০২ মে ২০২৫, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্প-জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে ভেস্তে গেল চুক্তি

সুস্মিতা
  • আপডেট : ১ মার্চ ২০২৫, শনিবার
  • / 20

হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে

ওয়াশিংটন: হোয়াইট হাউসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কিন্তু তাঁদের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। বরং ট্রাম্প এবং আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় জেলেনস্কি। বৈঠকের মাঝপথেই ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের বেরিয়ে যেতে বলা হয় ওভাল অফিস থেকে। পূর্বপরিকল্পিত মধ্যাহ্নভোজনও করেননি তাঁরা কেউ। বাতিল হয়েছে বহু আলোচিত খনিজ চুক্তি। তবে শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডা দুঃখজনক হলেও অপ্রত্যাশিত ছিল না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সবার মনে যে প্রশ্ন তাহলে কী হয়েছিল ট্রাম্প-জেলেনস্কির মধ্যে? কেন এমন রেগে গেলেন দু’জনে? ট্রাম্প এবং জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডা স্থায়ী হয় প্রায় ৪০ মিনিট। তাতে বড় ভূমিকা ছিল আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের। সংবাদমাধ্যমের সামনে পূর্বতন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে কটাক্ষ করে ভান্স বলেন, ‘চার বছর ধরে আমেরিকার একজন প্রেসিডেন্ট সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে কড়া কড়া কথা বলে গিয়েছেন। তার পর পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করলেন। দেশের একটা বড় অংশ ধ্বংস করলেন। আসলে শান্তি এবং উন্নয়নের পথ হল কূটনীতির পথ।’
তখন জেলেনস্কি বলেন, পুতিন আমাদের দেশ আক্রমণ করলেন। বড় অংশ দখল করে নিলেন। ২০১৪ সাল থেকে এটা চলছে। শুধু বাইডেনের কথা বলছি না। ওবামা ছিলেন। তার পর ট্রাম্প ছিলেন, বাইডেন ছিলেন, এখন আবার ট্রাম্প এসেছেন। ২০১৪ সালে কিন্তু কেউ পুতিনকে আটকাননি। উনি বিনা বাধায় আমাদের দেশ দখল করেছেন। মানুষ মেরেছেন। কোনও কূটনীতি মানেননি। ভান্স, এর পরেও আপনি কোন কূটনীতির কথা বলছেন? এর মানে কী? এর জবাবে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি সেই কূটনীতির কথাই বলছি, যেটা আপনার দেশে এই ধ্বংসলীলা বন্ধ করবে।
এরপর জেলেনস্কি বলে আপনি যদি কখনও ইউক্রেনে যেতেন এবং সেখানকার মানুষের সমস্যাটা নিজের চোখে দেখতেন, তা হলে এই কথা বলতেন না। তার জবাবে ভান্স বলেন আমি দেখেছি অনেক কিছুই। আমি জানি, আপনি কীভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মানুষের সামনে নিজের কথা প্রচার করেন। ওভাল অফিসে এসে আপনি সেই দেশের প্রশাসনকেই অপমান করছেন, যারা আপনার দেশতে বাঁচানোর চেষ্টা করছে? এটা কি সম্মানজনক?
এর উত্তরে জেলেনস্কি বলেন যুদ্ধের সময়ে প্রত্যেকটা দেশের নিজের নিজের সমস্যা থাকে। আপনারা কিছু অনুভব করছেন না। তাই সুন্দর সমাধান বলে দিতে পারছেন। ভবিষ্যতে আপনারাও এই জিনিস অনুভব করবেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য শুনে মেজাজ হারান ট্রাম্প। তিনি বলেন আমরা কী অনুভব করব না করব, আপনাকে সেটা বলে দিতে হবে না। আমরা একটা সমস্যার সমাধান করতে চাইছি। আমরা কী অনুভব করব, আপনি কি সেটা আমাদের বলে দেবেন? তারপরই জেলেনস্কিকে থামিয়ে চড়া গলায় ট্রাম্প বলেন, আমরা কী অনুভব করব, সেটা বলে দেওয়ার মতো জায়গায় আপনি নেই। আমরা এখনও শক্তিশালী হিসাবেই আছি। বরং আপনি নিজে এই মুহূর্তে খুব একটা ভালো জায়গায় নেই। আর আপনি নিজেকে সেই জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন নিয়ে আপনি ছিনিমিনি খেলছেন। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন। আমেরিকাকে অপমান করছেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, আপনার দেশ বড় সমস্যার মধ্যে আছে। আপনি অনেক কথা বলে ফেলেছেন। আপনারা এই যুদ্ধে জিততে পারবেন না। আমাদের সাহায্যে আপনি এর মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। আমাদের অস্ত্র না-পেলে দু’সপ্তাহও টিকত না এই যুদ্ধ। এর উত্তরে জেলেনস্কি বলেন, আমি ঠিক একই কথা পুতিনের মুখ থেকেও শুনে ছিলাম। ট্রাম্প বলেন আপনার দেশে মানুষ মরছে, আপনার কাছে পর্যাপ্ত সেনা নেই। আর আপনি বলছেন, আপনি যুদ্ধবিরতি চান না! আপনার মধ্যে কোনও কৃতজ্ঞতা নেই। এটা খুব একটা ভালো কথা নয়। অনেক হয়েছে। এই বলে ৪০ মিনিটের বৈঠকে আচমকা ইতি টানেন, চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েন ট্রাম্প।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ট্রাম্প-জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে ভেস্তে গেল চুক্তি

