২৫ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আল-আকসা ধ্বংসের ছক: জেরুসালেমের ইতিহাস মুছতে ইসরাইলের নতুন ষড়যন্ত্র

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার
  • / 151

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: জেরুসালেমের হৃদয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আল-আকসা মসজিদ; ইসলামী ঐতিহ্যের এক অমূল্য প্রতীক। নবী মুহাম্মদ সা.-এর মিরাজের স্মৃতিবাহী এই পবিত্র স্থান কেবল মুসলমানদের নয়, বরং সমগ্র মানবসভ্যতার ইতিহাসে আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষী।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরাইলি দখলদার প্রশাসন যেভাবে এই পবিত্র স্থানের নিচে গোপনে খননকাজ চালাচ্ছে, তাতে আশঙ্কা বাড়ছে; এ যেন ধীরে ধীরে আল-আকসা মসজিদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার পরিকল্পনা। ফিলিস্তিনি সংবাদসংস্থা ওয়াফা-র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জেরুসালেম গভর্নরেটের উপদেষ্টা মারুফ আল-রিফাই সতর্ক করে বলেছেন, আল-আকসা মসজিদের নিচে এবং পুরনো জেরুসালেম নগরের আশপাশে ইসরাইলি খননকাজ ‘ধ্বংসের পূর্বাভাস’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি জানান, এই কাজগুলো তথাকথিত ‘সিটি অব ডেভিড’ নামের উপনিবেশিক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত, যার লক্ষ্য মুসলিম ও খ্রিস্টান ঐতিহ্যকে মুছে দিয়ে পুরো পুরনো শহরটিকে ‘ইহুদি ঐতিহ্যের কেন্দ্র’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

আল-রিফাই আরও বলেন, শতাধীপ্রাচীন জল চলাচলের নালা ও গুহাগুলো শুকিয়ে ফেলে সেখানে কৃত্রিম সুড়ঙ্গ, জাদুঘর ও সিনাগগ তৈরি করা হচ্ছে। একসময়কার ঐতিহাসিক জাব্বানা মার্কেটকে রূপান্তর করা হয়েছে তথাকথিত ‘ইহুদি পর্যটন পথ’-এ। এ সব সুড়ঙ্গ আল-আকসার মাটির নিচে প্রবাহিত হয়ে এর ভিত্তি দুর্বল করছে। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, ‘এই খননকাজ কোনও বৈজ্ঞানিক মানদণ্ড অনুসারে নয়; এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

বিশ্লেষকদের মতে, এটি ইসরাইলের দীর্ঘমেয়াদি ‘জুডাইজেশন প্রজেক্ট’-এরই অংশ; যার উদ্দেশ্য ফিলিস্তিনের ইসলামি পরিচয় মুছে দিয়ে জেরুসালেমকে ‘ইহুদি রাজধানী’ হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করা। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ছাড়া, গোপনে বা আধা-গোপনে চলা এ সব কার্যক্রম সরাসরি আন্তর্জাতিক আইন এবং ধর্মীয় স্থানের সুরক্ষা চুক্তির লঙ্ঘন। আল-আকসা আজ শুধু একটি মসজিদ নয়; এটি দখল, প্রতিরোধ ও অস্তিত্বের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ইসরাইলি প্রশাসনের এই কর্মকাণ্ড থামানো না গেলে একদিন হয়তো মানবসভ্যতার এক অমূল্য ধর্মীয় ঐতিহ্য ইতিহাসের গর্ভে হারিয়ে যাবে।

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

আল-আকসা ধ্বংসের ছক: জেরুসালেমের ইতিহাস মুছতে ইসরাইলের নতুন ষড়যন্ত্র

আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: জেরুসালেমের হৃদয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আল-আকসা মসজিদ; ইসলামী ঐতিহ্যের এক অমূল্য প্রতীক। নবী মুহাম্মদ সা.-এর মিরাজের স্মৃতিবাহী এই পবিত্র স্থান কেবল মুসলমানদের নয়, বরং সমগ্র মানবসভ্যতার ইতিহাসে আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষী।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরাইলি দখলদার প্রশাসন যেভাবে এই পবিত্র স্থানের নিচে গোপনে খননকাজ চালাচ্ছে, তাতে আশঙ্কা বাড়ছে; এ যেন ধীরে ধীরে আল-আকসা মসজিদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার পরিকল্পনা। ফিলিস্তিনি সংবাদসংস্থা ওয়াফা-র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জেরুসালেম গভর্নরেটের উপদেষ্টা মারুফ আল-রিফাই সতর্ক করে বলেছেন, আল-আকসা মসজিদের নিচে এবং পুরনো জেরুসালেম নগরের আশপাশে ইসরাইলি খননকাজ ‘ধ্বংসের পূর্বাভাস’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি জানান, এই কাজগুলো তথাকথিত ‘সিটি অব ডেভিড’ নামের উপনিবেশিক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত, যার লক্ষ্য মুসলিম ও খ্রিস্টান ঐতিহ্যকে মুছে দিয়ে পুরো পুরনো শহরটিকে ‘ইহুদি ঐতিহ্যের কেন্দ্র’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

আল-রিফাই আরও বলেন, শতাধীপ্রাচীন জল চলাচলের নালা ও গুহাগুলো শুকিয়ে ফেলে সেখানে কৃত্রিম সুড়ঙ্গ, জাদুঘর ও সিনাগগ তৈরি করা হচ্ছে। একসময়কার ঐতিহাসিক জাব্বানা মার্কেটকে রূপান্তর করা হয়েছে তথাকথিত ‘ইহুদি পর্যটন পথ’-এ। এ সব সুড়ঙ্গ আল-আকসার মাটির নিচে প্রবাহিত হয়ে এর ভিত্তি দুর্বল করছে। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, ‘এই খননকাজ কোনও বৈজ্ঞানিক মানদণ্ড অনুসারে নয়; এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

বিশ্লেষকদের মতে, এটি ইসরাইলের দীর্ঘমেয়াদি ‘জুডাইজেশন প্রজেক্ট’-এরই অংশ; যার উদ্দেশ্য ফিলিস্তিনের ইসলামি পরিচয় মুছে দিয়ে জেরুসালেমকে ‘ইহুদি রাজধানী’ হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করা। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ছাড়া, গোপনে বা আধা-গোপনে চলা এ সব কার্যক্রম সরাসরি আন্তর্জাতিক আইন এবং ধর্মীয় স্থানের সুরক্ষা চুক্তির লঙ্ঘন। আল-আকসা আজ শুধু একটি মসজিদ নয়; এটি দখল, প্রতিরোধ ও অস্তিত্বের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ইসরাইলি প্রশাসনের এই কর্মকাণ্ড থামানো না গেলে একদিন হয়তো মানবসভ্যতার এক অমূল্য ধর্মীয় ঐতিহ্য ইতিহাসের গর্ভে হারিয়ে যাবে।