আট বছর পরও অনিশ্চিত দেশে ফেরা
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ইউনূসের ৭ প্রস্তাব

- আপডেট : ২৫ অগাস্ট ২০২৫, সোমবার
- / 683
পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: আট বছর আগে রাখাইন প্রদেশে সেনা ও তাদের মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হামলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন লাখো রোহিঙ্গা। পেছনে ফেলে এসেছিলেন জ্বলন্ত গ্রাম, ধ্বংসস্তূপে পরিণত ঘরবাড়ি আর স্বজনদের লাশ। তারপর থেকে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাঁদের আর দেশে ফেরা হয়নি।
২০১৭ সালের সেই মর্মান্তিক দিনটিকে স্মরণ করে ২০২২ সাল থেকে প্রতিবছর রোহিঙ্গারা পালন করে আসছে “রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস”। এবারও কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের অন্তত ১৫টি আশ্রয়শিবিরে মানববন্ধন, পথসভা ও মিছিলের আয়োজন করা হয়। উখিয়ার মধুরছড়া ক্যাম্প-৪–এর মাঠে সমাবেশে হাজারো রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ যোগ দেন।
নেতারা বলেন, “আমরা দেশে ফিরতে চাই, নিরাপত্তা চাই, সহায়-সম্পত্তি ফেরত চাই।” তাঁরা সতর্ক করে দেন— রাখাইনে স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে আবারও একই সংকট দেখা দেবে। নিহতদের স্মরণে মোনাজাত করা হয়। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান জানান, শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে কর্মসূচি। রোহিঙ্গারা স্থায়ী প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আদালতে চলমান বিচারকাজের দ্রুত নিষ্পত্তি চেয়েছেন।
এদিকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কমেনি; বরং গত দেড় বছরে রাখাইন আর্মি ও সেনার সংঘাতে নতুন করে আরও ১ লক্ষ ২৪ হাজার মানুষ এসেছে। এতে মানবিক সহায়তা কম হয়ে পড়েছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগও বাড়ছে।
কক্সবাজারে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক আলোচনায় রোহিঙ্গা সমস্যা মেটাতে সাত দফা প্রস্তাব দিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ আর টেকসই প্রত্যাবর্তনের রোডম্যাপ তৈরি করা এখন জরুরি।
ইউনূসের প্রস্তাবে আছে— দাতাদের টানা সহায়তা, মায়ানমার সেনা ও আরাকান আর্মির সহিংসতা থামানো, রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে সংলাপের প্ল্যাটফর্ম গড়া আর আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন। তিনি আসিয়ানসহ বিশ্বসমাজকে আরও সক্রিয় হওয়ার ডাক দেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, “শেষ রোহিঙ্গা রাখাইন ছেড়ে যাওয়ার আগে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, সেটা হবে এক ঐতিহাসিক ভুল।” বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে, যেটা কক্সবাজারকে বানিয়েছে বিশ্বের সবথেকে বড় শরণার্থী শিবির।ইউনূস পরিষ্কার জানান— সমাধান মিয়ানমারেই খুঁজতে হবে। তিনি আহ্বান জানালেন, “সবাই মিলে রোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরানো আর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করি।”