পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধনীতি নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসী মনোভাব এবং বারবার আলোচনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় পুতিনের উপর চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। একই সঙ্গে ইউক্রেনের আত্মরক্ষার জন্য আমেরিকার অত্যাধুনিক ‘প্যাট্রিয়ট’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা সরবরাহের কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। তবে বিনা মূল্যে নয়—পুরো ১০০ শতাংশ দাম দিয়ে সেই অস্ত্র কিনতে হবে কিয়েভকে, সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
রবিবার এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “আমরা ইউক্রেনকে ‘প্যাট্রিয়ট’ দেব। ওরা এই ব্যবস্থার জন্য মরিয়া ছিল। কিন্তু এটা একেবারেই কোনও দান নয়। এটা আমাদের ব্যবসা। ইউক্রেনকে সম্পূর্ণ মূল্য দিতে হবে।” যদিও ঠিক কতগুলি প্যাট্রিয়ট পাঠানো হবে, সে বিষয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি। তাঁর কথায়, “আমি সংখ্যার ব্যাপারে এখনই কিছু বলছি না। তবে ওরা কিছু একটা পেতে চলেছে। কারণ তাদের নিজস্ব সুরক্ষা প্রয়োজন।”
প্রসঙ্গত, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কিও কিছু দিন আগেই জানিয়েছেন, আমেরিকার সঙ্গে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই প্রেক্ষিতে ট্রাম্পের মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের সঙ্গে ইতিমধ্যেই ছ’বার সরাসরি কথা বলেছেন ট্রাম্প। এর মধ্যে চার বার কথোপকথন হয়েছে গত ছ’সপ্তাহেই। তা সত্ত্বেও কোনো শান্তিপূর্ণ সমাধানসূত্র মেলেনি। যুদ্ধ থামার কোনও ইঙ্গিত নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
এই পরিস্থিতিতে রুশ প্রেসিডেন্টকে ফের একহাত নিয়ে ট্রাম্প বলেন, “পুতিন সুন্দর কথা বলেন। কিন্তু রাত নামতেই বোমাবর্ষণ করেন। ওঁর এই দ্বিচারিতা বহু মানুষকে হতবাক করেছে।” পুতিনের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ এর আগেও বহুবার প্রকাশ্যে এসেছে।
এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। ট্রাম্পের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন থাকলেও সেটা বিনা খরচে নয়। রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধে কূটনৈতিক স্তরে কোনো সুরাহা না মেলায়, যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে ফের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট সিস্টেম সরবরাহ একদিকে তাদের প্রতিরক্ষা শক্তিকে মজবুত করবে, অন্যদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য এটি হবে বড়সড় আর্থিক লাভের সুযোগ। তবে পুতিন ও ট্রাম্পের কথোপকথন এবং সমান্তরালে ইউক্রেনকে অস্ত্র-সরবরাহের কৌশল নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বাড়ছে উদ্বেগ।
রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে কিয়েভকে শক্তিশালী করতে মরিয়া ট্রাম্প। তবে মানবিকতার দোহাই না দিয়ে, পুরো বিষয়টিকে তিনি দেখছেন একটি ‘বাণিজ্যিক সুযোগ’ হিসেবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের জন্য এটি যেমন আশার আলো, তেমনই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জও।