২৩ জুন ২০২৫, সোমবার, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হায়দরাবাদের তালাবন্দি কবরের ছবি পাকিস্তানের বলে ভুল তথ্য পেশ! সত্য সামনে আনল অল্ট নিউজ

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৪ মে ২০২৩, বৃহস্পতিবার
  • / 28

বিশেষ প্রতিবেদন: ‘নেক্রোফিলিয়া’ একটি মানসিক যৌন ব্যাধি। সেই নেক্রোফিলিয়া প্রতিরোধে পাকিস্তানে মেয়েদের কবরগুলিকে তালাবন্দি করা হচ্ছে, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের এই রিপোর্ট ঘিরে চাপানউতোর তৈরি হয় গোটা সমাজে। ভারতীয় মিডিয়ার একটি অংশের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, পাকিস্তানের সামাজিক পরিবেশ সেই দেশে, যৌন ব্যাধিতে আক্রান্ত নিপীড়িত সমাজের জন্ম দিয়েছে।

গত শনিবার এই চিত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে ‘নেক্রোফিলিয়া’কে। (‘নেক্রোফিলিয়া’ এক ধরণের মানসিক যৌন ব্যাধি। যারা এই ব্যাধিতে আক্রান্ত তাদের বলা হয় নেক্রাফাইল। যারা মৃতদেহের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে)। হায়দরাবাদের কবরের ছবি পাকিস্তানের বলে বিভ্রান্তিকর রিপোর্ট, ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: এবার পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে নজর ইসরাইলের

বিশেষ সূত্র মারফৎ জানা যায়, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনগুলিতে কবরের চিত্রটি আসলে ভারতের হায়দরাবাদের। বিশ্বস্ত সূত্র অনুসারে, নেক্রোফিলিয়ার ভয়ে নয়, অন্যান্য অনেক কারণেই কবরগুলিকে তালাবন্দি করে রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানকে কাছে টেনে ইরানের ওপর চাপ বাড়াতে চাইছে আমেরিকা 

চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল সোশ্যাল মিডিয়ার ছবি উদ্ধৃত করে সংবাদ মাধ্যমের একটি রিপোর্ট বলছে, পাকিস্তানের বেশ কিছু জায়গায় যৌন সহিংসতা থেকে রক্ষা করার জন্য মেয়েদের কবরে তালা লাগানো হয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর ডিজিটাল ট্যুইটারে একটি তালাবন্দি কবরের ছবি প্রকাশ পায়। সেখানে রেফারেন্স হিসেবে পাকিস্তানের এই সম্পর্কীয় একটি সম্পাদকীয়কে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বুধবার কি জামিন পাবেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান?

অল্ট নিউজের ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট অনুসারে, বেশ কয়েকটি বহুল প্রচারিত সংবাদ মাধ্যম এই সম্পর্কিত খবর করে সেটি প্রকাশ করে পরে সেটিকে মুছেও দেয়। পাশাপাশি বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যম ধর্মত্যাগী হ্যারিস সুলতানের একটি ট্যুইট শেয়ার করেছেন। যেখানে হ্যারিস দাবি করেছেন, এই কবরের চিত্রটি পাকিস্তানের। ছবিটির ক্যাপশনে হারিস সুলতান লিখেছেন, “পাকিস্তান এমন একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ, যৌন-ক্ষুধার্ত সমাজ তৈরি করেছে যে, মানুষ এখন তাদের মহিলাদের কবরে তালা লাগাচ্ছে, যাতে তাদের ধর্ষণ না করা হয়।” আরেক পাক লেখক তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাজিদ ইউসুফ শাহও ট্যুইটে একই দাবি করেছেন। তিনি লিখেছেন: “পাকিস্তান এমন এক সামাজিক পরিবেশ তৈরি করেছে যে একটি যৌন ক্ষুধার্ত এবং অবদমিত সমাজ জন্ম নিয়েছে। যার ফলে, যৌন হিংসার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তাদের মেয়েদের কবরে তালা লাগাতে হচ্ছে কিছু মানুষকে। ধর্ষণ এবং কোনও ব্যক্তির পোশাকের মধ্যে এই ধরনের সংযোগ সমাজকে দুঃখ এবং হতাশার রাস্তায় নিয়ে যায়।”

