২২ জুন ২০২৫, রবিবার, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এই মামলার কোনও ভিত্তি নেই, জানিয়ে গুজরাত দাঙ্গা মামলায় নরেন্দ্র মোদিকে ক্লিনচিট দিল সুপ্রিম কোর্ট

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৪ জুন ২০২২, শুক্রবার
  • / 19

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: গুজরাত দাঙ্গা মামলায় প্রধানমন্ত্রীকে ক্লিনচিট দিল সুপ্রিম কোর্ট। গুজরাত দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন কংগ্রেস নেতার স্ত্রী। তৎকালীন কংগ্রেস নেতা এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি মোদির ক্লিন চিটের সিদ্ধান্তে প্রশ্ন তুলে মামলা করেছিলেন। সেই আবেদনই খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয় এই মামলার কোনও ভিত্তি নেই।

গুজরাত  দাঙ্গা চলাকালীন গুলবার্গ সোসাইটির গণহত্যার ঘটনায় নিহত ৬৮ জনের মধ্যে  ছিলেন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরি৷ জাকিয়া জাফরি  মোদিকে  সিট-এর দেওয়া ক্লিনচিটের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন৷  সেই মামলাই খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট ।

আরও পড়ুন: বাবা সাহেব বিতর্কে উত্তাল বিহার রাজনীতি, কংগ্রেস-আরজেডিকে একযোগে নিশানা মোদির

সিটের দেওয়ার তথ্যের ভিত্তিতেই নরেন্দ্র মোদিকে আগেই ক্লিনচিটের রায় দেয় গুজরাট হাইকোর্ট। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন জাকিয়া জাফরি। শুক্রবার তাঁর সেই মামলা খারিজ করে দিল দেশের শীর্ষ আদালত।

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতির ৬৭তম জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা, দরিদ্রদের ক্ষমতায়নে তাঁর ভূমিকার প্রশংসা মোদির

২০০২ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২০০২-এ গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টই ২০০৮-এ সিট গঠন করেছিল৷ তাতে তদন্তকারী দল  প্রধানমন্ত্রী মোদি সহ ৬৩ জনকে ক্লিন চিট দিয়েছিল। শীর্ষ আদালত তাকেই  মান্যতা দিয়েছে।

আরও পড়ুন: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিরোধ চাই: মোদি

২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সিট গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোদিকে  ক্লিন চিট দিয়ে একটি ক্লোজার রিপোর্ট দাখিল করেছিল। ঊর্ধ্বতন সরকারি আধিকারিক সহ আরও ৬৩ জন সম্পর্কে সিট জানায় যে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ‘বিচারযোগ্য প্রমাণ’ নেই। ২০১৮ সালে, জাকিয়া জাফরি সিটের গুজরাট হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। যা ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর প্রত্যাখ্যান করে হাইকোর্ট। এরপর একই চ্যালেঞ্জ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন জাকিয়া।

 

বিচারপতি এ এম খানউইলকরের নেতৃত্বে, বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী এবং সি টি রবিকুমারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ, ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর গুজরাট হাইকোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে জাকিয়া জাফরির আপিলের শুনানি করে।গত ডিসেম্বরে শুনানি শেষ হলেও আদেশ সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল। সিটের রিপোর্ট অনুসারে দাঙ্গা-সংক্রান্ত মামলায় তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী মোদি এবং আরও ৬৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের গুরুত্ব নেই বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

শুনানি চলাকালীন জাকিয়া জাফরি আদালতে বলেছিলেন, তার অভিযোগ ও অন্যান্য তথ্য সিট খতিয়ে দেখেনি। সিট সমস্ত যুক্তি নস্যাৎ করে বলেন, বিশ্বস্ততার সঙ্গেই তদন্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গা সংঘটিত হয়। যা সাম্প্রদায়িক হিংসার রূপ নেয়। প্রাথমিক ঘটনার পরে আহমেদাবাদ ও গুজরাত শহরে তিন মাস ধরে সহিংসতার আরও প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ে। পরের বছর, রাজ্যব্যাপী, সংখ্যালঘু মুসলিম জনসংখ্যার বিরুদ্ধে সহিংসতার আরও প্রকোপ দেখা যায়।

