০১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

“মমতা দিদির স্বাস্থ্য সাথী কার্ডেই সেরেছে অসুখ’’ বিরল রোগ মুক্ত হয়ে কৃতজ্ঞ কৃষক পরিবার

অর্পিতা লাহিড়ী
  • আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২১, শুক্রবার
  • / 7

দেবশ্রী মজুমদার, রামপুরহাট: সারা দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গে  ফোসকা। আর তার যন্ত্রণা নিয়ে বছর দুয়েক ধরে ভুগছিলেন দুবরাজপুর ব্লকের সদাইপুর থানার সাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা মুনিরা বিবি। সেই সঙ্গে এই প্রান্তিক চাষী পরিবারের চলছিল অর্থ নাশ। মাত্র নমাসের চিকিৎসায় সেই  বিরল চর্মরোগ সারালো জেলা  সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক কপিল দেব দাস। যদিও পুরো কৃতিত্ত্ব তিনি  দিতে চান তাঁর চর্ম বিভাগ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সহকারী চিকিৎসক দেবাশীষ সেনকে। তবে এই চর্ম রোগকে বিরল বলা হচ্ছে কারণ লাখে একজনের এই রোগ হয়। সেটা  জিনগত কারনে হতে পারে। আবার তা নাও হতে পারে। তবে ভাইরাস ব্যাকটিরিয়ার কারণে নয়।  

আর এই রোগের সব থেকে সমস্যা হলো ইঞ্জেকশন সুলভ নয়। একমাত্র মেডিক্যাল কলেজে পাওয়া যায়। এক একটি ইঞ্জেকশনের দাম বত্রিশ হাজার তিনশত চুয়াল্লিশ টাকা। মোট চারটি ডোজ নিতে হবে। পরে ছমাস পরে আবার চেক আপ করে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন  আর ডোজ লাগবে কিনা।  দাম বেশী হলেও এক্ষেত্রে  দুঃস্থ রোগীর পরিবার পেয়েছেন   স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের সুবিধা।  রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের চর্মরোগ বিভাগীয় প্রধান কপিল দেব  দাস জানান, আট – নমাস ধরে তাঁর চিকিৎসায় ছিলেন বছর ছাব্বিশের মনিরা বিবি। বাড়ি দুবরাজপুর ব্লকের সদাইপুর থানার সাহাপুরগ্রামে।

 দেহের কোষের ‍মধ্যে সংযুক্ত থাকে  যে শৃঙ্খল  সেখানে রস বের হয়। যা অটো ইমুউনো ডিজিজের শিকার হয়। এইরোগের ফলে রোগপ্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি রস দেহের  কোষের শৃঙ্খল সংযুক্তি বিনষ্ট করে দেয়।   রিটাক্সিম্যাব ‍ ইঞ্জেকশন এই অ্যান্টিবডি নষ্ট করে কোষকে বাঁচায়।  লাখে একজনের এই রোগ হয়। ডাক্তারী পরিভাষায় এর নাম পেমফিগাস ভালগারিস। এর ফলে দেহের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ফোসকার মতো ঘা হয়। খুব যন্ত্রণাদায়ক। এই  কুড়ি থেকে ত্রিশ শতাংশ মৃত্যুর  হার আছে। সিউড়িতে চেম্বারে দেখাতে আসতেন। গরীব মানুষ। আমি রোগীকে জিজ্ঞেস করি প্রাইভেটে তার পক্ষে এই অসুখের দামি ইঞ্জেকশন কেনা সম্ভব কিনা? তাঁদের পক্ষে এই লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করা  সম্ভব ছিল না। চারটে ভায়াল বা শিশির ওষুধের মোট দাম এক লক্ষ সাতাশ হাজারের কাছাকাছি।