আপডেট : ১ মার্চ ২০২৫, শনিবার

হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে

ওয়াশিংটন: হোয়াইট হাউসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কিন্তু তাঁদের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। বরং ট্রাম্প এবং আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় জেলেনস্কি। বৈঠকের মাঝপথেই ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের বেরিয়ে যেতে বলা হয় ওভাল অফিস থেকে। পূর্বপরিকল্পিত মধ্যাহ্নভোজনও করেননি তাঁরা কেউ। বাতিল হয়েছে বহু আলোচিত খনিজ চুক্তি। তবে শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডা দুঃখজনক হলেও অপ্রত্যাশিত ছিল না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সবার মনে যে প্রশ্ন তাহলে কী হয়েছিল ট্রাম্প-জেলেনস্কির মধ্যে? কেন এমন রেগে গেলেন দু’জনে? ট্রাম্প এবং জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডা স্থায়ী হয় প্রায় ৪০ মিনিট। তাতে বড় ভূমিকা ছিল আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের। সংবাদমাধ্যমের সামনে পূর্বতন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে কটাক্ষ করে ভান্স বলেন, ‘চার বছর ধরে আমেরিকার একজন প্রেসিডেন্ট সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে কড়া কড়া কথা বলে গিয়েছেন। তার পর পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করলেন। দেশের একটা বড় অংশ ধ্বংস করলেন। আসলে শান্তি এবং উন্নয়নের পথ হল কূটনীতির পথ।’
তখন জেলেনস্কি বলেন, পুতিন আমাদের দেশ আক্রমণ করলেন। বড় অংশ দখল করে নিলেন। ২০১৪ সাল থেকে এটা চলছে। শুধু বাইডেনের কথা বলছি না। ওবামা ছিলেন। তার পর ট্রাম্প ছিলেন, বাইডেন ছিলেন, এখন আবার ট্রাম্প এসেছেন। ২০১৪ সালে কিন্তু কেউ পুতিনকে আটকাননি। উনি বিনা বাধায় আমাদের দেশ দখল করেছেন। মানুষ মেরেছেন। কোনও কূটনীতি মানেননি। ভান্স, এর পরেও আপনি কোন কূটনীতির কথা বলছেন? এর মানে কী? এর জবাবে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি সেই কূটনীতির কথাই বলছি, যেটা আপনার দেশে এই ধ্বংসলীলা বন্ধ করবে।
এরপর জেলেনস্কি বলে আপনি যদি কখনও ইউক্রেনে যেতেন এবং সেখানকার মানুষের সমস্যাটা নিজের চোখে দেখতেন, তা হলে এই কথা বলতেন না। তার জবাবে ভান্স বলেন আমি দেখেছি অনেক কিছুই। আমি জানি, আপনি কীভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মানুষের সামনে নিজের কথা প্রচার করেন। ওভাল অফিসে এসে আপনি সেই দেশের প্রশাসনকেই অপমান করছেন, যারা আপনার দেশতে বাঁচানোর চেষ্টা করছে? এটা কি সম্মানজনক?
এর উত্তরে জেলেনস্কি বলেন যুদ্ধের সময়ে প্রত্যেকটা দেশের নিজের নিজের সমস্যা থাকে। আপনারা কিছু অনুভব করছেন না। তাই সুন্দর সমাধান বলে দিতে পারছেন। ভবিষ্যতে আপনারাও এই জিনিস অনুভব করবেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য শুনে মেজাজ হারান ট্রাম্প। তিনি বলেন আমরা কী অনুভব করব না করব, আপনাকে সেটা বলে দিতে হবে না। আমরা একটা সমস্যার সমাধান করতে চাইছি। আমরা কী অনুভব করব, আপনি কি সেটা আমাদের বলে দেবেন? তারপরই জেলেনস্কিকে থামিয়ে চড়া গলায় ট্রাম্প বলেন, আমরা কী অনুভব করব, সেটা বলে দেওয়ার মতো জায়গায় আপনি নেই। আমরা এখনও শক্তিশালী হিসাবেই আছি। বরং আপনি নিজে এই মুহূর্তে খুব একটা ভালো জায়গায় নেই। আর আপনি নিজেকে সেই জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন নিয়ে আপনি ছিনিমিনি খেলছেন। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন। আমেরিকাকে অপমান করছেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, আপনার দেশ বড় সমস্যার মধ্যে আছে। আপনি অনেক কথা বলে ফেলেছেন। আপনারা এই যুদ্ধে জিততে পারবেন না। আমাদের সাহায্যে আপনি এর মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। আমাদের অস্ত্র না-পেলে দু’সপ্তাহও টিকত না এই যুদ্ধ। এর উত্তরে জেলেনস্কি বলেন, আমি ঠিক একই কথা পুতিনের মুখ থেকেও শুনে ছিলাম। ট্রাম্প বলেন আপনার দেশে মানুষ মরছে, আপনার কাছে পর্যাপ্ত সেনা নেই। আর আপনি বলছেন, আপনি যুদ্ধবিরতি চান না! আপনার মধ্যে কোনও কৃতজ্ঞতা নেই। এটা খুব একটা ভালো কথা নয়। অনেক হয়েছে। এই বলে ৪০ মিনিটের বৈঠকে আচমকা ইতি টানেন, চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েন ট্রাম্প।