২২ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার, ৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২০ বছর কোমায় ছিলেন তিনি

ইন্তেকাল করলেন সউদির ‘ঘুমন্ত যুবরাজ’ , শোকের ছায়া রাজপরিবারে

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৫, রবিবার
  • / 211

২০ বছর কোমায় থাকার পর ইন্তেকাল করলেন সউদির ঘুমন্ত যুবরাজ

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: প্রায় ২০ বছর কোমায় থাকার পর ইন্তেকাল করলেন সউদি আরবের ‘ঘুমন্ত যুবরাজ’ তথা প্রিন্স আল-ওয়ালিদ বিন খালেদ বিন তালাল (ইন্না লিল্লাহি)।  শনিবার (১৯ জুলাই) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে তার বাবা প্রিন্স খালেদ বিন তালাল।

২০০৫ সালে লন্ডনে গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হন ১৫ বছর বয়সী প্রিন্স আল-ওয়ালিদ। এতে তার মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত পায় ও অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়। সেই সময় লন্ডনে সামরিক ক্যাডেট হিসেবে পড়াশোনা করছিলেন আল-ওয়ালিদ।

দুর্ঘটনার পর থেকেই হাসপাতালে কোমায় ছিলেন আল-ওয়ালিদ। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে কোমায় ছিলেন তিনি। যেই কারণে তাঁকে ‘SLEEPING PRINCE’ বা ঘুমন্ত ‘ঘুমন্ত যুবরাজ’ও বলা হয়ে থাকে। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এদিন দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে আল্লাহর উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন তিনি। যদিও পাঁচ বছর আগে আল-ওয়ালিদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক ভিডিয়োতে দেখা যায়, কোমায় থাকা অবস্থায় তিনি আঙুল নাড়াচ্ছেন। এ থেকে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আশা করা হচ্ছিল। তবে হাজার চেষ্টা করেও পরবর্তীতে কোনও লাভ হয়নি।

‘স্লিপিং প্রিন্স’-এর জন্য বিশ্বের সেরা মার্কিন এবং স্প্যানিশ স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পর্যন্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউ’ই তার জ্ঞান ফেরাতে পারেন নি। সউদি রাজপরিবারের একজন বিশিষ্ট সদস্য প্রিন্স খালিদ বিন তালাল তার ছেলের অবস্থাতেও কখনও হতাশ হননি। হাল ছাড়েন নি।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বারবার তাকে ‘ঘুমন্ত রাজপুত্র’কে ভেন্টিলেটর থেকে সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তাদের কথা শোনেননি। তিনি বলেছিলেন যে আল্লাহ’ই জীবনদাতা এবং গ্রহণকারী। একজন পিতা হিসেবে তার অটল বিশ্বাস এবং নিষ্ঠা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। বছরের পর বছর ধরে, তিনি প্রতিদিন তার ছেলের পাশে বসে প্রার্থনা করতেন।

জানা গেছে, রবিবার বাদ আসর রাজধানী রিয়াদে ইমাম তুর্কি বিন আবদুল্লাহ মসজিদে আল ওয়ালিদের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

 

এদিকে রাজপুত্রের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।  সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্লিপিং প্রিন্স হ্যাশট্যাগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ধৈর্য, বিশ্বাস ও মা-বাবার অনন্য ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে হাজারো মানুষ আল ওয়ালিদের মৃত্যুকে স্মরণ করছেন। আল ওয়ালিদের বাবা প্রিন্স খালেদ বিন তালালের পুত্রস্নেহের এই গল্প মানুষের হৃদয়ে গভীরভাবে অনুরণিত হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ছেলের শয্যার পাশে বসে আছেন একজন নিবেদিতপ্রাণ পিতার-এই দৃশ্য বহু মানুষের মধ্যে আলোড়ন তৈরি করেছে। 

Tag :

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

২০ বছর কোমায় ছিলেন তিনি

ইন্তেকাল করলেন সউদির ‘ঘুমন্ত যুবরাজ’ , শোকের ছায়া রাজপরিবারে

আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৫, রবিবার

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: প্রায় ২০ বছর কোমায় থাকার পর ইন্তেকাল করলেন সউদি আরবের ‘ঘুমন্ত যুবরাজ’ তথা প্রিন্স আল-ওয়ালিদ বিন খালেদ বিন তালাল (ইন্না লিল্লাহি)।  শনিবার (১৯ জুলাই) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে তার বাবা প্রিন্স খালেদ বিন তালাল।

২০০৫ সালে লন্ডনে গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হন ১৫ বছর বয়সী প্রিন্স আল-ওয়ালিদ। এতে তার মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত পায় ও অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়। সেই সময় লন্ডনে সামরিক ক্যাডেট হিসেবে পড়াশোনা করছিলেন আল-ওয়ালিদ।

দুর্ঘটনার পর থেকেই হাসপাতালে কোমায় ছিলেন আল-ওয়ালিদ। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে কোমায় ছিলেন তিনি। যেই কারণে তাঁকে ‘SLEEPING PRINCE’ বা ঘুমন্ত ‘ঘুমন্ত যুবরাজ’ও বলা হয়ে থাকে। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এদিন দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে আল্লাহর উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন তিনি। যদিও পাঁচ বছর আগে আল-ওয়ালিদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক ভিডিয়োতে দেখা যায়, কোমায় থাকা অবস্থায় তিনি আঙুল নাড়াচ্ছেন। এ থেকে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আশা করা হচ্ছিল। তবে হাজার চেষ্টা করেও পরবর্তীতে কোনও লাভ হয়নি।

‘স্লিপিং প্রিন্স’-এর জন্য বিশ্বের সেরা মার্কিন এবং স্প্যানিশ স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পর্যন্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউ’ই তার জ্ঞান ফেরাতে পারেন নি। সউদি রাজপরিবারের একজন বিশিষ্ট সদস্য প্রিন্স খালিদ বিন তালাল তার ছেলের অবস্থাতেও কখনও হতাশ হননি। হাল ছাড়েন নি।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বারবার তাকে ‘ঘুমন্ত রাজপুত্র’কে ভেন্টিলেটর থেকে সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তাদের কথা শোনেননি। তিনি বলেছিলেন যে আল্লাহ’ই জীবনদাতা এবং গ্রহণকারী। একজন পিতা হিসেবে তার অটল বিশ্বাস এবং নিষ্ঠা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। বছরের পর বছর ধরে, তিনি প্রতিদিন তার ছেলের পাশে বসে প্রার্থনা করতেন।

জানা গেছে, রবিবার বাদ আসর রাজধানী রিয়াদে ইমাম তুর্কি বিন আবদুল্লাহ মসজিদে আল ওয়ালিদের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

 

এদিকে রাজপুত্রের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।  সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্লিপিং প্রিন্স হ্যাশট্যাগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ধৈর্য, বিশ্বাস ও মা-বাবার অনন্য ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে হাজারো মানুষ আল ওয়ালিদের মৃত্যুকে স্মরণ করছেন। আল ওয়ালিদের বাবা প্রিন্স খালেদ বিন তালালের পুত্রস্নেহের এই গল্প মানুষের হৃদয়ে গভীরভাবে অনুরণিত হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ছেলের শয্যার পাশে বসে আছেন একজন নিবেদিতপ্রাণ পিতার-এই দৃশ্য বহু মানুষের মধ্যে আলোড়ন তৈরি করেছে।