০৯ জুন ২০২৫, সোমবার, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজ্যে আদা ও রসুন চাষে আত্মনির্ভরতা বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ রাজ্য সরকারের

সুস্মিতা
  • আপডেট : ৯ জুন ২০২৫, সোমবার
  • / 66

সুরজিৎ দত্ত:  কয়েকদিন আগেই নবান্নের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে এই রাজ্যের মাটিতে কৃষকদের আদা রসুন চাষে উৎসাহিত করা যায় তার জন্য পরিকল্পনা করতে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের কয়েকদিনের মধ্যেই এই নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়ে গেল। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় এখন থেকে আদা ও রসুন চাষে জোর দিচ্ছে রাজ্য সরকার।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পর এই চাষে উৎসাহ দিতে নতুন প্রকল্প আনছে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দফতর। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল, চাষিদের প্রশিক্ষণ ও ভর্তুকি দিয়ে আদা ও রসুন চাষে আগ্রহী করে তোলা এবং রাজ্যে এই ফসলের উৎপাদন অনেকটাই বাড়ানো।

আরও পড়ুন: দেশে প্রথম: রেশনের চালের পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে বিদেশি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি রাজ্য সরকারের

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশের অনেক আগে থেকেই আমরা এই বিষয় নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছিলাম। তবে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে রাজ্য সরকার এর জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রকল্প তৈরি করবে। এই প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী কৃষকদের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আর্থিক ভর্তুকি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। খুব শীঘ্রই এই নিয়ে অর্থ দফতরের কাছে এই প্রস্তাব পাঠানো হবে। অর্থ দফতরের অনুমোদন পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: বেহালায় শিশুমৃত্যুর ঘটনায় পরিবারে পাশে মুখ্যমন্ত্রী, জখম বাবার চিকিৎসার দায়িত্ব নিল রাজ্য সরকার

গত মাসেই মুখ্যমন্ত্রী একটি প্রশাসনিক বৈঠকে আদা-রসুন চাষ বাড়ানোর কথা বলেন এবং উপযুক্ত জমি খুঁজে তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করতে বলেন। সেই অনুযায়ী দক্ষিণবঙ্গের কিছু জায়গায় ‘গরুবাথান’ জাতের আদার চাষ শুরু শুরু করতে চাইছে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং উদ্যান পালন দফতর। এই জাত মূলত উত্তরবঙ্গে চাষ হয় এবং খুব ভালো মানের। দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় এর পরীক্ষামূলক চাষ করে সুফল ও মিলেছে বলে জানা যাচ্ছে। বাঁকুড়ার এর ফলন ভালোই হচ্ছে ।

আরও পড়ুন: সরকারি কর্মচারীদের বৈঠক শেষে পদোন্নতি সহ একগুচ্ছ ঘোষণা রাজ্য সরকারের

এই প্রসঙ্গে এক চাষি উৎপল মহাপাত্র জানান, তিনি শীতের আগে বীজ বপন করে প্রতি একর জমিতে প্রায় ৬০ কুইন্টাল আদা পেয়েছেন, যা খুব দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। এই বাঁকুড়ার ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে অন্যান্য জেলায় চাষীদের উৎসাহিত করতে চাইছে রাজ্য সরকার। সরকার বলছে, শুধু মাঠে নয়, চাষির বাড়ির উঠোনে ছোট ছোট ব্যাগেও আদা-রসুন চাষ করা যাবে এবং সেখানেও সহায়তা দেবে সরকার। পাশাপাশি, এই ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থাও গড়ে তোলার কথা ভাবছে রাজ্য।

এখন রাজ্যে বছরে প্রায় ১.৩৯ লক্ষ মেট্রিক টন আদা এবং ৩৮,৬২০ মেট্রিক টন রসুন উৎপাদিত হয়। কালিম্পং, দার্জিলিং, গড়বেতা, তেহট্ট, হুগলি ও পূর্ব বর্ধমান এই ফসলের প্রধান উৎপাদক এলাকা। তবে আগস্ট থেকে নভেম্বর মাসে রাজ্যকে বাইরে থেকে প্রচুর আদা ও রসুন আমদানি করতে হয়, তখন দাম অনেক বেড়ে যায়।তাই সরকারের লক্ষ্য, রাজ্যের মধ্যেই এই ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা।

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং উদ্যান পালন দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘দক্ষিণবঙ্গের অনেক কৃষক এখনো আলু চাষেই বেশি নির্ভর করেন। কিন্তু লাভ কম হওয়ায় তারা হতাশ। যদি আদা-রসুনের মতো লাভজনক চাষে আসেন, তাহলে তাদের আয় অনেকটাই বাড়বে।’ এই নতুন পরিকল্পনা রাজ্যের কৃষকদের মধ্যে আশা জাগাচ্ছে। এখন অপেক্ষা, কবে অর্থ দফতরের ছাড়পত্র পেয়ে প্রকল্প বাস্তবে চালু হয়।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

