০৯ নভেম্বর ২০২৫, রবিবার, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রেলের অনুষ্ঠানে সংঘের গান, তদন্তের নির্দেশ দিল কেরল সরকার

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ৯ নভেম্বর ২০২৫, রবিবার
  • / 53

পুবের কলম, তিরুবন্তপুরম: ভারতীয় রেলের এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরএসএস গণগীত গাওয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। সরকারি অনুষ্ঠানে সংঘের গান নিয়ে দেশে ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধ্বংস করছে গেরুয়া শিবির বলে তীব্র আক্রমণ করেন তিনি। রেলের অনুষ্ঠানে কেনো আরএসএসের গান! সেই ঘটনা নিয়ে এবার তদন্তের নির্দেশ দিলেন কেরলের শিক্ষামন্ত্রী ভি শিভানকুট্টি। কেরল সরকারের তদন্তের নির্দেশকে স্বাগত জানিযেছেন কংগ্রেস নেতা কে মুরলীধরন। তিনি বলেন, “কিছু শিক্ষার্থীকে আরএসএসের গান ‘গণ গীতম’ গাইতে বাধ্য করা হয়েছিল। এটি নিন্দনীয়। একইসঙ্গে আমাদের খেয়াল রাখতে, যাতে ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি না হয়।”

উল্লেখ্য, শনিবার এর্নাকুলাম-বেঙ্গালুরু বন্দে ভারত ট্রেন পরিষেবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আরএসএস গণগীত গাইতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনা চাউর হতেই রেলের তীব্র সমালোচনা করেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সাফ জানান, সরকারী অনুষ্ঠানে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখা উচিত। বন্দে ভারতের উদ্বোধনে আরএসএস গণগীত গাওয়া অত্যন্ত প্রতিবাদমূলক। এই জাতীয় কর্মকাণ্ড সরকারের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে ক্ষুণ্ন করে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির উন্মোচন প্রত্যক্ষ করেছি। এর পেছনে ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে একটি সংকীর্ণ রাজনৈতিক মানসিকতা।” কেন্দ্রের এই আচরণ নিয়ে জনসাধারণকে প্রতিবাদের আহ্বান জানিয়ে বাম শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। রাষ্ট্রীয় স্বংয়সেবক সংঘের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বিজয়ন বলেন, “এটা অগ্রহণযোগ্য, যে সঙ্ঘ পরিবার তাদের সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রচারের জন্য দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রেলকে ব্যবহার করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘দেশাত্মবোধক গান’ ক্যাপশনে এই গণগীত শেয়ার করে দক্ষিণ রেলওয়ে শুধু নিজেকে উপহাস করেনি, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকেও উপহাস করেছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করা রেল এখন আরএসএসের সাম্প্রদায়িক এজেন্ডাকে সমর্থন করছে। যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। আজ তাদের গণগীত গাওয়া হচ্ছে।”

আরও পড়ুন: মালাপ্পুরমে নৌকাডুবিতে ২২ জনের দেহ উদ্ধার, ক্ষতিপূরণ ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী সহ কেরল সরকারের

কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র প্রতিবাদের পর গেরুয়া শিবিরকে আক্রমণ করেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল। তিনি রেলমন্ত্রীকে চিঠি লিখে কেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরএসএসের গান গাইতে বলা হয়েছিল, তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন। কংগ্রেস নেতার বক্তব্য, “একটি পাবলিক ইভেন্টকে আরএসএসের অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হয়েছে। দক্ষিণ রেলের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলও গর্বের সাথে এটি শেয়ার করা হয়েছে। এটি ভারতীয় রেলের নির্লজ্জ অপব্যবহার। ভারতীয় রেল কোনও বিভাজনমূলক মতাদর্শ নয়।” কেন্দ্রকে নিশানা করে বেণুগোপাল বলেন, ‘ভারতকে ধীরে ধীরে সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র থেকে আরএসএস নিয়ন্ত্রিত স্বৈরাচারে রূপান্তরিত করার চেষ্টা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে।”

