ইসরাইল গাজায় “যুদ্ধের কৌশল হিসেবে অনাহারকে” ব্যবহার করছে। গাজার ৭০ শতাংশ এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ

- আপডেট : ৬ মে ২০২৫, মঙ্গলবার
- / 338
পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: ইসরাইল গাজার ৭০ শতাংশ এলাকায় ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। যার মধ্যে কিছু এলাকাকে নিষিদ্ধ অঞ্চল ঘোষণা করেছে এবং বাকি এলাক গুলি থেকে জোরপূর্বক সরে যাওয়ার নির্দেশ জারি করেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস (OCHA)।
দক্ষিণ গাজায়, রাফাহ গভর্নরেটের বেশিরভাগ অঞ্চলকে “No go zone” ঘোষণা করা হয়েছে এবং মার্চের শেষ দিক থেকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী সেসব এলাকায় জোরপূর্বক স্থানান্তরের আদেশ জারি করেছে। উত্তরে, গাজা শহরের প্রায় পুরো এলাকাই একই আদেশের আওতায় পড়ছে, শুধু উত্তর-পশ্চিমের কয়েকটি ছোট এলাকাই এখনো বাদ আছে। শুজাইয়া এলাকার পূর্ব দিক এবং ইসরাইলি সীমান্ত বরাবর বিস্তীর্ণ এলাকাকে সীমিত প্রবেশাধিকার সম্পন্ন অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছে দখলদার ইসরাইল।
নিচের অ্যানিমেটেড মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে, ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফেলার পর থেকে ইসরাইল কিভাবে এই জোরপূর্বক স্থানান্তরের আদেশ ছড়িয়ে দিয়েছে।
সোমবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, গাজার দুই মিলিয়নের বেশি মানুষকে “স্থানান্তর করা হবে” একটি নতুন স্থল অভিযানের অংশ হিসেবে, যেখানে ইসরাইলি সেনারা দখল করা অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে ।
এর আগে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতিক্রমে ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনাকে তলবের অনুমোদন দিয়েছে এবং ইসরাইলি সেনাবাহিনীকেই গাজায় খাদ্য এবং অন্যান্য জরুরি সামগ্রী সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলের এই স্থল অভিযান এবং গাজার বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড দখলের প্রক্রিয়াকে বেআইনি এবং গাজার রাজনৈতিক ও জনসংখ্যাগত মানচিত্র বদলের চেষ্টা হিসেবে দেখছে।
অনেক ফিলিস্তিনি মনে করছেন, ইসরাইল কোনো রাজনৈতিক সমাধানের চেয়ে ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দিচ্ছে, এবং তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে তারা আর কখনও তাদের নিজ ঘরে ফিরতে পারবেন না।
তারা আরও বিশ্বাস করেন, ইসরাইল কেবল হামাসের সামরিক শক্তি ধ্বংস করতে চাচ্ছে না, বরং গাজার জনগণকে সেখান থেকে সরিয়ে দিতেও চাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
ইসরাইল এই কাজগুলো করছে মানবিক ভাষার আড়ালে সামরিক কৌশল ব্যবহার করে—এর মধ্যে রয়েছে স্থল অভিযান বিস্তৃত করা এবং গাজায় সাহায্যের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ আরও কড়া করে ফেলা।
তবে অনেক ফিলিস্তিনির মধ্যে একটি স্পষ্ট এবং সাধারণ মনোভাব হচ্ছে প্রতিরোধ। সামাজিক মাধ্যমে প্রতিরোধ ও দৃঢ়চেতা মনোভাবের বার্তায় ভরে গেছে—অনেকেই বলছেন, যাই হোক না কেন, তারা গাজা ছেড়ে যাবেন না।
ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (PRCS) বলছে, গাজা এখন “চরম দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির” মুখে রয়েছে, কারণ বাজার এবং ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে আর কোনো খাবার অবশিষ্ট নেই।
ইসরাইলি মানবাধিকার সংগঠন বেতসেলেম (B’Tselem) অভিযোগ করেছে, ইসরাইল গাজায় “যুদ্ধের কৌশল হিসেবে অনাহারকে” ব্যবহার করছে। সংস্থাটি বলছে, যেসব মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে, তাদের অর্ধেকই শিশু।
“পুষ্টির দিক থেকে জনসংখ্যা আবারও চরম দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মুখে,” PRCS তাদের সর্বশেষ পরিস্থিতি আপডেটে জানিয়েছে।
“এক কোটিরও বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষের ন্যূনতম দৈনিক চাহিদা মেটানোর সক্ষমতা এখন নেই,” বলেছে PRCS।
PRCS জানিয়েছে, বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য সংরক্ষিত খাদ্য মজুদ এখন “সম্পূর্ণ শেষ হয়ে গেছে”, এবং “সীমিত পরিমাণে ডাল জাতীয় খাদ্যসামগ্রী” শুধু “কমিউনিটি কিচেনে বিতরণ করা হচ্ছে” যাতে অন্তত কিছুটা মৌলিক চাহিদা পূরণ করা যায়।
১৮ মার্চ ইসরাইল প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ২,৪৫৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় নিহত মোট নিশ্চিত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২,৫৬৭ জনে।