১৩ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ট্রেনের চাকায় ফেলে খুন

নাজিমুদ্দিন হত্যায় ৪ জনের আমৃত্যু জেল

মারুফা খাতুন
  • আপডেট : ১৩ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার
  • / 26

শফিকুল ইসলাম : চার বছর পর বিচার পেল দেবগ্রাম রেল স্টেশনে ছানা ব্যবসায়ীদের হাতে খুন হওয়া ‘প্রতিবাদী’ যুবক নাজিমুদ্দিন শেখের পরিবার। অভিযুক্ত আসামি সুদীপ ঘোষ, রিঙ্কু ঘোষ, বিরু ঘোষ ও নরেন ঘোষকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন কৃষ্ণনগর থার্ড কোর্টের বিচারক। এই রায়ে সন্তুষ্ট নাজিমুদ্দিন শেখের পরিবার-পরিজনরা।

আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগের ঘটনা। রাতের দিকে ট্রেন থেকে নামিয়ে মারধর এবং ট্রেনের চাকার নিচে ফেলে ২৫ বছরের যুবক নাজিমুদ্দিন শেখকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল দুষ্কৃতীরা। এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া পাঁচজনের মধ্যে চারজনকে মঙ্গলবার আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন কৃষ্ণনগর থার্ড কোর্টের বিচারক বসন্ত শর্মা। আসামিদের মধ্যে একজনের আগে মৃত্যু হয়েছে। দোষীদের দুটি ধারায় যাবজ্জীবন এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে অতিরিক্ত ৬ মাসের সাজার নির্দেশ দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার এই রায়ের কথা প্রতিবেদককে জানান সরকারি আইনজীবী অর্ণব গাঙ্গুলি। পরে বিস্তারিত জানান অভিযোগকারী আবদুর রহিম খানের আইনজীবী জ্যোতি সাধুখাঁ। নাজিমুদ্দিন শেখের বড় ভাই আবদুর রহিম শেখ বলেন, ‘যারা আমার ভাইকে নৃশংসভাবে ট্রেনের চাকার নিচে ফেলে খুন করেছে, সারাজীবন তারা জেলে থাকুক। আমি খুশি হয়েছি কেসের তদন্তকারী আইনজীবী বিধানচন্দ্র দে-র ভূমিকায়।’

একইসঙ্গে তিনি ধন্যবাদ জানান কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী আলি আহসান আলমগীর, সাবির হোসেন, সৌম্য দাস মহাপাত্র, আসিফ ইকবাল, শহিদ উজ্জামানকে। আইনজীবীদের মধ্যে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন আলি আহসান আলমগীর। তিনি হাইকোর্টে এই মামলায় আসামিদের যাতে জামিন না হয়, সেইসঙ্গে দোষীরা যাতে শাস্তি পায় সেই চেষ্টা করেন। বেগুনবাড়ির সাইদুর রহমানও এই মামলায় সহযোগিতা করেছেন।

নিহত নাজিমুদ্দিন শেখের স্ত্রী নার্গিস খাতুন নিজের দুই শিশুসন্তান নাদিয়া ও মরিয়মকে জড়িয়ে ধরে এ দিন কান্নায় ভেঙে পড়েন। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘আদালতের রায়ে আমি সন্তুষ্ট হলেও স্বামীকে যারা খুন করেছে তাদের মৃত্যুদণ্ড হলে আরও বেশি খুশি হতাম। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমার স্বামীকে খুন হতে হয়েছে। দোষীরা উপযুক্ত শাস্তি পাক এটাই চেয়েছিলাম। মাননীয় বিচারক যে রায় দিয়েছেন, তা মেনে নিচ্ছি। স্বামীর খুনের পর যে-সব গ্রামবাসী এবং এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেছিলেন এবং যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় দোষীদের শাস্তি চাইছিলেন আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’

আইনজীবী জ্যোতি সাধুখাঁ জানান, ‘ট্রেনে এক বৃদ্ধার ক্যাপসিকামের ব্যাগ চুরি হয়ে যাওয়ার পর তা উদ্ধার ও ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছিল নাজিমুদ্দিন শেখকে। এই খুনের মামলায় বিচারক বসন্ত শর্মা অভিযুক্ত ৪ জন ছানা ব্যবসায়ীকে দোষী সাব্যস্ত ও তাদের সাজা ঘোষণা করেন। অভিযুক্তরা হলেন— সুদীপ ঘোষ, রিঙ্কু ঘোষ, বিরু ঘোষ ও নরেন ঘোষ। চলন্ত ট্রেন থেকে নামিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছিল ছানা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।’

ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘অভিযোগ ছিল দেবগ্রাম স্টেশনে ছানা ব্যবসায়ীরা ওই যুবককে ট্রেন থেকে নামিয়ে নেওয়ার পর তাঁকে মারধর শুরু করে এবং ফের ট্রেন চলতে শুরু করলে তাকে ধাক্কা দিয়ে লাইনে ফেলে দেয়। ট্রেনে কাটা পড়ে দু-টুকরো হয়ে যায় নাজিমুদ্দিনের দেহ। নৃশংস এই খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল নদিয়ার দেবগ্রাম স্টেশনে। ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাতের ঘটনা। ট্রেনটি ছিল রাত ৮-২০ মিনিটের শিয়ালদহ-লালগোলা মেমু ট্রেন।’

