০১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাদ্রাসা পড়ুয়াদের বিস্ময়কর সাফল্য বাংলাদেশে

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২১, সোমবার
  • / 8

ইদানিংকালে দেখা যাচ্ছে– পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বাংলাদেশে মাদ্রাসা পড়ুয়ারা প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন পরীক্ষায় ধারাবাহিক সাফল্য পাচ্ছেন। শুধু সফল হওয়া নয়– তাঁরা মূলধারার প্রফেশনাল কোর্সগুলিতে প্রথমস্থানও হাসিল করছেন। এই পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন বাংলাদেশের সাবেক সাংসদ গোলাম মাওলা রনি

 

মাত্র কিছুদিন আগের ঘটনা। একটি ছবি আমাদের দেশের সামাজিক মাধ্যমে হঠাৎ ভাইরাল হয়ে পড়ে। ছবিটিতে দেখা যায়– দাড়ি-টুপিধারী পাজামা-পাঞ্জাবি পরা এক যুবক প্রাণপণে একটি চলন্ত বাসের পিছনে দৌড়াচ্ছেন। যিনি ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে দিয়েছেন তিনিও যুবক। তার বক্তব্যের মাধ্যমে জানা গেল– মোটরসাইকেল আরোহী এক যুবক লক্ষ্য করলেন যে– তার প্রায় সমবয়সী দাড়ি-টুপিধারী পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত যুবকটি একটি গণপরিবহন থেকে নামেন এবং হন হন করে গন্তব্যের দিকে চলতে শুরু করেন। হঠাৎ কী মনে করে তিনি ইউটার্ন নিয়ে বাসটির দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ততক্ষণে বাসটি ছেড়ে দিয়েছে এবং খানিকটা জোরগতিতেই চলতে শুরু করেছে। যুবকটি বাসটি থামানোর জন্য চিৎকার করতে করতে চলন্ত বাসের পিছনে দ্রুত বেগে দৌড়াতে শুরু করেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই বাসটির নাগাল পাচ্ছিলেন না এবং বাসের হেলপার-কন্ডাক্টর বা কোনও যাত্রীও বাসটি থামানোর ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ করছিলেন না।

 

 

মোটরসাইকেল আরোহী যুবক বিষয়টি লক্ষ্য করেন। তিনি ধারণা করলেন যে– প্রাণপণে দৌড়রত যুবকটি হয়তো কোনও মূল্যবান সামগ্রী বাসের মধ্যে রেখে ভুল করে নেমে পড়েছেন এবং তা স্মরণ হওয়া মাত্রই তিনি বাসটিকে ধরার জন্য দৌড়াচ্ছেন। এ অবস্থায় দয়া পরবশ হয়ে মোটরসাইকেল আরোহী তরুণটি এগিয়ে যান এবং যুবককে তার বাইকে আরোহণ করার প্রস্তাব দেন। এরপর মোটরসাইকেলের গতি বাড়িয়ে বাসটিকে অনুসরণ করে পরবর্তী স্টপেজে গিয়ে থামেন। দাডিü-টুপিধারী যুবক এক লাফে মোটরসাইকেল থেকে নেমে দৌড়ে বাসে ওঠেন এবং কন্ডাক্টরের হাতে কিছু একটা গুঁজে দিয়ে তার উপকারী বন্ধু মোটরসাইকেল আরোহীর কাছে ফিরে আসেন। তিনি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উপকারী তরুণটিকে ধন্যবাদ জানাতে থাকেন এবং তার উপকারের বিনিময়ে আল্লাহ্ যেন তাকে উত্তম পুরস্কার দান করেন সেই দোয়া করতে থাকেন।

 

 

পুরো ঘটনা দেখার পর মোটরসাইকেল আরোহীর কৌতূহল বেড়ে যায়। তিনি দাড়ি-টুপিধারী যুবকের পরিচয় এবং তার দৌড়ানোর কারণ জানতে চান। উত্তরে যা জানতে পারলেন– তা তাকে রীতিমতো বিহ্বল করে তোলে। তিনি বিষয়টি শোনার পর দেশের মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা এবং মাদ্রাসা পড়ুয়াদের সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করতেন তার সেই দৃষ্টিভঙ্গ সম্পূর্ণ বদলে যায়।

 

যার জন্য মাদ্রাসা সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি বদলালো সেই ঘটনা প্রকাশ করার জন্য সামাজিক মাধ্যমে তার পুরো বিবরণ তুলে ধরেন। উপসংহারে বলেন যে– মাদ্রাসা থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত একজন মানুষ যে নীতি-নৈতিকতা– সততার প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকেন– তার সাথে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার তুলনা চলে না। সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী তরুণ বলেন– দাড়ি-টুপিধারী যুবকটি একজন মাদ্রাসা পড়ুয়া অভাবী পরিবারের মানুষ এবং সম্ভবত চাকরির খোঁজে এই মহানগরীতে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন। ঘটনার দিন তিনি ভুল করে বাসের ভাড়া না দিয়ে নেমে পড়েন এবং তা স্মরণ হওয়া মাত্র চলন্ত বাসের পিছনে দৌড়াতে থাকেন ভাড়া পরিশোধের জন্য।

 

 

উল্লিখিত, ঘটনাটি যারা সামাজিক মাধ্যমে পড়েছেন– তারা কমবেশি সবাই আবেগ তাড়িত হয়েছেন। আর আমি ব্যক্তিগত আবেগের সাথে সাথে ঘটনাটি আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম মূলত ভিন্ন একটি কারণে। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন যে– সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নামকরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে– সেখানে বেশির ভাগ মাদ্রাসা পড়ুয়া বিস্ময়কর এবং নজিরবিহীন সফলতা দেখিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়– বুয়েট ও অন্যান্য নামকরা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষায় মাদ্রাসা ছাত্ররা প্রথম হয়েছেন। এতে অনেক আলোচিত-সমালোচিত এক বুদ্ধিজীবী কাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক রীতিমতো অপমানিত বোধ করছেন এবং তারা প্রকাশ্যেই বলার চেষ্টা করছেন যে– ‘এভাবে যদি চলতে থাকে– তবে দেশের তাবত বিশ্ববিদ্যালয়তো মাদ্রাসায় রূপান্তরিত হয়ে যাবে।’

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াও কর্মজীবনে প্রবেশের বিভিন্ন পরীক্ষাতেও মাদ্রাসা ছাত্ররা নিদারুণ সব রেকর্ড তৈরি করছেন এবং প্রায় প্রতি বছরই নিজেদের পূর্বেকার রেকর্ড ভঙ্গ করে চলতি বছরে নিত্যনতুন রেকর্ড তৈরি করে চলেছেন। বিসিএস-সহ সরকারি কর্মকমিশনের অধীনে প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগে যেসব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হচ্ছে– সেখানে মাদ্রাসা ছাত্ররা ক্রমবর্ধমান হারে নিয়োগ পাচ্ছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে সম্মিলিত মেধায় প্রথম স্থানটি দখল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন। সরকারি কর্মকমিশনের বাইরে ব্যাংক– বীমা– স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানেও মাদ্রাসা ছাত্রদের বিনা ঘুষে নিয়োগ লাভের হার এবং পরবর্তী কর্মজীবনে বিনা উপঢৌকনে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে তারা যে বিশ্বাস ও আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছেন– তাতে একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর বুদ্ধির কারখানায় হিসেব মিলছে না।

 

আমি নিজে কোনওদিন মাদ্রাসায় পড়িনি। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কারণে কিছু তথাকথিত সেক্যুলার মানুষ আমাকে মাদ্রাসার ছাত্র– মৌলবাদী ইত্যাদি বলতে শুরু করে। আপনি যদি প্রশ্ন করেন– কী উপায়ে সমালোচকদের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম? সেক্ষেত্রে বলব– প্রথমত নিজের কাজের প্রতি বিশ্বস্ত– আস্থাশীল ও যত্নবান হওয়া শুরু করেছিলাম। আমার ব্যক্তিগত ধর্মাচার ও ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে কথাবার্তা বলায় যারা সমালোচনা করত– তাঁদের কথার জবাব না দিয়ে আমার কাজ ও ধর্মাচারের বিষয়ে যত্নশীল হয়েছি। আধুনিক জীবনে ধর্ম কিভাবে মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করতে পারে– সাহসী বানাতে পারে এবং ধর্মাচারের ফলে বাস্তব জীবনের অর্থনৈতিক-সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সফলতা অর্জন করা যেতে পারে– তা নিজের জীবনে দৃশ্যমান করার জন্য চেষ্টা চালাতে চালাতে এক সময় লক্ষ্য করলাম– আমার বিরুদ্ধে সমালোচকদের বয়ানবাজি অনেক কমে এসেছে।

