পারিজাত মোল্লা: বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে কয়লা ব্যবসায়ী রাজু ঝা খুনে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ। সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থারের নির্দেশ খারিজ করল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। হলফনামায় থাকা সমস্ত তথ্য না জেনে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ ত্রুটিপূর্ণ বলেই পর্যবেক্ষণ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের।
প্রসঙ্গত, পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান শহর সংলগ্ন শক্তিগড়ের কয়লা ব্যবসায়ী রাজু ঝা খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার। এদিন সেই নির্দেশ খারিজ করে দিল প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, -‘ সিবিআই নয়, রাজ্য পুলিশের সিট এই ঘটনার তদন্ত করবে’।জানা গেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে সিট তদন্ত চালাবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের গত ১ এপ্রিল রাত আটটা নাগাদ বর্ধমান শহর সংলগ্ন শক্তিগড়ে কলকাতামুখী ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি ল্যাংচার দোকানের সামনে গাড়ির মধ্যেই খুন হয়ে যান দুর্গাপুরের কয়লা ব্যবসায়ী রাজু ঝা। জনা কয়েক দুষ্কৃতীদের বন্দুকের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান তিনি। তাঁর খুনের ঘটনায় একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।কয়লা পাচার কাণ্ডে নাম জড়িয়েছিল রাজু ঝার। সেই ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ইডি ডেকেছিল তাঁকে। কিন্তু ইডি দফতরে হাজিরা দেওয়ার আগেই খুন হয়ে যান রাজু। এই খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়ে যায় গরু পাচার মামলায় ফেরার অভিযুক্ত আব্দুল লতিফের। অভিযোগ, যেসময় রাজু খুন হন সেই সময় গাড়িতে ছিলেন আব্দুল। কিন্তু তারপর থেকেই বেপাত্তা হয়েছিলেন তিনি!রাজু ঝার গাড়ির চালক নূর হোসেন শক্তিগড় থানায় এফআইআর দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে খুনের ধারায় মামলা রুজু করে ও সিট গঠন করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
কিন্তু এই মামলায় পুলিশ এখনও তেমন কিছু করতে পারেনি, এমন অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার গত ১৪ জুন এই খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করেছিল রাজ্য। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ, সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ খারিজ করে দেয়।এই মামলায় ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ,-‘ হলফনামায় থাকা সমস্ত তথ্য না জেনে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল সিঙ্গল বেঞ্চ, যা ত্রুটিপূর্ণ।
আপাতত এই খুনের ঘটনার তদন্ত পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে গঠিত সিট-ই করবে’।ইতিমধ্যে সিট তিনজনকে গ্রেফতার করেছে এই ঘটনায়। খুনের ঘটনার ১৯ দিনের মাথায় হয় প্রথম গ্রেফতার করে সিট। সন্দেহভাজন একজনকে দুর্গাপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপর রাঁচি থেকে গ্রেফতার করা হয় আরও দু’জনকে। ঘটনার দিন শক্তিগড়ে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে একটি ল্যাংচার দোকানের সামনে এক গাড়িতে বসেছিলেন রাজু। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, তাঁর গাড়ির ঠিক পিছনে একটি নীল গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছিল। ওই গাড়িটি থেকে ৩ জন নেমে এসে আচমকাই রাজুকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।সাথে থাকা আব্দুল লতিফ বেপাত্তা হয়ে যান।পরে অবশ্য অন্য মামলায় ( গরু পাচার) পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল সিবিআই এজলাসে দেখা যায় আব্দুল লতিফ কে।