১৩ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দ্বিতীয় বৃহত্তম টাইগার রিজার্ভের মর্যাদায় সুন্দরবন

মারুফা খাতুন
  • আপডেট : ২০ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার
  • / 183

পুবের কলম প্রতিবেদক : ৫০ বছরের ইতিহাস পেরিয়ে ফের নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ (এসটিআর)। গত সোমবার নয়াদিল্লিতে ন্যাশনাল বোর্ড অফ ওয়াইল্ডলাইফ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রস্তাবে সিলমোহর দেওয়ায় এই বাদাবন এবার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম টাইগার রিজার্ভ হতে চলেছে। এখন পর্যন্ত সুন্দরবনের আয়তন ছিল ২,৫৮৫ বর্গ কিমি। নতুন করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনবিভাগের রামগঙ্গা, রায়দিঘি ও মাতলা; এই তিনটি রেঞ্জ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আয়তন বাড়ছে আরও ১,০৪৪ বর্গ কিমি। মোট ৩,৬২৯ বর্গ কিমির এই বিস্তৃত অরণ্য অন্ধ্রপ্রদেশের নাগার্জুন সাগর, শ্রীশৈলম টাইগার রিজার্ভের (৩,৭২৭ বর্গ কিমি) পরই জায়গা করে নেবে।

বন দফতর সূত্রে খবর, নতুন তিনটি রেঞ্জ ‘বাফার এরিয়া’ হিসেবে যুক্ত হবে। এতদিন এই রেঞ্জে বাঘ থাকা সত্ত্বেও বনকর্মীরা টাইগার রিজার্ভের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। সম্প্রসারণের ফলে তারা যেমন রিস্ক অ্যালাওয়েন্স, প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শিখতে পারবেন, তেমনই বাঘ সংরক্ষণেও আসবে ‘সায়েন্টিফিক ম্যানেজমেন্ট’।

আরও পড়ুন: সুন্দরবনের পাঁচশ মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে নজির গড়ল আল আমিন মিশনের প্রাক্তনীরা

বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের মতে, কোর ও বাফার; যেভাবেই এই নতুন এলাকা চিহ্নিত হোক না কেন, বাঘের আবাসভূমি হিসেবে এটি সরাসরি ক্রিটিক্যাল টাইগার হ্যাবিট্যাটের মধ্যে ঢুকে যাবে। এর ফলে লোকালয়ে বাঘ ঢোকার প্রবণতাও কমবে। একইসঙ্গে জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের প্রোটোকল অনুযায়ী সুন্দরবনের প্রতিটি রয়্যাল বেঙ্গল এ বার সুরক্ষার আওতায় আসবে।

আরও পড়ুন: লুপ্তপ্রায় ন্যাদোস মাছ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ সুন্দরবনের

তবে পরিবর্তন শুধু বাঘ সংরক্ষণে সীমাবদ্ধ থাকবে না। রাজ্যের বনকর্তাদের মতে, সম্প্রসারণের ফলে পর্যটন ও স্থানীয় অর্থনীতিও ভোল পাল্টাবে। নতুন যুক্ত এলাকার জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ ছাড়াও কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর) ফান্ড ও টাইগার রিজার্ভ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বেসরকারি সাহায্য পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন: কৈখালি পর্যটন কেন্দ্রে যত্রতত্র প্লাস্টিক পরে থাকায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ

সুন্দরবনের প্রাক্তন হেড অফ ফরেস্ট সৌমিত্র দাশগুপ্ত বলেন, ‘এই সম্প্রসারণে সংরক্ষণ ও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমূল বদল আসবে। বনকর্মীরাও প্রাপ্য সুবিধা পাবেন।’ প্রাক্তন প্রধান বনকর্তা প্রদীপ ব্যাসের মতে, ‘বহুদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। সুন্দরবনের এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।’ সুন্দরবনের প্রতিটি রয়্যাল বেঙ্গল বাঘকে ঘিরে তাই শুরু হচ্ছে নতুন এক অধ্যায়। এই সম্প্রসারণ শুধু প্রকৃতি সংরক্ষণের লড়াই নয়, রাজ্যের মানুষের কাছে গর্বেরও বিষয়।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

