০১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গুজরাটের ‘নারোদা গণহত্যা’ ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়! কে এই মায়া কোদনানি! যাকে বাঁচাতে ছুটে এসেছিলেন স্বয়ং অমিত শাহ 

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার
  • / 9

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ২০০২ গোধরা পরবর্তী গণহত্যা পর্বে আহমদাবাদ শহরের এই নারোদা গামে  উগ্র-হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিম সম্প্রদায়ের ১১জনকে পুড়িয়ে মেরেছিল। ঘটনাটি ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, সেই দিন অযোধ্যা থেকে গুজরাট পৌঁছেছিল সবরমতি এক্সপ্রেস। ২৫ ফেব্রুয়ারি, উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা জেলা থেকে আহমদাবাদে পৌঁছানোর জন্য সবরমতি এক্সপ্রেস ছেড়েছিল। এই ট্রেনে দু হাজারের বেশি কর সেবক ছিলেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি এই ট্রেনটি চার ঘন্টা দেরি করে গোধরা স্টেশনে পৌঁছেছিল।তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রেনটি গোধরা স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার সময় জরুরি চেইন টেনে ট্রেনটি থামিয়ে দেওয়া হয় এবং হঠাৎ সমবেত জনতা ট্রেনে পাথর ছুড়ে এবং কয়েকটি বগিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

নারোদা থানায় দায়ের করা এফআইআর অনুযায়ী, ২৮ ফেব্রুয়ারি নারোদা গাম এলাকার মুসলিম মহল্লা, কুম্ভার বাস এলাকায় হামলা চালিয়ে বেশ কিছু ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া হয়, সেই ঘটনায় ১১জন মুসলিম মারা যায়।

গুজরাট গণহত্যার তদন্তে নিযুক্ত নানাবতী কমিশন বেশ কয়েকজন সাক্ষীকে উদ্ধৃত করে রিপোর্ট দিয়েছিল, ‘মুসলিমরা সেদিন ওখানে পুলিশের থেকে কোনও সাহায্য পায়নি। তাঁদের দুষ্কৃতীদের হাতে  ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ সেখানে যায় সন্ধ্যার পর। এর মধ্যে বেশ কিছু পুলিশ অফিসারের কমিশনকে দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, তাঁরা নারোদা গামে পৌঁছাতে পারেননি  কারণ তাঁরা তখন কাছের নারোদা পাটিয়ার আরও গুরুতর পরিস্থিতি সামলাচ্ছিলেন। নরোদা গাম থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে নরোদা পটিয়া এলাকায় দাঙ্গার মামলায় মায়া কোদনানি ও বাবু বজরঙ্গীকেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এই দাঙ্গায় ৯৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

পুলিশ হিংসার ঘটনায় জন্য তৎকালীন মন্ত্রী মায়া কোদনানি সহ ৮৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার বিষয়ে মোট নয়টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছিল। যার তদন্ত সিট  করেছে এবং তাদের শুনানি হয়েছে বিশেষ আদালতে। এর মধ্যে নরোদা গ্রাম গণহত্যার মামলাও রয়েছে।

গণহত্যার সময়ের যে নয়টি বড় ঘটনার তদন্ত করেছে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট), নারোদা গণহত্যা তারই একটি। এবং বিশেষ আদালতেই এর শুনানি চলছিল। গত ৫ এপ্রিল সওয়াল-জবাব শেষ হয়। এই মামলায় ৮৬জন অভিযুক্ত ছিল। এদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (খুন), ৩০৭ ধারা (খুনের চেষ্টা), ১৪৩ ধারা (বেআইনি সমাবেশ), ১৪৭ ধারা (দাঙ্গা), ১৪৮ ধারা (মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে দাঙ্গা), ১২০ বি ধারা (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) এবং ১৫৩ ধারা (দাঙ্গার জন্য উসকানি)। ৮৬ অভিযুক্তের মধ্যে ১৮জনের মামলা চলাকালীন মৃত্যু হয়।

একজনকে আগেই আদালত খালাস করে দিয়েছে। যে যে ধারায় অভিযোগ ছিল, সেইসব অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। যদিও ইতিমধ্যেই জামিনে থাকা ৬৭জনও বিশেষ আদালত বেকসুর খালাস করে দিল।

