ক্যানসার চিকিৎসার নতুন দিগন্ত আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি

- আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার
- / 149
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: দীর্ঘদিন ধরে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত আল্ট্রাসাউন্ড এখন ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে অস্ত্রোপচারবিহীন ক্যানসার চিকিৎসার এক নতুন আশার আলোতে। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জেন জু আবিষ্কার করেন এক যুগান্তকারী পদ্ধতি; ‘হিস্টোট্রিপসি’, যা উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সির শধতরঙ্গ ব্যবহার করে ক্যানসার টিউমার ভেঙে দেয়, কোনও ছুরি-কাঁচি ছাড়াই।
২০০০-এর দশকের গোড়ায় গবেষণার সময় জু হঠাৎ লক্ষ্য করেন, যখন তিনি আল্ট্রাসাউন্ড পালসের হার বাড়ান, তখন জীবন্ত টিস্যু অনেক দ্রুত ভেঙে যায়। সেই আকস্মিক আবিষ্কার থেকেই জন্ম নেয় নতুন চিকিৎসা প্রযুক্তি ‘হিস্টোট্রিপসি’। এটি ২০২৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে লিভার ক্যানসারের চিকিৎসায় অনুমোদন পায় এবং ২০২৪ সালে ব্রিটেন ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের পাইলট প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত করে।
এই পদ্ধতিতে আল্ট্রাসাউন্ড তরঙ্গ ক্যানসার টিউমারের নির্দিষ্ট স্থানে কেন্দ্রীভূত করা হয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাইক্রোবাবল তৈরি হয়ে সেকেন্ডের ভগ্নাংশে বিস্ফোরিত হয়, যা টিউমার টিস্যুকে ভেঙে দেয়। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা তখন সেই মৃত কোষ পরিষ্কার করে ফেলে। চিকিৎসাটি সম্পূর্ণ ব্যথামুক্ত, বিষমুক্ত ও অতি দ্রুত সম্পন্ন হয়; অনেক সময় রোগীকে সেদিনই বাড়ি পাঠানো যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আল্ট্রাসাউন্ড শুধু ক্যানসার ধ্বংস করতেই নয়, বরং কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন ও ইমিউনোথেরাপির কার্যকারিতাও বাড়াতে পারে। মাইক্রোবাবল ও আল্ট্রাসাউন্ডের যুগল প্রয়োগে ওষুধ সরাসরি টিউমারের ভেতর পৌঁছানো সম্ভব, এমনকি মস্তিষ্কের টিউমারের ক্ষেত্রেও। তবে এখনও দীর্ঘমেয়াদি তথ্য ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে গবেষণা চলছে। সব ধরনের ক্যানসারে এটি কার্যকর নাও হতে পারে, বিশেষত যেখানে হাড় বা গ্যাস টিস্যুর প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবুও বিজ্ঞানীরা আশাবাদী; ভবিষ্যতে শধতরঙ্গ হয়তো ক্যানসার চিকিৎসাকে পুরোপুরি নতুন এক যুগে প্রবেশ করাবে, যেখানে অস্ত্রোপচার নয়, চিকিৎসার হাতিয়ার হবে শধের শক্তি।