০১ ডিসেম্বর ২০২৫, সোমবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নেতাজির আদর্শই আজ দেশের ভারতের ঐক্য ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২, সোমবার
  • / 125

আহমদ হাসান ইমরান, তাহিরুল হাসান, ড. গৌতম পাল

শনিবার পার্ক সার্কাস মিলন উৎসবের মঞ্চে পুবের কলম, একটি কুসুম ও বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চের যৌথ উদ্যোগে ছিল বিশেষ আলোচনাসভা। ‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভারত-ভাবনা ও আজকের আমরা’ শীর্ষক বিষয়ে বত্তৃ«তা করেন বিশিষ্টরা।
প্রতিবেদনে তাঁদের সেই বক্তব্য তুলে ধরলেন আসিফ রেজা আনসারী

আহমদ হাসান ইমরান সম্পাদক, পুবের কলম প্রাক্তন সাংসদ, রাজ্যসভা: আজ ভারতে বিভাজন ও উগ্রবাদী শক্তির উত্থান ঘটেছে। দেশবাসীর মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতির বদলে ছড়ানো হচ্ছে ঘৃণা-বিদ্বেষ। এই মুহূর্তে আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর আদর্শ ও ন্যায়-নীতির সব থেকে বেশি প্রয়োজন আমাদের। নেতাজি থাকলে হয়তো উপ-মহাদেশের বিভাজনই ঘটত না। আর যারা শুধু রাজনৈতিক স্বার্থে হঠাৎ নেতাজিকে নিয়ে মতামাতি করছেন, নেতাজিকে শ্রদ্ধা করলে তাদের উচিত হত নেতাজির নীতি আদর্শ মূল্যবোধকে অনুসরণ করা। কিন্তু আমরা বর্তমানে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখতে পাচ্ছি।

আরও পড়ুন: রাশিয়াকে পেছনে ফেলে বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী দেশ ভারত, রিপোর্ট এশিয়া পাওয়ার ইনডেক্সের

জাহিরুল হাসান, বিশিষ্ট লেখক ও প্রাবন্ধিক: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও কাজী নজরুল ইসলাম সম্প্রীতির প্রতীক। নেতাজি-নজরুকে মাথায় করে রাখা উচিৎ ছিল, কিন্তু তারা নানাভাবে উপেক্ষিত। এটা আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে। দেশকে জানতে হলে নেতাজিকে আগে জানতে হবে। নেতাজি সম্পর্কে বিকৃত ব্যাখ্যা তাঁরাই করতে পারেন যাঁরা নেতাজি সম্পর্কে কিছুই পড়েননি। নেতাজি মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর প্রীতির ভাবনা পোষন করতেন। নেতাজি হচ্ছেন- মুক্ত-চিন্তা, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ও সমন্বয়ী ভারতে মূর্তপ্রতীক। জাতি-ধর্মের বিভেদ ভুলে মিলন-মৈত্রীর দেশ গড়তে চেয়েছিলেন নেতাজি। তাঁর আদর্শ মেনে চললেই গড়ে উঠবে বিভেদ-মুক্ত দেশ। আর তার জন্য নেতাজি সম্পর্কে আরও বেশি বেশি করে আলোচনা দরকার।

আরও পড়ুন: ইতিহাস তৈরি করে ভারতের মেয়েদের বিশ্ব জয়

নেতাজির আদর্শই আজ দেশের ভারতের ঐক্য ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন
ড. দেবনারায়ণ মোদক, ওয়ায়েজুল হক

 

আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞার চাপ, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল বহনকারী ভারতগামী ট্যাংকারের পথ পরিবর্তন

ড. গৌতম পাল সহ-উপাচার্য, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়: আমি ব্যক্তিগতভাবে শঙ্কিত। ভারতের মূল শক্তি ও ভিত্তি বৈচিত্র আজ বিপন্ন। আমাদের অধকার অজ বিপন্ন। প্রতিটি নাগরিক কী খাবেন, পরবেন তা রাষ্ট্র ঠিক করছে। আমরা নাগরিক কিনা তার প্রমাণ চাইছে। অমাদের পূর্বপুরুষ স্বাধীনতার রক্ত দিলেও অমাদের প্রমাণ দিতে হবে। তাই আমরা বিপন্ন। সংবিধান আমাদের সমতা দিয়েছে। নেতাজির স্বপ্নের ভারত গড়তে হলে তাঁর আদর্শ প্রচার করতে হবে। বৈচিত্র রক্ষা করতে হবে। নেতাজি কি চেয়েছিলেন হিন্দু রাষ্ট্র?
আমাদের লজ্জা হয় ৭৫ বছর পেরিয়ে গেলেও সবার গণতান্ত্রতিক অধিকার বিপন্ন হচ্ছে।