দ্বিতীয় বৃহত্তম টাইগার রিজার্ভের মর্যাদায় সুন্দরবন

আপডেট : ২০ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার

পুবের কলম প্রতিবেদক : ৫০ বছরের ইতিহাস পেরিয়ে ফের নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ (এসটিআর)। গত সোমবার নয়াদিল্লিতে ন্যাশনাল বোর্ড অফ ওয়াইল্ডলাইফ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রস্তাবে সিলমোহর দেওয়ায় এই বাদাবন এবার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম টাইগার রিজার্ভ হতে চলেছে। এখন পর্যন্ত সুন্দরবনের আয়তন ছিল ২,৫৮৫ বর্গ কিমি। নতুন করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনবিভাগের রামগঙ্গা, রায়দিঘি ও মাতলা; এই তিনটি রেঞ্জ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আয়তন বাড়ছে আরও ১,০৪৪ বর্গ কিমি। মোট ৩,৬২৯ বর্গ কিমির এই বিস্তৃত অরণ্য অন্ধ্রপ্রদেশের নাগার্জুন সাগর, শ্রীশৈলম টাইগার রিজার্ভের (৩,৭২৭ বর্গ কিমি) পরই জায়গা করে নেবে।

বন দফতর সূত্রে খবর, নতুন তিনটি রেঞ্জ ‘বাফার এরিয়া’ হিসেবে যুক্ত হবে। এতদিন এই রেঞ্জে বাঘ থাকা সত্ত্বেও বনকর্মীরা টাইগার রিজার্ভের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। সম্প্রসারণের ফলে তারা যেমন রিস্ক অ্যালাওয়েন্স, প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শিখতে পারবেন, তেমনই বাঘ সংরক্ষণেও আসবে ‘সায়েন্টিফিক ম্যানেজমেন্ট’।

আরও পড়ুন: সুন্দরবনের পাঁচশ মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে নজির গড়ল আল আমিন মিশনের প্রাক্তনীরা

বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের মতে, কোর ও বাফার; যেভাবেই এই নতুন এলাকা চিহ্নিত হোক না কেন, বাঘের আবাসভূমি হিসেবে এটি সরাসরি ক্রিটিক্যাল টাইগার হ্যাবিট্যাটের মধ্যে ঢুকে যাবে। এর ফলে লোকালয়ে বাঘ ঢোকার প্রবণতাও কমবে। একইসঙ্গে জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের প্রোটোকল অনুযায়ী সুন্দরবনের প্রতিটি রয়্যাল বেঙ্গল এ বার সুরক্ষার আওতায় আসবে।

আরও পড়ুন: লুপ্তপ্রায় ন্যাদোস মাছ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ সুন্দরবনের

তবে পরিবর্তন শুধু বাঘ সংরক্ষণে সীমাবদ্ধ থাকবে না। রাজ্যের বনকর্তাদের মতে, সম্প্রসারণের ফলে পর্যটন ও স্থানীয় অর্থনীতিও ভোল পাল্টাবে। নতুন যুক্ত এলাকার জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ ছাড়াও কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর) ফান্ড ও টাইগার রিজার্ভ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বেসরকারি সাহায্য পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন: কৈখালি পর্যটন কেন্দ্রে যত্রতত্র প্লাস্টিক পরে থাকায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ

সুন্দরবনের প্রাক্তন হেড অফ ফরেস্ট সৌমিত্র দাশগুপ্ত বলেন, ‘এই সম্প্রসারণে সংরক্ষণ ও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমূল বদল আসবে। বনকর্মীরাও প্রাপ্য সুবিধা পাবেন।’ প্রাক্তন প্রধান বনকর্তা প্রদীপ ব্যাসের মতে, ‘বহুদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। সুন্দরবনের এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।’ সুন্দরবনের প্রতিটি রয়্যাল বেঙ্গল বাঘকে ঘিরে তাই শুরু হচ্ছে নতুন এক অধ্যায়। এই সম্প্রসারণ শুধু প্রকৃতি সংরক্ষণের লড়াই নয়, রাজ্যের মানুষের কাছে গর্বেরও বিষয়।