১৯ মে ২০২৫, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
গ্যাস ফুরিয়ে গেলে মানুষ জ্বালানি হিসেবে বাড়ির ধ্বংসাবশেষ, গাছের ডাল, এমনকি বই পোড়াতে শুরু করে। হয় আমরা অনাহারে মরব, নাহলে অশিক্ষিত হব। ক্ষুধার আগুন নেভানোর চেয়ে শিক্ষার আগুন নেভানো সহজ।

শিক্ষা পুড়িয়ে যখন ক্ষুধার আগুন নেভানো হয়, ফিলিস্তিনি বই প্রেমির গল্প।

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ৩ মে ২০২৫, শনিবার
  • / 229

পুবের কলম ডেস্ক: গাজায় ইসরায়েলের নির্মম অবরোধ ও গণহত্যার মধ্যে একের পর এক মানবিক বিপর্যয় ঘটে চলেছে। এরই মধ্যে এক শিক্ষিত পরিবারকে বাঁচার জন্য নিজেদের প্রিয় বই পুড়িয়ে রান্না করতে হয়েছে। তাদের গল্প শুনলে যেকোনো মানুষের হৃদয় কেঁপে উঠবে।

এই পরিবারের সদস্যরা শৈশব থেকেই বইপ্রেমী ছিলেন। তাদের বাড়ির লাইব্রেরি ছিল জ্ঞানের ভাণ্ডার—দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, সাহিত্য, বিজ্ঞান সব বিষয়ের বইয়ে ঠাসা। বাবা-মা নিয়মিত তাদের নিয়ে যেতেন গাজার বিখ্যাত সামির মানসুর লাইব্রেরির বইয়ের দোকানে, যেখানে প্রতিবার তারা সাতটি করে বই কিনতে পারতেন। স্কুলেও বই পড়ার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল—বইমেলা, রিডিং ক্লাব, আলোচনা সভার মাধ্যমে।

যুদ্ধের ভয়াবহ রাতে যখন বোমার আলোয় আকাশ রক্তিম হয়ে উঠত, তখন এই পরিবার জড়ো হত আগুনের পাশে। তারা আলোচনা করত ঘাসান কানাফানির গল্প আর মাহমুদ দরবেশের কবিতা নিয়ে, যা তাদের লাইব্রেরির বই থেকে শেখা।

আরও পড়ুন: ইসরাইল গাজায় “যুদ্ধের কৌশল হিসেবে অনাহারকে” ব্যবহার করছে। গাজার ৭০ শতাংশ এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের গণহত্যা শুরু হলে গাজায় অবরোধ আরও কঠিন হয়। পানি, জ্বালানি, ওষুধ, খাবার—কিছুই ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গ্যাস ফুরিয়ে গেলে মানুষ জ্বালানি হিসেবে বাড়ির ধ্বংসাবশেষ, গাছের ডাল, এমনকি বই পোড়াতে শুরু করে।

আরও পড়ুন: হুতি আক্রমণে স্তব্ধ ইসরাইলি বিমান বন্দর, উড়ান বাতিল একাধিক সংস্থার

প্রথমে এই পরিবারের এক আত্মীয়ের বাড়িতে বই পোড়ানো শুরু হয়। স্কুলপড়ুয়া ভাইরা নতুন কেনা স্কুলের বই পুড়িয়ে রান্না করল, কারণ “ক্ষুধার আগুন নেভানোর চেয়ে শিক্ষার আগুন নেভানো সহজ”। ১১ বছরের আহমেদ বলল, “হয় আমরা অনাহারে মরব, নাহলে অশিক্ষিত হব। আমি বেঁচে থাকতে চাই। শিক্ষা পরে নেওয়া যাবে।”

আরও পড়ুন: ইসরাইলি অবরোধে মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে গাজার ২,৯০,০০০ শিশু

গ্যাস শেষ হয়ে গেলে এই পরিবারকেও বই পোড়াতে বাধ্য হতে হয়। প্রথমে তারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের বই পোড়াল। তারা বলেন, “আমাদের স্কুলে শেখানো হয়েছিল যে এই আইন আমাদের রক্ষা করবে। কিন্তু বাস্তবে আমরা গণহত্যার মুখে একা।”

এরপর পোড়ানো হয় ফার্মাকোলজির বই—যা এই পরিবারের এক সদস্যের কঠোর পরিশ্রমের ফসল। তারপর নষ্ট হয় মাহমুদ দরবেশের কবিতা, জিবরান খলিল জিবরানের উপন্যাস, হ্যারি পটার সিরিজ—যা লেখকের কৈশোরের স্মৃতির সঙ্গে জড়িত।

শেষ পর্যন্ত বই ফুরিয়ে গেলে লাইব্রেরির কাঠের তাক পর্যন্ত ভেঙে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মাত্র ১৫টি বই বাঁচানো সম্ভব হয়—যেগুলো ফিলিস্তিনের ইতিহাস ও দাদির স্মৃতিবিজড়িত।

এই পরিবারের সদস্যরা বলছেন, “অবরোধ আমাদের অকল্পনীয় কাজ করতে বাধ্য করেছে। কিন্তু যদি বেঁচে থাকি, আবার বই জোগাড় করে লাইব্রেরি গড়ব।”

