২৫ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘রায় নিয়ে ভাবতে ভাবতে নিদ্রাহীন রাত কাটাই’, সুপ্রিম কোর্টের প্রধানবিচারপতির ১০ উক্তি

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২২, রবিবার
  • / 51

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: দেশের বিচারব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা। বিচারব্যবস্থাকে কী ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হয় এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা কী, তা নিয়ে শনিবার মন্তব্য করেছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বলেন, একটা মিথ্যা ভাষ্য তৈরি করা হয়েছে যে, বিচারপতিদের জীবন খুবই সহজ, কিন্তু তাঁরা জীবনের বহু আনন্দ, কখনও পারিবারিক অনুষ্ঠান থেকেও বঞ্চিত হন। রাঁচির ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ স্টাডি অ্যান্ড রিসার্চ ইন ল-তে ‘বিচারপতি এস বি সিনহা স্মারক বক্তৃতা’ দিতে গিয়ে এই কথাগুলি বলেছেন তিনি। এই বক্তৃতার শিরোনাম ছিল–‘বিচারপতির জীবন’। এই সভায় প্রধান বিচারপতি রামানা জানান :

 

আরও পড়ুন: শ্রীনগর সফরে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি

১। আমরা যদি প্রাণবন্ত গণতন্ত্র চাই, তাহলে বিচারব্যবস্থাকে মজবুত করতে হবে এবং বিচারপতিদের ক্ষমতায়ন ঘটাতে হবে। বর্তমানে বিচারপতিদের শারীরিক ভাবে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পেতে দেখছি আমরা।

আরও পড়ুন: মাহমুদাবাদ মামলা: তদন্তে দেরি নিয়ে সিটকে ভর্ৎসনায় করল সুপ্রিম কোর্ট

 

আরও পড়ুন: ‘উদয়পুর ফাইলস’ মামলা: কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় শীর্ষ আদালত

২। মিডিয়া, বিশেষ ভাবে বৈদ্যুতিন ও সামাজিক মিডিয়ার কাছে দায়িত্বশীল আচরণ করতে অনুরোধ করছি। আমাদের মতো আপনারাও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। মানুষকে শিক্ষিত করতে ও জাতিকে উদ্দীপিত করতে আপনাদের স্বরের শক্তিকে অনুগ্রহ করে ব্যবহার করুন।

 

৩। বিচারপতিরা তাৎক্ষণিক ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন না, কিন্তু একে দুর্বলতা বা অসহায়তা বলে ভুল করবেন না। নিজের সীমার মধ্যে যখন স্বাধীনতা দায়িত্বপূর্ণ ভাবে অনুশীলিত হবে, তখন বাহ্যিক বিধিনিষেধের কোনও দরকার পড়বে না।

 

৪। সম্প্রতি, আমরা লক্ষ করছি, মিডিয়া ক্যাঙ্গারু আদালত চালাচ্ছে। এমন অনেক বিষয়েও যেগুলি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে অভিজ্ঞ বিচারপতিরাও জটিলতার মধ্যে পড়েন। বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ভুল তথ্য সম্বলিত ও এজেন্ডামূলক বিতর্ক গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

 

৫। বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে বলা যায়, ভবিষ্যতের সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য আমরা প্রস্তুত নই। যদি বিচারব্যস্থা ভুগতে শুরু করে, গণতন্ত্রও ভুগবে।

 

৬। বিচারপতিরা সমাজ-বাস্তবতা থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারেন না। পরিহারযোগ্য জটিলতা ও বোঝা থেকে এই ব্যবস্থাকে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে বিচারপতিদের।

 

৭। আমি কৃষক পরিবার থেকে এসেছি। বিএসসি ডিগ্রি পাওয়ার পর আমার বাবা আমাকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ ছিল, কিন্তু অদৃষ্টের ইচ্ছা ছিল অন্য।

 

৮। কেবলমাত্র সত্যনিষ্ঠ তথ্য ও আইন নয়, সেই সঙ্গে ন্যায্যতাকে গ্রহণ করতে বিচারপতিদের মন প্রশিক্ষিত হয়। প্রত্যেক মামলাকারীই সুবিচার পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন। আমাদের রায় নিয়ে বারবার ভাবতে ভাবতে নিদ্রাহীন রাত কাটাই আমরা।

 

৯। প্রতি সপ্তাহে ১০০টির বেশি মামলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া সহজ নয়। রায় দেওয়ার আগে স্বতন্ত্র গবেষণা করুন। পরের দিনের প্রস্তুতি শুরু হয় আদালত কর্মমুখর হওয়ার পর থেকেই এবং চলে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত। ছুটির দিন ও সপ্তাহান্তেও আমরা কাজ করি। গবেষণা করা ও বকেয়া মামলার রায় লেখার কাজ চলে।

 

১০। ব্যক্তিগত ভাবে বলি, হ্যাঁ, বিচারপতি হিসেবে সেবা করার সুযোগের সঙ্গে বিপুল চ্যালেঞ্জেরও মোকাবিলা করতে হয়, কিন্তু আমি একদিনও এর জন্য অনুশোচনা করিনি। এটা শুধু পরিষেবা নয়, বরং অন্তরাত্মার ডাক।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