স্পেশাল প্রসিকিউটার সুরেশ শাহ জানিয়েছেন, ২০১০ সালে মামলার শুনানি শুরু হয়েছিল। দীর্ঘ ১৩ বছরে বাদী বা বিবাদি পক্ষ মিলে আদালতে ২৪৪জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। চার বছর আগেই যদিও এই মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ শেষ হয়ে গেছে। মোট ছজন বিচারপতি এই মামলা শুনেছেন।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে খোদ অমিত শাহ মায়া কোদনানির হয়ে সাক্ষী দিতে হাজির হয়েছিলেন আদালতে। মন্ত্রী কোদনানির অজুহাত ছিল, তিনি নাকি সেদিন গণহত্যার সময়ে নারোদা গ্রামে ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন গুজরাট বিধানসভায় এবং পরে গিয়েছিলেন  সোলা সরকারি হাসপাতালে। এই অজুহাতের সাক্ষ্য প্রমাণ দিতে বর্তমানে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আদালতে তলব করার আরজি জানিয়েছিলেন তিনি।

এবং অমিত শাহ সেই মতো এসে সাক্ষ্য দিয়ে যান, ‘মায়া কোদনানিকে তিনি সেদিন সকাল সাড়ে আটটার সময় বিধানসভায় এবং পরে ১১টা, সওয়া এগারোটা নাগাদ সোলা হাসপাতালে দেখেছেন।’ মায়া কোদনানি খালাস হওয়ার ক্ষেত্রে এই সাক্ষ্য যথেষ্টই গুরুত্ব পেয়েছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও ২০১৮ সালে সিট বিশেষ আদালতকে বলেছিল, অমিত শাহের সাক্ষ্য মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।

সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসাবে কোদনানি, বজরঙ্গী ও অন্যান্য অভিযুক্তদের মধ্যে ফোন কলের বিস্তারিত পেশ করা হয়েছিল। আদালতকে সাংবাদিক আশিস খেতনের স্টিং অপারেশনের ভিডিওটিও দেওয়া হয়েছিল। সেই ভিডিওতে বাজু বজরঙ্গী বলেছে, ‘যখন আমি একজন মুসলিম মহিলার গর্ভের ভ্রুণকে তরোয়ালের মাথায় তুলে নাচাচ্ছিলাম, আমার নিজেকে মহারানা প্রতাপ মনে হচ্ছিল।’

এই কোদনানিরই ২৮ বছর জেল হয়েছিল নারোদা পাটিয়া গণহত্যায়। কিন্তু গুজরাট হাইকোর্টের রায়ে এখন মুক্ত। এবার ছাড় পেলেন নারোদা গাম গণহত্যা থেকেও। দুই নারোদায় গণহত্যায় চালানোয় পেশায় চিকিৎসক মোদির এই মন্ত্রীই মূল হোতা ছিলেন বলে জানা গেছে।
রায়ের পর বাইরে যখন ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান উঠেছে তখন মায়া কোদনানি গলা ফাটিয়ে বলেছেন, ‘সত্যের জয় হল। আর নারোদা গামে হিংসার শিকার হয়েছিলেন তাঁদের পরিবারের পক্ষে আইনজীবী শাহশাদ পাঠান জানিয়েছে, এই বেকসুর খালাসের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তাঁরা গুজরাট হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন। তাঁর কথায়, ‘প্রশ্নটা তো রয়েই গেল, পুলিশের উপস্থিতিতে কারা সেদিন ১১জন মানুষকে পুড়িয়ে মারল?

আদালতের রায় ঘোষণার পরই ক্ষোভে ফুঁসছে দাঙ্গায় স্বজনহারা পরিবারগুলি। সেদিনের দাঙ্গায় বেঁচে যাওয়া অনেকেই আদালতের এই রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন,  ‘২০০২ সালে, ১১ জনকে হত্যা করা হয়েছিল, আর আজ ন্যায়বিচারকে হত্যা করা হয়েছে”। বিচারে জবানবন্দি দেওয়া সাক্ষীরা এই দিনটিকে দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য একটি ‘কালো দিন’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন, সেই সঙ্গে আদালতের রায়কে ‘বিবেকহীন’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন।

মামলার অন্যতম সাক্ষী ইমতিয়াজ আহমেদ হুসেন কুরেশি তিনি বলেছেন,  ‘যাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া উচিত ছিল আদালতের। পরিবর্তে, আদালত তাদের মুক্তি দিয়েছে। বিচার বিভাগের প্রতি আমাদের ‘বিশ্বাস’ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যারা মারা গেছেন সেই দাঙ্গায়, তারা কি তখন আত্মহত্যা করে মারা গেছেন? তারা কি নিজেরাই নিজেদের পুড়িয়ে খুন করেছে?”  তিনি বলেন, ২১ বছর ধরে ন্যায় বিচারের আশায় সেদিনের দাঙ্গায় স্বজনহারা পরিবারগুলি অপেক্ষা করে এসেছে। তবে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

গুজরাটের ‘নারোদা গণহত্যা’ ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়! কে এই মায়া কোদনানি! যাকে বাঁচাতে ছুটে এসেছিলেন স্বয়ং অমিত শাহ 

আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ২০০২ গোধরা পরবর্তী গণহত্যা পর্বে আহমদাবাদ শহরের এই নারোদা গামে  উগ্র-হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিম সম্প্রদায়ের ১১জনকে পুড়িয়ে মেরেছিল। ঘটনাটি ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, সেই দিন অযোধ্যা থেকে গুজরাট পৌঁছেছিল সবরমতি এক্সপ্রেস। ২৫ ফেব্রুয়ারি, উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা জেলা থেকে আহমদাবাদে পৌঁছানোর জন্য সবরমতি এক্সপ্রেস ছেড়েছিল। এই ট্রেনে দু হাজারের বেশি কর সেবক ছিলেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি এই ট্রেনটি চার ঘন্টা দেরি করে গোধরা স্টেশনে পৌঁছেছিল।তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রেনটি গোধরা স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার সময় জরুরি চেইন টেনে ট্রেনটি থামিয়ে দেওয়া হয় এবং হঠাৎ সমবেত জনতা ট্রেনে পাথর ছুড়ে এবং কয়েকটি বগিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

নারোদা থানায় দায়ের করা এফআইআর অনুযায়ী, ২৮ ফেব্রুয়ারি নারোদা গাম এলাকার মুসলিম মহল্লা, কুম্ভার বাস এলাকায় হামলা চালিয়ে বেশ কিছু ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া হয়, সেই ঘটনায় ১১জন মুসলিম মারা যায়।

গুজরাট গণহত্যার তদন্তে নিযুক্ত নানাবতী কমিশন বেশ কয়েকজন সাক্ষীকে উদ্ধৃত করে রিপোর্ট দিয়েছিল, ‘মুসলিমরা সেদিন ওখানে পুলিশের থেকে কোনও সাহায্য পায়নি। তাঁদের দুষ্কৃতীদের হাতে  ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ সেখানে যায় সন্ধ্যার পর। এর মধ্যে বেশ কিছু পুলিশ অফিসারের কমিশনকে দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, তাঁরা নারোদা গামে পৌঁছাতে পারেননি  কারণ তাঁরা তখন কাছের নারোদা পাটিয়ার আরও গুরুতর পরিস্থিতি সামলাচ্ছিলেন। নরোদা গাম থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে নরোদা পটিয়া এলাকায় দাঙ্গার মামলায় মায়া কোদনানি ও বাবু বজরঙ্গীকেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এই দাঙ্গায় ৯৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

পুলিশ হিংসার ঘটনায় জন্য তৎকালীন মন্ত্রী মায়া কোদনানি সহ ৮৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার বিষয়ে মোট নয়টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছিল। যার তদন্ত সিট  করেছে এবং তাদের শুনানি হয়েছে বিশেষ আদালতে। এর মধ্যে নরোদা গ্রাম গণহত্যার মামলাও রয়েছে।

গণহত্যার সময়ের যে নয়টি বড় ঘটনার তদন্ত করেছে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট), নারোদা গণহত্যা তারই একটি। এবং বিশেষ আদালতেই এর শুনানি চলছিল। গত ৫ এপ্রিল সওয়াল-জবাব শেষ হয়। এই মামলায় ৮৬জন অভিযুক্ত ছিল। এদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (খুন), ৩০৭ ধারা (খুনের চেষ্টা), ১৪৩ ধারা (বেআইনি সমাবেশ), ১৪৭ ধারা (দাঙ্গা), ১৪৮ ধারা (মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে দাঙ্গা), ১২০ বি ধারা (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) এবং ১৫৩ ধারা (দাঙ্গার জন্য উসকানি)। ৮৬ অভিযুক্তের মধ্যে ১৮জনের মামলা চলাকালীন মৃত্যু হয়।

একজনকে আগেই আদালত খালাস করে দিয়েছে। যে যে ধারায় অভিযোগ ছিল, সেইসব অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। যদিও ইতিমধ্যেই জামিনে থাকা ৬৭জনও বিশেষ আদালত বেকসুর খালাস করে দিল।

