আবদুল ওদুদ : ইন্তেকাল করলেন মুর্শিদাবাদ এর ভগবানগোলা বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ইদ্রিশ আলী। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন) তিনি শীতকালীন অধিবেশনের পর থেকেই দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন । বাইপাসের এক বেসরকারি নার্সিংহোম কয়েকবার ভর্তি হয়েছিলেন। দিন কয়েক আগে অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে তাকে আবার ভর্তি করা হয়।
দীর্ঘ দিন ধরেই ক্যানসার এবং বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। ভর্তি ছিলেন একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই বৃহস্পতিবার রাত ২টো ২০ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তৃণমূল শিবিরে। বেলা ১১ টায় বিধানসভায় তার দেহ রাখা হবে
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইদ্রিসের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে প্রয়াত বিধায়কের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন। ইদ্রিশের পরিবার সূত্রে খবর শুক্রবার, গোবরা এক কবরস্থানে দাফন করা হবে বেলা তিনটায়
ইদ্রিশ মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে এই বিধায়ক।এক লক্ষেরও বেশি ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। তাঁর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা গিয়েছে, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পরেই ইদ্রিসের শরীর ভাঙতে শুরু করে। চলাফেরার ক্ষেত্রেও তাঁর সমস্যা হচ্ছিল। রাজ্যের বাজেট অধিবেশনে এক দিনের জন্যও বিধানসভায় যেতে পারেননি তিনি। পেশায় ইদ্রিস আলী আইনজীবী হলেও মাইনোরিটি ফোরাম নামে এক সংগঠন তৈরি করেন ।তার হাত ধরেই সংখ্যালঘুদের মধ্যে কাজ করার চেষ্টা করেছিলেন পরবর্তীতে তৃণমূল সংখ্যালঘু ও দায়িত্ব দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন এরপর ওই সংগঠনের দায়িত্ব অন্যের হাতে চলে যায় । অল ইন্ডিয়া মাইনোরিটি ফোরাম সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে তিনি সোচ্চার হয়েছিলেন।
ইদ্রিশের রাজনৈতিক জীবন শুরু কংগ্রেসে। কংগ্রেসের অন্দরে সোমেন মিত্রের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। সোমেনের হাত ধরেই কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে আসেন তিনি। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গী আসনে তাঁকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। তবে সে বার জয়ের মুখ দেখেননি তিনি। ২০১৪ সালে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে তাঁকে প্রার্থী করে রাজ্যের শাসকদল। বিপুল ব্যবধানে জয়ী হন ইদ্রিস। তবে ২০১৯ সালে তাঁকে আর টিকিট দেয়নি দল। তবে উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করা হয়। জিতে বিধানসভায় যান ইদ্রিস। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তাঁকে ভগবানগোলা আসন থেকে প্রার্থী করে তৃণমূল।
রাজনীতিক ছাড়াও পেশাগত জীবনে কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী হিসাবেও সুনাম অর্জন করেছিলেন ইদ্রিস। তা ছাড়া পারিবারিক সূত্রে বেকারির ব্যবসা ছিল তাঁর। ইদ্রিসের পরিবারে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং এক ছেলে। রাজনৈতিক জীবনে খ্যাতির পাশাপাশি নানা বিতর্কও সঙ্গী ছিল তাঁর।
২০০৭ সালে বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের লজ্জা উপন্যাসের জন্য ইদ্রিশ আলী চরম আন্দোলন করেছিলেন ।তার জন্য তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার তাকে জেলে পাঠিয়েছিল। জেল থেকে বেরোলে সময় রাজকীয় সম্মান পেয়েছিলেন এই সংখ্যালঘু নেতা ।