দেবশ্রী মজুমদার, বোলপুর: কাঁথা স্টিচের কাজের স্বীকৃতি আদায় করে পদ্মশ্রী পেলেন বোলপুরের জাম্বুনির বাসিন্দা তকদিরা বেগম। শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ রাজ্যের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এবং বস্ত্র দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ তাঁর বাড়ি গিয়ে তাঁকে সম্বর্ধনা জানালেন।
বৃহস্পতিবার মিনিস্ট্রি অফ টেক্সটাইল থেকে তাঁকে ফোনে জানানো হয় এই সুসংবাদের কথা। দিল্লি থেকে খবরটা শুনে প্রথমে একটু চমকে যান তিনি। তবে তাঁর তিরিশ বছরের কাজের স্বীকৃতি পেয়ে তাঁর চোখের কোণা দুটি ভিজে যায়।
তিরিশ বছর ধরে নিজেকে কাজের মাধ্যমে একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন সংখ্যালঘু পরিবারের এই মহিলা।
বোলপুরের জাম্বুনির মাদ্রাসা পাড়ার বাসিন্দা তকদিরা বেগম। এই কাঁথা স্টিচের কাজ করে বিয়ে দিয়েছেন তিন মেয়ের। তাঁর বাবার আদি বাড়ি শ্রীকৃষ্ণপুর এবং পরে জয়কৃষ্ণপুরে তাঁর বাবারা থাকতে শুরু করেন। ভেদিয়া বালিকা বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। পঞ্চম শ্রেণিতে সেলাইয়ের ক্লাসে সেলাই ফোঁড়ের কাজ তাঁকে আকর্ষণ করে। তারপর মায়ের কাঁথা স্টিচের কাজ তাঁকে প্রথাগত শিক্ষার বাইরে সূচি শিল্পই মুগ্ধ করে। তকদিরা বেগমের হাত দিয়ে অনেক তরুণীর সাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তাই অনেকের কাছে তিনি পথিকৃৎ।
পুরাতন কাঁথা স্টিচ থেকে বেরিয়ে আধুনিক ডিজাইনের কলকা ডিজাইনে মোটিফ ফুটিয়ে তোলেন অবলিলায়। রাজ্য ও জাতীয় স্তরে অনেক সম্মাননা তাঁর ঝুলিতে।
তকদিরা বেগম জানান, পঁচানব্বই সালে ন্যাশানাল মেরিট অ্যাওয়ার্ড, , ছিয়ানব্বই সালে ন্যাশানাল অ্যাওয়ার্ড, এবং দুই হাজার নয় সালে শিল্পগুরু অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু সংরক্ষণশীল পরিবার হিসেবে এখন মেয়েরা কেউ ঘরে বসে থাকে না। তাঁর মতো অনেক মেয়েই সাবলম্বী।
তিনি খুবই ধার্মিক। তিনবার হজ যাত্রায় গিয়েছেন। তিনি বলেন, মুখে পর্দা নিয়ে কোনদিন কোন কাজে অসুবিধা হয় নি তাঁর। পর্দাসীন থেকেও তিনি দেশের বহু জায়গাই ট্রেড ফেয়ারে অংশ গ্রহণ করেছেন। কোনও অসুবিধা হয় নি। কখনও কোন অফিসার তাঁকে মুখের পর্দা সরাতে বলেননি।