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

রেলের অনুষ্ঠানে সংঘের গান, তদন্তের নির্দেশ দিল কেরল সরকার

আপডেট : ৯ নভেম্বর ২০২৫, রবিবার

পুবের কলম, তিরুবন্তপুরম: ভারতীয় রেলের এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরএসএস গণগীত গাওয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। সরকারি অনুষ্ঠানে সংঘের গান নিয়ে দেশে ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধ্বংস করছে গেরুয়া শিবির বলে তীব্র আক্রমণ করেন তিনি। রেলের অনুষ্ঠানে কেনো আরএসএসের গান! সেই ঘটনা নিয়ে এবার তদন্তের নির্দেশ দিলেন কেরলের শিক্ষামন্ত্রী ভি শিভানকুট্টি। কেরল সরকারের তদন্তের নির্দেশকে স্বাগত জানিযেছেন কংগ্রেস নেতা কে মুরলীধরন। তিনি বলেন, “কিছু শিক্ষার্থীকে আরএসএসের গান ‘গণ গীতম’ গাইতে বাধ্য করা হয়েছিল। এটি নিন্দনীয়। একইসঙ্গে আমাদের খেয়াল রাখতে, যাতে ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি না হয়।”

উল্লেখ্য, শনিবার এর্নাকুলাম-বেঙ্গালুরু বন্দে ভারত ট্রেন পরিষেবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আরএসএস গণগীত গাইতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনা চাউর হতেই রেলের তীব্র সমালোচনা করেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সাফ জানান, সরকারী অনুষ্ঠানে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখা উচিত। বন্দে ভারতের উদ্বোধনে আরএসএস গণগীত গাওয়া অত্যন্ত প্রতিবাদমূলক। এই জাতীয় কর্মকাণ্ড সরকারের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে ক্ষুণ্ন করে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির উন্মোচন প্রত্যক্ষ করেছি। এর পেছনে ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে একটি সংকীর্ণ রাজনৈতিক মানসিকতা।” কেন্দ্রের এই আচরণ নিয়ে জনসাধারণকে প্রতিবাদের আহ্বান জানিয়ে বাম শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। রাষ্ট্রীয় স্বংয়সেবক সংঘের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বিজয়ন বলেন, “এটা অগ্রহণযোগ্য, যে সঙ্ঘ পরিবার তাদের সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রচারের জন্য দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রেলকে ব্যবহার করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘দেশাত্মবোধক গান’ ক্যাপশনে এই গণগীত শেয়ার করে দক্ষিণ রেলওয়ে শুধু নিজেকে উপহাস করেনি, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকেও উপহাস করেছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করা রেল এখন আরএসএসের সাম্প্রদায়িক এজেন্ডাকে সমর্থন করছে। যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। আজ তাদের গণগীত গাওয়া হচ্ছে।”

আরও পড়ুন: মালাপ্পুরমে নৌকাডুবিতে ২২ জনের দেহ উদ্ধার, ক্ষতিপূরণ ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী সহ কেরল সরকারের

কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র প্রতিবাদের পর গেরুয়া শিবিরকে আক্রমণ করেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল। তিনি রেলমন্ত্রীকে চিঠি লিখে কেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরএসএসের গান গাইতে বলা হয়েছিল, তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন। কংগ্রেস নেতার বক্তব্য, “একটি পাবলিক ইভেন্টকে আরএসএসের অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হয়েছে। দক্ষিণ রেলের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলও গর্বের সাথে এটি শেয়ার করা হয়েছে। এটি ভারতীয় রেলের নির্লজ্জ অপব্যবহার। ভারতীয় রেল কোনও বিভাজনমূলক মতাদর্শ নয়।” কেন্দ্রকে নিশানা করে বেণুগোপাল বলেন, ‘ভারতকে ধীরে ধীরে সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র থেকে আরএসএস নিয়ন্ত্রিত স্বৈরাচারে রূপান্তরিত করার চেষ্টা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে।”