 

মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রদের সফলতা দেখে আমি আশ্চর্যবোধ করিনি এ কারণে যে– তারা হয়তো নিজেদের মধ্যে অনাবিল কোনো বিশ্বাস ও আদর্শ ধারণ করে এগিয়ে চলেছে। কর্তব্য ও নিষ্ঠা– কঠোর পরিশ্রম এবং বাস্তব ক্ষেত্রে সাধনা করে তারা নিজ কর্মক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। ফলে যারা তাদের সমালোচনা করছেন– তারা কেবল নিরাপদ দূরত্বে থেকে সমালোচনাই করতে পারবেন। কিন্তু কোনো মেধাবী মাদ্রাসা পড়ুয়ার আসনে দাঁড়িয়ে বুক উঁচু করে তার সাথে মেধার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের দুঃসাহস দেখাতে পারবেন না।

 

 

এ ব্যাপারে নিজের একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে চাই। একবার ডাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত এক শিক্ষকের সাথে আমি এক টকশো-তে অংশ নিয়েছিলাম। অধ্যাপক সাহেব ইসলামকে মোটেই পছন্দ করতে না। ভদ্রলোক তার বক্তব্যের শুরুতে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলা শুরু করলেন। যখন আমার পালা এলো– তখন আমি ধীর-স্থিরভাবে বললাম– ওভাবে বলছেন কেনো? মানুষকে সম্মান দিতে শিখুন। আপনি ছাত্র হিসেবে পাবলিক পরীক্ষাতে যে ফলাফল করেছেন– তার চেয়ে আমার ফলাফল ভালো। অধিকন্তু আপনি যে বিষয়ে অধ্যাপনা করছেন– সেই বিষয়ে আমি আপনাকে অনেক দিন পড়াতে পারব। আমার কথা শুনে ভদ্রলোক এতটাই ঘাবড়ে গেলেন যে– বাকি সময়ে তিনি খুবই সংযত ভাষায় কথা বললেন এবং পরবর্তীকালে আমাদের মধ্যে যতবার সাক্ষাৎ হয়েছে– ততবারই তিনি বিনয় ও সৌজন্য প্রদর্শনে কার্পণ্য করেননি।

 

এখন আমি মাদ্রাসা ছাত্রদের সফলতার কারণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব। আমার মতে– মাদ্রাসা পড়ুয়া মেধাবীরা সাধারণত আমাদের সমাজের নিম্নবিত্ত অথবা দরিদ্র পরিবারগুলো থেকে উঠে আসেন। ফলে তাদের দু’চোখ ভরা স্বপ্ন থাকে এবং শরীরের প্রতিটি কোষের মধ্যে যুদ্ধ করে বড় হওয়ার বাসনা লুকানো থাকে। তাদের পারিবারিক চাহিদা– পারিবারিক বন্ধনও তাদের উদ্বুদ্ধ করে। মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অপেক্ষাকৃত কঠোর নীতি-নৈতিকতা– ধর্মাচার এবং পাঠ্যক্রমের গুণগতমান তাদের মানুষ হিসেবে বড় হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা জোগাতে থাকে।

 

 

অন্যদিকে– পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে মাদ্রাসাগুলোতে যে শিক্ষার পরিবেশ থাকে তা অন্য কোনো দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই আজ অবধি চালু করতে পারেনি।

 

