০১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যমজ আর্শ ও আয়ান হতে চায় চিকিৎসক

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২২, মঙ্গলবার
  • / 15

আব্বা ও মা-এর সঙ্গে মুহাম্মদ আর্শ মুস্তাফা ও আয়ান মুস্তাফা। ছবিঃ অভিজিৎ ভট্টাচার্য।

সেখ কুতুবউদ্দিনঃ   পার্ক সার্কাস সংলগ্ন ৩৭বি-ব্রড স্ট্রিটের বিল্ডিংয়ের ঠিক পাশের গলি। ৩য় তলে কলিং বেল-বাজাতেই বেড়িয়ে এলেন আর্শ ও আয়ান। এই যমজদের কথা এখন রাজ্য তথা দেশের মানুষ জেনে গেছে। যমজ ভাইয়েরা সর্বভারতীয় আইএসসি পরীক্ষায় হয়েছেন প্রথম ও দ্বিতীয়। চারদিকে তুমুল সাড়া পড়েছে। সোমবার পুবের কলমে তাঁদের দুই ভাইয়ের খবর প্রকাশিত হয়েছিল।নিজেদের পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে সে-কথাও প্রতিবেদককে জানালেন তারা।

 

নার্শারি থেকেই কলকাতার রিপন স্ট্রিটের দ্য ফ্রাঙ্ক অ্যান্টনি পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা তাঁদের। আর্শ ও আয়ানের সঙ্গে কথা হচ্ছিল তাঁদের সাফল্য নিয়ে। দুই কিশোরের চোখে-মুখে ছিল খুশির ছাপ। দু’জনেরই বক্তব্য, এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে গেলে পরিবেশের রদবদল হয়। তাতে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই স্কুল পরিবর্তন না করে একই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তাঁরা। আর্শ ও আয়ানের আরও বক্তব্য, ‘পড়াশোনার দিক দিয়ে কোনও গাফিলতি করিনি। নিয়মিত পড়াশোনা করেছি। সেই সঙ্গে খেলাধুলো ও মিউজিক নিয়ে চর্চা করি।’

পড়াশোনায় কোনও গাফিলতি ছিল না তাঁদের। কোনও বিষয় অথবা অধ্যায় কঠিন মনে হলে, সেগুলির উপর আলাদাভাবে জোর দিতেন তাঁরা। একাধিক বই নিয়ে ঘাটাঘাটি না করে একটি বইতে মনযোগ বেশি থাকতো তাঁদের।

আর্শের কথায়, যে কোনও ভাষায় ভালো পড়াশোনা করলেই সাফল্য মিলবে। সাফল্যে কোনও ভাষা নির্ভর করে না। খুঁটিয়ে পড়া, প্রশ্নে যে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়, তার সঠিক উত্তর দিলেই পড়াশোনায় ভালো ফল করা যায়।

আর্শ ও আয়ান আগে থেকেই ভেবেছিলেন ভালো ফল হবে। তবে মেধা তালিকায় আসবেন, তা আদৌ ভাবতে পারেননি তাঁরা।বহু বছর পর যমজ ভাই আর্শ ও আয়ান সাফল্য পেয়েছেন। এর আগে সাফল্য পেয়েছিলেন গাইঘাটার যমজ রজত ও রাকেশ সরকার। তাঁদের অনেক আগেই ভালো ফল করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাসগুপ্ত এবং অতীশ দাসগুপ্ত।

দশম শ্রেণির ফলেও আর্শ-এর নম্বর ছিল ৯৮.২ শতাংশ এবং আয়ানের প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৯৭. ৬ শতাংশ। দ্বাদশে আর্শ পেয়েছেন ৯৯.৭৫ শতাংশ নম্বর। আইএসসি’র সর্বভারতীয় মেধা তালিকা এবং রাজ্যের তালিকায় আর্শের স্থান প্রথম। আয়ান দ্বিতীয় স্থানে। দিল্লি বোর্ডের দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় আর্শ ইংরেজিতে এক নম্বর বেশি পেয়ে সারা দেশে প্রথম ১৮ জনের মধ্যে ঠাঁই করে নিয়েছেন। এক নম্বর কম পাওয়ায় দ্বিতীয় স্থানাধিকারি ৫৮ জনের অন্যতম হয়েছেন আয়ান।