 

ড. দেবনারায়ণ মোদক অধিকর্তা নেতাজি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়: সুভাষচন্দ্র সম্পর্কে তিন ধরণের কথা রয়েছে, প্রথমত বীরপুজো, দ্বিতীয়ত- কিছু রসহ্য-রোমাঞ্চ কাহিনী এবং তৃতীয়ত- রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁকে কুৎসিতভাবে ব্যবহার করা। আমরা সুভাষচন্দ্র ভারত-ভাবনা সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করিনি। কিন্তু তাকেই জানতে হবে। সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক দর্শন ‘সিন্থেসিস’ বা সমন্বয়। তিনি তা পেয়েছিলেন মাষ্টারমশাই বেনীমাধব তারপর স্বামী বিবেকানন্দ তারপর শ্রী অরবিন্দ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের কাছে। এ বছর দেশনেতাজির ১২৫তম জন্মজয়ন্তী ও স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পালন করছে। তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আজাদির অমৃত মহোৎসব’। তাই দেশনায়কদের কাছে বলব- ‘দয়া করে অমৃতের নামে মানুষকে গরল পান করাবেন না।’

 

ওয়ায়েজুল হক, সভাপতি, বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চ: আমরা কোথায় অবস্থান করছি, এটা জানা খুব প্রয়োজন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে একটা গোষ্ঠী বারবার অপমান করে চলেছে। তার যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য চিন্তাভাবনা জাগত করতে হবে। নেজাজির ভাবনাকে ভারতে আরও ছড়িয়ে দিতে হবে। নেতাজিকে ছিনতাই করার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু নেতাজি নেতাজি ছিল আছে থাকবে। সাধারণতন্ত্র দিবসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নেতাজির ট্যাবলোর জন্য বারংবার চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ইন্ডিয়া গেটে নেতাজির মূর্তি বসানোর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেটাও এখন গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। হিজাব নিয়ে কত কিছুই না হচ্ছে। নেতাজি থাকলে দেশকে এভাবে চলতে দিতেন না। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় নাম পালটে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের দেশ। আমরা কাউকে ভয় পায় না। এই ভারত আমাদের ছিল, আছে, থাকবে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

নেতাজির আদর্শই আজ দেশের ভারতের ঐক্য ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন

আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২, সোমবার

শনিবার পার্ক সার্কাস মিলন উৎসবের মঞ্চে পুবের কলম, একটি কুসুম ও বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চের যৌথ উদ্যোগে ছিল বিশেষ আলোচনাসভা। ‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভারত-ভাবনা ও আজকের আমরা’ শীর্ষক বিষয়ে বত্তৃ«তা করেন বিশিষ্টরা।
প্রতিবেদনে তাঁদের সেই বক্তব্য তুলে ধরলেন আসিফ রেজা আনসারী

আহমদ হাসান ইমরান সম্পাদক, পুবের কলম প্রাক্তন সাংসদ, রাজ্যসভা: আজ ভারতে বিভাজন ও উগ্রবাদী শক্তির উত্থান ঘটেছে। দেশবাসীর মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতির বদলে ছড়ানো হচ্ছে ঘৃণা-বিদ্বেষ। এই মুহূর্তে আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর আদর্শ ও ন্যায়-নীতির সব থেকে বেশি প্রয়োজন আমাদের। নেতাজি থাকলে হয়তো উপ-মহাদেশের বিভাজনই ঘটত না। আর যারা শুধু রাজনৈতিক স্বার্থে হঠাৎ নেতাজিকে নিয়ে মতামাতি করছেন, নেতাজিকে শ্রদ্ধা করলে তাদের উচিত হত নেতাজির নীতি আদর্শ মূল্যবোধকে অনুসরণ করা। কিন্তু আমরা বর্তমানে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখতে পাচ্ছি।

আরও পড়ুন: রাশিয়াকে পেছনে ফেলে বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী দেশ ভারত, রিপোর্ট এশিয়া পাওয়ার ইনডেক্সের

জাহিরুল হাসান, বিশিষ্ট লেখক ও প্রাবন্ধিক: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও কাজী নজরুল ইসলাম সম্প্রীতির প্রতীক। নেতাজি-নজরুকে মাথায় করে রাখা উচিৎ ছিল, কিন্তু তারা নানাভাবে উপেক্ষিত। এটা আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে। দেশকে জানতে হলে নেতাজিকে আগে জানতে হবে। নেতাজি সম্পর্কে বিকৃত ব্যাখ্যা তাঁরাই করতে পারেন যাঁরা নেতাজি সম্পর্কে কিছুই পড়েননি। নেতাজি মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর প্রীতির ভাবনা পোষন করতেন। নেতাজি হচ্ছেন- মুক্ত-চিন্তা, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ও সমন্বয়ী ভারতে মূর্তপ্রতীক। জাতি-ধর্মের বিভেদ ভুলে মিলন-মৈত্রীর দেশ গড়তে চেয়েছিলেন নেতাজি। তাঁর আদর্শ মেনে চললেই গড়ে উঠবে বিভেদ-মুক্ত দেশ। আর তার জন্য নেতাজি সম্পর্কে আরও বেশি বেশি করে আলোচনা দরকার।

আরও পড়ুন: ইতিহাস তৈরি করে ভারতের মেয়েদের বিশ্ব জয়

নেতাজির আদর্শই আজ দেশের ভারতের ঐক্য ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন
ড. দেবনারায়ণ মোদক, ওয়ায়েজুল হক

 

আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞার চাপ, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল বহনকারী ভারতগামী ট্যাংকারের পথ পরিবর্তন

ড. গৌতম পাল সহ-উপাচার্য, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়: আমি ব্যক্তিগতভাবে শঙ্কিত। ভারতের মূল শক্তি ও ভিত্তি বৈচিত্র আজ বিপন্ন। আমাদের অধকার অজ বিপন্ন। প্রতিটি নাগরিক কী খাবেন, পরবেন তা রাষ্ট্র ঠিক করছে। আমরা নাগরিক কিনা তার প্রমাণ চাইছে। অমাদের পূর্বপুরুষ স্বাধীনতার রক্ত দিলেও অমাদের প্রমাণ দিতে হবে। তাই আমরা বিপন্ন। সংবিধান আমাদের সমতা দিয়েছে। নেতাজির স্বপ্নের ভারত গড়তে হলে তাঁর আদর্শ প্রচার করতে হবে। বৈচিত্র রক্ষা করতে হবে। নেতাজি কি চেয়েছিলেন হিন্দু রাষ্ট্র?
আমাদের লজ্জা হয় ৭৫ বছর পেরিয়ে গেলেও সবার গণতান্ত্রতিক অধিকার বিপন্ন হচ্ছে।

 

ড. দেবনারায়ণ মোদক অধিকর্তা নেতাজি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়: সুভাষচন্দ্র সম্পর্কে তিন ধরণের কথা রয়েছে, প্রথমত বীরপুজো, দ্বিতীয়ত- কিছু রসহ্য-রোমাঞ্চ কাহিনী এবং তৃতীয়ত- রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁকে কুৎসিতভাবে ব্যবহার করা। আমরা সুভাষচন্দ্র ভারত-ভাবনা সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করিনি। কিন্তু তাকেই জানতে হবে। সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক দর্শন ‘সিন্থেসিস’ বা সমন্বয়। তিনি তা পেয়েছিলেন মাষ্টারমশাই বেনীমাধব তারপর স্বামী বিবেকানন্দ তারপর শ্রী অরবিন্দ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের কাছে। এ বছর দেশনেতাজির ১২৫তম জন্মজয়ন্তী ও স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পালন করছে। তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আজাদির অমৃত মহোৎসব’। তাই দেশনায়কদের কাছে বলব- ‘দয়া করে অমৃতের নামে মানুষকে গরল পান করাবেন না।’

 

ওয়ায়েজুল হক, সভাপতি, বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চ: আমরা কোথায় অবস্থান করছি, এটা জানা খুব প্রয়োজন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে একটা গোষ্ঠী বারবার অপমান করে চলেছে। তার যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য চিন্তাভাবনা জাগত করতে হবে। নেজাজির ভাবনাকে ভারতে আরও ছড়িয়ে দিতে হবে। নেতাজিকে ছিনতাই করার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু নেতাজি নেতাজি ছিল আছে থাকবে। সাধারণতন্ত্র দিবসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নেতাজির ট্যাবলোর জন্য বারংবার চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ইন্ডিয়া গেটে নেতাজির মূর্তি বসানোর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেটাও এখন গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। হিজাব নিয়ে কত কিছুই না হচ্ছে। নেতাজি থাকলে দেশকে এভাবে চলতে দিতেন না। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় নাম পালটে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের দেশ। আমরা কাউকে ভয় পায় না। এই ভারত আমাদের ছিল, আছে, থাকবে।