২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধড়ায় একটি ট্রেন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। অযোধ্যা থেকে ফিরে আসা ৫৯ জন হিন্দু তীর্থযাত্রী মারা যায়। এই ঘটনাকে গুজরাত সহিংসতার প্ররোচনা বলে উল্লেখ করা হয়।

সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, দাঙ্গায় ১,০৪৪ জন নিহত, ২২৩ নিখোঁজ এবং ২,৫০০ আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ৭৯০ জন মুসলমান এবং ২৫৪ হিন্দু ছিলেন। তবে বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার।

২০১২ সালে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক নিযুক্ত বিশেষ তদন্তকারি দল (এসআইটি) দ্বারা নরেন্দ্র মোদি’র সহিংসতায় জড়িত থাকার বিষয় খারিজ করা হয়। এসআইটি এই দাবিও প্রত্যাখ্যান করেছিল যে রাজ্য সরকার দাঙ্গা প্রতিরোধে যথেষ্ট কাজ করেনি।

অন্যদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট জেনারেল অভিযোগ করেছেন, গুজরাত দাঙ্গার সময় প্রশাসন সেনা নামাতে চব্বিশ ঘন্টারও বেশি দেরি করেছিল, যেটা না-হলে হয়তো বহু প্রাণহানি ঠেকানো যেত।

সেনাবাহিনীর  প্রাক্তন উপপ্রধান জমিরউদ্দিন শাহ গুজরাত দাঙ্গার মোকাবিলায় মোতায়েন করা  সেনাদের নেতৃত্বে ছিলেন,  তিনি তার সদ্যপ্রকাশিত বইতে দাঙ্গা ঠেকানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন।

‘দ্য সরকারি মুসলমান’ নামে তার ওই বইটি প্রকাশ করতে গিয়ে ভারতের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারিও দাঙ্গার সময় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

ওই ভয়াবহ দাঙ্গার সময় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

২০০২ সালের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় গুজরাটে দুহাজারেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন মুসলিম।

 

 

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

এই মামলার কোনও ভিত্তি নেই, জানিয়ে গুজরাত দাঙ্গা মামলায় নরেন্দ্র মোদিকে ক্লিনচিট দিল সুপ্রিম কোর্ট

আপডেট : ২৪ জুন ২০২২, শুক্রবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: গুজরাত দাঙ্গা মামলায় প্রধানমন্ত্রীকে ক্লিনচিট দিল সুপ্রিম কোর্ট। গুজরাত দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন কংগ্রেস নেতার স্ত্রী। তৎকালীন কংগ্রেস নেতা এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি মোদির ক্লিন চিটের সিদ্ধান্তে প্রশ্ন তুলে মামলা করেছিলেন। সেই আবেদনই খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয় এই মামলার কোনও ভিত্তি নেই।

গুজরাত  দাঙ্গা চলাকালীন গুলবার্গ সোসাইটির গণহত্যার ঘটনায় নিহত ৬৮ জনের মধ্যে  ছিলেন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরি৷ জাকিয়া জাফরি  মোদিকে  সিট-এর দেওয়া ক্লিনচিটের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন৷  সেই মামলাই খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট ।

আরও পড়ুন: বাবা সাহেব বিতর্কে উত্তাল বিহার রাজনীতি, কংগ্রেস-আরজেডিকে একযোগে নিশানা মোদির

সিটের দেওয়ার তথ্যের ভিত্তিতেই নরেন্দ্র মোদিকে আগেই ক্লিনচিটের রায় দেয় গুজরাট হাইকোর্ট। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন জাকিয়া জাফরি। শুক্রবার তাঁর সেই মামলা খারিজ করে দিল দেশের শীর্ষ আদালত।

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতির ৬৭তম জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা, দরিদ্রদের ক্ষমতায়নে তাঁর ভূমিকার প্রশংসা মোদির

২০০২ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২০০২-এ গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টই ২০০৮-এ সিট গঠন করেছিল৷ তাতে তদন্তকারী দল  প্রধানমন্ত্রী মোদি সহ ৬৩ জনকে ক্লিন চিট দিয়েছিল। শীর্ষ আদালত তাকেই  মান্যতা দিয়েছে।

