দুর্নীতিবাজদের দু’মাসের চরম সময়সীমা মমতার

- আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২২, সোমবার
- / 12
পুবের কলম প্রতিবেদকঃ উত্তরবঙ্গ সফরের প্রথম দিনেই বগটুই নিয়ে আক্রমণাত্মক মেজাজে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বীকার করে নিলেন পুলিশ প্রথম দিকে কিছুটা ভুল করেছে। একইসঙ্গে হুঁশিয়ারি দিলেন, দুর্নীতিগ্রস্তদের ২ মাস সময় দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে না শুধরে গেলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।রবিবার শিলিগুড়ির উত্তরা ময়দানে এক সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি দার্জিলিং। জলপাইগুড়ি, কোচবিহারের জন্য ১১টি প্রকল্পের সূচনা করেন। সেখানে বগটুই প্রসঙ্গ নিয়েও সরব হন তিনি। বলেন, ‘এখানে একটা ঘটনা ঘটেছে। সেটা নিন্দানীয়, খুন হয়েছে তৃণমূল নেতা। যাদের বাড়িতে আগুন লেগেছে তারাও তৃণমূল নেতা। খুন হল তৃণমূল, আগুন লাগল যাদের বাড়িতে তারাও তৃণমূল। আর কিছু চ্যানেল তৃণমূলকে গালাগালি দিয়ে ব্যবসা করতে নেমেছে। তা হলে বুঝুন, আমার হাত কাটল, আমার পা কাটল, আমার মাথা কাটল আবার আমাকেই গালাগালি দিচ্ছে। হ্যাঁ, পুলিশের ভুলছিল প্রথমে, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। ওসি, এসডিপিও’কে সাসপেন্ড করেছি। ২২ জন গ্রেফতার হয়েছে। তৃণমূল ব্লক সভাপতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সবাই জানে সব তৃণমূলের লোকরাই গ্রেফতার হয়েছে। যাঁদের ক্ষতি হয়েছে তাঁদের এক লক্ষ টাকা দিতে চেয়েছিলাম। ওঁরা বলল এতে হবে না দিদি, ঘর সারানোর জন্য ২ লক্ষ করে দিয়েছি।’
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, বগটুইয়ের ঘটনা একটি ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’। যাতে এখানে দেউচা পাঁচামি কয়লা প্রকল্প করা না যায়, শিল্প করা না যায়। বিরোধীদের নিশানা করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, দু’দিন আগে ১০ জন পুড়ে মারা গেল। খুন, মৃত্যু সবটাই খারাপ। আমি সমর্থন করছি না। বিহারে বডি এল, কোনও চ্যানেল তো কথা বলল না। কীভাবে পুড়ে মারা গেলেন, সত্যি পুড়ে মারা গেলেন নাকি পুড়িয়ে দেওয়া হল তা নিয়ে তো কোনও কথা হল না? কেরল থেকে ছ’দিন আগে চারটে দেহ এল। কই সিপিএম নেতারা তো কিছুই বললেন না? খালি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গালাগাল দেওয়া হচ্ছে। কী কংগ্রেস নেতারা, আপনাদের রাজ্য থেকে ফিরে আসছে মৃতদেহ। কোনও কথা নেই? বিজেপি ভুলে গিয়েছে, কাশ্মীর থেকে মুর্শিদাবাদে ফিরে এল আপেলের চাষ করতে যাওয়া একটার পর একটা মৃতদেহ। কখনও মুর্শিদাবাদে এসেছে, কখনও মালদহে এসেছে, কখনও নদিয়ায় এসেছে। তারপর তো পরিবারগুলোর দিকে কেউ ফিরেও তাকায়নি।
রামপুরহাটের ঘটনার পিছনে বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে বলেও এদিন অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘আমি এখনও বলছি রামপুরহাটের ঘটনার পিছনে বড় ষড়যন্ত্র আছে। ষড়যন্ত্র করেই করা হয়েছে। আমরা চাই এর বিচার হোক। ঘটনা ঘটার পর আমাদের সিট অনেক কাজ করেছিল। সিবিআই তদন্ত করেছে, ভাল করেছে। সিবিআই কাজটা করুক, আমাদের সহযোগিতা থাকবে। কিন্তু এটা না করে যদি বিজেপির কথামতো অন্য কাজ করতে যায়, তা হলে আমরা ফের আন্দোলন করতে রাস্তায় নামব।
