দ্র করেই পরীক্ষার মুখোমুখি বৃহত্তর ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ পরীক্ষায় হেরে গেলেই ভেঙে যাবে ইইউ।

রাশিয়ার গ্যাস রফতানির বড় বাজার ইউরোপের অধিকাংশ দেশ। রাশিয়ার গ্যাসের ওপরই নির্ভর করছে এদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। ইউরোপকে কাবু করতে এই শক্তিশালী রফতানি অস্ত্রই ব্যবহার করতে শুরু করেছেন পুতিন। সম্প্রতি দুই ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে তারই নমুনা দেখিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার কুফল থেকে বাঁচতে ইইউ দেশগুলোকে রাশিয়ান মুদ্রা রুবলে গ্যাস কিনতে বাধ্য করছে মস্কো, নয়তো গ্যাস বন্ধ। এ সিদ্ধান্তকে ইইউ ‘ব্ল্যাকমেইল’ হিসেবে উল্লেখ করলেও এর ফলেই মহাদেশটির দুর্বলতা ও বিভাজন প্রকাশ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্রাসেলসের এক থিঙ্কট্যাঙ্কের সিনিয়র ফেলো সিমোন ট্যাগলিয়াপিত্রা বলেন, এটি একটি শাসনের কৌশল। এই সিদ্ধান্ত অভূতপূর্ব এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। রুবলে অর্থ প্রদানের রাশিয়ান সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য ইউরোপীয় দেশগুলোকে বিভক্ত করা।

আরও পড়ুন: রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প, ইউক্রেনকে ‘প্যাট্রিয়ট’ ক্ষেপণাস্ত্র দিলেও চাইছেন পুরো দাম

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলি রাশিয়ার শর্ত মেনে নিলে তা নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন হবে কি না, তা নিয়ে বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। কারণ রাশিয়ার নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ক্রেতাদের গ্যাসের মূল্য ইউরো বা ডলারে জমা দেওয়ার জন্য রাশিয়ান গাজপ্রমব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে, যেখান থেকে তা রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করার জন্য উপযোগী হবে। এই লেনদেন রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ককে নিয়ে চলতে বাধ্য করবে যা ইইউ নিষেধাজ্ঞার অধীন। এখন রাশিয়ার জ্বালানি খাতের ওপর বিভিন্ন রাষ্ট্রের আরোপিত অবরোধ নিয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে খোদ ইইউ-র মধ্যেই। ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছে হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া। বলছে, রাশিয়ার জ্বালানির বিকল্প তাদের হাতে নেই।

আরও পড়ুন: পূর্ব ইউক্রেনে ভয়াবহ পরিস্থিতি’

আরও পড়ুন: দক্ষিণ ইউক্রেনে বিলি হচ্ছে রুশ পাসপোর্ট!