আধুনিক শিক্ষার নামে আমরা যা কিছু পাঠ করছি– তার বয়স বড়জোর ৩০০ বছর। এই ৩০০ বছরে বিভিন্ন দেশে অন্তত ৫০ বার শিক্ষাব্যবস্থায় পরস্পর বিরোধী পরিবর্তন করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশে জেএসসি– পিইসি– এসএসসি– এইচএসসি– বিএ– এমএ ইত্যাদি ডিগ্রির কথা যদি বলি– তাহলে দেখবেন গত ১০০ বছরে কতবার এই পরীক্ষাগুলোর নাম এবং সিলেবাস পরিবর্তন হয়েছে।

 

এর ফলে তথাকথিত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্র-শিক্ষক– পিতা-পুত্র অথবা মা-কন্যার মধ্যে চিন্তা-চেতনা তথা শিক্ষা-দীক্ষার মধ্যে যে বিস্তর অমিল পয়দা হয়েছে তার কারণে পারিবারিক– সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অমিল অশ্রদ্ধা– ভিন্নমত ও অস্থিরতা রীতিমতো দিনকে দিন দানব আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে– আমরা যদি মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার দিকে তাকাই তবে দেখব যে– গত চৌদ্দশত বছর ধরে এই শিক্ষাব্যবস্থার মূল কাঠামো একই ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং সেইসঙ্গে যুগ-যুগান্তরের আইন– বিজ্ঞান– ভূগোল– অঙ্ক– জ্যামিতি বা শিল্পসাহিত্যের নিত্যনতুন ধারা আদি কাঠামোর সাথে সংযুক্ত হয়েছে। ফলে এই শিক্ষার ভিত্তিমূলে কোনো পরিবর্তন না ঘটিয়েও অবকাঠামো যুগোপযোগী এবং আধুনিক হয়ে উঠেছে।

 

মাদ্রাসা পড়ুয়াদের বিস্ময়কর সাফল্য বাংলাদেশে

 

এবার মাদ্রাসা শিক্ষার গুণগতমান নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বলার চেষ্টা করব। মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে মূল ভাষা হিসেবে আরবি ও ফারসি ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরেজিকে মূল ভাষা রেখে বেশির ভাগ দেশ নিজ নিজ মাতৃভাষায় পাঠ্যক্রম রচনা করে থাকে। কাজেই ভাষা হিসেবে আরবি ও ফারসির গুণগতমান– ঐতিহ্য এবং এই দুই ভাষায় রচিত মানবসভ্যতার সব উপকরণের সাথে যদি ইংরেজির তুলনা করি– তবে ইংরেজিকে নিতান্ত নাবালক– অসম্পূর্ণ– দুর্বল এবং ক্ষেত্র বিশেষে বিভ্রান্তিকর বলে মনে হবে।

 

আমার এই কথায় যারা আশ্চর্য হচ্ছেন তাদের বলছি– ভাষা হিসেবে ইংরেজি কিন্তু বাংলার চেয়েও দুর্বল ও নবীন। অন্যদিকে ইংরেজি সাহিত্য বা বাংলা সাহিত্য– দর্শন– বিজ্ঞান– অঙ্কশাস্ত্র– ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ে যাদের রচনা দিয়ে পাঠ্যক্রম সাজানো হয়– তাদের সাথে যদি আরবি ও ফারসি ভাষার পাঠ্যক্রমের রচয়িতাদের বয়স– যোগ্যতা– মেধা– জনপ্রিয়তা– জ্ঞানের গভীরতা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রভাব-প্রতিশ্রুতির তুলনা করা হয়– তাহলে কী ফলাফল আসবে তা অনুধাবন করার জন্য সাধারণ যোগ বিয়োগের জ্ঞানই যথেষ্ট।

 

যাঁরা বার্ট্রান্ড রাসেল– মিশেল ফুকো প্রমুখের দর্শনতত্ত্ব পড়ে পৃথিবীর সব কিছু বুঝে ফেলেছেন– তাঁরা ইবনে খালদুন– জাবের ইবনে হাইয়ান– আল রাজী প্রমুখ রচিত দর্শন শাস্ত্রগুলোর কয়েকটি পৃষ্ঠা অধ্যয়ণ করুন। তারপর বুকে হাত দিয়ে বলুন–  আপনার পক্ষে অনন্ত পৃথিবীর কতটুকু জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব!

