হাওড়ার পর রামনবমীর শোভাযাত্রাকে ঘিরে রণক্ষেত্র রিষড়া, সুকান্ত মজুমদারকে আটকালো পুলিশ, ধৃত ১২
নসিবুদ্দিন সরকার, হুগলি: রবিবার রাতে রামনবমীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে রিষড়া এলাকায়। সংঘর্ষের জেরে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতির সামাল দিতে পুলিশকে টিয়ার গ্যাস ছুড়তে হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১২ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। রবিবার রাতের পর সোমবার সকাল থেকে গোটা এলাকা থমথমে রয়েছে। অপ্রীতিকর ভিডিও যাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে না দেওয়া হয় সেজন্য এলাকায় জুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে।
১৪৪ ধারা জারি থাকলেও সোমবার রিষড়ার সান্ধ্যবাজার এলাকায় সকাল থেকেই দোকানপাট খুলে যায়। তবে পুলিশ কোন রকম জমায়েত করতে দিচ্ছে না। এছাড়া অধিকাংশ এলাকাতেই ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারছেন না। তারা আতঙ্কে রয়েছেন। রুটি রুজির টানে তাদের প্রতিদিন দোকান খুলতে হয়। একদিন ব্যবসা বন্ধ থাকলে তাদের সংসার চালানো দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। তাই তারা চাইছেন অবিলম্বেই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে।
চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের উচ্চপদস্থ আধিকারিক নিজেই পুরো এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখছেন। এলাকায় জাতীয় কোন রকম উত্তেজনা না ছড়ায়। সেদিকটা তিনি নিশ্চিত করতে চাইছেন। এলাকা জুড়ে প্রচুর পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
পাশাপাশি শ্রীরামপুরের মাহেশের কাছে জি টি রোডের উপর নাকা চেকিংয়ের ব্যবস্থা করে পুলিশ। মাহেশের দিক থেকে যারা রিষড়া ও কোন্নগরের দিকে যাতায়াত করছেন তাদের গাড়ি, ব্যাগপত্রে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে রবিবার রাতের দিকে চোখের সামনে স্থানীয়রা যে তান্ডবের ঘটনা ঘটতে দেখেছেন তাতেই তারা আতঙ্কে সিঁটিয়ে রয়েছেন। সাধারণ মানুষ চাইছেন ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর যেন না ঘটে। এলাকা যেন ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যায়। পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক করা হচ্ছে।তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সোমবার রিষড়া সান্ধ্যবাজার এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়। সেখানে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় বাসিন্দারা। বাগখাল এলাকাতেও উত্তেজনা ছড়ায়।
রবিবার রাতের সংঘর্ষের ঘটনায় বিজেপির পড়শুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষসহ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। তাদের উত্তরপাড়ার এক নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। সোমবার তাদের সঙ্গে দেখা করতে ওই নার্সিংহোমে যান বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারসহ বিজেপির কয়েকজন নেতা – কর্মীরা। সেখান থেকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কোনভয় রিষড়ার দিকে যাত্রা করেন। ১৪৪ ধারা ভেঙে এলাকায় প্রবেশ করার চেষ্টা করলে পুলিশ কোন্নগরে ব্যারিকেড করে সুকান্ত মজুমদারকে আটকে দেয়। ওই ঘটনায় বিজেপি কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের বচসা ও ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়।
সুকান্ত মজুমদার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রিষড়ার ঘটনায় শাসক দলকেই দায়ি করেন। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় তাদের মিছিলের উপর হামলা চালানো হয়। ইট, পাথর ছোঁড়া হয়।একজন স্থানীয় কাউন্সিলর ও তার ছেলে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে তার অভিযোগ। তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা অভিযোগ, বিজেপি বাইরে থেকে প্রচুর লোক নিয়ে এসেছিল। বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই ওই হামলা চালিয়েছে।
পুলিশের মতে ১৪৪ ধারা জারি থাকায় সেখানে সুকান্ত মজুমদারকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অপরদিকে শুভেন্দু অধিকারীর বলেন, রিষড়ার ঘটনায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে তিনি যাবেন। হয় ১৪৪ ধারা উঠে যাওয়ার পর, নয়তো আদালতের অনুমতি নিয়ে।