রাজ্যে আদা ও রসুন চাষে আত্মনির্ভরতা বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ রাজ্য সরকারের

আপডেট : ৯ জুন ২০২৫, সোমবার

সুরজিৎ দত্ত:  কয়েকদিন আগেই নবান্নের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে এই রাজ্যের মাটিতে কৃষকদের আদা রসুন চাষে উৎসাহিত করা যায় তার জন্য পরিকল্পনা করতে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের কয়েকদিনের মধ্যেই এই নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়ে গেল। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় এখন থেকে আদা ও রসুন চাষে জোর দিচ্ছে রাজ্য সরকার।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পর এই চাষে উৎসাহ দিতে নতুন প্রকল্প আনছে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দফতর। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল, চাষিদের প্রশিক্ষণ ও ভর্তুকি দিয়ে আদা ও রসুন চাষে আগ্রহী করে তোলা এবং রাজ্যে এই ফসলের উৎপাদন অনেকটাই বাড়ানো।

আরও পড়ুন: দেশে প্রথম: রেশনের চালের পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে বিদেশি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি রাজ্য সরকারের

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশের অনেক আগে থেকেই আমরা এই বিষয় নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছিলাম। তবে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে রাজ্য সরকার এর জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রকল্প তৈরি করবে। এই প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী কৃষকদের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আর্থিক ভর্তুকি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। খুব শীঘ্রই এই নিয়ে অর্থ দফতরের কাছে এই প্রস্তাব পাঠানো হবে। অর্থ দফতরের অনুমোদন পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: বেহালায় শিশুমৃত্যুর ঘটনায় পরিবারে পাশে মুখ্যমন্ত্রী, জখম বাবার চিকিৎসার দায়িত্ব নিল রাজ্য সরকার

গত মাসেই মুখ্যমন্ত্রী একটি প্রশাসনিক বৈঠকে আদা-রসুন চাষ বাড়ানোর কথা বলেন এবং উপযুক্ত জমি খুঁজে তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করতে বলেন। সেই অনুযায়ী দক্ষিণবঙ্গের কিছু জায়গায় ‘গরুবাথান’ জাতের আদার চাষ শুরু শুরু করতে চাইছে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং উদ্যান পালন দফতর। এই জাত মূলত উত্তরবঙ্গে চাষ হয় এবং খুব ভালো মানের। দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় এর পরীক্ষামূলক চাষ করে সুফল ও মিলেছে বলে জানা যাচ্ছে। বাঁকুড়ার এর ফলন ভালোই হচ্ছে ।

আরও পড়ুন: সরকারি কর্মচারীদের বৈঠক শেষে পদোন্নতি সহ একগুচ্ছ ঘোষণা রাজ্য সরকারের

এই প্রসঙ্গে এক চাষি উৎপল মহাপাত্র জানান, তিনি শীতের আগে বীজ বপন করে প্রতি একর জমিতে প্রায় ৬০ কুইন্টাল আদা পেয়েছেন, যা খুব দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। এই বাঁকুড়ার ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে অন্যান্য জেলায় চাষীদের উৎসাহিত করতে চাইছে রাজ্য সরকার। সরকার বলছে, শুধু মাঠে নয়, চাষির বাড়ির উঠোনে ছোট ছোট ব্যাগেও আদা-রসুন চাষ করা যাবে এবং সেখানেও সহায়তা দেবে সরকার। পাশাপাশি, এই ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থাও গড়ে তোলার কথা ভাবছে রাজ্য।

এখন রাজ্যে বছরে প্রায় ১.৩৯ লক্ষ মেট্রিক টন আদা এবং ৩৮,৬২০ মেট্রিক টন রসুন উৎপাদিত হয়। কালিম্পং, দার্জিলিং, গড়বেতা, তেহট্ট, হুগলি ও পূর্ব বর্ধমান এই ফসলের প্রধান উৎপাদক এলাকা। তবে আগস্ট থেকে নভেম্বর মাসে রাজ্যকে বাইরে থেকে প্রচুর আদা ও রসুন আমদানি করতে হয়, তখন দাম অনেক বেড়ে যায়।তাই সরকারের লক্ষ্য, রাজ্যের মধ্যেই এই ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা।

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং উদ্যান পালন দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘দক্ষিণবঙ্গের অনেক কৃষক এখনো আলু চাষেই বেশি নির্ভর করেন। কিন্তু লাভ কম হওয়ায় তারা হতাশ। যদি আদা-রসুনের মতো লাভজনক চাষে আসেন, তাহলে তাদের আয় অনেকটাই বাড়বে।’ এই নতুন পরিকল্পনা রাজ্যের কৃষকদের মধ্যে আশা জাগাচ্ছে। এখন অপেক্ষা, কবে অর্থ দফতরের ছাড়পত্র পেয়ে প্রকল্প বাস্তবে চালু হয়।