২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতে খ্রিস্টানদের ওপরে চলা নির্যাতনের রিপোর্ট পেশ করল ফিয়াকোনা ও ইউসিএফ 

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ  ভারতে খ্রিস্টানদের ওপরে ঘটে চলা ভয়াবহ সহিংসতার রিপোর্ট পেশ করল ফিয়াকোনা ও ইউসিএফ। এর মধ্যে রয়েছে মারধর, প্রার্থনা সভায় হেনস্থা, জোর করে ধর্মান্তকরণ, পিটিয়ে খুনের মতো ঘটনা।২০২১ সালে ঘটে চলা নির্যাতনের তথ্য অনুযায়ী ভারতে খ্রিস্টানদের ওপরে ৭৬১টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এমনই রিপোর্ট দিয়েছে ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান আমেরিকান খ্রিস্টান অর্গানাইজেশনস অফ নর্থ আমেরিকা (ফিয়াকোনা)। পিটিয়ে খুন সহ একাধিক সশস্ত্র হামলার ঘটনায় ৭৬১টি তথ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক ঘটনা প্রমাণের অভাবে নথিভুক্ত করা যায়নি।

ফিয়াকোনা’র চেয়ারম্যান জন প্রভুদোস ওয়াশিংটনে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ২০২১ সালটি প্রমাণ করেছে এটি ভারতে খ্রিস্টানদের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বছর ছিল। এই ঘটনাগুলির নেপথ্যের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জন প্রভুদোস বলেন, ভারতে খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের পুলিশের ওপরে কোনও আস্থা নেই। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে এই অবস্থা আরও করুণ। আর ভারতের বর্তমান প্রতিকূল পরিবেশ সেই অবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

আরও পড়ুন: ভেহিকল মার্ক-৩ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ, মহাকাশে ক্ষমতা দেখাল ভারত

ফিয়াকোনা’র চেয়ারম্যান জন প্রভুদোস বলেন, সমীক্ষা অনুযায়ী ৭২ শতাংশ খ্রিস্টান বিশ্বাস করেন, পুলিশ তাদের কোনও নিরাপত্তা দেবে না। তাদের জীবন, স্বাধীনতা, সম্পত্তি বা জীবনযাত্রার সুরক্ষা তারা প্রশাসনের কাছ থেকে পাবে না।  ফিয়াকোনা’র তথ্য অনুযায়ী ভারতে নিরপেক্ষ বিচার হয় না। ভারতের বিচার বিভাগকেও স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হিসেবে দেখা হয় না। ভারতের উচ্চ আদালত মামলার আইনি যোগ্যতার ভিত্তিতে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মতামতের পক্ষে রায় দেয়। বর্তমানে বহু বিচারে সেই প্রভাব সামনে এসেছে।

আরও পড়ুন: সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই ভারত সবসময় সমর্থন করবে: সিডনির হামলায় আলবানিজের পাশে মোদি

এমনকী দেখা গেছে, মামলায় রায় দেওয়ার সময় আদালতকে আপোস করতে হয়েছে।ভারতের সাধারণ নাগরিক বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অনুভব করে যে বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারগুলি ‘হিন্দুত্ব’ নামে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী আদর্শ বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ও একই ছাতার তলায় থাকা হিন্দু জাতীয়তাবাদী সহ একাধিক সহযোগী গোষ্ঠী দ্বারা খ্রিস্টান সহ সংখ্যালঘুদের ওপরে নির্যাতনের যে ঘটনা সামনে এসেছে তা ভয়ঙ্কর। এমনকী ফেসবুক ও ট্যুইটারের মতো সোশ্যাল মাধ্যমগুলিকে হাতিয়ার করে ধর্মীয় উসকানিতে কাজে লাগানো হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, “ধর্মান্তকরণ বিরোধী” আইনগুলি জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণের মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে খ্রিস্টান সহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের গ্রেফতার করার একটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

আরও পড়ুন: রাশিয়াকে পেছনে ফেলে বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী দেশ ভারত, রিপোর্ট এশিয়া পাওয়ার ইনডেক্সের

ইউনাইডেট খ্রিস্টান ফোরাম (ইউসিএফ)-এর তথ্য অনুসারে ২০২১ সালে ভারতে খ্রিস্টানদের উপরে নথিভুক্ত সংহিসতার ঘটনা ঘটেছে ৪৮৬টি। এর মধ্যে পুলিশ মাত্র ৩৪টি মামলা নথিভুক্ত করেছে।   ইউসিএফ-এর তথ্য অনুসারে সহিংসতার ঘটনাগুলির মধ্যে রয়েছে, প্রাণনাশের হুমকি, প্রার্থনা সভাতে হেনস্থা, জোর করে ধর্মান্তকরণ করা। হিন্দু চরমপন্থীরা বিশ্বাস করে যে সমস্ত ভারতীয়দের হিন্দু হওয়া উচিত এবং দেশটিকে খ্রিস্টান ও ইসলাম থেকে মুক্ত করা উচিত। হিন্দু জাতীয়বাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে ভারতে একশ্রেণির মিডিয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ ও সম্প্রচারণ করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সর্বধিক পাঠিত

ওডিশায় পরিযায়ী শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, ক্ষোভে ফুঁসছে মুর্শিদাবাদ; সরব তৃণমূল

