২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘তাঁবু মসজিদ’ কি চিরকালই তাঁবু হয়েই থাকবে!

রমযানের তৃতীয় জুম্মায় যাদবপুরে তাঁবু মসজিদে নামাযরত মুসল্লিরা

আহমদ হাসান ইমরান : ভারত কিন্তু আরব নয়। যদিও রবীন্দ্রনাথ বেদুইন হতে চেয়েছিলেন, (ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন) কিন্তু স্বাভাবিক কারণে হতে পারেননি। ভারতে থর মরুভূমি আছে। সেখানেও কিন্তু ‘তাঁবু মসজিদ’ নেই। তবে সত্যি সত্যি দেশে একটি ‘তাঁবু মসজিদ’ রয়েছে। আর সেটির অবস্থান খোদ কলকাতারই যাদবপুরে।

মসজিদটি রয়েছে যাদবপুরে অবস্থিত কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের বিস্তৃত এলাকার এককোনে। সত্যি সত্যি নিভৃত এক কোনে। এখানেই এককালের একটি ঈদগাহ-র মধ্যে রয়েছে এই ‘তাঁবু মসজিদ’। আসলে এই এলাকাটির অধিবাসীদের মধ্যে এক সময় ছিল ৫০ শতাংশ মুসলিমের বাস। তারপর দেশভাগ, ৬৪’র দাঙ্গা আরও কত কী। এই জায়গাগুলিতে একসময় গড়ে উঠেছিল একটি টিবি হাসপাতাল। পরবর্তীতে তা কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে হাসপাতাল ও কলেজ গড়ার জন্য রাজ্য সরকার হস্তান্তর করে।

আরও পড়ুন: ভারত থেকে আমেরিকার আয় কত? ট্রাম্পের দাবি ভুয়ো, জানাচ্ছে রিপোর্ট

এই কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে একটি এলাকায় ছিল ঈদগাহ ও অন্যান্য মুসলিম স্থাপনা। এখনও রেল লাইনের ওপারে অবস্থিত ছোট্ট একটি মুসলিম পাড়ার একটি পরিবার দাবি করেন, কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের অভ্যন্তরে তাদের কিছু ওয়াকফ সম্পত্তিও রয়েছে। কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের ঈদগাহ-র মধ্যে ওই পাড়ার খুরশিদ আলম অন্তত ৩০ বছর আগে এখানে নামায পড়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু কেপিসি কর্তৃপক্ষ খুরশিদদের দাবিকে মানেননি। তাঁরা থানা পুলিশও করেন।

আরও পড়ুন: ভারত ও চিনের প্রশংসা করলেন পুতিন

ওই এলাকায় কোনও মসজিদ নেই। ফলে কেপিসি কলেজ পার্শ্ববর্তী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মুসলিম পড়ুয়া ও অধ্যাপকরা রয়েছেন তাঁদের ওই এলাকার নামায পড়ার কোনও বিকল্প ব্যবস্থা নেই। তাঁরা নামায পড়ার জন্য এই মসজিদেই চলে আসেন।
বলা হয়নি, ওই ঈদগাহ-তেই ওয়াকফ সম্পত্তির দাবিদারা একটি ‘তাঁবু মসজিদ’ প্রতিষ্ঠা করেছেন বহু বছর হল। কারণ, কেপিসি কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে সেখানে কোনও মসজিদের স্থায়ী কাঠামো করা যায়নি।

আরও পড়ুন: জাপানে দুই দিনের গুরুত্বপূর্ণ সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

 

ফলে তাঁরা পলিথিন ও অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করে এই ‘তাঁবু মসজিদ’ বেশকিছু বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র-অধ্যাপকরা ছাড়াও ৮টি বাসস্ট্যান্ডের কাছে যেসমস্ত মুসলিম হকার ও দোকানদাররা রয়েছেন তাঁরাও নামায আদায় করার জন্য আসেন। বিশেষ করে জুম্মা ও রমযান মাসে। তবে এখানে ৫ ওয়াক্তই নামায হয়। রয়েছেন ইমাম সাহেবও। বড় বড় ড্রামে ভরে ওযুর জন্য প্রতিদিন রিকশায় করে পানি নিয়ে আসা হয়।

 

কারণ, কেপিসি কর্তৃপক্ষ মসজিদের পাশে ওযু করার জন্য পানির নল বলাতে দেননি। বৃষ্টি হলে নামায আদায়ের জায়গায় তাঁবু চুঁয়ে পানি পড়ে। কিন্তু তবুও তাঁবু মসজিদের উদ্যোক্তা এবং নামায আদায়কারীদের উৎসাহে কোনও ভাটা পড়েনি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে এই জুম্মাবারে তাঁবু মসজিদে নামায আদায়কারীদের ভিড়। ছবি দেখে বোঝা যাবে কত কষ্ট করে মুসল্লীরা নামায আদায় করছেন।বাদবিবাদ ভুলে কেপিসি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে যদি এই ছোট্ট জায়গাটিতে প্রার্থনার জন্য একটি স্থায়ী কাঠামো করা যেত, তাহলে বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আর একটি নজির বিশ্বের কাছে তুলে ধরা যেত।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.
সর্বধিক পাঠিত

ওডিশায় এনকাউন্টারে খতম শীর্ষ মাও নেতা, দ্বিতীয় এনকাউন্টারে নিহত আরও ৪ সদস্য

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

‘তাঁবু মসজিদ’ কি চিরকালই তাঁবু হয়েই থাকবে!

আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২২, রবিবার

আহমদ হাসান ইমরান : ভারত কিন্তু আরব নয়। যদিও রবীন্দ্রনাথ বেদুইন হতে চেয়েছিলেন, (ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন) কিন্তু স্বাভাবিক কারণে হতে পারেননি। ভারতে থর মরুভূমি আছে। সেখানেও কিন্তু ‘তাঁবু মসজিদ’ নেই। তবে সত্যি সত্যি দেশে একটি ‘তাঁবু মসজিদ’ রয়েছে। আর সেটির অবস্থান খোদ কলকাতারই যাদবপুরে।

মসজিদটি রয়েছে যাদবপুরে অবস্থিত কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের বিস্তৃত এলাকার এককোনে। সত্যি সত্যি নিভৃত এক কোনে। এখানেই এককালের একটি ঈদগাহ-র মধ্যে রয়েছে এই ‘তাঁবু মসজিদ’। আসলে এই এলাকাটির অধিবাসীদের মধ্যে এক সময় ছিল ৫০ শতাংশ মুসলিমের বাস। তারপর দেশভাগ, ৬৪’র দাঙ্গা আরও কত কী। এই জায়গাগুলিতে একসময় গড়ে উঠেছিল একটি টিবি হাসপাতাল। পরবর্তীতে তা কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে হাসপাতাল ও কলেজ গড়ার জন্য রাজ্য সরকার হস্তান্তর করে।

আরও পড়ুন: ভারত থেকে আমেরিকার আয় কত? ট্রাম্পের দাবি ভুয়ো, জানাচ্ছে রিপোর্ট

এই কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে একটি এলাকায় ছিল ঈদগাহ ও অন্যান্য মুসলিম স্থাপনা। এখনও রেল লাইনের ওপারে অবস্থিত ছোট্ট একটি মুসলিম পাড়ার একটি পরিবার দাবি করেন, কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের অভ্যন্তরে তাদের কিছু ওয়াকফ সম্পত্তিও রয়েছে। কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের ঈদগাহ-র মধ্যে ওই পাড়ার খুরশিদ আলম অন্তত ৩০ বছর আগে এখানে নামায পড়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু কেপিসি কর্তৃপক্ষ খুরশিদদের দাবিকে মানেননি। তাঁরা থানা পুলিশও করেন।

আরও পড়ুন: ভারত ও চিনের প্রশংসা করলেন পুতিন

ওই এলাকায় কোনও মসজিদ নেই। ফলে কেপিসি কলেজ পার্শ্ববর্তী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মুসলিম পড়ুয়া ও অধ্যাপকরা রয়েছেন তাঁদের ওই এলাকার নামায পড়ার কোনও বিকল্প ব্যবস্থা নেই। তাঁরা নামায পড়ার জন্য এই মসজিদেই চলে আসেন।
বলা হয়নি, ওই ঈদগাহ-তেই ওয়াকফ সম্পত্তির দাবিদারা একটি ‘তাঁবু মসজিদ’ প্রতিষ্ঠা করেছেন বহু বছর হল। কারণ, কেপিসি কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে সেখানে কোনও মসজিদের স্থায়ী কাঠামো করা যায়নি।

আরও পড়ুন: জাপানে দুই দিনের গুরুত্বপূর্ণ সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

 

ফলে তাঁরা পলিথিন ও অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করে এই ‘তাঁবু মসজিদ’ বেশকিছু বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র-অধ্যাপকরা ছাড়াও ৮টি বাসস্ট্যান্ডের কাছে যেসমস্ত মুসলিম হকার ও দোকানদাররা রয়েছেন তাঁরাও নামায আদায় করার জন্য আসেন। বিশেষ করে জুম্মা ও রমযান মাসে। তবে এখানে ৫ ওয়াক্তই নামায হয়। রয়েছেন ইমাম সাহেবও। বড় বড় ড্রামে ভরে ওযুর জন্য প্রতিদিন রিকশায় করে পানি নিয়ে আসা হয়।

 

কারণ, কেপিসি কর্তৃপক্ষ মসজিদের পাশে ওযু করার জন্য পানির নল বলাতে দেননি। বৃষ্টি হলে নামায আদায়ের জায়গায় তাঁবু চুঁয়ে পানি পড়ে। কিন্তু তবুও তাঁবু মসজিদের উদ্যোক্তা এবং নামায আদায়কারীদের উৎসাহে কোনও ভাটা পড়েনি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে এই জুম্মাবারে তাঁবু মসজিদে নামায আদায়কারীদের ভিড়। ছবি দেখে বোঝা যাবে কত কষ্ট করে মুসল্লীরা নামায আদায় করছেন।বাদবিবাদ ভুলে কেপিসি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে যদি এই ছোট্ট জায়গাটিতে প্রার্থনার জন্য একটি স্থায়ী কাঠামো করা যেত, তাহলে বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আর একটি নজির বিশ্বের কাছে তুলে ধরা যেত।