২৫ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কার্নুল বাস দুর্ঘটনা: ২০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর নেপথ্যে স্মার্টফোনের বিস্ফোরণ, তদন্তে নয়া তথ্য

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার
  • / 64

পুবের কলম, অমরাবতী: শুক্রবার অন্ধ্রে ঘটে গিয়েছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। লাক্সারি বাসে আগুন লেগে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হন বহু। অনেকেই গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনাটি ঘটে অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুলে।

কুর্নুল জেলায় ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ একটি মোটরবাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে বাসটির। এর ফলে বাসের সামনের অংশে আটকে যায় মোটরসাইকেলটি। ওই অবস্থাতেই চলতে থাকে বাস। সেই সময়েই দাউ দাউ করে আগুন ধরে বাসটিতে। তাতে পুড়ে মৃত্যু হয় ২০ জনের। এই ঘটনার তদন্তে এবার উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

আগুনের তীব্রতার কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে আসছে বাসে মজুদ থাকা বিপুল পরিমাণ মোবাইলের ব্যাটারির কথা। প্রশাসন এবং জনসাধারণের মধ্যে প্রশ্ন জাগছে, কীভাবে শত শত স্মার্টফোন যাত্রীবাহী গাড়ির লাগেজ কেবিনে পুড়ে ছাই হল? তদন্তে জানা গিয়েছে, স্মার্টফোনগুলি আগুনে পোড়ার সময় সেগুলি বিস্ফোরিত হয়েছিল। আগুনের তীব্রতা বাড়িয়েছিল স্মার্টফোন। যার ফলে প্রাণহানি বাড়তে থাকে।

কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে তার তদন্ত করতে গিয়েই ততদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই বাসেই ছিল ২৩৪টি স্মার্টফোন। ওই ফোনগুলির দাম প্রায় ৪৬ লক্ষ টাকা। ওই ফোনগুলি বাসে ‘পার্সেল’ করে পাঠাচ্ছিলেন মঙ্গনাথ নামে হায়দরাবাদের এক ব্যবসায়ী। বেঙ্গালুরুর একটি ই-কমার্স সংস্থার কাছে পাঠানো হচ্ছিল সেগুলি।

আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বাসে আগুন লাগার পর বিস্ফোরণ হয় ওই স্মার্টফোনগুলিতেও। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আগুনের তাপে ওই ফোনগুলির ব্যাটারি ফেটে যাওয়ায় আগুনের তীব্রতা অনেকগুন বেড়ে যায়। এই বিস্ফোরণের কারণেই এসি বাসে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী এবং বাসের যাত্রীরাও জানিয়েছেন যে তাঁরাও ফোনের ব্যাটারি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ফোনগুলিতে আগুন লাগতেই ব্যাটারিগুলি ফাটতে শুরু করে।

কার্নুল বাস দুর্ঘটনা: ২০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর নেপথ্যে স্মার্টফোনের বিস্ফোরণ, তদন্তে নয়া তথ্য

অন্ধ্রপ্রদেশ ফায়ার সার্ভিসেস বিভাগের ডিজি পি ভেঙ্কটরমন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, স্মার্টফোনের বিস্ফোরণের পাশাপাশি বাসের এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেমের জন্য ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক ব্যাটারিগুলিও ফেটে যায়। এর ফলে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। এর এতটাই তীব্র ছিল যে বাসের মেঝেতে থাকা অ্যালুমিনিয়ামের শিট গলে গিয়েছিল। যদিও প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল যে বাসের সামনে দিকে থাকা জ্বালানি লিকেজের কারণেই আগুন লাগে। অন্যদিকে, এই ঘটনায় বাসের চালকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, আগুন লাগার পরে যাত্রীদের বাচানোর চেষ্টা না করে নিজে পালিয়ে যান চালক। জানা গিয়েছে, চালকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে হায়দরাবাদ থেকে একটি যাত্রীবোঝাই লাক্সারি বাস বেঙ্গালুরুর দিকে রওনা দিয়েছিল। ভোররাতে কুর্নুল জেলার চিন্নেতকুর গ্রামের কাছে বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ হাইওয়েতে একটি মোটরবাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে বাসটির। তাতে বাসটিতেই আগুন ধরে যায়। নিমেষে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে গোটা বাস। বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে বাসটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বেশিরভাগ যাত্রী দরজা ভেঙে বেরিয়ে আসারও সময় পাননি। ফলে আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয় একের পর এক অসহায় যাত্রীর। বিশেষজ্ঞদের কথায়, বাসটিতে আগুন না লাগলে এত মানুষকে প্রাণ হারাতে হতো না। সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় চালক ও খালাসি-সহ বাসটিতে অন্তত ৪০-৪২ জন যাত্রী ছিলেন। এদের মধ্যে ২০ জন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন। ১৫ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