‘রায় নিয়ে ভাবতে ভাবতে নিদ্রাহীন রাত কাটাই’, সুপ্রিম কোর্টের প্রধানবিচারপতির ১০ উক্তি

আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২২, রবিবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: দেশের বিচারব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা। বিচারব্যবস্থাকে কী ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হয় এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা কী, তা নিয়ে শনিবার মন্তব্য করেছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বলেন, একটা মিথ্যা ভাষ্য তৈরি করা হয়েছে যে, বিচারপতিদের জীবন খুবই সহজ, কিন্তু তাঁরা জীবনের বহু আনন্দ, কখনও পারিবারিক অনুষ্ঠান থেকেও বঞ্চিত হন। রাঁচির ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ স্টাডি অ্যান্ড রিসার্চ ইন ল-তে ‘বিচারপতি এস বি সিনহা স্মারক বক্তৃতা’ দিতে গিয়ে এই কথাগুলি বলেছেন তিনি। এই বক্তৃতার শিরোনাম ছিল–‘বিচারপতির জীবন’। এই সভায় প্রধান বিচারপতি রামানা জানান :

 

আরও পড়ুন: শ্রীনগর সফরে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি

১। আমরা যদি প্রাণবন্ত গণতন্ত্র চাই, তাহলে বিচারব্যবস্থাকে মজবুত করতে হবে এবং বিচারপতিদের ক্ষমতায়ন ঘটাতে হবে। বর্তমানে বিচারপতিদের শারীরিক ভাবে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পেতে দেখছি আমরা।

আরও পড়ুন: মাহমুদাবাদ মামলা: তদন্তে দেরি নিয়ে সিটকে ভর্ৎসনায় করল সুপ্রিম কোর্ট

 

আরও পড়ুন: ‘উদয়পুর ফাইলস’ মামলা: কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় শীর্ষ আদালত

২। মিডিয়া, বিশেষ ভাবে বৈদ্যুতিন ও সামাজিক মিডিয়ার কাছে দায়িত্বশীল আচরণ করতে অনুরোধ করছি। আমাদের মতো আপনারাও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। মানুষকে শিক্ষিত করতে ও জাতিকে উদ্দীপিত করতে আপনাদের স্বরের শক্তিকে অনুগ্রহ করে ব্যবহার করুন।

 

৩। বিচারপতিরা তাৎক্ষণিক ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন না, কিন্তু একে দুর্বলতা বা অসহায়তা বলে ভুল করবেন না। নিজের সীমার মধ্যে যখন স্বাধীনতা দায়িত্বপূর্ণ ভাবে অনুশীলিত হবে, তখন বাহ্যিক বিধিনিষেধের কোনও দরকার পড়বে না।

 

৪। সম্প্রতি, আমরা লক্ষ করছি, মিডিয়া ক্যাঙ্গারু আদালত চালাচ্ছে। এমন অনেক বিষয়েও যেগুলি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে অভিজ্ঞ বিচারপতিরাও জটিলতার মধ্যে পড়েন। বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ভুল তথ্য সম্বলিত ও এজেন্ডামূলক বিতর্ক গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

 

৫। বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে বলা যায়, ভবিষ্যতের সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য আমরা প্রস্তুত নই। যদি বিচারব্যস্থা ভুগতে শুরু করে, গণতন্ত্রও ভুগবে।

 

৬। বিচারপতিরা সমাজ-বাস্তবতা থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারেন না। পরিহারযোগ্য জটিলতা ও বোঝা থেকে এই ব্যবস্থাকে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে বিচারপতিদের।

 

৭। আমি কৃষক পরিবার থেকে এসেছি। বিএসসি ডিগ্রি পাওয়ার পর আমার বাবা আমাকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ ছিল, কিন্তু অদৃষ্টের ইচ্ছা ছিল অন্য।

 

৮। কেবলমাত্র সত্যনিষ্ঠ তথ্য ও আইন নয়, সেই সঙ্গে ন্যায্যতাকে গ্রহণ করতে বিচারপতিদের মন প্রশিক্ষিত হয়। প্রত্যেক মামলাকারীই সুবিচার পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন। আমাদের রায় নিয়ে বারবার ভাবতে ভাবতে নিদ্রাহীন রাত কাটাই আমরা।

 

৯। প্রতি সপ্তাহে ১০০টির বেশি মামলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া সহজ নয়। রায় দেওয়ার আগে স্বতন্ত্র গবেষণা করুন। পরের দিনের প্রস্তুতি শুরু হয় আদালত কর্মমুখর হওয়ার পর থেকেই এবং চলে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত। ছুটির দিন ও সপ্তাহান্তেও আমরা কাজ করি। গবেষণা করা ও বকেয়া মামলার রায় লেখার কাজ চলে।

 

১০। ব্যক্তিগত ভাবে বলি, হ্যাঁ, বিচারপতি হিসেবে সেবা করার সুযোগের সঙ্গে বিপুল চ্যালেঞ্জেরও মোকাবিলা করতে হয়, কিন্তু আমি একদিনও এর জন্য অনুশোচনা করিনি। এটা শুধু পরিষেবা নয়, বরং অন্তরাত্মার ডাক।