বিশেষ প্রতিবেদক: মালেশিয়ার সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় নিয়ে তথাকথিত প্রগতিশীল মহল খুবই উদ্বেলিত হয়ে উঠেছে। তাঁরা বলছেন, রায়টিতে মালেশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট এক ডজনেরও বেশি ইসলাম ভিত্তিক আইনকে খারিজ করে দিয়েছে। কিন্তু শিরোনাম দেখে যা মনে হবে তা কিন্তু বাস্তবে হয়নি। আসল কথা হল, মালেশিয়ায় বেশ কয়েকটি প্রদেশ রয়েছে। এর মধ্যে একটি কেলানটান প্রদেশে তৈরি নির্দিষ্ট কয়েকটি আইনকে সুপ্রিম কোর্ট অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে। বিদেশী সংবাদ সংস্থাগুলি মন্তব্য করেছে, মালেশিয়ার ফেডারেল কোর্টের বেঞ্চের প্রদত্ত এই রায়টি অন্যান্য প্রদেশেও চালু শরীয়াহ আইনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
মালেশিয়ায় দু’ভাবে আইন পাশ করা হয়। ইসলাম ভিত্তিক ক্রিমিনাল বা ফৌজদারি এবং পরিবারের প্রতি প্রযোজ্য আইন রয়েছে। এই শরীয়াহ আইন পাশ করে থাকে প্রদেশগুলি। আর সেক্যুলার আইনগুলি মালেশিয়ার ফেডারেল কোর্ট দ্বারা প্রণিত হয়। মালেশিয়ার প্রধান বিচারপতি ট্যাঙ্কেন মাইমুন তুয়ান মাট ৮-১ সংখ্যাধিক্যে কেলানটান প্রদেশের শরীয়াহ ভিত্তিক ফৌজদারি আইনের ১৬টিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন। এই আইনগুলির বেশির ভাগই ছিল পুরুষে পুরুষে সমকামিতা, পরিবারের মধ্যে অবৈধ অজাচার, জুয়া, যৌন হয়রানি এবং উপাসনাস্থলে ভাঙচুর বা অপবিত্র করা।
প্রধান বিচারপতি বলেন, কেলানটান প্রদেশের গণপ্রতিনিধিরা ক্ষমতা বহির্ভূত কাজ করেছেন। তাঁরা যে আইন তৈরি করেছেন তা করার অধিকার তাঁদের নেই। সেগুলির অধিকার রয়েছে কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের হাতে। তাই এই আইনগুলি কেবলমাত্র কেন্দ্র পার্লামেন্টে পাশ হতে পারবে। কেলানটান প্রদেশের আইনসভা এই আইনগুলি প্রণয়ন করে ভুল করেছে। অর্থাৎ ফেডারেল কোর্ট শরীয়াহ সঠিক না বেঠিক সে বিষয়ে কোনও আলোচনা করেনি। তারা শুধু বলেছে, এই আইন পাশ করার অধিকার প্রদেশিক আইনসভাগুলির নেই। কেলানটান প্রদেশ ইসলামি দল ‘পাস’ দ্বারা পরিচালিত। পাস কেলানটান প্রদেশের বিধানসভায় গরিষ্ঠতা পেয়েছে। আর তারা কঠোর শরীয়াহ আইনের পক্ষে। ফেডারেল কোর্টের এই রায় মুসলিম গোষ্ঠীগুলির মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তারা পুত্রাজায়াতে ফেডারেল কোর্টের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। এদের মধ্যে মহিলারা ছিলেন সর্বাধিক। তারা তাদের দাবি নিয়ে বক্তব্য রেখে আল্লাহু আকবর বলে ধ্বনি দেয়।
এই সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি মাইমুন বলেছেন, আমরা মালেশিয়ায় ইসলামি আইন সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করিনি। আমরা শুধু বলেছি, এই আইন প্রদেশিক আইনসভাগুলি পাস করতে পারে না। এই রায়টি ঘোষণার পর মালেশিয়ার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী মুহাম্মদ নাইম মোকতার বলেন, মালেশিয়ান সরকারের ইসলাম বিশেষজ্ঞরা শরীয়াহ আদালতগুলিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মালেশিয়ার ফেডারেল সংবিধানে ইসলামি বিচার ব্যবস্থাকে সুরক্ষা দেওয়া রয়েছে। প্রদেশিক আইনসভাগুলি যদি এই ধরনের ইসলামি আইন প্রণয়নের অধিকার না রাখে, তাহলে মালেশিয়ার কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট প্রয়োজনীয় শরীয়াহ আইন প্রণয়ন করবে।