ফিরোজ-মুন্না-ইরশাদদের হাতের কসরতেই উদ্ধার ৪১ শ্রমিক

- আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, বুধবার
- / 26
পুবের কলম প্রতিবেদক: মুন্না কুরেশি, ইরশাদ, ফিরোজ কুরেশি, নাসিম, মনু, নাসির, রসিদ, অঙ্কুর, যতীন, সৌরভ, দেবেন্দ্র, ওয়াকিল হাসান। এদেরকে কি কেউ চেনেন? উত্তর হবে ‘না’। কিন্তু দেশে এখন এরাই আসল ‘হিরো’। উত্তরকাশী টানেলে ১৭ দিন ধরে যখন ৪১ জন শ্রমিক মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন তখন চোয়াল শক্ত রেখে ইঁদুরের মতো টানেলের শক্ত বাধা সরাচ্ছিলেন তারা। তীরে এসে তরী ডুবে যাবার মতো অবস্থা হয়েছিল। ৬০ মিটার ধ্বংসস্তূপের শেষ ১২ মিটার হয়ে উঠেছিল ‘বাধার পাহাড়’। আমেরিকান অগার মেশিন ভেঙে চুরমার। আন্তর্জাতিক টানেলিং বিশেষজ্ঞ আর্নল্ড ডিক্স উলম্বভাবে পাহাড় খননের যে বুদ্ধি দিয়েছিলেন, তা তখন ভেস্তে যেতে বসেছে পাহাড় ফেটে পানি বের হওয়ায়। এই সময় ম্যানুয়ালি টানেলিংয়ের কাজ চালিয়ে যান এই হিরোরাই। ১২ মিটারের বাধা পেরিয়ে উদ্ধারকাজকে সফল করে তোলেন ফিরোজ, ওয়াকিলরা। এই র্যাট হোল মাইনিং টিমের প্রায় প্রত্যেক সদস্যই দাঙ্গা-বিধ্বস্ত উত্তর-পূর্ব দিল্লির বাসিন্দা।
এদের মধ্যে অন্যতম মুন্না কুরেশি জানাচ্ছেন, শেষ পাথরটা সরানোর পরেই ভেতরে থাকা শ্রমিকদের দেখতে পাচ্ছিলাম। লাফ দিয়ে ওদের কাছে পৌঁছে যাই। ওরা আমায় জড়িয়ে ধরেন। কোলে তুলে নেন। বারবার ধন্যবাদ জানাতে থাকেন। প্রসঙ্গত, উদ্ধারের সমস্ত বিকল্প কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডাকা হয়েছিল র্যাট মাইনিং দলটিকে। কয়লাখনিতে এখন এই ধরনের খনন নিষিদ্ধ। কিন্তু কাজ তো ভুলে যাননি কুরেশিরা। তাই তাদের প্রচেষ্টাতেই প্রাণরক্ষা পেল ৪১ জনের।
তবে তারা যে এত বড় একটা কাজের দায়িত্ব পাবেন তা কিন্তু আগে ভাবতেই পারেননি। রবিবার যখন উত্তরাখণ্ড থেকে ফোন এসেছিল তখন ফিরোজ কুরেশি গাজিয়াবাদে। আগে থেকেই তিনি ও তার দল জানতেন উত্তরকাশী টানেলের বিপর্যয়ের কথা। তাই এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করেই যে অবস্থায় ছিলেন সেই অবস্থাতেই বেরিয়ে পড়েন ফিরোজ। ১২ জনের দল র্যাট হোল মাইনিংয়ের মাধ্যমে সুড়ঙ্গের ভিতরে প্রবেশ করে। খোঁড়ার কাজ শেষে বন্দি শ্রমিকদের প্রথম দেখতে পাবার সেই অভিজ্ঞতা জানালেন ফিরোজ। বললেন, যব অন্দর গয়ে মুঝে দেখকর তো খুশ হো গয়ে উওলোগ! নারে লাগা রহে থে সব। ফির গলে লাগা লিয়া। অর্থাৎ, ফিরোজকে দেখে খুশিতে ঝলমল করে উঠেছিলেন ১৭ দিন ধরে বদ্ধ সুড়ঙ্গে বন্দি মানুষগুলো। জয়ধ্বনি দিতে শুরু করেছিলেন ওরা। তার পর এসে জড়িয়ে ধরেছিলেন ফিরোজকে। তার অনভূতি হচ্ছিল যেন তার আনন্দই বেশি ওদের থেকে। বহু কষ্টে তারা সফল হয়েছেন যে!
ফিরোজ জানাচ্ছেন, ওদের দেখে মনে হচ্ছিল, ওদের দ্বিতীয় জন্ম হয়েছে। নতুন করে প্রাণ পেয়েছেন ওরা। আমাকে ওরা জড়িয়ে ধরে বলছিলেন, আপনাদের কী বললে এই ঋণ শোধ হবে জানি না। এর প্রতিদান আমরা দিতে পারব না। মঙ্গলবার ফিরোজ নিজে সকাল ১১টায় ঢুকেছিলেন সুড়ঙ্গের ভিতরে। বাইরে আসেন সন্ধ্যা ৬টার দিকে। এই সাত ঘণ্টা তিনি মুখে কিচ্ছু তোলেননি। ফিরোজ বলছেন, ইচ্ছেই করেনি খেতে। ঠিক করে নিয়েছিলাম, ওদের খোলা আকাশের নিচে উদ্ধার করে আনার পরই খাব!