০৬ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিয়োগ  মামলায় বিস্ফোরক  জালিয়াতির রিপোর্ট  হাইকোর্টে দিল সিবিআই 

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবার
  • / 31

পুবের কলম প্রতিবেদক: বুধবার স্কুল সার্ভিস কমিশনের মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের  বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চে এই রিপোর্ট জমা পড়েছে। কতজন অযোগ্য প্রার্থী চাকরি করছেন? সেই তালিকা চাওয়া হয়েছিল সিবিআইয়ের  কাছে।

এদিন রিপোর্টে সেই তালিকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে এনেছে সিবিআই। গত ১৫ সেপ্টেম্বর কলকাতা ও দিল্লিতে তল্লাশি চালায় সিবিআই। একজন কর্মীর বাড়ি থেকে তিনটি হার্ড ডিস্ক উদ্ধার হয়। নবম ও দশমের নিয়োগ মামলায় ৯০৭ জনের ওএমআর শিট জালিয়াতি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ফাঁসি নয় যাবজ্জীবন, ৪০ বছর জেল প্রেমিক সুশান্ত চৌধুরীর

হার্ড ডিস্ক থেকে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যাঁরা শূন্য এক বা দুই পেয়েছেন, এসএসসি-র খাতায় দেখা যাচ্ছে তাঁদের প্রাপ্তি ৫০, ৫৩ ইত্যাদি। সাদা খাতা জমা দিয়েছে এমন প্রার্থীদের নামের পাশেও বসেছে ৫৩ নম্বর। এসএসসি-র সার্ভারে সেই তথ্য পাওয়া গিয়েছে।

আরও পড়ুন: ইডি সিবিআই সেজে লুটপাটের ঘটনা ঠেকাতে সিসিটিভি নজরদারি বাড়াচ্ছে লালবাজার

সুবীরেশ ভট্টাচার্য সেই সময় চেয়ারম্যান ছিলেন বলে জানা গেছে। গ্রুপ ডি নিয়োগে ২ হাজার ৮২৩ জনের নম্বর বদল করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সার্ভার থেকে জানা গিয়েছে,  গ্রুপ সি-কে ৩ হাজার ৪৮১ জনের নম্বর বদল হয়েছে। সিবিআই জানিয়েছে, ধৃতরা মুখ খুলতে চাননি। কারণ তাঁরা জানেন সিবিআই থার্ড ডিগ্রি ব্যবহার করে না। এমনকী একজন ভয়েস স্যাম্পেল দিতেও রাজি হননি।

আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের চার্জশিট, ২২০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ

এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ,  নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে ধৃত কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্যদের বাকিদের নাম বলতেই হবে। যাঁরা এই জালিয়াতি করার নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের নাম বলতে হবে। যাঁরা বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছেন, তাঁরা নিজেরা পদত্যাগ করলে ভালো, না হলে বরখাস্ত করার পাশে অন্য পদক্ষেপ করা হবে’।

এদিন দুটি মামলার রিপোর্ট দেখে অবাক হয়েছেন বিচারপতি। ববিতা সরকার ও অনিন্দিতা বেরা মামলার রিপোর্ট দেখেন বিচারপতি। আরও দুটি রিপোর্টেও একই জালিয়াতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

আদালতের নির্দেশ, বোর্ড অক্টোবর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে কমিশনের সঙ্গে একটা বৈঠক করবে। কারা শূন্য পেয়েও চাকরি পেয়েছে ওই বৈঠকে দেখা হবে। সব রিপোর্ট রেজিস্টার জেনারেলের দায়িত্বে থাকবে। যাঁদের বেআইনিভাবে নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ, তাঁদের কাছে আদালতের আবেদন, হয়তো টাকা বা অন্য কিছু দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। আগামী  ৯ নভেম্বরের মধ্যে তাঁরা যেন পদত্যাগ করেন। স্কুল সার্ভিস কমিশন তাঁদের ওয়েবসাইটে এটি বিজ্ঞপ্তি আকারে জারি করবে। এদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না। যদি না পদত্যাগ করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আদালত। আগামী ১৬ নভেম্বর পরবর্তী শুনানি রয়েছে। আদালতে ফরেনসিক রিপোর্ট পেশ সিবিআইয়ের। আর সেখানেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

রিপোর্টে উল্লেখ্য, এসএসসি সার্ভারে প্রাপ্ত নম্বর বদল করা হয় অকৃতকার্য প্রার্থীদের। গ্রুপ সি-তে ৩,৪৮১ জনের নম্বর বদল করা হয়েছে। গ্রুপ ডি-তে ২,৮২৩ জনের নম্বর বদল করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কেউ হয়তো ১ বা কেউ হয়তো ০ পেয়েছিলেন।

আদালতে সিবিআই জানিয়েছে, এসএসসি সার্ভার রুম থেকে ৩টি হার্ড ডিস্ক উদ্ধার হয়েছে। সেই হার্ড ডিস্ক থেকেই দেখা গিয়েছে, প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর হয়তো ছিল ১ বা ০। হাইকোর্টে আজ মোট ৪টি রিপোর্ট পেশ করে সিবিআই। যথা- গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, এসএলএসটি একাদশ-দ্বাদশ এবং এসএসএসটি নবম-দশম শ্রেণির ক্ষেত্রে নিয়োগ সংক্রান্ত রিপোর্ট। প্রতিটি রিপোর্টেই বিস্ফোরক তথ্য! এতদিন পর্যন্ত যে নম্বর অদল-বদলের অভিযোগ করা হচ্ছিল, এবার তথ্যপ্রমাণ দিয়ে একেবারে রিপোর্ট দিল সিবিআই। শিক্ষক নিয়োগে যেভাবে ধারাবাহিকভাবে তথ্য উঠে আসছে, তাতে দুর্নীতির গভীরতা কতটা তা উপলব্ধি করছেন অনেকেই।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

নিয়োগ  মামলায় বিস্ফোরক  জালিয়াতির রিপোর্ট  হাইকোর্টে দিল সিবিআই 

আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবার

পুবের কলম প্রতিবেদক: বুধবার স্কুল সার্ভিস কমিশনের মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের  বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চে এই রিপোর্ট জমা পড়েছে। কতজন অযোগ্য প্রার্থী চাকরি করছেন? সেই তালিকা চাওয়া হয়েছিল সিবিআইয়ের  কাছে।

এদিন রিপোর্টে সেই তালিকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে এনেছে সিবিআই। গত ১৫ সেপ্টেম্বর কলকাতা ও দিল্লিতে তল্লাশি চালায় সিবিআই। একজন কর্মীর বাড়ি থেকে তিনটি হার্ড ডিস্ক উদ্ধার হয়। নবম ও দশমের নিয়োগ মামলায় ৯০৭ জনের ওএমআর শিট জালিয়াতি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ফাঁসি নয় যাবজ্জীবন, ৪০ বছর জেল প্রেমিক সুশান্ত চৌধুরীর

হার্ড ডিস্ক থেকে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যাঁরা শূন্য এক বা দুই পেয়েছেন, এসএসসি-র খাতায় দেখা যাচ্ছে তাঁদের প্রাপ্তি ৫০, ৫৩ ইত্যাদি। সাদা খাতা জমা দিয়েছে এমন প্রার্থীদের নামের পাশেও বসেছে ৫৩ নম্বর। এসএসসি-র সার্ভারে সেই তথ্য পাওয়া গিয়েছে।

আরও পড়ুন: ইডি সিবিআই সেজে লুটপাটের ঘটনা ঠেকাতে সিসিটিভি নজরদারি বাড়াচ্ছে লালবাজার

সুবীরেশ ভট্টাচার্য সেই সময় চেয়ারম্যান ছিলেন বলে জানা গেছে। গ্রুপ ডি নিয়োগে ২ হাজার ৮২৩ জনের নম্বর বদল করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সার্ভার থেকে জানা গিয়েছে,  গ্রুপ সি-কে ৩ হাজার ৪৮১ জনের নম্বর বদল হয়েছে। সিবিআই জানিয়েছে, ধৃতরা মুখ খুলতে চাননি। কারণ তাঁরা জানেন সিবিআই থার্ড ডিগ্রি ব্যবহার করে না। এমনকী একজন ভয়েস স্যাম্পেল দিতেও রাজি হননি।

আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের চার্জশিট, ২২০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ

এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ,  নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে ধৃত কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্যদের বাকিদের নাম বলতেই হবে। যাঁরা এই জালিয়াতি করার নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের নাম বলতে হবে। যাঁরা বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছেন, তাঁরা নিজেরা পদত্যাগ করলে ভালো, না হলে বরখাস্ত করার পাশে অন্য পদক্ষেপ করা হবে’।

এদিন দুটি মামলার রিপোর্ট দেখে অবাক হয়েছেন বিচারপতি। ববিতা সরকার ও অনিন্দিতা বেরা মামলার রিপোর্ট দেখেন বিচারপতি। আরও দুটি রিপোর্টেও একই জালিয়াতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

আদালতের নির্দেশ, বোর্ড অক্টোবর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে কমিশনের সঙ্গে একটা বৈঠক করবে। কারা শূন্য পেয়েও চাকরি পেয়েছে ওই বৈঠকে দেখা হবে। সব রিপোর্ট রেজিস্টার জেনারেলের দায়িত্বে থাকবে। যাঁদের বেআইনিভাবে নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ, তাঁদের কাছে আদালতের আবেদন, হয়তো টাকা বা অন্য কিছু দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। আগামী  ৯ নভেম্বরের মধ্যে তাঁরা যেন পদত্যাগ করেন। স্কুল সার্ভিস কমিশন তাঁদের ওয়েবসাইটে এটি বিজ্ঞপ্তি আকারে জারি করবে। এদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না। যদি না পদত্যাগ করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আদালত। আগামী ১৬ নভেম্বর পরবর্তী শুনানি রয়েছে। আদালতে ফরেনসিক রিপোর্ট পেশ সিবিআইয়ের। আর সেখানেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

রিপোর্টে উল্লেখ্য, এসএসসি সার্ভারে প্রাপ্ত নম্বর বদল করা হয় অকৃতকার্য প্রার্থীদের। গ্রুপ সি-তে ৩,৪৮১ জনের নম্বর বদল করা হয়েছে। গ্রুপ ডি-তে ২,৮২৩ জনের নম্বর বদল করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কেউ হয়তো ১ বা কেউ হয়তো ০ পেয়েছিলেন।

আদালতে সিবিআই জানিয়েছে, এসএসসি সার্ভার রুম থেকে ৩টি হার্ড ডিস্ক উদ্ধার হয়েছে। সেই হার্ড ডিস্ক থেকেই দেখা গিয়েছে, প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর হয়তো ছিল ১ বা ০। হাইকোর্টে আজ মোট ৪টি রিপোর্ট পেশ করে সিবিআই। যথা- গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, এসএলএসটি একাদশ-দ্বাদশ এবং এসএসএসটি নবম-দশম শ্রেণির ক্ষেত্রে নিয়োগ সংক্রান্ত রিপোর্ট। প্রতিটি রিপোর্টেই বিস্ফোরক তথ্য! এতদিন পর্যন্ত যে নম্বর অদল-বদলের অভিযোগ করা হচ্ছিল, এবার তথ্যপ্রমাণ দিয়ে একেবারে রিপোর্ট দিল সিবিআই। শিক্ষক নিয়োগে যেভাবে ধারাবাহিকভাবে তথ্য উঠে আসছে, তাতে দুর্নীতির গভীরতা কতটা তা উপলব্ধি করছেন অনেকেই।