পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় স্থগিতাদেশ দিল না অবকাশকালীন বেঞ্চ

- আপডেট : ২২ মে ২০২৩, সোমবার
- / 12
পারিজাত মোল্লা: প্রথমে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এজলাস তারপর সুপ্রিম কোর্ট হয়ে হাইকোর্টের নব নিযুক্ত সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাস। রেগুলার ডিভিশন বেঞ্চেও মেলেনি স্থগিতাদেশ। হ্যাঁ, বহু চর্চিত পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই এজলাস সফরে নবতম সংযোজন অবকাশকালীন বেঞ্চ।
সোমবার পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে আপাতত কোনও স্থগিতাদেশ দিল না কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিত বসু ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের গ্রীষ্ম অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চ।
পুরনিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় তদন্তে আপাতত কোনও স্থগিতাদেশ নেই ।তবে যদি কারও বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করা হয়? তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। সোমবার এ কথা জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট এর অবকাশকালীন বেঞ্চ। পাশাপাশি কীসের ভিত্তিতে তদন্ত করতে চাইছে ইডি? তাও জানতে চাইল বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসু ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের গ্রীষ্ম অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চ।
কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডিকে আগামী ৬ জুন রেগুলার বেঞ্চের শুনানিতে পুরনিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত নথিপত্র/সিডি আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।এদিন এই মামলার শুনানি পর্বে রাজ্যের আইনজীবী জানান, পুর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করতে সিবিআই নতুন করে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত করছে। এইখানেই তাদের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে । সিঙ্গল বেঞ্চ এই এক্তিয়ারের বিষয়টি খতিয়ে দেখেনি? ‘
এরপর ইডির আইনজীবী কে বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসু ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায় প্রশ্ন করেন,- “আপনারা সিঙ্গল বেঞ্চে তদন্তের আবেদন করার আগে কি প্রমাণপত্র দাখিল করেছিলেন ? কোনও নথি বা সিডি দাখিল করা হয়েছিল ? সিবিআই পুরো শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করছিল । আপনারা (ইডি) কীসের ভিত্তিতে তদন্তের আবেদন জানালেন ?” মূল মামলাকারী সৌমেন নন্দীর আইনজীবী বলেন , -‘১৩ এপ্রিল ইডি একটি রিপোর্ট দিয়েছিল। সেই রিপোর্টে পরিষ্কার অয়ন শীল নামে ব্যক্তির গ্রেফতারর পর পুরনিয়োগ দুর্নীতির বিষয় সামনে আসছে’ ।
এর প্রত্যুত্তরে রাজ্যের আইনজীবী বলেন, – সত্যিই যদি কিছু পাওয়া যায়, সিবিআইয়ের দায়িত্ব তা রাজ্যকে জানানো, যে তারা পুরনিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু পেয়েছে। কিন্তু তা না করে হঠাৎ করে ইডি, যারা এই মামলার মূল পার্টি পর্যন্ত নয়, তারা আবেদন জানিয়ে দিল। সিঙ্গল বেঞ্চ তাতে সম্মতি দিতে পারে ‘?
আইন অনুযায়ী হঠাৎ করে রাজ্যের তদন্ত খতিয়ে দেখার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া যায় না বলে দাবি করেন রাজ্যের আইনজীবী। তিনি আরও জানিয়েছেন , -২১ এপ্রিল বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ এক্তিয়ার বর্হিভুত নির্দেশ দিয়েছিল’ ।
দু পক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসু সিবিআইয়ের আইনজীবীকে বলেন,- “আপনারা যতক্ষণ না আদালতকে দেখাতে পারছেন কোনও প্রমাণপত্র, যে সত্যিই এখানে তদন্ত করা প্রয়োজন, ততক্ষণ আদালত তাতে সম্মতি দিতে পারে না ।” বিচারপতি বসু সিবিআইয়ের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, -‘ তাদের তদন্তের কী পরিস্থিতি ‘?
সিবিআইয়ের আইনজীবী তখন জানান, অয়ন শীল গ্রেফতার হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে কিছু ওএমআর শিট উদ্ধার হয়েছে। তদন্ত চলছে’ ।
এরপর কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চের আরেক বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায় বলেন,- “আমরা আগে তদন্তের সিডি চাই ।” বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর প্রশ্ন, ‘ সৌমেন নন্দী কী করে জানলেন যে দুর্নীতি হয়েছে ? তিনি কি এই নিয়োগ দুর্নীতির সরাসরি শিকার ?’ মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, -‘ তিনি দুর্নীতির শিকার’।
বিচারপতি তখন প্রমাণ দেখাতে বলেন । বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু মামলাকারীর আইনজীবী কে বলেন, – “পুরো শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করছিল সিবিআই। সেখানে ইডি হঠাৎ করে আবেদন জানাল পুরনিয়োগ দুর্নীতি তদন্তের । সম্পূর্ণ অন্য একটা বিষয়ে। এটা সিঙ্গল বেঞ্চ কি খতিয়ে দেখেছে ?” এর উত্তরে মামলাকারীর আইনজীবী জানান, “এই দুর্নীতির পারস্পরিক যোগ রয়েছে । সেই জন্যই আদালত তাতে সম্মতি দিয়েছে ।”
আগামী ৬ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের রেগুলার ডিভিশন বেঞ্চে বলে জানা গেছে।