০১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফতেহ আলি ওয়াসীর দরবারে মসজিদের ভেতর রক্তদান হিন্দু-মুসলিমের

সাদিয়া আহমেদ
  • আপডেট : ৭ ডিসেম্বর ২০২২, বুধবার
  • / 13

এক রক্তদানকারীকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন পুবের কলম সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান। রয়েছেন জনাব লালটু, কুতুবউদ্দীন তরফদার ও সঞ্চালক জালাল।

পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক : সম্প্রীতির নিদর্শন হিসেবে মঙ্গলবার মানিকতলার ওয়াসীয়া দরবার শরীফের মসজিদের ভেতর এক রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। হাজী রহিম বক্স ওয়াকফ এস্টেট কমিটির পরিচালনায় ওয়াসীয়া জামে মসজিদের মধ্যে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয়। হযরত ফতেহ আলি ওয়াসী-র ওফাত দিবস উপলক্ষে দরবার শরীফে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান হবে। প্রথমদিন ছিল রক্তদান শিবির। আর মানিকতলার এই মসজিদের অভ্যন্তরে অনুষ্ঠিত হল এই অভিনব রক্তদান। এতে অংশগ্রহণ করেন হিন্দু-মুসলিম সকলেই। বাংলাদেশ থেকে আসা এক ব্যক্তিও রক্তদান করেন। সকলেই বলছেন, মসজিদ প্রাঙ্গনে রক্তদান হয়, কিন্তু মসজিদের ভেতর অসুস্থ মানুষের সেবায় রক্তদানের এই মহতী উদ্যোগ সারা ভারত তো বটেই, উপমহাদেশেও কমই দেখা যায়।

দ্বিতীয়দিন অর্থাৎ আজ উনবিংশ শতাব্দীর একজন মহান নেতা সুফি সৈয়দ ফতেহ আলী ওয়াসি (রহ:) ১৩৬তম ওফাত দিবস উপলক্ষে ঈসালে সওয়াব অনুষ্ঠিত হবে। পিপলস ব্লাড সেন্টার সংগ্রহের কাজ করে। উপস্থিত বিশিষ্টরা রক্তদানকারীদের হাতে গোলাপ ফুল তুলে দিয়ে সংবর্ধনা জানান। ওয়াসীয়া জামে মসজিদের মধ্যে আয়োজিত এই রক্তদান শিবিরে হিন্দু-মুসলিম সকল ধর্মের মানুষ রক্তদান করেন। সিঁদুর পরিহিত হিন্দু মহিলা রমা বসাক রক্তদানের পর বলেন, মানুষের উপকারের জন্য রক্ত দিলাম, কোনও আশায় নয়। সামান্য রক্ত একজন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারে।

এদিনের রক্তদান উৎসবে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক তাপস চ্যাটার্জি, পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী, পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক এবং সাবেক সংসদ আহমদ হাসান ইমরান, হাজী রহিম বক্স ওয়াকফ এস্টেট কমিটির সভাপতি পীরজাদা সানাউল্লাহ সিদ্দিকী এবং সম্পাদক কুতুবউদ্দিন তরফদার,স্বামী সেবানন্দজি মহারাজ প্রমুখ। কুতুবউদ্দিন তরফদার এদিনের রক্তদান উৎসবের তত্ত্বাবধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

আহমদ হাসান ইমরান এদিন বলেন, এরকম একটা রক্তদান উৎসব সম্প্রীতির বার্তা বহন করবে। একজন প্রকৃত ধর্মীয় ব্যক্তি কখনও অপরাধকে প্রশ্রয় দেয় না। ইসলাম ধর্ম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করে না। ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি সব কিছুই রয়েছে। হিটলার লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিলেন। তিনি ধর্মীয় নেতা ছিলেন না। জাপানে পারমাণবিক বোমা ধর্মের কারণে ফেলা হয়নি। তাই যাদের মানসিকতা খারাপ তাঁরা খারাপ কাজ করবে। এর জন্য ধর্ম দায়ী নয়। অনেকে ধর্মকে ব্যবহার করে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতেই অপরাধে লিপ্ত হয়। তাই আমাদেরকে ধর্মের সঠিক দিকনির্দেশনা মেনে চলতে হবে।

এক শ্রেণীর অসৎ চরিত্রের রাজনৈতিক ব্যক্তি নিজ স্বার্থে ধর্মকে কাজে লাগিয়ে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেন পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী।

বিধায়ক তাপস চ্যাটার্জি বলেন, ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম। এই ধর্ম সাম্যের কথা বলে। ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভেঙে যে কালো দিন তৈরি করা হয়েছে, আজকের সম্প্রীতির রক্তদান উৎসব সেই সাম্প্রদায়িকতাকে সপাটে থাপ্পড় মারল। তিনি আরও বলেন, যিনি বলেন শিক্ষার জন্য সুদূর চিনে যেতে হলেও যেও, পাশের মানুষকে অভুক্ত রেখে হজে গেলে তা কবুল হবে না, নিঃসন্দেহে তাঁকে অনুসরণ করা যেতে পারে।