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ভারতে খ্রিস্টানদের ওপরে চলা নির্যাতনের রিপোর্ট পেশ করল ফিয়াকোনা ও ইউসিএফ 

আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২২, মঙ্গলবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ  ভারতে খ্রিস্টানদের ওপরে ঘটে চলা ভয়াবহ সহিংসতার রিপোর্ট পেশ করল ফিয়াকোনা ও ইউসিএফ। এর মধ্যে রয়েছে মারধর, প্রার্থনা সভায় হেনস্থা, জোর করে ধর্মান্তকরণ, পিটিয়ে খুনের মতো ঘটনা।২০২১ সালে ঘটে চলা নির্যাতনের তথ্য অনুযায়ী ভারতে খ্রিস্টানদের ওপরে ৭৬১টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এমনই রিপোর্ট দিয়েছে ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান আমেরিকান খ্রিস্টান অর্গানাইজেশনস অফ নর্থ আমেরিকা (ফিয়াকোনা)। পিটিয়ে খুন সহ একাধিক সশস্ত্র হামলার ঘটনায় ৭৬১টি তথ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক ঘটনা প্রমাণের অভাবে নথিভুক্ত করা যায়নি।

ফিয়াকোনা’র চেয়ারম্যান জন প্রভুদোস ওয়াশিংটনে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ২০২১ সালটি প্রমাণ করেছে এটি ভারতে খ্রিস্টানদের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বছর ছিল। এই ঘটনাগুলির নেপথ্যের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জন প্রভুদোস বলেন, ভারতে খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের পুলিশের ওপরে কোনও আস্থা নেই। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে এই অবস্থা আরও করুণ। আর ভারতের বর্তমান প্রতিকূল পরিবেশ সেই অবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

আরও পড়ুন: ভেহিকল মার্ক-৩ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ, মহাকাশে ক্ষমতা দেখাল ভারত

ফিয়াকোনা’র চেয়ারম্যান জন প্রভুদোস বলেন, সমীক্ষা অনুযায়ী ৭২ শতাংশ খ্রিস্টান বিশ্বাস করেন, পুলিশ তাদের কোনও নিরাপত্তা দেবে না। তাদের জীবন, স্বাধীনতা, সম্পত্তি বা জীবনযাত্রার সুরক্ষা তারা প্রশাসনের কাছ থেকে পাবে না।  ফিয়াকোনা’র তথ্য অনুযায়ী ভারতে নিরপেক্ষ বিচার হয় না। ভারতের বিচার বিভাগকেও স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হিসেবে দেখা হয় না। ভারতের উচ্চ আদালত মামলার আইনি যোগ্যতার ভিত্তিতে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মতামতের পক্ষে রায় দেয়। বর্তমানে বহু বিচারে সেই প্রভাব সামনে এসেছে।

আরও পড়ুন: সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই ভারত সবসময় সমর্থন করবে: সিডনির হামলায় আলবানিজের পাশে মোদি

এমনকী দেখা গেছে, মামলায় রায় দেওয়ার সময় আদালতকে আপোস করতে হয়েছে।ভারতের সাধারণ নাগরিক বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অনুভব করে যে বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারগুলি ‘হিন্দুত্ব’ নামে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী আদর্শ বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ও একই ছাতার তলায় থাকা হিন্দু জাতীয়তাবাদী সহ একাধিক সহযোগী গোষ্ঠী দ্বারা খ্রিস্টান সহ সংখ্যালঘুদের ওপরে নির্যাতনের যে ঘটনা সামনে এসেছে তা ভয়ঙ্কর। এমনকী ফেসবুক ও ট্যুইটারের মতো সোশ্যাল মাধ্যমগুলিকে হাতিয়ার করে ধর্মীয় উসকানিতে কাজে লাগানো হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, “ধর্মান্তকরণ বিরোধী” আইনগুলি জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণের মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে খ্রিস্টান সহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের গ্রেফতার করার একটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

আরও পড়ুন: রাশিয়াকে পেছনে ফেলে বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী দেশ ভারত, রিপোর্ট এশিয়া পাওয়ার ইনডেক্সের

ইউনাইডেট খ্রিস্টান ফোরাম (ইউসিএফ)-এর তথ্য অনুসারে ২০২১ সালে ভারতে খ্রিস্টানদের উপরে নথিভুক্ত সংহিসতার ঘটনা ঘটেছে ৪৮৬টি। এর মধ্যে পুলিশ মাত্র ৩৪টি মামলা নথিভুক্ত করেছে।   ইউসিএফ-এর তথ্য অনুসারে সহিংসতার ঘটনাগুলির মধ্যে রয়েছে, প্রাণনাশের হুমকি, প্রার্থনা সভাতে হেনস্থা, জোর করে ধর্মান্তকরণ করা। হিন্দু চরমপন্থীরা বিশ্বাস করে যে সমস্ত ভারতীয়দের হিন্দু হওয়া উচিত এবং দেশটিকে খ্রিস্টান ও ইসলাম থেকে মুক্ত করা উচিত। হিন্দু জাতীয়বাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে ভারতে একশ্রেণির মিডিয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ ও সম্প্রচারণ করে বলে অভিযোগ উঠেছে।