আর্শ ও আয়ান দুজনই হতে চান চিকিৎসক। সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকার জন্য অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল তাঁদের। যা দ্বাদশের পরীক্ষাতেও ভালো ফল করতে সহায়তা হয়েছে। এ বছর তাঁরা পার্ক সার্কাসের সেভেনপয়েন্ট সংলগ্ন এক বেসরকারি কোচিং সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিট দিয়েছেন। নিটের ফলেও ৯৫ শতাংশের বেশি নম্বর পাবেন বলে আশা রয়েছে তাঁদের।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে কেন তাঁদের পড়াশোনার আগ্রহ রয়েছে, এই প্রসঙ্গে আয়ানের বক্তব্য, ‘পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমার একটা অপারেশন হয়েছিল। তখন চিকিৎসকদের ভূমিকা দেখে উৎসাহিত হয়েছিলাম।’ তার পর থেকেই ডাক্তারিতে পড়াশোনার ভাবনা ঘোরাফেরা করতো আয়ানের মনে। শুধু ডিগ্রি নয়, ভালো পড়াশোনা করে একজন ভালো চিকিৎসক হয়ে দেশ ও সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে তাঁদের।

আর্শ ও আয়ানের আব্বা হাবিব মুস্তাফা অঙ্কের শিক্ষক। মা হালিমা মুস্তাফাও পড়ান। হাবিব মুস্তাফার আদি বাড়ি বসিরহাট এলাকার রাজপুর গ্রামে। অনেক আগে থেকেই তাঁদের বসবাস কলকাতার ব্রড স্ট্রিটে।

হাবিব ও হালিমা জানান, ভালোভাবে গাইড করেছি। সেইসঙ্গে ওদের পড়াশোনায় প্রবল ইচ্ছা ছিল। তাই সাফল্য এসেছে। ছেলেদের ভালো ফল হয়েছে, সকলে জিজ্ঞেস করছে, এতে ভালো লাগছে।

দ্য ফ্রাঙ্ক অ্যান্টনি পাবলিক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানিয়েছেন, আর্শ ও আয়ানের সাফল্যে আমারা গর্বিত। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করেছে তারা।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

যমজ আর্শ ও আয়ান হতে চায় চিকিৎসক

আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২২, মঙ্গলবার

সেখ কুতুবউদ্দিনঃ   পার্ক সার্কাস সংলগ্ন ৩৭বি-ব্রড স্ট্রিটের বিল্ডিংয়ের ঠিক পাশের গলি। ৩য় তলে কলিং বেল-বাজাতেই বেড়িয়ে এলেন আর্শ ও আয়ান। এই যমজদের কথা এখন রাজ্য তথা দেশের মানুষ জেনে গেছে। যমজ ভাইয়েরা সর্বভারতীয় আইএসসি পরীক্ষায় হয়েছেন প্রথম ও দ্বিতীয়। চারদিকে তুমুল সাড়া পড়েছে। সোমবার পুবের কলমে তাঁদের দুই ভাইয়ের খবর প্রকাশিত হয়েছিল।নিজেদের পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে সে-কথাও প্রতিবেদককে জানালেন তারা।

 

নার্শারি থেকেই কলকাতার রিপন স্ট্রিটের দ্য ফ্রাঙ্ক অ্যান্টনি পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা তাঁদের। আর্শ ও আয়ানের সঙ্গে কথা হচ্ছিল তাঁদের সাফল্য নিয়ে। দুই কিশোরের চোখে-মুখে ছিল খুশির ছাপ। দু’জনেরই বক্তব্য, এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে গেলে পরিবেশের রদবদল হয়। তাতে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই স্কুল পরিবর্তন না করে একই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তাঁরা। আর্শ ও আয়ানের আরও বক্তব্য, ‘পড়াশোনার দিক দিয়ে কোনও গাফিলতি করিনি। নিয়মিত পড়াশোনা করেছি। সেই সঙ্গে খেলাধুলো ও মিউজিক নিয়ে চর্চা করি।’

