০২ মে ২০২৫, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্রিজ বিপর্যয়ের মধ্যেই ভোটের মুখে বড় চমক বিজেপির, বাংলাদেশ সহ তিন দেশের অমুসলিমদের নাগরিত্ব দেবে ভারত

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১ নভেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার
  • / 16

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ভোটের মুখেই ফের গুজরাতের মানুষের জন্য নয়া চমক দিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার। এবার বাংলাদেশ সহ তিন দেশের অমুসলিমদের নাগরিত্ব দেবে ভারত।বাংলাদেশ ছাড়া অপর দুটি দেশ হল পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। সোমবার, ৩১ অক্টোবর এই নির্দেশ জারি করেছে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) কার্যকর না হওয়ায় ‘নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫’-এর আওতায় এ পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। জানা গেছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যাওয়া হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও জৈন সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গুজরাতের মেহসানা ও আনন্দ জেলায় বসবাসকারী অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকদের।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, গুজরাটের আনন্দ এবং মেহসানা জেলায় বসবাসকারী হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টানদের পাঁচ নম্বর ধারায় ভারতের নাগরিক হিসাবে নিজেদের নাম নিবন্ধনের অ নুমতি দেওয়া হবে অথবা ১৯৫৫ এর ছয় নম্বর ধারায় তাদেরকে ন্যাচেরালাইজেশনের শংসাপত্র দেওয়া হবে। একই সঙ্গে নাগরিকত্ব বিধি, ২০০৯ এর বিধান মানা হবে।

গুজরাতের এই দুটি জেলায় বসবাসকারী এই ধরনের মানুষদের তাদের আবেদনগুলি অনলাইনে জমা দিতে হবে। এর পর জেলা পর্যায়ে কালেক্টর যাচাই করে দেখবেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আবেদন এবং তার রিপোর্টগুলি একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনলাইনে অ্যাক্সেসযোগ্য করা হবে।

বিজেপি শাসিত গুজরাত রাজ্যে আগামী বছর বিধানসভা ভোট। সেই ভোটের আগে প্রতিবেশী তিন দেশের অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তর পেছনে রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই ইস্যুতে এরই মধ্যে প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিজেপি বিরোধী কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট।

ভারতজুড়ে এনআরসি-সিএএ আইন পাস হলেও রাজ্যে অবিজেপি সরকারের তীব্র বাধার মুখে এখনো সেই আইন বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার।
উল্লেখ্য, গত বছর থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু করে মোদি সরকার।

এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি গুজরাত, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের মোট ১৩টি জেলায় বসবাসরত অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব পেতে আবেদনের নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। সেখানে অবিলম্বে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন এবং ২০০৯ সালের নিয়ম অনুযায়ী এই নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়।

কারণ ২০১৯ সালে আইনে পরিণত হলেও এখন পর্যন্ত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন সংক্রান্ত নিয়ম প্রণয়ন করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। মোদি সরকারের আবেদনে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিএএ কার্যকর করার সময়সীমা বৃদ্ধি করেছে রাজ্যসভা। ২০২৩ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত তা বাড়িয়েছে লোকসভার সংসদীয় কমিটি।

২০১৯ সালে ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাস হয়। এতে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে যেসব হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পারসি ও খ্রিস্টান অর্থাৎ অমুসলিমরা উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা সবাই ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন।

গুজরাতে ব্রিজ বিপর্যয়ের মধ্যে কেন্দ্র সরকারের ফের সিএএ প্রসঙ্গ উত্থাপন নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিল। গুজরাতের পাশাপাশি আগামী বছর ত্রিপুরাসহ দক্ষিণ ভারতের কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা ভোট। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গুজরাতে অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়া শুরু হলে বিজেপি সরকার অন্য রাজ্যগুলোতে সেটা চালু করতে চাইবে। ফলে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ব্রিজ বিপর্যয়ের মধ্যেই ভোটের মুখে বড় চমক বিজেপির, বাংলাদেশ সহ তিন দেশের অমুসলিমদের নাগরিত্ব দেবে ভারত

আপডেট : ১ নভেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ভোটের মুখেই ফের গুজরাতের মানুষের জন্য নয়া চমক দিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার। এবার বাংলাদেশ সহ তিন দেশের অমুসলিমদের নাগরিত্ব দেবে ভারত।বাংলাদেশ ছাড়া অপর দুটি দেশ হল পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। সোমবার, ৩১ অক্টোবর এই নির্দেশ জারি করেছে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) কার্যকর না হওয়ায় ‘নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫’-এর আওতায় এ পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। জানা গেছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যাওয়া হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও জৈন সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গুজরাতের মেহসানা ও আনন্দ জেলায় বসবাসকারী অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকদের।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, গুজরাটের আনন্দ এবং মেহসানা জেলায় বসবাসকারী হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টানদের পাঁচ নম্বর ধারায় ভারতের নাগরিক হিসাবে নিজেদের নাম নিবন্ধনের অ নুমতি দেওয়া হবে অথবা ১৯৫৫ এর ছয় নম্বর ধারায় তাদেরকে ন্যাচেরালাইজেশনের শংসাপত্র দেওয়া হবে। একই সঙ্গে নাগরিকত্ব বিধি, ২০০৯ এর বিধান মানা হবে।

গুজরাতের এই দুটি জেলায় বসবাসকারী এই ধরনের মানুষদের তাদের আবেদনগুলি অনলাইনে জমা দিতে হবে। এর পর জেলা পর্যায়ে কালেক্টর যাচাই করে দেখবেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আবেদন এবং তার রিপোর্টগুলি একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনলাইনে অ্যাক্সেসযোগ্য করা হবে।

বিজেপি শাসিত গুজরাত রাজ্যে আগামী বছর বিধানসভা ভোট। সেই ভোটের আগে প্রতিবেশী তিন দেশের অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তর পেছনে রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই ইস্যুতে এরই মধ্যে প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিজেপি বিরোধী কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট।

ভারতজুড়ে এনআরসি-সিএএ আইন পাস হলেও রাজ্যে অবিজেপি সরকারের তীব্র বাধার মুখে এখনো সেই আইন বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার।
উল্লেখ্য, গত বছর থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু করে মোদি সরকার।

এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি গুজরাত, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের মোট ১৩টি জেলায় বসবাসরত অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব পেতে আবেদনের নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। সেখানে অবিলম্বে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন এবং ২০০৯ সালের নিয়ম অনুযায়ী এই নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়।

কারণ ২০১৯ সালে আইনে পরিণত হলেও এখন পর্যন্ত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন সংক্রান্ত নিয়ম প্রণয়ন করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। মোদি সরকারের আবেদনে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিএএ কার্যকর করার সময়সীমা বৃদ্ধি করেছে রাজ্যসভা। ২০২৩ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত তা বাড়িয়েছে লোকসভার সংসদীয় কমিটি।

২০১৯ সালে ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাস হয়। এতে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে যেসব হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পারসি ও খ্রিস্টান অর্থাৎ অমুসলিমরা উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা সবাই ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন।

গুজরাতে ব্রিজ বিপর্যয়ের মধ্যে কেন্দ্র সরকারের ফের সিএএ প্রসঙ্গ উত্থাপন নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিল। গুজরাতের পাশাপাশি আগামী বছর ত্রিপুরাসহ দক্ষিণ ভারতের কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা ভোট। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গুজরাতে অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়া শুরু হলে বিজেপি সরকার অন্য রাজ্যগুলোতে সেটা চালু করতে চাইবে। ফলে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।