আজ সোমবার কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠান করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে একাধিক সরকারি প্রকল্পের সূচনা করতে পারেন। তার আগে রামপুরহাটের ঘটনা নিয়ে ফের সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন সাধারণ মানুষকে আরও সজাগ হতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘সাধারণ মানুষ নজর রাখুন। কোথাও কিছু খারাপ জিনিস দেখলেই পুলিশকে জানান। পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে আমাকেও জানাতে পারেন, আমার নম্বরে। আমি তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেব। সাধ্যমতো আমরা চেষ্টা করি, পাড়ায় পাড়ায় গন্ডগোল হলে আমাকে গালাগালি দেবেন! এলাকায় যাতে গন্ডগোল না হয় তা দেখতে হবে। আর আমার নামে আর মুখে কালি লাগিয়ে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি মিছিল করবে।
রামপুরহাট কাণ্ডে সিবিআই তদন্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘রামপুরহাটে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে তদন্ত হোক। সিবিআই হয়েছে, ভালই হয়েছে। তদন্তে সত্যিটা বেরিয়ে আসুক, আমরা সবরকম সহযোগিতা করব। কিন্তু তার বদলে অন্য কোনও কাজ করলে, বিজেপির কথায় চললে আমরা কিন্তু রাস্তায় আন্দোলনে নামব। নোবেল চুরি থেকে নন্দীগ্রাম, নেতাই, সিঙ্গুরে তাপসী মালিক খুনে সিবিআই আজও বিচার করতে পারেনি। বরং সিট তদন্তে অনেকটা এগিয়েছিল।’
সংবাদ মাধ্যমের একাংশকেও এদিন একহাত নেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘কোনও কোনও চ্যানেল ব্যবসার জন্য দিনভর রক্ত দেখিয়ে যাবে টিআরপি বাড়ানোর জন্য। তাতে বাচ্চাদের মনে কী প্রভাব পড়ছে ভাবে না। টিআরপির আগুনে নিজেরাই পুড়ে যাবে। মানুষের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। পেট্রল- ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ছে, এগুলো চাপা দেওয়ার জন্য মিডিয়াকে দিয়ে শুধু এইসব দেখাচ্ছে। যাতে শিল্প না হয়, চাকরি না হয়, মানুষ পেট্রল-গ্যাসের দাম বাড়লে প্রতিবাদ না করতে পারে তাই এইসব হচ্ছে। দেউচা-পাঁচামি আটকাতে এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
নিজ দলের নেতা, জনপ্রতিনিধিদেরও এদিন হুঁশিয়ারি দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বলেন, ‘‘আমি আগামী দু’মাস সময় নেব। তারপর যদি কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকে, কারও বিরুদ্ধে খুনখারাপির অভিযোগ থাকে, অত্যাচারের অভিযোগ থাকে, ব্যবস্থা নেব। আমি আর একটা সেট আপ তৈরি করব যেমনটা আমি করেছিলাম ‘দিদিকে বলো’। এই নামটা আমি এখন বলছি না। আমরা ঠিক করে আপনাদের জানাব।’’ দিদিকে বলো’র মতো ওই গ্রিভ্যান্স সেলে সাধারণ মানুষ কী ভাবে অভিযোগ জানাতে পারবেন তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘একটা মিসড কল দেবেন। আপনার নাম করে বলবেন যে আপনি কী চাইছেন বা কোথায় কী ঘটছে। সঙ্গেসঙ্গে আমি অ্যাকশন নেব। সে অফিসারই হোক, সে কোনও রাজনৈতিক দলের লোকই হোক, সে কোনও সাংবাদিকই হোক, সে কোনও বাইরের লোকই হোক। সে কোনও দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টাই হোক, সে কোনও ষড়যন্ত্র করার চেষ্টাই হোক, কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’