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মাদ্রাসা পড়ুয়াদের বিস্ময়কর সাফল্য বাংলাদেশে

আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২১, সোমবার

ইদানিংকালে দেখা যাচ্ছে– পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বাংলাদেশে মাদ্রাসা পড়ুয়ারা প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন পরীক্ষায় ধারাবাহিক সাফল্য পাচ্ছেন। শুধু সফল হওয়া নয়– তাঁরা মূলধারার প্রফেশনাল কোর্সগুলিতে প্রথমস্থানও হাসিল করছেন। এই পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন বাংলাদেশের সাবেক সাংসদ গোলাম মাওলা রনি

 

মাত্র কিছুদিন আগের ঘটনা। একটি ছবি আমাদের দেশের সামাজিক মাধ্যমে হঠাৎ ভাইরাল হয়ে পড়ে। ছবিটিতে দেখা যায়– দাড়ি-টুপিধারী পাজামা-পাঞ্জাবি পরা এক যুবক প্রাণপণে একটি চলন্ত বাসের পিছনে দৌড়াচ্ছেন। যিনি ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে দিয়েছেন তিনিও যুবক। তার বক্তব্যের মাধ্যমে জানা গেল– মোটরসাইকেল আরোহী এক যুবক লক্ষ্য করলেন যে– তার প্রায় সমবয়সী দাড়ি-টুপিধারী পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত যুবকটি একটি গণপরিবহন থেকে নামেন এবং হন হন করে গন্তব্যের দিকে চলতে শুরু করেন। হঠাৎ কী মনে করে তিনি ইউটার্ন নিয়ে বাসটির দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ততক্ষণে বাসটি ছেড়ে দিয়েছে এবং খানিকটা জোরগতিতেই চলতে শুরু করেছে। যুবকটি বাসটি থামানোর জন্য চিৎকার করতে করতে চলন্ত বাসের পিছনে দ্রুত বেগে দৌড়াতে শুরু করেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই বাসটির নাগাল পাচ্ছিলেন না এবং বাসের হেলপার-কন্ডাক্টর বা কোনও যাত্রীও বাসটি থামানোর ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ করছিলেন না।

 

 

মোটরসাইকেল আরোহী যুবক বিষয়টি লক্ষ্য করেন। তিনি ধারণা করলেন যে– প্রাণপণে দৌড়রত যুবকটি হয়তো কোনও মূল্যবান সামগ্রী বাসের মধ্যে রেখে ভুল করে নেমে পড়েছেন এবং তা স্মরণ হওয়া মাত্রই তিনি বাসটিকে ধরার জন্য দৌড়াচ্ছেন। এ অবস্থায় দয়া পরবশ হয়ে মোটরসাইকেল আরোহী তরুণটি এগিয়ে যান এবং যুবককে তার বাইকে আরোহণ করার প্রস্তাব দেন। এরপর মোটরসাইকেলের গতি বাড়িয়ে বাসটিকে অনুসরণ করে পরবর্তী স্টপেজে গিয়ে থামেন। দাডিü-টুপিধারী যুবক এক লাফে মোটরসাইকেল থেকে নেমে দৌড়ে বাসে ওঠেন এবং কন্ডাক্টরের হাতে কিছু একটা গুঁজে দিয়ে তার উপকারী বন্ধু মোটরসাইকেল আরোহীর কাছে ফিরে আসেন। তিনি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উপকারী তরুণটিকে ধন্যবাদ জানাতে থাকেন এবং তার উপকারের বিনিময়ে আল্লাহ্ যেন তাকে উত্তম পুরস্কার দান করেন সেই দোয়া করতে থাকেন।

 

 

পুরো ঘটনা দেখার পর মোটরসাইকেল আরোহীর কৌতূহল বেড়ে যায়। তিনি দাড়ি-টুপিধারী যুবকের পরিচয় এবং তার দৌড়ানোর কারণ জানতে চান। উত্তরে যা জানতে পারলেন– তা তাকে রীতিমতো বিহ্বল করে তোলে। তিনি বিষয়টি শোনার পর দেশের মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা এবং মাদ্রাসা পড়ুয়াদের সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করতেন তার সেই দৃষ্টিভঙ্গ সম্পূর্ণ বদলে যায়।

