আহমদ হাসান ইমরান: ‘আব কিস কা বারি হ্যায় রে কালিয়া’? না এখানে কথাটি শোলের গব্বর খান বলেননি । বলেছেন যোগীরাজ্যের মুজাফফরনগরের এক স্কুলের মালকিন ও প্রধান শিক্ষিকা তৃপ্তা ত্যাগি। এই ‘শিক্ষিকা’ মহোদয়া এখন জগৎবিখ্যাত হয়ে গেছেন। বিষয়টি হল, ভারত অবশ্য ভারতই আছে। এখনও ‘ইন্ডিয়া’ হয়নি। কিন্তু তাহলেও পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে ভারতের বহু ধর্ম, বহু জাতি, বহু ভাষা এবং বহু বেশের সেই দেশ। বদলানোর মুখে এসে দাঁড়িয়েছে আমাদের পথ নির্দেশিকা সেই প্রিয় সংবিধান। আর লঙ্ঘন তো হয়েই চলেছে।
লেখার শুরুতেই কথিত ‘আব কিস কা বারি হ্যায়’ প্রশ্নটি ফিল্মের নয়, বরং বাস্তবে। প্রশ্নটি করেছেন তৃপ্তা ত্যাগি, সেই প্রধান শিক্ষিকা কাম স্কুলের মালকিন। মাত্র ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর ছবি, ভিডিয়ো এবং বক্তব্য দুনিয়া জুড়ে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। তিনি উঠে এসেছেন আল জাজিরা , বিবিসির মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের পাদপ্রদীপে।
বিষয়টা এখন আপনারা সকলেই জানেন। গেরুয়া বিদ্বেষে অন্ধ হয়ে এই প্রধান শিক্ষিকা মুসলিম বাচ্চা ছাত্রদের বাপ-মা তুলে ব্যঙ্গ-কটাক্ষ করছেন এবং খানিকটা উগ্রপন্থিদের দ্বারা ‘মব লিঞ্চিং’ -এর কায়দায় ছোট্ট এক মুসলিম পড়ুয়াকে চড়, থাপ্পর, ঘুষি মারতে পুরো শ্রেণীকক্ষের ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করছেন। ওই মালকিনের সম্মুখে অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে থাকা মুসলিম বাচ্চাটিকে যারা জোরে মারতে পারছে না , তাদেরকে তিনি খানিকটা ধমকা-ধমকি করছেন আর তার পরেই তাঁর প্রশ্ন ‘ হু ইজ নেক্সট’? অর্থাৎ আব কিস কা বারি হ্যায় ? আ যাও মারনে কে লিয়ে। বাচ্চাটির অপরাধ সে মুসলিম। ইসলাম ধর্মাবলম্বী।
ঘৃণা বিদ্বেষ কতটা প্রখর হলে, কতটা গভীরে প্রবেশ করলে এই ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে ? মুসলিম এই বাচ্চাটির মন-মানসিকতা ও স্মৃতিতে এই ঘটনা কি প্রভাব ফেলবে , তা সহজে অনুমেয়। আর এই ধরণের ঘটনাই তো মানুষকে হিংস্র- সন্ত্রাসী করে তোলে। দেশকে কি বর্তমান শাসকরা সেদিকেই নিয়ে যাচ্ছেন ? বিশেষ করে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে। ভোটে জেতার জন্য এমন বহু ঘটনা আমরা দেখেছি। এখনও দেখছি। হঠাৎই মণিপুর, নূহ-এর ধ্বংসজজ্ঞ আমরা দেখলাম। দেখলাম পুলিশ-প্রশাসনের সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় সহযোগিতা। দেখলাম, ট্রেনে উঠে রক্ষক আধা- সামরিক বাহিনীর জওয়ান বেছে বেছে নিরপরাধ মুসলিম যাত্রীদের হত্যা করছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন , ঈশ্বর না করুন, নির্বাচনের আগে হয়তো আরও একটি গুজরাত ২০০২-এর মতো সহিংসতার সম্ভাবনা রয়েছে। স্কুলের ঘটনাটি বোধহয় এই ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানোরই একটি যোজনা । যোগী রাজ্যের পুলিশকে শুকরিয়া, তারা এই ঘটনায় খুবই কোমল মনোভাব ও পদক্ষেপ নিচ্ছেন।