০১ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজা-প্রতিবাদে বাধা: বোম্বে হাইকোর্ট এর মত অসাংবিধানিক, মত কাটজুর

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার
  • / 176
নয়াদিল্লি: সম্প্রতি গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বামপন্থীরা মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানে এক সমাবেশ করার ঠিক করলে মুম্বাই পুলিশ তার অনুমতি দেয়নি। পুলিশের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে বামপন্থীরা বোম্বে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। হাইকোর্টের বিচারপতি রবীন্দ্র ঘুগে এবং গৌতম অঙ্খর সিপিএমের আর্জি খারিজ করে দিয়ে বলেন, দেশে নর্দমা পরিস্কার হচ্ছে না, বৃষ্টি হলে রাস্তায় জল জমছে, দূষণ কীহারে বাড়ছে, এইসব নিয়ে প্রতিবাদ করুন।

কোথায় গাজায় কী হচ্ছে, তা নিয়ে আপনাদের এত মাথাব্যথা কেন? অত দূরে চোখ যায় কেন? সামনে কী হচ্ছে দেখুন। এরকম বিস্তর জ্ঞান দেন দুই বিচারপতি। এদিন তার তীব্র প্রতিবাদ করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মার্কণ্ডেয় কাটজু। কাটজু বলেছেন, বোম্বে হাইকোর্ট যা করেছে তা সংবিধানের ১৯(১খ) ধারার বিরোধী। বিচারপতিরা আবেদনকারীদের দেশপ্রেম দেখাতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

কাটজুর প্রশ্ন, বিশ্বের কোনও দেশে গণহত্যা চললে, মানবতার চরম অবমাননা হলে তার বিরোধিতা করা কি দেশপ্রেম নয়? বোম্বে হাইকোর্টের ওই বিচারপতিদের বলছি, সংবিধানের ১৯(১খ) ধারায় কী বলা আছে দেখুন। বলা হয়েছে, দেশের যে কোনও নাগরিক অস্ত্র ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভাবে সমবেত হতে পারেন। কাটজু বলেছেন, আমার মনে হয়, ওই দুই বিচারপতি সংবিধানের ওই ধারাকে সংশোধন করে ঠিক করেছেন, দেশের যে কোনও নাগরিকের শান্তিপূর্ণ ভাবে অস্ত্র ছাড়া সমবেত হওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে শর্ত হল , বিদেশি কোনও বিষয়ে আলোচনা করা যাবে না, শুধু মাত্র দেশীয় ব্যাপারে আলোচনা করা যাবে।

আরও পড়ুন: গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির আহ্বান চিনের

কিন্তু বিচারপতিদের তো সংবিধান সংশোধনের অধিকার নেই। একমাত্র সংসদের দুই কক্ষ দুই তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা থাকলে সংবিধান সংশোধন করতে পারে। সেদিক থেকে বোম্বে হাইকোর্টের ওই বিচারপতিরা সংসদের এক্তিয়ারে নাক গলিয়েছেন। আরাবলী গল্ফ ক্লাব বনাম চন্দ্র হাসের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্পষ্ট বলা আছে, সংসদ এবং বিচার বিভাগের এক্তিয়ারের কথা। তা ওই বিচারপতিরা অমান্য করেছেন বলে মনে করেন কাটজু। কাটজু আরও বলেছেন, ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ভারত গণতান্ত্রিক দেশ।

আরও পড়ুন: যৌন হেনস্থার অভিযোগ, ব্রিটেনে বামপন্থী চিকিৎসককে কারাদণ্ডের নির্দেশ

এটা কী ধরনের গণতন্ত্র যেখানে নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ ভাবে কোথাও সমবেত হয়ে দেশ হোক, বিদেশ হোক কোনও সমস্যার ব্যাপারে মতপ্রকাশে বাধা দেওয়া হচ্ছে? বোম্বে হাইকোর্টের মত মেনে নেওয়া হলে এবার অন্য কোনও আদালত এক কদম এগিয়ে গিয়ে বলবে, সংবিধানের ১৯(১খ) ধারা অনুযায়ী দেশের যে কোনও নাগরিকের শান্তিপূর্ণ ভাবে সমবেত হওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে শর্ত হল, সেখানে সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। আদালতের এই হাল হলে গণতন্ত্রের কী অবশিষ্ট থাকে? প্রশ্ন কাটজুর।

আরও পড়ুন: নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে এলে, তাঁকে গ্রেফতার করা হবে : জোহরান মামদানি

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

গাজা-প্রতিবাদে বাধা: বোম্বে হাইকোর্ট এর মত অসাংবিধানিক, মত কাটজুর

আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার
নয়াদিল্লি: সম্প্রতি গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বামপন্থীরা মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানে এক সমাবেশ করার ঠিক করলে মুম্বাই পুলিশ তার অনুমতি দেয়নি। পুলিশের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে বামপন্থীরা বোম্বে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। হাইকোর্টের বিচারপতি রবীন্দ্র ঘুগে এবং গৌতম অঙ্খর সিপিএমের আর্জি খারিজ করে দিয়ে বলেন, দেশে নর্দমা পরিস্কার হচ্ছে না, বৃষ্টি হলে রাস্তায় জল জমছে, দূষণ কীহারে বাড়ছে, এইসব নিয়ে প্রতিবাদ করুন।

কোথায় গাজায় কী হচ্ছে, তা নিয়ে আপনাদের এত মাথাব্যথা কেন? অত দূরে চোখ যায় কেন? সামনে কী হচ্ছে দেখুন। এরকম বিস্তর জ্ঞান দেন দুই বিচারপতি। এদিন তার তীব্র প্রতিবাদ করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মার্কণ্ডেয় কাটজু। কাটজু বলেছেন, বোম্বে হাইকোর্ট যা করেছে তা সংবিধানের ১৯(১খ) ধারার বিরোধী। বিচারপতিরা আবেদনকারীদের দেশপ্রেম দেখাতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

কাটজুর প্রশ্ন, বিশ্বের কোনও দেশে গণহত্যা চললে, মানবতার চরম অবমাননা হলে তার বিরোধিতা করা কি দেশপ্রেম নয়? বোম্বে হাইকোর্টের ওই বিচারপতিদের বলছি, সংবিধানের ১৯(১খ) ধারায় কী বলা আছে দেখুন। বলা হয়েছে, দেশের যে কোনও নাগরিক অস্ত্র ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভাবে সমবেত হতে পারেন। কাটজু বলেছেন, আমার মনে হয়, ওই দুই বিচারপতি সংবিধানের ওই ধারাকে সংশোধন করে ঠিক করেছেন, দেশের যে কোনও নাগরিকের শান্তিপূর্ণ ভাবে অস্ত্র ছাড়া সমবেত হওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে শর্ত হল , বিদেশি কোনও বিষয়ে আলোচনা করা যাবে না, শুধু মাত্র দেশীয় ব্যাপারে আলোচনা করা যাবে।

আরও পড়ুন: গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির আহ্বান চিনের

কিন্তু বিচারপতিদের তো সংবিধান সংশোধনের অধিকার নেই। একমাত্র সংসদের দুই কক্ষ দুই তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা থাকলে সংবিধান সংশোধন করতে পারে। সেদিক থেকে বোম্বে হাইকোর্টের ওই বিচারপতিরা সংসদের এক্তিয়ারে নাক গলিয়েছেন। আরাবলী গল্ফ ক্লাব বনাম চন্দ্র হাসের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্পষ্ট বলা আছে, সংসদ এবং বিচার বিভাগের এক্তিয়ারের কথা। তা ওই বিচারপতিরা অমান্য করেছেন বলে মনে করেন কাটজু। কাটজু আরও বলেছেন, ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ভারত গণতান্ত্রিক দেশ।

আরও পড়ুন: যৌন হেনস্থার অভিযোগ, ব্রিটেনে বামপন্থী চিকিৎসককে কারাদণ্ডের নির্দেশ

এটা কী ধরনের গণতন্ত্র যেখানে নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ ভাবে কোথাও সমবেত হয়ে দেশ হোক, বিদেশ হোক কোনও সমস্যার ব্যাপারে মতপ্রকাশে বাধা দেওয়া হচ্ছে? বোম্বে হাইকোর্টের মত মেনে নেওয়া হলে এবার অন্য কোনও আদালত এক কদম এগিয়ে গিয়ে বলবে, সংবিধানের ১৯(১খ) ধারা অনুযায়ী দেশের যে কোনও নাগরিকের শান্তিপূর্ণ ভাবে সমবেত হওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে শর্ত হল, সেখানে সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। আদালতের এই হাল হলে গণতন্ত্রের কী অবশিষ্ট থাকে? প্রশ্ন কাটজুর।

আরও পড়ুন: নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে এলে, তাঁকে গ্রেফতার করা হবে : জোহরান মামদানি