২০ শিশুকে বাঁচিয়ে মৃত্যুর কোলে শিক্ষিকা মেহেরীন চৌধুরী
- আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৫, বুধবার
- / 269
পুবের কলম, ঢাকা: ঢাকার উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা মেহেরীন চৌধুরী জানতেন না ২২ জুলাইয়ের দুপুরটা তাঁর জীবনের শেষ দিন হবে। কিন্তু তিনি যা জানতেন, তা হল; নিজের দায়িত্ব, ভালোবাসা, আর শিক্ষার্থীদের প্রতি মমত্ব। সেই চেতনায় ভর করেই তিনি হয়ে উঠেছেন আমাদের সময়ের এক সাহসিনী; এক নিঃশধ নায়িকা।
বিমান দুর্ঘটনায় যখন আতঙ্কে স্কুলের শিশুরা দিশেহারা, তখন আগুনের লেলিহান শিখা উপেক্ষা করে ছুটে এসেছিলেন মেহেরীন ম্যাডাম। একে একে ১৫,২০ জন শিশু শিক্ষার্থীকে তিনি বের করে আনেন মৃত্যুর মুখ থেকে। তাঁর নিজের শরীর তখন দাউ দাউ করে জ্বলছে;তবু থামেননি। শেষ ছাত্রটি নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত পিছু হটেননি। সেই সাহসিকতার জন্যই আজ আমরা হারিয়েছি তাঁকে। পুরো শরীর পুড়ে যাওয়ার পরও, মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি ছিলেন নীরব নায়কোচিত। বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর শরীরের শতভাগ দগ্ধ হয়েছিল; যে ক্ষত শুধু দেহে নয়, ছুঁয়ে গেছে আমাদের মনেও।
এই ঘটনাটি কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়; এ এক অসম্ভব সাহস ও আত্মত্যাগের দলিল। এমন সময়ে, যখন শিক্ষকতা পেশা নানা সংকটে, তখন মেহেরীন চৌধুরীর মতো কেউ একজন আমাদের দেখিয়ে দিলেন; একজন শিক্ষক কেবল পাঠদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নন। তিনি অভিভাবক, আশ্রয়, সাহস;এমনকী নিজের জীবনের বিনিময়ে অন্যের জীবন রক্ষা করতে প্রস্তুত এক মহান হৃদয়।
উদ্ধার হওয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, ‘সেনাবাহিনী বলেছে, এই শিক্ষিকার কারণেই আমাদের সন্তান এখন বেঁচে আছে।’ আজ দেশের প্রতিটি শিক্ষক, অভিভাবক, এমনকী শিশুর কাছেও মেহেরীন চৌধুরী একটি নাম নয়; একটি প্রেরণা। হয়তো কোনো রাষ্ট্রীয় পদক তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে না, কিন্তু যে ২০টি শিশুর হৃদয় আজ স্পন্দিত হচ্ছে, সেগুলোই তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্মান।
আমরা যে সময়ে বসবাস করছি, সেখানে আত্মকেন্দ্রিকতা আর নিরাপত্তাহীনতা অনেককেই দুর্দিনে নিঃস্বার্থ হতে নিরুৎসাহিত করে। কিন্তু মেহেরীন চৌধুরীর মতো একজন মানুষ আমাদের মনে করিয়ে দেন; মানবতা এখনো বেঁচে আছে। তিনি আমাদের এই নশ্বর পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকবেন তাঁর আত্মদানের মাধ্যমে। শুধু শিক্ষক নয়; একজন মা, একজন অভিভাবক, একজন যোদ্ধা হিসেবে তিনি রয়ে যাবেন আমাদের বিবেকের আয়নায়।
তাঁর চোখে ছিলো মমতা, পায়ে ছিল দায়িত্বের অটল দৃঢ়তা, আর অন্তরে ছিলো এক অনন্য সাহস। আমরা কাঁদি, কিন্তু তাঁর গল্পে অনুপ্রাণিত হই; কারণ তিনি দেখিয়ে গেছেন কীভাবে ভালোবাসা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আলো হয়ে জ্বলতে পারে।






