পড়াশোনায় কোনও গাফিলতি ছিল না তাঁদের। কোনও বিষয় অথবা অধ্যায় কঠিন মনে হলে, সেগুলির উপর আলাদাভাবে জোর দিতেন তাঁরা। একাধিক বই নিয়ে ঘাটাঘাটি না করে একটি বইতে মনযোগ বেশি থাকতো তাঁদের।

আর্শের কথায়, যে কোনও ভাষায় ভালো পড়াশোনা করলেই সাফল্য মিলবে। সাফল্যে কোনও ভাষা নির্ভর করে না। খুঁটিয়ে পড়া, প্রশ্নে যে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়, তার সঠিক উত্তর দিলেই পড়াশোনায় ভালো ফল করা যায়।

আর্শ ও আয়ান আগে থেকেই ভেবেছিলেন ভালো ফল হবে। তবে মেধা তালিকায় আসবেন, তা আদৌ ভাবতে পারেননি তাঁরা।বহু বছর পর যমজ ভাই আর্শ ও আয়ান সাফল্য পেয়েছেন। এর আগে সাফল্য পেয়েছিলেন গাইঘাটার যমজ রজত ও রাকেশ সরকার। তাঁদের অনেক আগেই ভালো ফল করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাসগুপ্ত এবং অতীশ দাসগুপ্ত।

দশম শ্রেণির ফলেও আর্শ-এর নম্বর ছিল ৯৮.২ শতাংশ এবং আয়ানের প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৯৭. ৬ শতাংশ। দ্বাদশে আর্শ পেয়েছেন ৯৯.৭৫ শতাংশ নম্বর। আইএসসি’র সর্বভারতীয় মেধা তালিকা এবং রাজ্যের তালিকায় আর্শের স্থান প্রথম। আয়ান দ্বিতীয় স্থানে। দিল্লি বোর্ডের দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় আর্শ ইংরেজিতে এক নম্বর বেশি পেয়ে সারা দেশে প্রথম ১৮ জনের মধ্যে ঠাঁই করে নিয়েছেন। এক নম্বর কম পাওয়ায় দ্বিতীয় স্থানাধিকারি ৫৮ জনের অন্যতম হয়েছেন আয়ান।

আর্শ ও আয়ান দুজনই হতে চান চিকিৎসক। সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকার জন্য অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল তাঁদের। যা দ্বাদশের পরীক্ষাতেও ভালো ফল করতে সহায়তা হয়েছে। এ বছর তাঁরা পার্ক সার্কাসের সেভেনপয়েন্ট সংলগ্ন এক বেসরকারি কোচিং সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিট দিয়েছেন। নিটের ফলেও ৯৫ শতাংশের বেশি নম্বর পাবেন বলে আশা রয়েছে তাঁদের।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে কেন তাঁদের পড়াশোনার আগ্রহ রয়েছে, এই প্রসঙ্গে আয়ানের বক্তব্য, ‘পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমার একটা অপারেশন হয়েছিল। তখন চিকিৎসকদের ভূমিকা দেখে উৎসাহিত হয়েছিলাম।’ তার পর থেকেই ডাক্তারিতে পড়াশোনার ভাবনা ঘোরাফেরা করতো আয়ানের মনে। শুধু ডিগ্রি নয়, ভালো পড়াশোনা করে একজন ভালো চিকিৎসক হয়ে দেশ ও সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে তাঁদের।

আর্শ ও আয়ানের আব্বা হাবিব মুস্তাফা অঙ্কের শিক্ষক। মা হালিমা মুস্তাফাও পড়ান। হাবিব মুস্তাফার আদি বাড়ি বসিরহাট এলাকার রাজপুর গ্রামে। অনেক আগে থেকেই তাঁদের বসবাস কলকাতার ব্রড স্ট্রিটে।

হাবিব ও হালিমা জানান, ভালোভাবে গাইড করেছি। সেইসঙ্গে ওদের পড়াশোনায় প্রবল ইচ্ছা ছিল। তাই সাফল্য এসেছে। ছেলেদের ভালো ফল হয়েছে, সকলে জিজ্ঞেস করছে, এতে ভালো লাগছে।

দ্য ফ্রাঙ্ক অ্যান্টনি পাবলিক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানিয়েছেন, আর্শ ও আয়ানের সাফল্যে আমারা গর্বিত। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করেছে তারা।