পুবের কলম প্রতিবেদক: শুধুমাত্র ঐতিহ্যের গর্ব নিয়ে বসে না থেকে লক্ষ্য ছিল চিকিৎসা পরিষেবাকে আরও আধুনিক স্তরে পৌঁছে নিয়ে যাওয়া। আর এই লক্ষ্যেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে শনিবার যাত্রা শুরু হল ইএনটি ওয়ার্কস্টেশন-এর। সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা ক্ষেত্রে পূর্ব ভারতের মধ্যে এই প্রথম কলকাতার সরকারি এই মেডিক্যাল কলেজে চালু হল এই ইএনটি ওয়ার্কস্টেশন। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন দ্রুত, সঠিক এবং নিখুঁত রোগনির্ণয়ের পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসাও শুরু করা যাবে, দূর করা সম্ভব হবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোগীদের হয়রানি। তেমনই অন্যদিকে ডাক্তারি শিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রেও সাহায্য করবে এই ওয়ার্কস্টেশন।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এশিয়ার মধ্যে প্রাচীন একটি মেডিক্যাল কলেজ। গত বছর এখানকার ইএনটি বিভাগে ৯০ হাজার রোগী এসেছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় সাত হাজার রোগীর ক্ষেত্রে অপারেশন করতে হয়েছে। এখানকার ইএনটি বিভাগের প্রধান, ডাক্তার সৌমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘শুধুমাত্র ঐতিহ্যের উপর বসে না থেকে আমাদের এখানকার চিকিৎসা পরিষেবাকে আরও আধুনিক করার চেষ্টা করছিলাম আমরা। এর জন্য কিছু চিকিৎসা-যন্ত্রের প্রয়োজন ছিল। এখানে গত এক বছরে প্রায় দুই কোটি টাকার চিকিৎসা-যন্ত্র দিয়েছে সরকার।’ তিনি বলেন, ‘ইএনটি ওয়ার্কস্টেশন হচ্ছে একটি মডিউলার কম্পোজিট সিস্টেম। এর মাধ্যমে খুব দ্রুত এবং ভালোভাবে রোগনির্ণয় করতে পারি আমরা। সরকারি ক্ষেত্রে পূর্ব ভারতের মধ্যে অন্য আর কোথাও নেই এই ব্যবস্থা। এই ইএনটি ওয়ার্কস্টেশন সরকারি ক্ষেত্রে পূর্ব ভারতে আমাদের এখানেই এই প্রথম।’
ইএনটি বিভাগের প্রধান বলেন, ‘আমরা আশা করছি রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করবে ইএনটি ওয়ার্কস্টেশন। এর মাধ্যমে ছোটখাটো বিভিন্ন অপারেশন-ও আউটডোরে করে ফেলা সম্ভব হবে। স্বর বসে গিয়েছে কারও, গলার কোথায় সমস্যা হচ্ছে, স্লো মোশনের ভিডিয়োর মাধ্যমে তাও দেখে নেওয়া যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আগামী এক বছরে অন্ততপক্ষে দু’টি রিসার্চ ওয়ার্ক আমরা এর উপর করব, দু’টি থিসিস আমাদের কলেজ থেকে পাবলিশড হবে। চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি এই ইএনটি ওয়ার্কস্টেশন ডাক্তারি শিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রেও খুব সাহায্য করবে।’ রোগ নির্ণয়ের জন্য এক কোটি টাকারও বেশি দামের চিকিৎসা-যন্ত্রের কী প্রয়োজন ছিল? এমন প্রশ্ন তুলে ডাক্তার সৌমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘রোগ নির্ণয় সঠিক, নিখুঁত এবং দ্রুত করা সম্ভব হলে চিকিৎসার ক্ষেত্রেও এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। সঠিক এবং দ্রুত রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হলে রোগীকে সুস্থ করে তোলার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।’
শনিবার সকালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ইএনটি ওপিডি-র বাড়িতে পূর্ব ভারতে প্রথম এই ইএনটি ওয়ার্কস্টেশন-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতের চেয়ারম্যান ডাক্তার সুদীপ্ত রায় এবং হাসপাতালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস সহ আরও অনেকে।
শিশুদের শ্বাসনালীতে কিছু অর্থাৎ কোনও ফরেন বডি ঢুকে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে খুব চিন্তায় থাকতে হয় বিভিন্ন চিকিৎসককে। কারণ, এর জেরে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে যেতে পারে। এ দিকে, ওই ধরনের সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে সরকারি হাসপাতালে রেফার করা হয় শিশুদের। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায় যে রোগ নির্ণয়ে দেরি হচ্ছে কিংবা স্পষ্টভাবে হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সঠিক রোগের নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়। এর জন্য সংশ্লিষ্ট রোগীকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়ও যেতে হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো, অপারেশনের ডেট নেওয়া, এ সবের জন্য অনেক সময়ও লেগে যায়। সব মিলিয়ে এমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রোগীকে হয়রানির শিকার হতে হয়। এমন বিভিন্ন সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে এই ইএনটি ওয়ার্কস্টেশন চালু হওয়ার ফলে। এ কথার পাশাপাশি ডাক্তার সৌমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ইএনটি ওয়ার্কস্টেশনের মাধ্যমে ছোটখাটো বিভিন্ন সার্জারি আউটডোরেও করা সম্ভব হবে।’ এ দিন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও, এই ইএনটি ওয়ার্কস্টেশন-এর পরিষেবা পুরোদমে চালু হতে দিন দশেক সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।