সেবানন্দজি মহারাজ জানান, অনেক স্বার্থবাজ মানুষের অসহায়তাকে কাজে লাগিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানিতে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। এরকম একটা সময় এই রক্তদান উৎসব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরি করবে। এই দিনের অনুষ্ঠান থেকে এলাকার কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের পুরস্কৃত করা হয়।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ফতেহ আলি ওয়াসীর দরবারে মসজিদের ভেতর রক্তদান হিন্দু-মুসলিমের

আপডেট : ৭ ডিসেম্বর ২০২২, বুধবার

পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক : সম্প্রীতির নিদর্শন হিসেবে মঙ্গলবার মানিকতলার ওয়াসীয়া দরবার শরীফের মসজিদের ভেতর এক রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। হাজী রহিম বক্স ওয়াকফ এস্টেট কমিটির পরিচালনায় ওয়াসীয়া জামে মসজিদের মধ্যে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয়। হযরত ফতেহ আলি ওয়াসী-র ওফাত দিবস উপলক্ষে দরবার শরীফে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান হবে। প্রথমদিন ছিল রক্তদান শিবির। আর মানিকতলার এই মসজিদের অভ্যন্তরে অনুষ্ঠিত হল এই অভিনব রক্তদান। এতে অংশগ্রহণ করেন হিন্দু-মুসলিম সকলেই। বাংলাদেশ থেকে আসা এক ব্যক্তিও রক্তদান করেন। সকলেই বলছেন, মসজিদ প্রাঙ্গনে রক্তদান হয়, কিন্তু মসজিদের ভেতর অসুস্থ মানুষের সেবায় রক্তদানের এই মহতী উদ্যোগ সারা ভারত তো বটেই, উপমহাদেশেও কমই দেখা যায়।

দ্বিতীয়দিন অর্থাৎ আজ উনবিংশ শতাব্দীর একজন মহান নেতা সুফি সৈয়দ ফতেহ আলী ওয়াসি (রহ:) ১৩৬তম ওফাত দিবস উপলক্ষে ঈসালে সওয়াব অনুষ্ঠিত হবে। পিপলস ব্লাড সেন্টার সংগ্রহের কাজ করে। উপস্থিত বিশিষ্টরা রক্তদানকারীদের হাতে গোলাপ ফুল তুলে দিয়ে সংবর্ধনা জানান। ওয়াসীয়া জামে মসজিদের মধ্যে আয়োজিত এই রক্তদান শিবিরে হিন্দু-মুসলিম সকল ধর্মের মানুষ রক্তদান করেন। সিঁদুর পরিহিত হিন্দু মহিলা রমা বসাক রক্তদানের পর বলেন, মানুষের উপকারের জন্য রক্ত দিলাম, কোনও আশায় নয়। সামান্য রক্ত একজন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারে।

এদিনের রক্তদান উৎসবে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক তাপস চ্যাটার্জি, পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী, পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক এবং সাবেক সংসদ আহমদ হাসান ইমরান, হাজী রহিম বক্স ওয়াকফ এস্টেট কমিটির সভাপতি পীরজাদা সানাউল্লাহ সিদ্দিকী এবং সম্পাদক কুতুবউদ্দিন তরফদার,স্বামী সেবানন্দজি মহারাজ প্রমুখ। কুতুবউদ্দিন তরফদার এদিনের রক্তদান উৎসবের তত্ত্বাবধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

আহমদ হাসান ইমরান এদিন বলেন, এরকম একটা রক্তদান উৎসব সম্প্রীতির বার্তা বহন করবে। একজন প্রকৃত ধর্মীয় ব্যক্তি কখনও অপরাধকে প্রশ্রয় দেয় না। ইসলাম ধর্ম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করে না। ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি সব কিছুই রয়েছে। হিটলার লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিলেন। তিনি ধর্মীয় নেতা ছিলেন না। জাপানে পারমাণবিক বোমা ধর্মের কারণে ফেলা হয়নি। তাই যাদের মানসিকতা খারাপ তাঁরা খারাপ কাজ করবে। এর জন্য ধর্ম দায়ী নয়। অনেকে ধর্মকে ব্যবহার করে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতেই অপরাধে লিপ্ত হয়। তাই আমাদেরকে ধর্মের সঠিক দিকনির্দেশনা মেনে চলতে হবে।

এক শ্রেণীর অসৎ চরিত্রের রাজনৈতিক ব্যক্তি নিজ স্বার্থে ধর্মকে কাজে লাগিয়ে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেন পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী।

বিধায়ক তাপস চ্যাটার্জি বলেন, ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম। এই ধর্ম সাম্যের কথা বলে। ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভেঙে যে কালো দিন তৈরি করা হয়েছে, আজকের সম্প্রীতির রক্তদান উৎসব সেই সাম্প্রদায়িকতাকে সপাটে থাপ্পড় মারল। তিনি আরও বলেন, যিনি বলেন শিক্ষার জন্য সুদূর চিনে যেতে হলেও যেও, পাশের মানুষকে অভুক্ত রেখে হজে গেলে তা কবুল হবে না, নিঃসন্দেহে তাঁকে অনুসরণ করা যেতে পারে।

সেবানন্দজি মহারাজ জানান, অনেক স্বার্থবাজ মানুষের অসহায়তাকে কাজে লাগিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানিতে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। এরকম একটা সময় এই রক্তদান উৎসব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরি করবে। এই দিনের অনুষ্ঠান থেকে এলাকার কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের পুরস্কৃত করা হয়।