এর পর গত ৩০ এপ্রিল অল্ট নিউজের তথ্য তালাশ খবর বলছে, কবরের চিত্রটি পাসিস্তানের নয়, এটি ভারতের হায়দরাবাদের। কবরস্থানটি হায়দরাবাদের মদনাপেটের দরব জং কলোনির মসজিদ ই সালার মুল্কের বিপরীতে অবস্থিত। মুক্তার সাহেব যিনি মসজিদ ই সালার মুল্কের মুয়াজ্জিন হিসাবে গ্রিল বা জালির পিছনে কারণ ব্যাখ্যা করে অল্ট নিউজকে জানিয়েছেন যে, প্রচুর লোক সেখানে যায় এবং অনুমতি ছাড়াই পুরনো কবরের উপর লাশ দাফন করে। যারা আগে থেকেই এখানে তাদের কাছের মানুষ বিশ্রাম নিচ্ছেন তারা ফাতেহা পড়তে আসার পর থেকে তাদের অভিযোগ রয়েছে। অন্যরা যাতে কোনও লাশ দাফন করতে না পারে সেজন্য পরিবারগুলো সেখানে গ্রিল লাগিয়ে দিয়েছে। এই কবরের ছবিটি পাকিস্তানের বলে দাবি করে প্রচার করা প্রসঙ্গে মুক্তার সাহেব এটিকে খণ্ডন করেন বলেন, গ্রিলটিও নির্মাণ করা হয়েছিল যাতে কবরের সামনে স্ট্যাম্প লাগানো না হয় কারণ কবরের ঠিক সামনে ছিল প্রবেশদ্বার।

সম্প্রতি এক হায়দরাবাদের বাসিন্দা, সমাজকর্মী ওই স্থান পরিদর্শন করে চিত্রগুলি তুলে ধরেন। মসজিদের মুয়াজ্জিনের বক্তব্য উদ্ধৃত করে ওই সমাজকর্মী বলেন, প্রায় দেড় থেকে দুই বছর আগে নির্মিত তালাবন্দি কবরটি কবরস্থান কমিটির অনুমতি ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে। ফ্যাক্ট চেকিংয়ের পর সংবাদ সংস্থা এএনআই একটি প্রতিবেদন ছাপে যেখানে বলা হয়, ‘পাকিস্তানের ডেইলি টাইমস দ্বারা নেক্রোফিলিয়ার গল্পের ভাইরাল প্রতিবেদন ভুল, ‘হায়দরাবাদ থেকে কবর’।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

হায়দরাবাদের তালাবন্দি কবরের ছবি পাকিস্তানের বলে ভুল তথ্য পেশ! সত্য সামনে আনল অল্ট নিউজ

আপডেট : ৪ মে ২০২৩, বৃহস্পতিবার

বিশেষ প্রতিবেদন: ‘নেক্রোফিলিয়া’ একটি মানসিক যৌন ব্যাধি। সেই নেক্রোফিলিয়া প্রতিরোধে পাকিস্তানে মেয়েদের কবরগুলিকে তালাবন্দি করা হচ্ছে, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের এই রিপোর্ট ঘিরে চাপানউতোর তৈরি হয় গোটা সমাজে। ভারতীয় মিডিয়ার একটি অংশের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, পাকিস্তানের সামাজিক পরিবেশ সেই দেশে, যৌন ব্যাধিতে আক্রান্ত নিপীড়িত সমাজের জন্ম দিয়েছে।

গত শনিবার এই চিত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে ‘নেক্রোফিলিয়া’কে। (‘নেক্রোফিলিয়া’ এক ধরণের মানসিক যৌন ব্যাধি। যারা এই ব্যাধিতে আক্রান্ত তাদের বলা হয় নেক্রাফাইল। যারা মৃতদেহের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে)। হায়দরাবাদের কবরের ছবি পাকিস্তানের বলে বিভ্রান্তিকর রিপোর্ট, ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: এবার পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে নজর ইসরাইলের

বিশেষ সূত্র মারফৎ জানা যায়, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনগুলিতে কবরের চিত্রটি আসলে ভারতের হায়দরাবাদের। বিশ্বস্ত সূত্র অনুসারে, নেক্রোফিলিয়ার ভয়ে নয়, অন্যান্য অনেক কারণেই কবরগুলিকে তালাবন্দি করে রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানকে কাছে টেনে ইরানের ওপর চাপ বাড়াতে চাইছে আমেরিকা 

চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল সোশ্যাল মিডিয়ার ছবি উদ্ধৃত করে সংবাদ মাধ্যমের একটি রিপোর্ট বলছে, পাকিস্তানের বেশ কিছু জায়গায় যৌন সহিংসতা থেকে রক্ষা করার জন্য মেয়েদের কবরে তালা লাগানো হয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর ডিজিটাল ট্যুইটারে একটি তালাবন্দি কবরের ছবি প্রকাশ পায়। সেখানে রেফারেন্স হিসেবে পাকিস্তানের এই সম্পর্কীয় একটি সম্পাদকীয়কে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বুধবার কি জামিন পাবেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান?