 

যার জন্য মাদ্রাসা সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি বদলালো সেই ঘটনা প্রকাশ করার জন্য সামাজিক মাধ্যমে তার পুরো বিবরণ তুলে ধরেন। উপসংহারে বলেন যে– মাদ্রাসা থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত একজন মানুষ যে নীতি-নৈতিকতা– সততার প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকেন– তার সাথে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার তুলনা চলে না। সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী তরুণ বলেন– দাড়ি-টুপিধারী যুবকটি একজন মাদ্রাসা পড়ুয়া অভাবী পরিবারের মানুষ এবং সম্ভবত চাকরির খোঁজে এই মহানগরীতে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন। ঘটনার দিন তিনি ভুল করে বাসের ভাড়া না দিয়ে নেমে পড়েন এবং তা স্মরণ হওয়া মাত্র চলন্ত বাসের পিছনে দৌড়াতে থাকেন ভাড়া পরিশোধের জন্য।

 

 

উল্লিখিত, ঘটনাটি যারা সামাজিক মাধ্যমে পড়েছেন– তারা কমবেশি সবাই আবেগ তাড়িত হয়েছেন। আর আমি ব্যক্তিগত আবেগের সাথে সাথে ঘটনাটি আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম মূলত ভিন্ন একটি কারণে। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন যে– সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নামকরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে– সেখানে বেশির ভাগ মাদ্রাসা পড়ুয়া বিস্ময়কর এবং নজিরবিহীন সফলতা দেখিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়– বুয়েট ও অন্যান্য নামকরা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষায় মাদ্রাসা ছাত্ররা প্রথম হয়েছেন। এতে অনেক আলোচিত-সমালোচিত এক বুদ্ধিজীবী কাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক রীতিমতো অপমানিত বোধ করছেন এবং তারা প্রকাশ্যেই বলার চেষ্টা করছেন যে– ‘এভাবে যদি চলতে থাকে– তবে দেশের তাবত বিশ্ববিদ্যালয়তো মাদ্রাসায় রূপান্তরিত হয়ে যাবে।’

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াও কর্মজীবনে প্রবেশের বিভিন্ন পরীক্ষাতেও মাদ্রাসা ছাত্ররা নিদারুণ সব রেকর্ড তৈরি করছেন এবং প্রায় প্রতি বছরই নিজেদের পূর্বেকার রেকর্ড ভঙ্গ করে চলতি বছরে নিত্যনতুন রেকর্ড তৈরি করে চলেছেন। বিসিএস-সহ সরকারি কর্মকমিশনের অধীনে প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগে যেসব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হচ্ছে– সেখানে মাদ্রাসা ছাত্ররা ক্রমবর্ধমান হারে নিয়োগ পাচ্ছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে সম্মিলিত মেধায় প্রথম স্থানটি দখল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন। সরকারি কর্মকমিশনের বাইরে ব্যাংক– বীমা– স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানেও মাদ্রাসা ছাত্রদের বিনা ঘুষে নিয়োগ লাভের হার এবং পরবর্তী কর্মজীবনে বিনা উপঢৌকনে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে তারা যে বিশ্বাস ও আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছেন– তাতে একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর বুদ্ধির কারখানায় হিসেব মিলছে না।

 

আমি নিজে কোনওদিন মাদ্রাসায় পড়িনি। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কারণে কিছু তথাকথিত সেক্যুলার মানুষ আমাকে মাদ্রাসার ছাত্র– মৌলবাদী ইত্যাদি বলতে শুরু করে। আপনি যদি প্রশ্ন করেন– কী উপায়ে সমালোচকদের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম? সেক্ষেত্রে বলব– প্রথমত নিজের কাজের প্রতি বিশ্বস্ত– আস্থাশীল ও যত্নবান হওয়া শুরু করেছিলাম। আমার ব্যক্তিগত ধর্মাচার ও ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে কথাবার্তা বলায় যারা সমালোচনা করত– তাঁদের কথার জবাব না দিয়ে আমার কাজ ও ধর্মাচারের বিষয়ে যত্নশীল হয়েছি। আধুনিক জীবনে ধর্ম কিভাবে মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করতে পারে– সাহসী বানাতে পারে এবং ধর্মাচারের ফলে বাস্তব জীবনের অর্থনৈতিক-সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সফলতা অর্জন করা যেতে পারে– তা নিজের জীবনে দৃশ্যমান করার জন্য চেষ্টা চালাতে চালাতে এক সময় লক্ষ্য করলাম– আমার বিরুদ্ধে সমালোচকদের বয়ানবাজি অনেক কমে এসেছে।

