আজ ঢাকায় বসছে সর্বদলীয় বৈঠক

- আপডেট : ২৫ মে ২০২৫, রবিবার
- / 433
পদত্যাগের জল্পনায় জল ঢাললেন ইউনূস
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ৪৮ ঘণ্টার টানটান নাটকের যবনিকা পতন! সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল একটাই জল্পনা—নোবেলজয়ী ড. ইউনূস কি তবে পদত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন? সেনা সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে কি ফের ক্ষমতায় আনার চেষ্টা করবে আওয়ামি লিগকে! জেনারেল ওয়াকার কি তবে ‘জুলিয়াস সিজার’-এর ব্রুটাসের মতোই এক চরিত্র হয়ে উঠতে চলেছেন? সব প্রশ্নের উত্তর মিলল শনিবার। তবে পিকচার আভি ভি বাকি হ্যায়…যা আগামী কয়েক দিনে আরও স্পষ্ট হবে। নির্বাচন, বিচার, সংস্কার—এই তিন লক্ষ্য পূরণের আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করছেন না প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেশ-বিদেশের সমস্ত জল্পনায় জল ঢেলে শনিবার এক ব্যস্ত দিন কাটালেন তিনি।
একের পর এক রাজনৈতিক দলের (বিএনপি, এনসিপি, জামায়াত) সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন তিনি। তারা সবাই তাকে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার অনুরোধ জানান। এমনকী শনিবার ঢাকা শহরের সাধারণ নাগরিকরা ড. ইউনূসের সমর্থনে বিশাল মিছিল বের করেন। তাদের দাবি, ইউনূসকে আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশের সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজন হলে তাকে রাষ্ট্রপতি করা হোক, এমন দাবিও তুলেছেন সাধারণ নাগরিকরা। ড. ইউনূসকে নিয়ে যে বাংলাদেশের বিপ্লবী ছাত্রজনতা ও নাগরিকদের ব্যাপক ভালোবাসা রয়েছে তা এ দিন প্রমাণ পেল।
এমনকী বাংলাদেশের বিখ্যাত দৈনিক সংবাদপত্র ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম এক খোলা চিঠিতে লিখেছেন, ‘ড. ইউনূস, পদত্যাগ করবেন না প্লিজ। দেশপ্রেমিক হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন, জাতি গঠনের সবটুকু অনুপ্রেরণা, সাধারণ বিবেচনাবোধ ও যুক্তিনির্ভর চিন্তা থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আন্তরিক ও বিনীতভাবে অনুরোধ করছি— এই ক্রান্তিলগ্নে অনুগ্রহ করে দেশের নেতৃত্বের হাল ছাড়বেন না। আমরা জানি এবং বিশ্বাস করি তিনি বাংলাদেশকে ভালোবাসেন। সেক্ষেত্রে তার জন্য পদত্যাগ কোনও বিকল্প নয়, বরং নেতৃত্ব দিয়ে যাওয়াই একমাত্র পথ। পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত দেশকে দৃঢ়, কার্যকর ও সুচিন্তিতভাবে নেতৃত্ব দেওয়াই তার একমাত্র দায়িত্ব এবং পুরো জাতি এর জন্য তার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবে। তাকে অবশ্যই এক্ষেত্রে অটল থাকতে হবে এবং আমরা গণমাধ্যম হিসেবে আমাদের নৈতিকতার ভিত্তিতে তার পাশে থাকব।’
গুজব, ষড়যন্ত্র, গোপন নীল-নকশার ইতি ঘটিয়ে এ দিন জানানো হয় প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস পদত্যাগ করছেন না। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে থাকছেন। অন্য উপদেষ্টারাও থাকছেন। আমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমরা সে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি।’ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর গত বছর ৮ আগস্ট অন্তর্র্বর্তী সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়, তখন কেউ ভাবতে পারেননি যে সাড়ে ৯ মাসের মাথায় তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব বেড়ে যাবে। এ সরকারের ভিত্তি ছিল সশস্ত্র বাহিনী, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দলের সমর্থন। সমর্থন ছিল খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের, যারা কোনও পদ চাননি, চেয়েছেন দেশটি ভালোভাবে চলুক। প্রথম কয়েক মাস রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে অন্তর্র্বর্তী সরকারের একটা সমঝোতামূলক সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে দূরত্ব বাড়তে থাকে।
অতি সম্প্রতি সেনাকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্যে বোঝা যায়, সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গেও অন্তর্র্বর্তী সরকারের দূরত্ব বেড়েছে। তিনি বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের ‘অন্ধকারে’ রেখে। এর ফলে দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় ইউনূসের পদত্যাগের জল্পনা বাড়তে থাকে আরও। ছাত্র উপদেষ্টারাও দেশ ছেড়ে ইউনূসের সঙ্গে পালিয়ে যাচ্ছেন, গুজব রটান অনেকে।
এই প্রেক্ষিতে শনিবার দুপুরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানান, পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের জন্য প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হচ্ছে বলে মনে করছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনের সকল কারণ জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি। দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এ দেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করে উপদেষ্টা পরিষদ।
এ বিষয়ে অন্তর্র্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য শুনবে এবং সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবে। সেইমতো এ দিন সন্ধ্যার পর বিএনপি, এনসিপি, জামায়াতের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনায় বসেন ড. ইউনূস। শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপির চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অন্য তিনজন হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আধুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরি ও সালাহউদ্দিন আহমদ।
জামায়াতের নেতৃত্ব দেন শফিকুর রহমান। অন্যদিকে এনসিপির পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন নাহিদ ইসলাম। পাশাপাশি, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রবিবারও বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা এ বৈঠক ডেকেছেন বলে জানা গেছে। বৈঠকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা সব রাজনৈতিক দলের একজন করে প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রবিবার এই সর্বদলীয় বৈঠকের পর বাংলাদেশের জনতার উদ্দেশে ভাষণ প্রদান ও আগামীর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন ড. ইউনূস। সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ সামনে আনতে চলেছে।