কার্নুল বাস দুর্ঘটনা: ২০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর নেপথ্যে স্মার্টফোনের বিস্ফোরণ, তদন্তে নয়া তথ্য

আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম, অমরাবতী: শুক্রবার অন্ধ্রে ঘটে গিয়েছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। লাক্সারি বাসে আগুন লেগে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হন বহু। অনেকেই গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনাটি ঘটে অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুলে।

কুর্নুল জেলায় ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ একটি মোটরবাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে বাসটির। এর ফলে বাসের সামনের অংশে আটকে যায় মোটরসাইকেলটি। ওই অবস্থাতেই চলতে থাকে বাস। সেই সময়েই দাউ দাউ করে আগুন ধরে বাসটিতে। তাতে পুড়ে মৃত্যু হয় ২০ জনের। এই ঘটনার তদন্তে এবার উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

আগুনের তীব্রতার কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে আসছে বাসে মজুদ থাকা বিপুল পরিমাণ মোবাইলের ব্যাটারির কথা। প্রশাসন এবং জনসাধারণের মধ্যে প্রশ্ন জাগছে, কীভাবে শত শত স্মার্টফোন যাত্রীবাহী গাড়ির লাগেজ কেবিনে পুড়ে ছাই হল? তদন্তে জানা গিয়েছে, স্মার্টফোনগুলি আগুনে পোড়ার সময় সেগুলি বিস্ফোরিত হয়েছিল। আগুনের তীব্রতা বাড়িয়েছিল স্মার্টফোন। যার ফলে প্রাণহানি বাড়তে থাকে।

কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে তার তদন্ত করতে গিয়েই ততদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই বাসেই ছিল ২৩৪টি স্মার্টফোন। ওই ফোনগুলির দাম প্রায় ৪৬ লক্ষ টাকা। ওই ফোনগুলি বাসে ‘পার্সেল’ করে পাঠাচ্ছিলেন মঙ্গনাথ নামে হায়দরাবাদের এক ব্যবসায়ী। বেঙ্গালুরুর একটি ই-কমার্স সংস্থার কাছে পাঠানো হচ্ছিল সেগুলি।

আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বাসে আগুন লাগার পর বিস্ফোরণ হয় ওই স্মার্টফোনগুলিতেও। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আগুনের তাপে ওই ফোনগুলির ব্যাটারি ফেটে যাওয়ায় আগুনের তীব্রতা অনেকগুন বেড়ে যায়। এই বিস্ফোরণের কারণেই এসি বাসে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী এবং বাসের যাত্রীরাও জানিয়েছেন যে তাঁরাও ফোনের ব্যাটারি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ফোনগুলিতে আগুন লাগতেই ব্যাটারিগুলি ফাটতে শুরু করে।

কার্নুল বাস দুর্ঘটনা: ২০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর নেপথ্যে স্মার্টফোনের বিস্ফোরণ, তদন্তে নয়া তথ্য

অন্ধ্রপ্রদেশ ফায়ার সার্ভিসেস বিভাগের ডিজি পি ভেঙ্কটরমন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, স্মার্টফোনের বিস্ফোরণের পাশাপাশি বাসের এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেমের জন্য ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক ব্যাটারিগুলিও ফেটে যায়। এর ফলে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। এর এতটাই তীব্র ছিল যে বাসের মেঝেতে থাকা অ্যালুমিনিয়ামের শিট গলে গিয়েছিল। যদিও প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল যে বাসের সামনে দিকে থাকা জ্বালানি লিকেজের কারণেই আগুন লাগে। অন্যদিকে, এই ঘটনায় বাসের চালকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, আগুন লাগার পরে যাত্রীদের বাচানোর চেষ্টা না করে নিজে পালিয়ে যান চালক। জানা গিয়েছে, চালকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে হায়দরাবাদ থেকে একটি যাত্রীবোঝাই লাক্সারি বাস বেঙ্গালুরুর দিকে রওনা দিয়েছিল। ভোররাতে কুর্নুল জেলার চিন্নেতকুর গ্রামের কাছে বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ হাইওয়েতে একটি মোটরবাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে বাসটির। তাতে বাসটিতেই আগুন ধরে যায়। নিমেষে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে গোটা বাস। বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে বাসটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বেশিরভাগ যাত্রী দরজা ভেঙে বেরিয়ে আসারও সময় পাননি। ফলে আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয় একের পর এক অসহায় যাত্রীর। বিশেষজ্ঞদের কথায়, বাসটিতে আগুন না লাগলে এত মানুষকে প্রাণ হারাতে হতো না। সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় চালক ও খালাসি-সহ বাসটিতে অন্তত ৪০-৪২ জন যাত্রী ছিলেন। এদের মধ্যে ২০ জন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন। ১৫ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।