স্পেশাল প্রসিকিউটার সুরেশ শাহ জানিয়েছেন, ২০১০ সালে মামলার শুনানি শুরু হয়েছিল। দীর্ঘ ১৩ বছরে বাদী বা বিবাদি পক্ষ মিলে আদালতে ২৪৪জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। চার বছর আগেই যদিও এই মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ শেষ হয়ে গেছে। মোট ছজন বিচারপতি এই মামলা শুনেছেন।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে খোদ অমিত শাহ মায়া কোদনানির হয়ে সাক্ষী দিতে হাজির হয়েছিলেন আদালতে। মন্ত্রী কোদনানির অজুহাত ছিল, তিনি নাকি সেদিন গণহত্যার সময়ে নারোদা গ্রামে ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন গুজরাট বিধানসভায় এবং পরে গিয়েছিলেন  সোলা সরকারি হাসপাতালে। এই অজুহাতের সাক্ষ্য প্রমাণ দিতে বর্তমানে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আদালতে তলব করার আরজি জানিয়েছিলেন তিনি।

এবং অমিত শাহ সেই মতো এসে সাক্ষ্য দিয়ে যান, ‘মায়া কোদনানিকে তিনি সেদিন সকাল সাড়ে আটটার সময় বিধানসভায় এবং পরে ১১টা, সওয়া এগারোটা নাগাদ সোলা হাসপাতালে দেখেছেন।’ মায়া কোদনানি খালাস হওয়ার ক্ষেত্রে এই সাক্ষ্য যথেষ্টই গুরুত্ব পেয়েছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও ২০১৮ সালে সিট বিশেষ আদালতকে বলেছিল, অমিত শাহের সাক্ষ্য মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।

সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসাবে কোদনানি, বজরঙ্গী ও অন্যান্য অভিযুক্তদের মধ্যে ফোন কলের বিস্তারিত পেশ করা হয়েছিল। আদালতকে সাংবাদিক আশিস খেতনের স্টিং অপারেশনের ভিডিওটিও দেওয়া হয়েছিল। সেই ভিডিওতে বাজু বজরঙ্গী বলেছে, ‘যখন আমি একজন মুসলিম মহিলার গর্ভের ভ্রুণকে তরোয়ালের মাথায় তুলে নাচাচ্ছিলাম, আমার নিজেকে মহারানা প্রতাপ মনে হচ্ছিল।’

এই কোদনানিরই ২৮ বছর জেল হয়েছিল নারোদা পাটিয়া গণহত্যায়। কিন্তু গুজরাট হাইকোর্টের রায়ে এখন মুক্ত। এবার ছাড় পেলেন নারোদা গাম গণহত্যা থেকেও। দুই নারোদায় গণহত্যায় চালানোয় পেশায় চিকিৎসক মোদির এই মন্ত্রীই মূল হোতা ছিলেন বলে জানা গেছে।
রায়ের পর বাইরে যখন ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান উঠেছে তখন মায়া কোদনানি গলা ফাটিয়ে বলেছেন, ‘সত্যের জয় হল। আর নারোদা গামে হিংসার শিকার হয়েছিলেন তাঁদের পরিবারের পক্ষে আইনজীবী শাহশাদ পাঠান জানিয়েছে, এই বেকসুর খালাসের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তাঁরা গুজরাট হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন। তাঁর কথায়, ‘প্রশ্নটা তো রয়েই গেল, পুলিশের উপস্থিতিতে কারা সেদিন ১১জন মানুষকে পুড়িয়ে মারল?

আদালতের রায় ঘোষণার পরই ক্ষোভে ফুঁসছে দাঙ্গায় স্বজনহারা পরিবারগুলি। সেদিনের দাঙ্গায় বেঁচে যাওয়া অনেকেই আদালতের এই রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন,  ‘২০০২ সালে, ১১ জনকে হত্যা করা হয়েছিল, আর আজ ন্যায়বিচারকে হত্যা করা হয়েছে”। বিচারে জবানবন্দি দেওয়া সাক্ষীরা এই দিনটিকে দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য একটি ‘কালো দিন’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন, সেই সঙ্গে আদালতের রায়কে ‘বিবেকহীন’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন।

মামলার অন্যতম সাক্ষী ইমতিয়াজ আহমেদ হুসেন কুরেশি তিনি বলেছেন,  ‘যাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া উচিত ছিল আদালতের। পরিবর্তে, আদালত তাদের মুক্তি দিয়েছে। বিচার বিভাগের প্রতি আমাদের ‘বিশ্বাস’ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যারা মারা গেছেন সেই দাঙ্গায়, তারা কি তখন আত্মহত্যা করে মারা গেছেন? তারা কি নিজেরাই নিজেদের পুড়িয়ে খুন করেছে?”  তিনি বলেন, ২১ বছর ধরে ন্যায় বিচারের আশায় সেদিনের দাঙ্গায় স্বজনহারা পরিবারগুলি অপেক্ষা করে এসেছে। তবে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।