বিলেতের মাটিতে বিজেপিকে তুলোধনা রাহুলের
ইমামা খাতুন
- আপডেট :
৬ মার্চ ২০২৩, সোমবার
- / 13
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: লন্ডনের মাটিতে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে একহাত নেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি। রাহুল বলেন, ব্যাক্তি আক্রমণ করে তাঁকে থামানো যাবে না। তিনি লড়বেন। এটা সাহসিকতার সঙ্গে কাপুরুষতার লড়াই। ঘৃণার সঙ্গে ভালোবাসার লড়াই।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাহুল বলেন, ‘ওরা আমাকে যত বেশি আক্রমণ করবে, আমার জন্য সেটা তত ভালো হবে। আমি তত নিজেকে বুঝতে পারব। ভারত যাত্রার সময় থেকেই আমি বলছি, ‘নফরত কি বাজার মে হাম মুহাব্বত কি দুকান খুলনে আয়ে হ্যাঁ।’ রাহুলের এই বক্তব্য শুনে গোটা হল করতালিতে ফেটে পরে।
শ্রোতা ও দর্শকদের এমন প্রতিক্রিয়া দেখে রাহুল বলেন, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ দেখে আমার কেবলই মনে হচ্ছে ভারতীয় রাজনৈতিক নেতারা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে পারেন, কিন্তু ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে পারেন না।
রাহুলের মুখে দেশের ঐক্য এবং বৈচিত্রের কথা শুনে তাকে সমর্থন করেন হাজার হাজার দর্শক ও শ্রোতা। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাহুলের বত্তৃ«তা নিয়ে গোঁসা করেছে বিজেপি। তাদের অভিযোগ, বিদেশের মাটিতে দেশের সম্মানহানী করছেন রাহুল। লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাহুল গান্ধি বলেন, ‘আমি বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে কখনও ভারতকে অসম্মান করিনি। আমার কেমব্রিজের বক্তৃতায় ভারতকে হেয় করার মতো কিছুই বলিনি।’
রাহুল গান্ধি বলেন, ‘আমি কখনও আমার দেশের অপমান করিনি। বিজেপি আমার কথাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরিবেশন করছে। সেটা তারা এর আগেও করেছে। মিডিয়া এই সুযোগে টিআরপি বাড়িয়েছে। যে ব্যক্তি বিদেশে গিয়ে ভারতের মানহানি করেন, তিনি হলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।’
লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার সময় রাহুল বিবিসি ইস্যুটিও তোলেন। রাহুল গান্ধী বলেন, ‘ভারতে যেভাবে কণ্ঠরোধ চলছে, বিবিসির ঘটনা সেটারই উদাহরণ।’ কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘কণ্ঠরোধ করার এই প্রবণতা গত ৯ বছর ধরে অনবরত চলছে। সাংবাদিকদের ধমকি দেওয়া হচ্ছে, ভয় দেখানো হচ্ছে। আমি এই সরকারের থেকে অন্য কিছু আশা করি না।
বিবিসি আজ যদি সরকার বিরোধী খবর পরিবেশন বন্ধ করে দেয়, তাহলে সব আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এটাই নতুন ভারতের ধারণা। বিজেপি ভারতকে বাকরুদ্ধ করে রাখতে চায়। বিজেপি ভারতের জনগণকে চুপ রাখতে চায় যাতে সেই সুযোগে তারা দেশের সব সম্পদ তাদের বন্ধুদের হস্তগত করতে পারে।’
৫২ বছর বয়সী এই কংগ্রেস নেতা বলেন, আমাদের সরকার বিরোধী দলকে কোনো ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে দেয় না। সংসদে ডিমনিটাইজেশন ও জিএসটির মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না।
অথচ চিনারা আমাদের এলাকার ভিতরে বসে আছে, তা জেনেও সে বিষয়ে সংসদে একটি কথাও বলতে দেওয়া হয় না। কিছুদিন আগে ভারতের বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, তাঁরা কীভাবে চিনের সঙ্গে যুদ্ধে নামবে, চিন ভারতের চেয়ে ঢের বেশি শক্তিশালী! একটা দেশের সরকারের বুক তার প্রতিবেশীর শক্তির ভয়ে ঢিপঢপ করছে! রাহুলের এমন কথা শুনে হাজার দুয়েক মানুষ একসঙ্গে ‘শেম শেম’ করে চিৎকার করে ওঠেন।
রাহুল বলেন ৪০০০ কিলোমিটারের ভারত জোড় যাত্রা করতে কার্যত বাধ্য হয়েছিলাম। কারণ ওরা গণতন্ত্রকে দিন দিন খতম করে দিতে চাইছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলি গণতন্ত্রকে ধরে রাখে সেই প্রতিষ্ঠানগুলিকে বিজেপিকে কব্জা করে ফেলেছে।
আমি গোটা দেশের সামনে ফের তুলে ধরলাম আসল ভারতের প্রকৃত রূপ। পারস্পরিক অসম্মান ছাড়া রাগ ছাড়া ঘৃণা ছাড়া যে আমরা একত্রে মিলেমিশে থাকতে পারি সেটা আমি তুলে ধরেছিলাম।