ঘরে ফেরা হল না মেধাবী শাহিনের
মুশারফ হোসেন, চাঁচল: অভাবের তাড়নায় উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে আর কলেজে ভর্তি হওয়া হয়নি মেধাবী ছাত্র শাহিন আক্তারের। মালদার পুখুরিয়া থানার চৌদুয়ার গ্রামে যে ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিক মারা গিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম শাহিন আক্তার। বছর ২২-এর এই তরতাজা সুদর্শন যুবক মাত্র পাঁচ মাস আগে বিয়ে করেছেন। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে মুহুর্মুহু মূর্চ্ছা যাচ্ছেন তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন। জামাইয়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে মানিকচকের ভূতনি এলাকা থেকে চৌদুয়ার গ্রামে এসে পৌঁছেছেন সাবিনার বাবা-মা। সদ্য স্বামী হারানো সাবিনাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়েছেন তারাও। শাহিন আক্তারের চাচা পেশায় গৃহশিক্ষক সাবিরুল হক জানান, শাহিন বরাবরই মেধাবী ছাত্র ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে কলেজে ভর্তি হওয়া হয়নি শাহিনের।
শাহিনের বাবা তোফিজ পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। মা শাহিনা বিবি গৃহবধূ। শাহিনেরা দুই ভাই ও এক বোন। ছোট ভাইয়ের বয়স ১২ বছর। একমাত্র বোন বিবাহিত। বাবা, মা স্ত্রী ও ভাইকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতেন শাহিনেরা। শাহিনের মা শাহিনা বিবি জানান, ছেলেটা সংসারের হাল ধরার জন্য এরআগে একবার মিজোরামে কাজে গিয়েছিল। কিন্তু কুরবানীর ঈদে বাড়ি ফিরে আসে। এরপরে পরেই পঞ্চায়েত ভোট। ভোটের পরেই আবার সে মিজোরামের উদ্দেশ্যে অন্যান্য গ্রামবাসীদের সঙ্গে মিজোরামে কাজে চলে যায়। তবে ও যে আর আসবে না এ কথা বিশ্বাস হচ্ছে না কারোর। বাবা ও ছেলে মিলে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করে কোনওরকমে একটি তিন কামরার পাকা বাড়ি দাঁড় করিয়েছিল। কিন্তু সেই বাড়িতে আর বাস করা হল না শাহিন আক্তারের।
শাহিনের কাকু সাবিরুল হক জানান, গ্রামের ১৬ জন বাসিন্দা প্রাণ হারিয়েছেন। গ্রামের মানুষ অপেক্ষায় রয়েছেন মৃতদেহগুলো কখন আসবে। পরিবার-পরিজন ও পাড়া-পড়শিরা তাদের প্রিয়জনদের শেষবারের মতো দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন।