আসাদুল ইসলাম: মেটিয়াবুরুজের নাম শুনলে একসময় কিছু লোক আঁতকে উঠতেন। মেটিয়াবুরুজ গার্ডেনরিচ এলাকা কম্পর্কে তখন নানা নেতিবাচক প্রচারণা ছিল। সেই ছবি এলাকার মানুষদের নানা উদ্যোগের ফলে বদলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। মেটিয়াবুরুজের বস্ত্র ব্যবসা শুধু রাজ্যে নয় দেশের বিভিন্ন প্রদেশেও সুনাম কুড়িয়েছে যতটা ততটাই শিক্ষা বিমুখতা, সংস্কৃতি বিমুখতার পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাব নিয়েও কিছু লোক মন্তব্য করতেন।
সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চলের বস্ত্র ব্যবসায়ীদের হাত ধরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার নানা উদ্যোগ সেই ছবিকে বদলে দিচ্ছে দ্রুত। এলাকার মানুষদের প্রচেষ্টায় পাঁচুড় কলেজ গড়ে উঠেছে, আল-আমীন মিশনের মতো খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শাখা চালু হয়েছে। চালু হয়েছে আরও অনেক স্কুল। স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে স্বল্পমূল্যে পরিষেবা দিয়ে আসছে মেটিয়াবুরুজ সেবা সদন। কিন্তু তা পর্যাপ্ত ছিল না।
প্রায় এক দশক ধরে মেটিয়াবুরুজ এলাকার পরিচিত বস্ত্র ব্যবসায়ী বাবুলাল লস্কর বটতলার কাছে ইউনিপন হাসপাতাল চালু করেছিলেন। সেই হাসপাতালের প্রধান শাখা চালু হল বুধবার। উন্নত পরিকাঠামোযুক্ত এই হাসপাতাল থেকে অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা হাতের কাছে পেয়ে যাবেন এলাকার মানুষ।
অন্যদিকে, মেটিয়াবুরুজ ঢোকার রাস্তাঘাটের দশা একসময় বেহাল ছিল। বর্তমান সরকার ও স্থানীয় কাউন্সিলরদের প্রচেষ্টায় বিশেষ করে মন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিমের উদ্যোগে খিদিরপুর, গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ এলাকার রাস্তঘাট ও পরিকাঠামোর অনেক উন্নয়ন হয়েছে। যানজট সম্পূর্ণ শেষ না হলেও আগের মতো ভয়াবহ চেহারায় আর নেই। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মেটিয়েবুরুজ অনেকটাই বদলে গেছে। এই বদলে যাওয়া নয়া মেটিয়াবুরুজের অংশ হয়ে উঠল ইউনিপন হাসপাতাল।
ইউনিপন হাসপাতালের নতুন শাখার উদ্বোধনী মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দীর্ঘদিন সমাজকে কাছ থেকে দেখা অভিজ্ঞতার নিরিখে কথাগুলি বলেন সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান। তিনি হাসপাতালের কর্ণধার বাবুলাল লস্কর-সহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক নার্স কর্মীদেরও শুভেচ্ছা জানান।
হাসপাতাল উদ্বোধনের কথা ছিল মেয়র ফিরহাদ হাকিমের। তাঁর অনুপস্থিতিতে উদ্বোধন করেন হাওড়া পুরনিগমের মুখ্য প্রশাসক, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুজয় চক্রবর্তী। বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতির জন্য দু’টো গুরুত্বপূর্ণ দিক স্বাস্থ্য ও শিক্ষা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামো উন্নয়ন থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড-সহ নানা প্রচেষ্টার মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বাবুলাল সাহেবদের মতো অনেকে বেসরকারি ক্ষেত্রেও কাজ করছেন। ইউনিপন হাসপাতালের প্রধান শাখাটি শুরু হওয়ার ফলে এই অঞ্চলের মানুষের রাত-বিরেতে বিপদ হলে কাছেই একটা ভালো হাসপাতাল আছে, এই ভরসা পাবেন।
১৫ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীল হাসপাতালের সূচনার জন্য শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি এলাকার মানুষ যাতে স্বল্পমূল্যে পরিষেবা পায় তার আবেদন রাখেন।
স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি মোস্তাক আহমেদ ইউনিপন হাসপাতালের শাখা শুরু হওয়াকে মেটিবুরুজের মাথায় নতুন মুকুট যুক্ত হওয়া বলে জানান। তিনি হাসপাতালের কর্ণধার বাবুলাল লস্করের উদ্দেশে এলাকায় ভালো স্কুল করার আবেদন পেশ করেন। অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পুরপ্রতিনিধি ফরিদা পারভীন, সত্যেন্দ্র সিং, আবু মুহাম্মদ তারিক, বিশিষ্ট চিকিৎসক সিরাজ আহমেদ, দীপঙ্কর সরকার, আতিকুর রহমান, স্থানীয় সমাজসেবী সাজাহান মোল্লা প্রমুখ।
ইউনিপন হাসপাতালের কর্ণধার বাবুলাল লস্কর হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, ১২০ শয্যার মাল্টিস্পেশালিটি এই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিটি বিভাগ প্রযুক্তিগত অত্যন্ত উন্নতমানের যন্ত্রপাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। নবজাতক ও স্ত্রী বিভাগ খুবই উন্নত মানের।
চিকিৎসার বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নিয়মিত রোগী দেখবেন। স্থানীয় লোকজনকে কলকাতার নামিদামি হাসপাতালে আর যেতে হবে না বলেও আশা ব্যক্ত করেন তিনি। কলকাতার নামি হাসপাতালের সমমানের পরিষেবা পাওয়া যাবে কলকাতার চেয়ে অনেক কম মূল্যে।