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ট্রেনের চাকায় ফেলে খুন

নাজিমুদ্দিন হত্যায় ৪ জনের আমৃত্যু জেল

আপডেট : ১৩ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার

শফিকুল ইসলাম : চার বছর পর বিচার পেল দেবগ্রাম রেল স্টেশনে ছানা ব্যবসায়ীদের হাতে খুন হওয়া ‘প্রতিবাদী’ যুবক নাজিমুদ্দিন শেখের পরিবার। অভিযুক্ত আসামি সুদীপ ঘোষ, রিঙ্কু ঘোষ, বিরু ঘোষ ও নরেন ঘোষকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন কৃষ্ণনগর থার্ড কোর্টের বিচারক। এই রায়ে সন্তুষ্ট নাজিমুদ্দিন শেখের পরিবার-পরিজনরা।

আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগের ঘটনা। রাতের দিকে ট্রেন থেকে নামিয়ে মারধর এবং ট্রেনের চাকার নিচে ফেলে ২৫ বছরের যুবক নাজিমুদ্দিন শেখকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল দুষ্কৃতীরা। এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া পাঁচজনের মধ্যে চারজনকে মঙ্গলবার আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন কৃষ্ণনগর থার্ড কোর্টের বিচারক বসন্ত শর্মা। আসামিদের মধ্যে একজনের আগে মৃত্যু হয়েছে। দোষীদের দুটি ধারায় যাবজ্জীবন এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে অতিরিক্ত ৬ মাসের সাজার নির্দেশ দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার এই রায়ের কথা প্রতিবেদককে জানান সরকারি আইনজীবী অর্ণব গাঙ্গুলি। পরে বিস্তারিত জানান অভিযোগকারী আবদুর রহিম খানের আইনজীবী জ্যোতি সাধুখাঁ। নাজিমুদ্দিন শেখের বড় ভাই আবদুর রহিম শেখ বলেন, ‘যারা আমার ভাইকে নৃশংসভাবে ট্রেনের চাকার নিচে ফেলে খুন করেছে, সারাজীবন তারা জেলে থাকুক। আমি খুশি হয়েছি কেসের তদন্তকারী আইনজীবী বিধানচন্দ্র দে-র ভূমিকায়।’

একইসঙ্গে তিনি ধন্যবাদ জানান কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী আলি আহসান আলমগীর, সাবির হোসেন, সৌম্য দাস মহাপাত্র, আসিফ ইকবাল, শহিদ উজ্জামানকে। আইনজীবীদের মধ্যে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন আলি আহসান আলমগীর। তিনি হাইকোর্টে এই মামলায় আসামিদের যাতে জামিন না হয়, সেইসঙ্গে দোষীরা যাতে শাস্তি পায় সেই চেষ্টা করেন। বেগুনবাড়ির সাইদুর রহমানও এই মামলায় সহযোগিতা করেছেন।

নিহত নাজিমুদ্দিন শেখের স্ত্রী নার্গিস খাতুন নিজের দুই শিশুসন্তান নাদিয়া ও মরিয়মকে জড়িয়ে ধরে এ দিন কান্নায় ভেঙে পড়েন। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘আদালতের রায়ে আমি সন্তুষ্ট হলেও স্বামীকে যারা খুন করেছে তাদের মৃত্যুদণ্ড হলে আরও বেশি খুশি হতাম। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমার স্বামীকে খুন হতে হয়েছে। দোষীরা উপযুক্ত শাস্তি পাক এটাই চেয়েছিলাম। মাননীয় বিচারক যে রায় দিয়েছেন, তা মেনে নিচ্ছি। স্বামীর খুনের পর যে-সব গ্রামবাসী এবং এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেছিলেন এবং যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় দোষীদের শাস্তি চাইছিলেন আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’

আইনজীবী জ্যোতি সাধুখাঁ জানান, ‘ট্রেনে এক বৃদ্ধার ক্যাপসিকামের ব্যাগ চুরি হয়ে যাওয়ার পর তা উদ্ধার ও ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছিল নাজিমুদ্দিন শেখকে। এই খুনের মামলায় বিচারক বসন্ত শর্মা অভিযুক্ত ৪ জন ছানা ব্যবসায়ীকে দোষী সাব্যস্ত ও তাদের সাজা ঘোষণা করেন। অভিযুক্তরা হলেন— সুদীপ ঘোষ, রিঙ্কু ঘোষ, বিরু ঘোষ ও নরেন ঘোষ। চলন্ত ট্রেন থেকে নামিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছিল ছানা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।’

ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘অভিযোগ ছিল দেবগ্রাম স্টেশনে ছানা ব্যবসায়ীরা ওই যুবককে ট্রেন থেকে নামিয়ে নেওয়ার পর তাঁকে মারধর শুরু করে এবং ফের ট্রেন চলতে শুরু করলে তাকে ধাক্কা দিয়ে লাইনে ফেলে দেয়। ট্রেনে কাটা পড়ে দু-টুকরো হয়ে যায় নাজিমুদ্দিনের দেহ। নৃশংস এই খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল নদিয়ার দেবগ্রাম স্টেশনে। ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাতের ঘটনা। ট্রেনটি ছিল রাত ৮-২০ মিনিটের শিয়ালদহ-লালগোলা মেমু ট্রেন।’