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

গ্যাস ফুরিয়ে গেলে মানুষ জ্বালানি হিসেবে বাড়ির ধ্বংসাবশেষ, গাছের ডাল, এমনকি বই পোড়াতে শুরু করে। হয় আমরা অনাহারে মরব, নাহলে অশিক্ষিত হব। ক্ষুধার আগুন নেভানোর চেয়ে শিক্ষার আগুন নেভানো সহজ।

শিক্ষা পুড়িয়ে যখন ক্ষুধার আগুন নেভানো হয়, ফিলিস্তিনি বই প্রেমির গল্প।

আপডেট : ৩ মে ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম ডেস্ক: গাজায় ইসরায়েলের নির্মম অবরোধ ও গণহত্যার মধ্যে একের পর এক মানবিক বিপর্যয় ঘটে চলেছে। এরই মধ্যে এক শিক্ষিত পরিবারকে বাঁচার জন্য নিজেদের প্রিয় বই পুড়িয়ে রান্না করতে হয়েছে। তাদের গল্প শুনলে যেকোনো মানুষের হৃদয় কেঁপে উঠবে।

এই পরিবারের সদস্যরা শৈশব থেকেই বইপ্রেমী ছিলেন। তাদের বাড়ির লাইব্রেরি ছিল জ্ঞানের ভাণ্ডার—দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, সাহিত্য, বিজ্ঞান সব বিষয়ের বইয়ে ঠাসা। বাবা-মা নিয়মিত তাদের নিয়ে যেতেন গাজার বিখ্যাত সামির মানসুর লাইব্রেরির বইয়ের দোকানে, যেখানে প্রতিবার তারা সাতটি করে বই কিনতে পারতেন। স্কুলেও বই পড়ার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল—বইমেলা, রিডিং ক্লাব, আলোচনা সভার মাধ্যমে।

যুদ্ধের ভয়াবহ রাতে যখন বোমার আলোয় আকাশ রক্তিম হয়ে উঠত, তখন এই পরিবার জড়ো হত আগুনের পাশে। তারা আলোচনা করত ঘাসান কানাফানির গল্প আর মাহমুদ দরবেশের কবিতা নিয়ে, যা তাদের লাইব্রেরির বই থেকে শেখা।

আরও পড়ুন: ইসরাইল গাজায় “যুদ্ধের কৌশল হিসেবে অনাহারকে” ব্যবহার করছে। গাজার ৭০ শতাংশ এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের গণহত্যা শুরু হলে গাজায় অবরোধ আরও কঠিন হয়। পানি, জ্বালানি, ওষুধ, খাবার—কিছুই ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গ্যাস ফুরিয়ে গেলে মানুষ জ্বালানি হিসেবে বাড়ির ধ্বংসাবশেষ, গাছের ডাল, এমনকি বই পোড়াতে শুরু করে।

আরও পড়ুন: হুতি আক্রমণে স্তব্ধ ইসরাইলি বিমান বন্দর, উড়ান বাতিল একাধিক সংস্থার

প্রথমে এই পরিবারের এক আত্মীয়ের বাড়িতে বই পোড়ানো শুরু হয়। স্কুলপড়ুয়া ভাইরা নতুন কেনা স্কুলের বই পুড়িয়ে রান্না করল, কারণ “ক্ষুধার আগুন নেভানোর চেয়ে শিক্ষার আগুন নেভানো সহজ”। ১১ বছরের আহমেদ বলল, “হয় আমরা অনাহারে মরব, নাহলে অশিক্ষিত হব। আমি বেঁচে থাকতে চাই। শিক্ষা পরে নেওয়া যাবে।”

আরও পড়ুন: ইসরাইলি অবরোধে মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে গাজার ২,৯০,০০০ শিশু

গ্যাস শেষ হয়ে গেলে এই পরিবারকেও বই পোড়াতে বাধ্য হতে হয়। প্রথমে তারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের বই পোড়াল। তারা বলেন, “আমাদের স্কুলে শেখানো হয়েছিল যে এই আইন আমাদের রক্ষা করবে। কিন্তু বাস্তবে আমরা গণহত্যার মুখে একা।”

এরপর পোড়ানো হয় ফার্মাকোলজির বই—যা এই পরিবারের এক সদস্যের কঠোর পরিশ্রমের ফসল। তারপর নষ্ট হয় মাহমুদ দরবেশের কবিতা, জিবরান খলিল জিবরানের উপন্যাস, হ্যারি পটার সিরিজ—যা লেখকের কৈশোরের স্মৃতির সঙ্গে জড়িত।

শেষ পর্যন্ত বই ফুরিয়ে গেলে লাইব্রেরির কাঠের তাক পর্যন্ত ভেঙে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মাত্র ১৫টি বই বাঁচানো সম্ভব হয়—যেগুলো ফিলিস্তিনের ইতিহাস ও দাদির স্মৃতিবিজড়িত।

এই পরিবারের সদস্যরা বলছেন, “অবরোধ আমাদের অকল্পনীয় কাজ করতে বাধ্য করেছে। কিন্তু যদি বেঁচে থাকি, আবার বই জোগাড় করে লাইব্রেরি গড়ব।”