উনাদের স্বাস্থ্য সাথী কার্ড আছে জেনে হাসপাতালের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করি। তারপর উনারাই কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এই রোগের ইঞ্জেকশন রিটাক্সিম  ভায়ালের ব্যবস্থা দেন। স্বাস্থ্য সাথীর দৌলতে ইঞ্জেকশনের সুবিধা  পেয়েছে রোগী। জেলা সরকারি হাসপাতালে এই ইঞ্জেকশন পাওয়া যায় না। জেলা মেডিক্যাল কলেজের  চর্মরোগ বিভাগে শুক্রবার  সকাল সাড়ে নটা নাগাদ ইঞ্জেকশন দেওয়া শুরু হয়। চলে সারাদিন। অর্থাৎ স্যালাইনের মতোই ভেনের মাধ্যমে গোটা দিন  ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়।  

রোগী বৃহস্পতিবার ভর্তি  হন। শনিবার ছেড়ে দেওয়া হবে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।  রামপুরহাট জেলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই ধরনের   বিরল প্রজাতির চর্মরোগের চিকিৎসা হলো এই প্রথম। জানা গেছে, দুটো ডোজ ইঞ্জেকশন নেওয়ার পর রোগীর এই চর্মরোগ প্রায় অনেকটাই  সেরে যায়। এখন রোগী পুরোপুরি সুস্থ। রোগীর স্বামী সেখ রমজান একজন প্রান্তিক চাষী। তিনি বলেন,  অভাবের সংসারে দুবছর ধরে চিকিৎসা করে শুধু পয়সা খরচ করেছি।  সিউড়ি, বর্দ্ধমান মেডিক্যাল কলেজ, পিজি হাসপাতালে দেখিয়েছি। পিজিতে বায়োপসি পরীক্ষা করেছে। তার রিপোর্ট আসার আগে সিউড়ি চেম্বারে ড. কপিল দেব দাসের কাছে দেখানোর পর ডাক্তার বাবু যা বলেন, কিছুদিন পর কোলকাতার রিপোর্ট  তাই বলে। সেই মোতাবেক চিকিৎসা হয়। আট নমাসের চিকিৎসার ফলে এখন সুস্থ। ডাক্তারবাবু আর মমতা দিদির স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের আর্থিক সাহায্যে আমার স্ত্রীকে বাঁচাতে পারলাম। ডাক্তারবাবু আর মমতা দিদির কাছে আমাদের  কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা  নেই।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

“মমতা দিদির স্বাস্থ্য সাথী কার্ডেই সেরেছে অসুখ’’ বিরল রোগ মুক্ত হয়ে কৃতজ্ঞ কৃষক পরিবার

আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২১, শুক্রবার

দেবশ্রী মজুমদার, রামপুরহাট: সারা দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গে  ফোসকা। আর তার যন্ত্রণা নিয়ে বছর দুয়েক ধরে ভুগছিলেন দুবরাজপুর ব্লকের সদাইপুর থানার সাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা মুনিরা বিবি। সেই সঙ্গে এই প্রান্তিক চাষী পরিবারের চলছিল অর্থ নাশ। মাত্র নমাসের চিকিৎসায় সেই  বিরল চর্মরোগ সারালো জেলা  সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক কপিল দেব দাস। যদিও পুরো কৃতিত্ত্ব তিনি  দিতে চান তাঁর চর্ম বিভাগ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সহকারী চিকিৎসক দেবাশীষ সেনকে। তবে এই চর্ম রোগকে বিরল বলা হচ্ছে কারণ লাখে একজনের এই রোগ হয়। সেটা  জিনগত কারনে হতে পারে। আবার তা নাও হতে পারে। তবে ভাইরাস ব্যাকটিরিয়ার কারণে নয়।  

আর এই রোগের সব থেকে সমস্যা হলো ইঞ্জেকশন সুলভ নয়। একমাত্র মেডিক্যাল কলেজে পাওয়া যায়। এক একটি ইঞ্জেকশনের দাম বত্রিশ হাজার তিনশত চুয়াল্লিশ টাকা। মোট চারটি ডোজ নিতে হবে। পরে ছমাস পরে আবার চেক আপ করে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন  আর ডোজ লাগবে কিনা।  দাম বেশী হলেও এক্ষেত্রে  দুঃস্থ রোগীর পরিবার পেয়েছেন   স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের সুবিধা।  রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের চর্মরোগ বিভাগীয় প্রধান কপিল দেব  দাস জানান, আট – নমাস ধরে তাঁর চিকিৎসায় ছিলেন বছর ছাব্বিশের মনিরা বিবি। বাড়ি দুবরাজপুর ব্লকের সদাইপুর থানার সাহাপুরগ্রামে।