 

মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রদের সফলতা দেখে আমি আশ্চর্যবোধ করিনি এ কারণে যে– তারা হয়তো নিজেদের মধ্যে অনাবিল কোনো বিশ্বাস ও আদর্শ ধারণ করে এগিয়ে চলেছে। কর্তব্য ও নিষ্ঠা– কঠোর পরিশ্রম এবং বাস্তব ক্ষেত্রে সাধনা করে তারা নিজ কর্মক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। ফলে যারা তাদের সমালোচনা করছেন– তারা কেবল নিরাপদ দূরত্বে থেকে সমালোচনাই করতে পারবেন। কিন্তু কোনো মেধাবী মাদ্রাসা পড়ুয়ার আসনে দাঁড়িয়ে বুক উঁচু করে তার সাথে মেধার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের দুঃসাহস দেখাতে পারবেন না।

 

 

এ ব্যাপারে নিজের একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে চাই। একবার ডাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত এক শিক্ষকের সাথে আমি এক টকশো-তে অংশ নিয়েছিলাম। অধ্যাপক সাহেব ইসলামকে মোটেই পছন্দ করতে না। ভদ্রলোক তার বক্তব্যের শুরুতে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলা শুরু করলেন। যখন আমার পালা এলো– তখন আমি ধীর-স্থিরভাবে বললাম– ওভাবে বলছেন কেনো? মানুষকে সম্মান দিতে শিখুন। আপনি ছাত্র হিসেবে পাবলিক পরীক্ষাতে যে ফলাফল করেছেন– তার চেয়ে আমার ফলাফল ভালো। অধিকন্তু আপনি যে বিষয়ে অধ্যাপনা করছেন– সেই বিষয়ে আমি আপনাকে অনেক দিন পড়াতে পারব। আমার কথা শুনে ভদ্রলোক এতটাই ঘাবড়ে গেলেন যে– বাকি সময়ে তিনি খুবই সংযত ভাষায় কথা বললেন এবং পরবর্তীকালে আমাদের মধ্যে যতবার সাক্ষাৎ হয়েছে– ততবারই তিনি বিনয় ও সৌজন্য প্রদর্শনে কার্পণ্য করেননি।

 

এখন আমি মাদ্রাসা ছাত্রদের সফলতার কারণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব। আমার মতে– মাদ্রাসা পড়ুয়া মেধাবীরা সাধারণত আমাদের সমাজের নিম্নবিত্ত অথবা দরিদ্র পরিবারগুলো থেকে উঠে আসেন। ফলে তাদের দু’চোখ ভরা স্বপ্ন থাকে এবং শরীরের প্রতিটি কোষের মধ্যে যুদ্ধ করে বড় হওয়ার বাসনা লুকানো থাকে। তাদের পারিবারিক চাহিদা– পারিবারিক বন্ধনও তাদের উদ্বুদ্ধ করে। মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অপেক্ষাকৃত কঠোর নীতি-নৈতিকতা– ধর্মাচার এবং পাঠ্যক্রমের গুণগতমান তাদের মানুষ হিসেবে বড় হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা জোগাতে থাকে।

 

 

অন্যদিকে– পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে মাদ্রাসাগুলোতে যে শিক্ষার পরিবেশ থাকে তা অন্য কোনো দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই আজ অবধি চালু করতে পারেনি।

 