আরও পড়ুন: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিরোধ চাই: মোদি

২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সিট গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোদিকে  ক্লিন চিট দিয়ে একটি ক্লোজার রিপোর্ট দাখিল করেছিল। ঊর্ধ্বতন সরকারি আধিকারিক সহ আরও ৬৩ জন সম্পর্কে সিট জানায় যে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ‘বিচারযোগ্য প্রমাণ’ নেই। ২০১৮ সালে, জাকিয়া জাফরি সিটের গুজরাট হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। যা ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর প্রত্যাখ্যান করে হাইকোর্ট। এরপর একই চ্যালেঞ্জ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন জাকিয়া।

 

বিচারপতি এ এম খানউইলকরের নেতৃত্বে, বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী এবং সি টি রবিকুমারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ, ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর গুজরাট হাইকোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে জাকিয়া জাফরির আপিলের শুনানি করে।গত ডিসেম্বরে শুনানি শেষ হলেও আদেশ সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল। সিটের রিপোর্ট অনুসারে দাঙ্গা-সংক্রান্ত মামলায় তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী মোদি এবং আরও ৬৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের গুরুত্ব নেই বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

শুনানি চলাকালীন জাকিয়া জাফরি আদালতে বলেছিলেন, তার অভিযোগ ও অন্যান্য তথ্য সিট খতিয়ে দেখেনি। সিট সমস্ত যুক্তি নস্যাৎ করে বলেন, বিশ্বস্ততার সঙ্গেই তদন্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গা সংঘটিত হয়। যা সাম্প্রদায়িক হিংসার রূপ নেয়। প্রাথমিক ঘটনার পরে আহমেদাবাদ ও গুজরাত শহরে তিন মাস ধরে সহিংসতার আরও প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ে। পরের বছর, রাজ্যব্যাপী, সংখ্যালঘু মুসলিম জনসংখ্যার বিরুদ্ধে সহিংসতার আরও প্রকোপ দেখা যায়।

২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধড়ায় একটি ট্রেন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। অযোধ্যা থেকে ফিরে আসা ৫৯ জন হিন্দু তীর্থযাত্রী মারা যায়। এই ঘটনাকে গুজরাত সহিংসতার প্ররোচনা বলে উল্লেখ করা হয়।

সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, দাঙ্গায় ১,০৪৪ জন নিহত, ২২৩ নিখোঁজ এবং ২,৫০০ আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ৭৯০ জন মুসলমান এবং ২৫৪ হিন্দু ছিলেন। তবে বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার।

২০১২ সালে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক নিযুক্ত বিশেষ তদন্তকারি দল (এসআইটি) দ্বারা নরেন্দ্র মোদি’র সহিংসতায় জড়িত থাকার বিষয় খারিজ করা হয়। এসআইটি এই দাবিও প্রত্যাখ্যান করেছিল যে রাজ্য সরকার দাঙ্গা প্রতিরোধে যথেষ্ট কাজ করেনি।

অন্যদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট জেনারেল অভিযোগ করেছেন, গুজরাত দাঙ্গার সময় প্রশাসন সেনা নামাতে চব্বিশ ঘন্টারও বেশি দেরি করেছিল, যেটা না-হলে হয়তো বহু প্রাণহানি ঠেকানো যেত।

সেনাবাহিনীর  প্রাক্তন উপপ্রধান জমিরউদ্দিন শাহ গুজরাত দাঙ্গার মোকাবিলায় মোতায়েন করা  সেনাদের নেতৃত্বে ছিলেন,  তিনি তার সদ্যপ্রকাশিত বইতে দাঙ্গা ঠেকানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন।

‘দ্য সরকারি মুসলমান’ নামে তার ওই বইটি প্রকাশ করতে গিয়ে ভারতের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারিও দাঙ্গার সময় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

ওই ভয়াবহ দাঙ্গার সময় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

২০০২ সালের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় গুজরাটে দুহাজারেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন মুসলিম।