 দেহের কোষের ‍মধ্যে সংযুক্ত থাকে  যে শৃঙ্খল  সেখানে রস বের হয়। যা অটো ইমুউনো ডিজিজের শিকার হয়। এইরোগের ফলে রোগপ্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি রস দেহের  কোষের শৃঙ্খল সংযুক্তি বিনষ্ট করে দেয়।   রিটাক্সিম্যাব ‍ ইঞ্জেকশন এই অ্যান্টিবডি নষ্ট করে কোষকে বাঁচায়।  লাখে একজনের এই রোগ হয়। ডাক্তারী পরিভাষায় এর নাম পেমফিগাস ভালগারিস। এর ফলে দেহের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ফোসকার মতো ঘা হয়। খুব যন্ত্রণাদায়ক। এই  কুড়ি থেকে ত্রিশ শতাংশ মৃত্যুর  হার আছে। সিউড়িতে চেম্বারে দেখাতে আসতেন। গরীব মানুষ। আমি রোগীকে জিজ্ঞেস করি প্রাইভেটে তার পক্ষে এই অসুখের দামি ইঞ্জেকশন কেনা সম্ভব কিনা? তাঁদের পক্ষে এই লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করা  সম্ভব ছিল না। চারটে ভায়াল বা শিশির ওষুধের মোট দাম এক লক্ষ সাতাশ হাজারের কাছাকাছি।

উনাদের স্বাস্থ্য সাথী কার্ড আছে জেনে হাসপাতালের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করি। তারপর উনারাই কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এই রোগের ইঞ্জেকশন রিটাক্সিম  ভায়ালের ব্যবস্থা দেন। স্বাস্থ্য সাথীর দৌলতে ইঞ্জেকশনের সুবিধা  পেয়েছে রোগী। জেলা সরকারি হাসপাতালে এই ইঞ্জেকশন পাওয়া যায় না। জেলা মেডিক্যাল কলেজের  চর্মরোগ বিভাগে শুক্রবার  সকাল সাড়ে নটা নাগাদ ইঞ্জেকশন দেওয়া শুরু হয়। চলে সারাদিন। অর্থাৎ স্যালাইনের মতোই ভেনের মাধ্যমে গোটা দিন  ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়।  

রোগী বৃহস্পতিবার ভর্তি  হন। শনিবার ছেড়ে দেওয়া হবে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।  রামপুরহাট জেলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই ধরনের   বিরল প্রজাতির চর্মরোগের চিকিৎসা হলো এই প্রথম। জানা গেছে, দুটো ডোজ ইঞ্জেকশন নেওয়ার পর রোগীর এই চর্মরোগ প্রায় অনেকটাই  সেরে যায়। এখন রোগী পুরোপুরি সুস্থ। রোগীর স্বামী সেখ রমজান একজন প্রান্তিক চাষী। তিনি বলেন,  অভাবের সংসারে দুবছর ধরে চিকিৎসা করে শুধু পয়সা খরচ করেছি।  সিউড়ি, বর্দ্ধমান মেডিক্যাল কলেজ, পিজি হাসপাতালে দেখিয়েছি। পিজিতে বায়োপসি পরীক্ষা করেছে। তার রিপোর্ট আসার আগে সিউড়ি চেম্বারে ড. কপিল দেব দাসের কাছে দেখানোর পর ডাক্তার বাবু যা বলেন, কিছুদিন পর কোলকাতার রিপোর্ট  তাই বলে। সেই মোতাবেক চিকিৎসা হয়। আট নমাসের চিকিৎসার ফলে এখন সুস্থ। ডাক্তারবাবু আর মমতা দিদির স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের আর্থিক সাহায্যে আমার স্ত্রীকে বাঁচাতে পারলাম। ডাক্তারবাবু আর মমতা দিদির কাছে আমাদের  কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা  নেই।