আধুনিক শিক্ষার নামে আমরা যা কিছু পাঠ করছি– তার বয়স বড়জোর ৩০০ বছর। এই ৩০০ বছরে বিভিন্ন দেশে অন্তত ৫০ বার শিক্ষাব্যবস্থায় পরস্পর বিরোধী পরিবর্তন করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশে জেএসসি– পিইসি– এসএসসি– এইচএসসি– বিএ– এমএ ইত্যাদি ডিগ্রির কথা যদি বলি– তাহলে দেখবেন গত ১০০ বছরে কতবার এই পরীক্ষাগুলোর নাম এবং সিলেবাস পরিবর্তন হয়েছে।

 

এর ফলে তথাকথিত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্র-শিক্ষক– পিতা-পুত্র অথবা মা-কন্যার মধ্যে চিন্তা-চেতনা তথা শিক্ষা-দীক্ষার মধ্যে যে বিস্তর অমিল পয়দা হয়েছে তার কারণে পারিবারিক– সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অমিল অশ্রদ্ধা– ভিন্নমত ও অস্থিরতা রীতিমতো দিনকে দিন দানব আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে– আমরা যদি মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার দিকে তাকাই তবে দেখব যে– গত চৌদ্দশত বছর ধরে এই শিক্ষাব্যবস্থার মূল কাঠামো একই ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং সেইসঙ্গে যুগ-যুগান্তরের আইন– বিজ্ঞান– ভূগোল– অঙ্ক– জ্যামিতি বা শিল্পসাহিত্যের নিত্যনতুন ধারা আদি কাঠামোর সাথে সংযুক্ত হয়েছে। ফলে এই শিক্ষার ভিত্তিমূলে কোনো পরিবর্তন না ঘটিয়েও অবকাঠামো যুগোপযোগী এবং আধুনিক হয়ে উঠেছে।

 

মাদ্রাসা পড়ুয়াদের বিস্ময়কর সাফল্য বাংলাদেশে

 

এবার মাদ্রাসা শিক্ষার গুণগতমান নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বলার চেষ্টা করব। মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে মূল ভাষা হিসেবে আরবি ও ফারসি ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরেজিকে মূল ভাষা রেখে বেশির ভাগ দেশ নিজ নিজ মাতৃভাষায় পাঠ্যক্রম রচনা করে থাকে। কাজেই ভাষা হিসেবে আরবি ও ফারসির গুণগতমান– ঐতিহ্য এবং এই দুই ভাষায় রচিত মানবসভ্যতার সব উপকরণের সাথে যদি ইংরেজির তুলনা করি– তবে ইংরেজিকে নিতান্ত নাবালক– অসম্পূর্ণ– দুর্বল এবং ক্ষেত্র বিশেষে বিভ্রান্তিকর বলে মনে হবে।

 

আমার এই কথায় যারা আশ্চর্য হচ্ছেন তাদের বলছি– ভাষা হিসেবে ইংরেজি কিন্তু বাংলার চেয়েও দুর্বল ও নবীন। অন্যদিকে ইংরেজি সাহিত্য বা বাংলা সাহিত্য– দর্শন– বিজ্ঞান– অঙ্কশাস্ত্র– ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ে যাদের রচনা দিয়ে পাঠ্যক্রম সাজানো হয়– তাদের সাথে যদি আরবি ও ফারসি ভাষার পাঠ্যক্রমের রচয়িতাদের বয়স– যোগ্যতা– মেধা– জনপ্রিয়তা– জ্ঞানের গভীরতা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রভাব-প্রতিশ্রুতির তুলনা করা হয়– তাহলে কী ফলাফল আসবে তা অনুধাবন করার জন্য সাধারণ যোগ বিয়োগের জ্ঞানই যথেষ্ট।

 

যাঁরা বার্ট্রান্ড রাসেল– মিশেল ফুকো প্রমুখের দর্শনতত্ত্ব পড়ে পৃথিবীর সব কিছু বুঝে ফেলেছেন– তাঁরা ইবনে খালদুন– জাবের ইবনে হাইয়ান– আল রাজী প্রমুখ রচিত দর্শন শাস্ত্রগুলোর কয়েকটি পৃষ্ঠা অধ্যয়ণ করুন। তারপর বুকে হাত দিয়ে বলুন–  আপনার পক্ষে অনন্ত পৃথিবীর কতটুকু জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব!