১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিজেপির ইশতেহার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ডেরেক ও’ব্রায়েন

চামেলি দাস
  • আপডেট : ১০ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 101

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: কেন্দ্র সরকার তাদের চলতি মেয়াদের প্রথম বর্ষ পূর্ণ করতেই, তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি)-এর নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন সোমবার বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহার থেকে একাধিক প্রতিশ্রুতির তালিকা তুলে ধরে বলেন, বাস্তবতাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় মেয়াদ এটি, এবং তিনি ইতিমধ্যেই ১১ বছর ধরে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন। নিজের ব্লগে প্রকাশিত এক লেখায় ও’ব্রায়েন বিজেপির ৬৯ পৃষ্ঠার ইশতেহার থেকে ১৫টি প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিজেপি ‘গরিব কি থালি’ সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও, বিশ্বব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, ৭.৫ কোটি ভারতীয় প্রতিদিন ২২৫ টাকার কম আয় করেন। তিনি জানান, ‘সবচেয়ে গরিব ৫ শতাংশ মানুষের দৈনিক খরচ ৬৮ টাকা, অথচ একটি নিরামিষ থালির দাম ৭৭ টাকা।’

আরও পড়ুন: হাওয়াই চটি এত পছন্দ হলে দোকান খুলুন- বিধানসভায় নাম না করে সুকান্তকে কটাক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর

বিজেপি ‘নব্য মধ্যবিত্ত’ শ্রেণির ক্ষমতায়নের কথা বললেও, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পারিবারিক ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে এবং আর্থিক সঞ্চয় গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিম্নস্তরে পৌঁছেছে বলে দাবি করেন তিনি।

আরও পড়ুন: শর্তসাপেক্ষে শুভেন্দুকে মহেশতলা যাওয়ার অনুমতি দিল হাইকোর্ট

চাকরির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি বলেও জানান তিনি। বরং ২০২১ সাল থেকে আরও বেশি মানুষকে কৃষি খাতে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: ফের উত্তপ্ত বিধানসভা, সাসপেন্ড বিজেপি বিধায়ক মনোজ ওঁরাও

ব্রায়েন বলেন, ‘বর্তমানে ৪৬ শতাংশ শ্রমশক্তি কৃষিতে যুক্ত। প্রতি পাঁচজনের মধ্যে তিনজন সেলফ এমপ্লয়েড, বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা সেরা কর্মসংস্থান নয়।’ নারী কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মহিলাদের কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণ মাত্র ২.৩ শতাংশ বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়ে চাকরির ক্ষেত্রে নারীরা দৈনিক মাত্র ১০ মিনিট বেশি সময় ব্যয় করেছে। এখনও নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ পুরুষদের তুলনায় অর্ধেক।’ নারীদের জন্য আইনসভায় সংরক্ষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লোকসভায় বিজেপির মহিলা সাংসদের সংখ্যা মাত্র ১৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে পাস হওয়া নারী সংরক্ষণ বিল নিয়েও বিজেপিকে আক্রমণ করেন ও’ব্রায়েন।

তিনি বলেন, ‘এই বিল আদতে ২০২৭ সালের জনগণনা এবং পরবর্তীতে নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ (ডিলিমিটেশন) পর্যন্ত কার্যকর হবে না। কবে বাস্তবায়িত হবে? কেউ জানে না।’

কৃষকদের বিষয়েও বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন কৃষক আত্মহত্যা করছেন। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গ্রামীণ এলাকায় মজুরি প্রতি বছর ০.৪ শতাংশ হারে কমেছে, আর কৃষি মজুরি বেড়েছে মাত্র ০.২ শতাংশ হারে। সংসদীয় কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী কিষাণ যোজনার বার্ষিক সহায়তা ১২,০০০ টাকা করার প্রস্তাবও সরকার গ্রহণ করেনি।

তিনি বলেন, উৎপাদন খাতের জিডিপিতে অবদান ২০২৩ সালে ১২.৩ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে ৪.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০১৪ সালের চেয়েও কম। গত দুই বছরে মাত্র প্রতি দশজনের মধ্যে একজনই উৎপাদন খাতে নিযুক্ত হয়েছেন। ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) খাত মাত্র ২ শতাংশের সামান্য বেশি হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

রেল নিরাপত্তায় ‘কবচ’ প্রযুক্তি প্রসঙ্গে বলেন, এটি মাত্র ২ শতাংশ রুটে কার্যকর হয়েছে। বুলেট ট্রেন প্রকল্প ও ভারতমালা পরিযোজনার (বহুমুখী এক্সপ্রেসওয়ে ও রিং রোড প্রকল্প) বিলম্ব নিয়েও সরকারকে তুলোধনা করেন তিনি।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিজেপির অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। গত দশ বছরে প্রায় ১৯৩টি সাংসদ-বিধায়ক বা রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) মামলা দায়ের করলেও মাত্র দু’টি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। তিনি জানান, ‘গত ১১ বছরে ইডি ৫,২৯৭টি মামলা করেছে, মাত্র ৪৭টি মামলায় চার্জশিট গঠিত হয়েছে, এবং প্রতি ১,০০০ মামলায় মাত্র ৭ জন দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।’

চাকরির অবস্থা প্রসঙ্গে বলেন, প্রতি তিনজন তরুণের একজন শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত নন; এঁদের ৯৫ শতাংশই নারী মণিপুরে চলমান সহিংসতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখনও পর্যন্ত এই রাজ্যে পরিদর্শনে যাননি।

 

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বিজেপির ইশতেহার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ডেরেক ও’ব্রায়েন

আপডেট : ১০ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: কেন্দ্র সরকার তাদের চলতি মেয়াদের প্রথম বর্ষ পূর্ণ করতেই, তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি)-এর নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন সোমবার বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহার থেকে একাধিক প্রতিশ্রুতির তালিকা তুলে ধরে বলেন, বাস্তবতাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় মেয়াদ এটি, এবং তিনি ইতিমধ্যেই ১১ বছর ধরে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন। নিজের ব্লগে প্রকাশিত এক লেখায় ও’ব্রায়েন বিজেপির ৬৯ পৃষ্ঠার ইশতেহার থেকে ১৫টি প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিজেপি ‘গরিব কি থালি’ সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও, বিশ্বব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, ৭.৫ কোটি ভারতীয় প্রতিদিন ২২৫ টাকার কম আয় করেন। তিনি জানান, ‘সবচেয়ে গরিব ৫ শতাংশ মানুষের দৈনিক খরচ ৬৮ টাকা, অথচ একটি নিরামিষ থালির দাম ৭৭ টাকা।’

আরও পড়ুন: হাওয়াই চটি এত পছন্দ হলে দোকান খুলুন- বিধানসভায় নাম না করে সুকান্তকে কটাক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর

বিজেপি ‘নব্য মধ্যবিত্ত’ শ্রেণির ক্ষমতায়নের কথা বললেও, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পারিবারিক ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে এবং আর্থিক সঞ্চয় গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিম্নস্তরে পৌঁছেছে বলে দাবি করেন তিনি।

আরও পড়ুন: শর্তসাপেক্ষে শুভেন্দুকে মহেশতলা যাওয়ার অনুমতি দিল হাইকোর্ট

চাকরির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি বলেও জানান তিনি। বরং ২০২১ সাল থেকে আরও বেশি মানুষকে কৃষি খাতে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: ফের উত্তপ্ত বিধানসভা, সাসপেন্ড বিজেপি বিধায়ক মনোজ ওঁরাও

ব্রায়েন বলেন, ‘বর্তমানে ৪৬ শতাংশ শ্রমশক্তি কৃষিতে যুক্ত। প্রতি পাঁচজনের মধ্যে তিনজন সেলফ এমপ্লয়েড, বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা সেরা কর্মসংস্থান নয়।’ নারী কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মহিলাদের কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণ মাত্র ২.৩ শতাংশ বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়ে চাকরির ক্ষেত্রে নারীরা দৈনিক মাত্র ১০ মিনিট বেশি সময় ব্যয় করেছে। এখনও নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ পুরুষদের তুলনায় অর্ধেক।’ নারীদের জন্য আইনসভায় সংরক্ষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লোকসভায় বিজেপির মহিলা সাংসদের সংখ্যা মাত্র ১৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে পাস হওয়া নারী সংরক্ষণ বিল নিয়েও বিজেপিকে আক্রমণ করেন ও’ব্রায়েন।

তিনি বলেন, ‘এই বিল আদতে ২০২৭ সালের জনগণনা এবং পরবর্তীতে নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ (ডিলিমিটেশন) পর্যন্ত কার্যকর হবে না। কবে বাস্তবায়িত হবে? কেউ জানে না।’

কৃষকদের বিষয়েও বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন কৃষক আত্মহত্যা করছেন। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গ্রামীণ এলাকায় মজুরি প্রতি বছর ০.৪ শতাংশ হারে কমেছে, আর কৃষি মজুরি বেড়েছে মাত্র ০.২ শতাংশ হারে। সংসদীয় কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী কিষাণ যোজনার বার্ষিক সহায়তা ১২,০০০ টাকা করার প্রস্তাবও সরকার গ্রহণ করেনি।

তিনি বলেন, উৎপাদন খাতের জিডিপিতে অবদান ২০২৩ সালে ১২.৩ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে ৪.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০১৪ সালের চেয়েও কম। গত দুই বছরে মাত্র প্রতি দশজনের মধ্যে একজনই উৎপাদন খাতে নিযুক্ত হয়েছেন। ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) খাত মাত্র ২ শতাংশের সামান্য বেশি হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

রেল নিরাপত্তায় ‘কবচ’ প্রযুক্তি প্রসঙ্গে বলেন, এটি মাত্র ২ শতাংশ রুটে কার্যকর হয়েছে। বুলেট ট্রেন প্রকল্প ও ভারতমালা পরিযোজনার (বহুমুখী এক্সপ্রেসওয়ে ও রিং রোড প্রকল্প) বিলম্ব নিয়েও সরকারকে তুলোধনা করেন তিনি।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিজেপির অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। গত দশ বছরে প্রায় ১৯৩টি সাংসদ-বিধায়ক বা রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) মামলা দায়ের করলেও মাত্র দু’টি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। তিনি জানান, ‘গত ১১ বছরে ইডি ৫,২৯৭টি মামলা করেছে, মাত্র ৪৭টি মামলায় চার্জশিট গঠিত হয়েছে, এবং প্রতি ১,০০০ মামলায় মাত্র ৭ জন দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।’

চাকরির অবস্থা প্রসঙ্গে বলেন, প্রতি তিনজন তরুণের একজন শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত নন; এঁদের ৯৫ শতাংশই নারী মণিপুরে চলমান সহিংসতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখনও পর্যন্ত এই রাজ্যে পরিদর্শনে যাননি।