অল্ট নিউজের ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট অনুসারে, বেশ কয়েকটি বহুল প্রচারিত সংবাদ মাধ্যম এই সম্পর্কিত খবর করে সেটি প্রকাশ করে পরে সেটিকে মুছেও দেয়। পাশাপাশি বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যম ধর্মত্যাগী হ্যারিস সুলতানের একটি ট্যুইট শেয়ার করেছেন। যেখানে হ্যারিস দাবি করেছেন, এই কবরের চিত্রটি পাকিস্তানের। ছবিটির ক্যাপশনে হারিস সুলতান লিখেছেন, “পাকিস্তান এমন একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ, যৌন-ক্ষুধার্ত সমাজ তৈরি করেছে যে, মানুষ এখন তাদের মহিলাদের কবরে তালা লাগাচ্ছে, যাতে তাদের ধর্ষণ না করা হয়।” আরেক পাক লেখক তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাজিদ ইউসুফ শাহও ট্যুইটে একই দাবি করেছেন। তিনি লিখেছেন: “পাকিস্তান এমন এক সামাজিক পরিবেশ তৈরি করেছে যে একটি যৌন ক্ষুধার্ত এবং অবদমিত সমাজ জন্ম নিয়েছে। যার ফলে, যৌন হিংসার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তাদের মেয়েদের কবরে তালা লাগাতে হচ্ছে কিছু মানুষকে। ধর্ষণ এবং কোনও ব্যক্তির পোশাকের মধ্যে এই ধরনের সংযোগ সমাজকে দুঃখ এবং হতাশার রাস্তায় নিয়ে যায়।”

এর পর গত ৩০ এপ্রিল অল্ট নিউজের তথ্য তালাশ খবর বলছে, কবরের চিত্রটি পাসিস্তানের নয়, এটি ভারতের হায়দরাবাদের। কবরস্থানটি হায়দরাবাদের মদনাপেটের দরব জং কলোনির মসজিদ ই সালার মুল্কের বিপরীতে অবস্থিত। মুক্তার সাহেব যিনি মসজিদ ই সালার মুল্কের মুয়াজ্জিন হিসাবে গ্রিল বা জালির পিছনে কারণ ব্যাখ্যা করে অল্ট নিউজকে জানিয়েছেন যে, প্রচুর লোক সেখানে যায় এবং অনুমতি ছাড়াই পুরনো কবরের উপর লাশ দাফন করে। যারা আগে থেকেই এখানে তাদের কাছের মানুষ বিশ্রাম নিচ্ছেন তারা ফাতেহা পড়তে আসার পর থেকে তাদের অভিযোগ রয়েছে। অন্যরা যাতে কোনও লাশ দাফন করতে না পারে সেজন্য পরিবারগুলো সেখানে গ্রিল লাগিয়ে দিয়েছে। এই কবরের ছবিটি পাকিস্তানের বলে দাবি করে প্রচার করা প্রসঙ্গে মুক্তার সাহেব এটিকে খণ্ডন করেন বলেন, গ্রিলটিও নির্মাণ করা হয়েছিল যাতে কবরের সামনে স্ট্যাম্প লাগানো না হয় কারণ কবরের ঠিক সামনে ছিল প্রবেশদ্বার।

সম্প্রতি এক হায়দরাবাদের বাসিন্দা, সমাজকর্মী ওই স্থান পরিদর্শন করে চিত্রগুলি তুলে ধরেন। মসজিদের মুয়াজ্জিনের বক্তব্য উদ্ধৃত করে ওই সমাজকর্মী বলেন, প্রায় দেড় থেকে দুই বছর আগে নির্মিত তালাবন্দি কবরটি কবরস্থান কমিটির অনুমতি ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে। ফ্যাক্ট চেকিংয়ের পর সংবাদ সংস্থা এএনআই একটি প্রতিবেদন ছাপে যেখানে বলা হয়, ‘পাকিস্তানের ডেইলি টাইমস দ্বারা নেক্রোফিলিয়ার গল্পের ভাইরাল প্রতিবেদন ভুল, ‘হায়দরাবাদ থেকে কবর’।